নরক (হিন্দু দর্শন)
নরক (সংস্কৃত: नरक, আইএএসটি: Nāraka) হল পরলৌকিক ও শাস্তির স্থান।[১] হিন্দুধর্ম মতে, নরক হচ্ছে পাপীদের শাস্তি ভোগ করার স্থান।[১][২] এটি মৃত্যুর দেবতা যমের আবাসস্থল। বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে নরকের সংখ্যা ২৮ টি।[১]
স্বর্গ বা নরকে অবস্থান সাধারণত অস্থায়ী হিসাবে বর্ণনা করা হয়। শাস্তির পরিমাণ শেষ হওয়ার পর, আত্মারা তাদের যোগ্যতা অনুসারে নিম্ন বা উচ্চতর প্রাণী হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে।[১] কিন্তু, হিন্দু দার্শনিক মাধবাচার্য, যিনি অন্ধমাসে তমোযোগীদের চিরন্তন অভিশাপে বিশ্বাস করেন।[৩] কিছু কিছু গ্রন্থে, নরককে অন্ধকারের সবচেয়ে নিচের স্তর বলে ব্যাখ্যা করা হয়; আত্মাদের অনন্তকালের জন্য সেখানে আটক করা হয় এবং পুনর্জন্ম থেকে বঞ্চিত করা হয়।[১]
অবস্থান
[সম্পাদনা]ভাগবত পুরাণ অনুসারে, নরককে পাতাল ও গর্ভোদক মহাসাগরের সাতটি রাজ্যের মধ্যে, যা মহাবিশ্বের নীচের অংশ। নরক মহাবিশ্বের দক্ষিণে পাতালে পিতৃলোকে অবস্থিত।[৪][৫] দেবীভাগবত পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নরক হল মহাবিশ্বের দক্ষিণাঞ্চল, পৃথিবীর নিচে কিন্তু পাতালের উপরে।[২] বিষ্ণু পুরাণ উল্লেখ করেছে যে এটি মহাবিশ্বের নীচে মহাজাগতিক জলের নীচে অবস্থিত।[৫] হিন্দু মহাকাব্যগুলিও একমত যে নরক দক্ষিণে অবস্থিত, যে দিকটি যম দ্বারা পরিচালিত এবং প্রায়ই মৃত্যুর সাথে যুক্ত। পিতৃলোক যমের রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে যম তাঁর ন্যায়বিচার প্রদান করেন।[৬]
পরিচালনা
[সম্পাদনা]মৃত্যুর দেবতা, যম, যমদূত নিয়োগ করেন, যারা বিচারের জন্য যমের কাছে সমস্ত জীবের আত্মাকে নিয়ে আসে।[৪] সাধারণত, মানুষ ও জন্তু সহ সমস্ত জীবিত প্রাণীরা মৃত্যুর পরে যমালয়ে যায়, যেখানে তাদের বিচার হয়। তবে খুব পুণ্যবান মানুষকে সরাসরি স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। যমকে ন্যায়বিচারের প্রভু হিসাবে ধর্মরাজ বলা হয়।[৬] যম পুণ্যবানদের স্বর্গে পাঠান। তিনি মৃতদের দুর্দশা মূল্যায়ন করেন এবং রায় প্রদান করেন, তাদের পাপের তীব্রতা ও প্রকৃতির সাথে উপযুক্ত শাস্তি হিসাবে উপযুক্ত নরকগুলিতে তাদের পাঠান।[২][৪] সংসার থেকে মুক্তি না পাওয়া কোনও ব্যক্তি এবং স্বর্গের নির্ধারিত আনন্দের পরে বা নরকের শাস্তি শেষ হওয়ার পরে অবশ্যই তাকে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হবে।[৪]
যমকে তাঁর মন্ত্রী চিত্রগুপ্ত সহায়তা করেন, যিনি প্রতিটি জীবের সমস্ত ভাল ও মন্দ কাজের তথ্য সংগ্রহ করেন।[৭] যমদূতকে বিভিন্ন নরকে পাপীদের উপর শাস্তি কার্যকর করার দায়িত্বও অর্পণ করা হয়।[৪]
সংখ্যা ও নাম
[সম্পাদনা]নরক, সামগ্রিকভাবে, অনেক নামেই পরিচিত যে এটি যমের রাজ্য। নরক যমালয়, যমলোক, যমসদন ও যমাক্ষয় নামে পরিচিত। যমক্ষয় (যমের অক্ষয়) এবং এর সমতুল্য বৈভাস্বতক্ষয় ক্ষয় শব্দের জন্য শ্লেষ ব্যবহার করে, যার অর্থ বাসস্থান বা ধ্বংস হতে পারে। এটিকে সত্যমণিও বলা হয়, "যেখানে কেবল সত্য কথা বলা হয়, এবং দুর্বলরা শক্তিশালীকে যন্ত্রণা দেয়", মৃত্যুলোক - মৃত্যু বা মৃতের পৃথিবী এবং "ভূত রাজ"' বা প্রেতরাজপুরের শহর নামেও পরিচিত।[৬]
অগ্নিপুরাণে কেবল ৪ টি নরকের উল্লেখ আছে।[১] কিছু হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ৭ টি নরকের উল্লেখ রয়েছে: পুত ("নিঃসন্তান", নিঃসন্তানদের জন্য), আভিচি ("তরঙ্গহীন", যারা পুনর্জন্মের জন্য অপেক্ষা করছে তাদের জন্য), সংহতা ("পরিত্যক্ত", দুষ্ট মানুষের জন্য), তাম্রিশ("অন্ধকার", যেখানে নরকের অন্ধকার শুরু হয়), রিজিশা ("বহিষ্কৃত", যেখানে নরকের যন্ত্রণা শুরু হয়), কুদমালা ("কুষ্ঠ", যাদের পুনর্জন্ম হতে চলেছে তাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ নরক) এবং কাকোলা ("কালো বিষ", অতল গর্ত, যারা চিরতরে নরকে দোষী সাব্যস্ত এবং যাদের পুনর্জন্মের কোন সুযোগ নেই)।[৮][৯][১০] মনুস্মৃতিতে ২১ টি নরকের উল্লেখ আছে: তামিস্র, অন্ধতামিস্র, মহারৌরব, রৌরব, কালসূত্র, মহানরক, সম্মজীবন, মহাবিচী, তপন, সম্পৃতাপনা, সন্দংশ, সাকাকোলা, কুদমালা, পুতিমৃতিকা, লোহাসঙ্কু, রিজিশা, পাঠানা, সালমান, বৈতারণ, অসিপত্রবন এবং লোহাদরক।[১১]
যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতেও একুশটির তালিকা রয়েছে: তামিস্র, লোহাসঙ্কু, মহানায়ারায়, সালামালি, রৌরব, কুদমালা, পুতিমৃতিকা, কালসূত্র, সংঘাটা, লোহিতোদা, সাবিশা, সম্পৃতাপনা, মহানরকা, কাকোলা, সঞ্জীবন, মহাপথ, আভিচার, অন্ধকার, .কুম্ভীপাক, অসিপত্রবন এবং তপন।[১২] ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ এবং দেবীভাগবত পুরাণে ২৮ টি নরকের তালিকা এবং বর্ণনা রয়েছে; যাইহোক, পুরাণগুলো বর্ণনা করে শেষ করে যে এখানে শত শত এবং হাজার হাজার নরক রয়েছে।[২][৪] [৫][১৩] ভাগবত পুরাণে ২৮ টি গণনা করা হয়েছে: তামিস্র, অন্ধতামিস্র, রৌরব, মহারৌরব, কুম্ভীপাক, কালসূত্র, অসিপত্রবন, সূকরমুখ, অন্ধকূপ, কৃমিভোজন, সন্দংশ, তপ্তসূর্মি, বজ্রকণ্ট-শাল্মলী, বৈতরণী, পূয়োদ, প্রাণরোধ, বিশসন, লালাভক্ষ, সারমেয়াদন, অবীচিমৎ, অয়ঃপান, ক্ষারকর্দম, রক্ষোগণ ভোজন, শূলপ্রোত, দন্দশূক, অবটনিরোধন, পর্যাবর্তন ও সূচীমুখ।[৪] দেবীভাগবত পুরাণ, ভাগবত পুরাণের সাথে বেশিরভাগ নামে একমত; যাইহোক, কয়েকটি নাম একটু ভিন্ন। ভিন্ন নামগুলো হলো- তপ্ত শূর্মী, আয়হপনা, রাক্ষসগণ ভোজন, অবতা-নিরোধনা, পর্যাবর্তন প্রতিস্থাপিত হয়েছে যথাক্রমে তপ্তমূর্তি, অপহপন, রক্ষোগণ-সম্ভোজ, অবতারো, পর্যবর্ণনাটক।[২] বিষ্ণু পুরাণে ২৮ টি নরকের উল্লেখ করেছে: রৌরব, শূকর, রোধা, তালা, ভিসাসনা, মহাজওয়ালা, তপ্তকুম্ভ, লাভানা, বিমোহন, রুধিরন্ধ, বৈতরণী, কৃমিসা, কৃমিভোজন, অসিপত্র বন:, কৃষ্ণ, লালভক্ষ, দারুণা, পূয়োদ, বাবা, বাহনিজওয়ালা, আধোসিরাস, সান্দানসা, কালসূত্র, তামাস, আভিচি, স্বভোজন, অপ্রতিষ্ঠা, এবং আরেকটি আভিচি।[৫]
২৮ টি নরকের বিবরণ
[সম্পাদনা]ঋগ্বেদের মতো প্রাথমিক গ্রন্থে নরকের বিস্তারিত বিবরণ না থাকলেও এখানে বলা হয়েছে-এটি কেবল মন্দ স্থান এবং একটি অন্ধকার অতল গর্ত। অথর্ববেদ নরককে অন্ধকারের একটি ক্ষেত্র বর্ণনা করে, যেখানে হত্যাকারীরা মৃত্যুর পর বন্দী থাকে।
শতপথ ব্রাহ্মণই প্রথম গ্রন্থ যা নরকের যন্ত্রণা এবং যন্ত্রণার বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে, যখন মনুস্মৃতি একাধিক নরকের নামকরণ শুরু করে।[১৩] মহাকাব্যগুলি সাধারণভাবে নরকে বর্ণনা করে ছায়াহীন ঘন জঙ্গল হিসেবে, যেখানে জল নেই এবং বিশ্রাম নেই। যমদূতরা তাদের প্রভুর আদেশে আত্মাকে কষ্ট দেয়।[৬]
হিন্দু গ্রন্থে অনেক নরকের নাম প্রচলিত আছে। ভাগবত পুরাণ এবং দেবী ভাগবত পুরাণে বর্ণিত আটাশটি নরকের বর্ণনা নিম্নরূপ:[২][৪]
- তামিস্র: হে রাজন্, যে ব্যক্তি অপরের ধন, স্ত্রী ও পুত্র অপহরণ করে, অত্যন্ত ভয়ঙ্কর যমদূতেরা তাকে কালপাশে বেঁধে বলপূর্বক তামিস্র নরকে নিক্ষেপ করে। এই তামিস্র নরক ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন; সেখানে যমদূতেরা পাপীকে ভীষণভাবে প্রহার, তাড়ন এবং তর্জন করে। সেখানে তাকে অনশনে রাখা হয় এবং জল পান করতে দেওয়া হয় না। এইভাবে ক্রুদ্ধ যমদূতদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে সে মূর্ছিত হয়।[২][৪]
- অন্ধতামিস্র: যে ব্যক্তি পতিকে বঞ্চনা করে তার স্ত্রী-পুত্র উপভোগ করে, সে অন্ধতামিস্র নরকে পতিত হয়। বৃক্ষকে ভূপাতিত করার পূর্বে যেমন তার মূল ছেদন করা হয়, তেমনই সেই পাপীকে ঐ নরকে নিক্ষেপ করার পূর্বে যমদূতেরা নানা প্রকার যন্ত্রণা প্রদান করে। এই যন্ত্রণা এতই প্রচণ্ড যে, তার ফলে তার বুদ্ধি এবং দৃষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্যই সেই নরককে পণ্ডিতেরা অন্ধতামিস্র বলেন।[২][৪]
- রৌরব: যে ব্যক্তি তার জড় দেহটিকে তার স্বরূপ বলে মনে করে, তার নিজের দেহ এবং দেহের সম্পর্কে সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজনদের ভরণ-পোষণের জন্য দিনের পর দিন অপর প্রাণীর সিংসা করে, সেই ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তার দেহ এবং আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যাগ করে, প্রাণী হিংসাজনিত পাপের ফলে রৌরব নরকে নিপাতিত হয়। এই জীবনে যে হিংসা-পরায়ণ ব্যক্তি অন্য প্রাণীদের যন্ত্রণা দেয়, মৃত্যুর পর যখন সে তার কৃত কর্মের ফলে যম-যাতনা প্রাপ্ত হয়, তখন সেই সমস্ত প্রাণীসমূহ, যাদের হিংসা করা হয়েছে, তারা 'রৌরব' হয়ে তাকে পীড়া দেয়। এ জন্য পণ্ডিতেরা সেই নরককে রৌরব নরক বলেন। রৌরব প্রাণীকে এই পৃথিবীতে দেখা যায় না, তারা সর্পের থেকেও হিংস্র।[২][৪]
- মহারৌরব: যারা অন্যদের কষ্ট দিয়ে নিজেদের দেহ ধারণ করে, তাদের মহারৌরব নরকে দণ্ডভোগ করতে হয়। সেই নরকে ক্রব্যাদ নামক রুরু পশুরা তাদের যন্ত্রণা দিয়ে মাংস আহার করে।[২][৪]
- কুম্ভীপাক: যে সমস্ত নিষ্ঠুর মানুষ তাদের দেহ ধারণের জন্য এবং জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য নিরীহ পশু-পক্ষীকে হত্যা করে রন্ধন করে, সেই প্রকার ব্যক্তিরা নর-মাংসভোজী রাক্ষসদেরও ঘৃণিত। মৃত্যুর পর যমদূতেরা কুম্ভীপাক নরকে ফুটন্ত তেলে তাদের পাক করে।[২][৪]
- কালসূত্র: ব্রহ্মঘাতীকে কালসূত্র নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়, যার পরিধি ৮০,০০০ মাইল এবং যা তাম্রনির্মিত। নীচ থেকে অগ্নি এবং উপর থেকে প্রখর সূর্যের তাপে সেই তাম্রময় ভূমি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়। সেখানে ব্রহ্মঘাতীকে অন্তরে এবং বাইরে দগ্ধ করা হয়। অন্তরে সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় দগ্ধ হয় এবং বাইরে সে প্রখর সূর্যকিরণ ও তপ্ত তাম্রে দগ্ধ হতে থাকে। তাই সে কখনও শয়ন করে, কখনও উপবেশন করে, কখনও উঠে দাঁড়ায় এবং কখনও ইতস্তত ছুটাছুটি করে। এইভাবে একটি পশুর শরীরে যত লোম রয়েছে, তত হাজার বছর ধরে তাকে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।[২][৪]
- অসিপত্রবন: আপৎকাল উপস্থিত না হলেও যে ব্যক্তি স্বীয় বেদমার্গ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাষণ্ড ধর্ম অবলম্বন করে, যমদূতেরা তাকে অসিপত্রবন নামক নরকে নিক্ষেপ করে বেত্রাঘাত করতে থাকে। প্রহারের যন্ত্রণায় সে যখন সেই নরকে ইতস্তত ধাবিত হয়, তখন উভয় পার্শ্বের অসিতুল্য তালপত্রের ধারে তার সর্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত হয়। তখন সে 'হায়, আমি এখন কি করব! আমি এখন কীভাবে রক্ষা পাব!' এই বলে আর্তনাদ করতে করতে পদে পদে মূর্ছিত হয়ে পড়তে থাকে। স্বধর্ম ত্যাগ করে পাষণ্ড মত অবলম্বনের ফল এইভাবে ভোগ করতে হয়।[২][৪]
- সূকরমুখ: ইহলোকে যে রাজা বা রাজপুরুষ দণ্ডদানের অযোগ্য ব্যক্তিকে দণ্ড প্রদান করে, কিংবা অদণ্ডনীয় ব্রাক্ষণকে শরীরদণ্ড প্রদান করে, সেই পাপীকে যমদূতেরা সূকরমুখ নরকে নিয়ে যায়। সেখানে অত্যন্ত বলশালী যমদূতেরা তাকে ইক্ষুদণ্ডের মতো নিষ্পেষণ করে। তখন সে আর্তস্বরে রোদন করতে থাকে এবং নির্দোষ ব্যক্তি দণ্ডিত হলে যেমন মোহগ্রস্ত হয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত হয়, সেও সেইভাবে মূর্ছিত হয়। নির্দোষ ব্যক্তিকে দণ্ডদান করার এই ফল।[২][৪]
- অন্ধকূপ: ভগবানের আয়োজনে ছারপোকা, মশা ইত্যাদি নিম্নস্তরের প্রাণীরা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের রক্ত পান করে। এই প্রকার নগণ্য প্রাণীদের কোন ধারণা নেই যে, তাদের দংশনের ফলে মানুষের কষ্ট হয়। কিন্তু, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ইত্যাদি উচ্চ শ্রেণীর মানুষদের চেতনা উন্নত এবং তাই তারা জানে মৃত্যু কত বেদনাদায়ক। বিবেক সমন্বিত মানুষ যদি বিবেকহীন তুচ্ছ প্রাণীদের হত্যা করে অথবা যন্ত্রণা দেয়, তার নিশ্চয়ই পাপ হয়। সেই প্রকার মানুষকে ভগবান অন্ধকূপ নামক নরকে নিক্ষেপ করে দণ্ডদান করেন এবং সে যে-সমস্ত পশু, পক্ষী, সরীসৃপ, মশক, উকুন, কীট, মাছি ইত্যাদি প্রাণীদের যন্ত্রণা দিয়েছিল, তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তারা তাকে সবদিক থেকে আক্রমণ করে এবং তার ফলে তার নিদ্রা-সুখ একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সে কোথাও বিশ্রাম করতে না পেরে অন্ধকারে নিরন্তর ছোটাছুটি করতে থাকে। এইভাবে অন্ধকূপে সে একটি নিম্নস্তরের প্রাণীর মতো যন্ত্রণা ভোগ করে।[২][৪]
- কৃমিভোজন: যে ব্যক্তি কোন ভক্ষ্যদ্রব্য প্রাপ্ত হলে অতিথি, বালক বা বৃদ্ধদের তার যথাযথ অংশ না দিয়ে নিজেই ভোজন করে, অথবা যে ব্যক্তি পঞ্চবিধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে না, সে কাকতুল্য বলে বর্ণিত হয়। তার মৃত্যুর পর তাকে কৃমিভোজন নামক একটি নিকৃষ্ট নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেই নরকের বিস্তার ১,০০,০০০ যোজন এবং তা কৃমিতে পূর্ণ। সেখানে সেই কৃমিকুণ্ডে একটি কৃমি হয়ে সে কৃমি ভক্ষণ করে এবং সেখানকার কৃমিরা তাকে ভক্ষণ করে। তার মৃত্যুর পূর্বে সে যদি তার অপকর্মের জন্য প্রায়শ্চিত্ত না করে, তা হলে সেই পাপীকে সেই কুণ্ডের বিস্তার যত যোজন তত বছর সেখানে থাকতে হয়।"[২][৪]
- সন্দংশ: যে ব্যক্তি সঙ্কট উপস্থিত না হলেও ব্রাহ্মণ অথবা অন্য কোন ব্যক্তির স্বর্ণ-রত্ন ইত্যাদি ধন চৌর্যবৃত্তির দ্বারা অথবা বল প্রয়োগের দ্বারা অপহরণ করে, তাকে সন্দংশ নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে লৌহময় অগ্নিপিণ্ড এবং সাঁড়াশির দ্বারা তার ত্বক ছিন্নভিন্ন করা হয়। এইভাবে তার সারা শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।[২][৪]
- তপ্তসূর্মি: যে ব্যক্তি অগম্যা স্ত্রীতে এবং যে স্ত্রী অগম্য পুরুষে অভিগমন করে, পরলোকে যমদূতেরা তাদের তপ্তসূর্মি নামক নরকে নিয়ে গিয়ে চাবুক দিয়ে প্রহার করে এবং তারপর পুরুষকে তপ্ত লৌহময় স্ত্রীমূর্তি ও স্ত্রীকে সেই প্রকার পুরুষ-মূর্তির দ্বারা আলিঙ্গন করায়। এটিই অবৈধ যৌন সঙ্গের দণ্ড।[২][৪]
- বজ্রকণ্ট-শাল্মলী: যে ব্যক্তি পশুতেও অভিগমন করে, তার মৃত্যুর পর তাকে বজ্রকণ্টক-শাল্মলী নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেই নরকে একটি শাল্মলী বৃক্ষ রয়েছে, যার কাঁটা বজ্রের মতো। যমদূতেরা সেই পাপীকে তার উপর চড়িয়ে টানতে থাকে এবং তার ফলে সেই কাঁটার দ্বারা তার সারা দেহ ছিন্নভিন্ন হয়।[২][৪]
- বৈতরণী: যে সমস্ত রাজন্য বা রাজপুরুষ ক্ষত্রিয় আদি দায়িত্বশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্বেও ধর্মনীতির অবহেলা করে এবং তার ফলে অধঃপতিত হয়, তারা মৃত্যুর পর বৈতরণী নামক নরকের নদীতে পতিত হয়। নরক বেষ্টনকারী পরিখাসদৃশ এই নদীটি ভয়ঙ্কর জলচর প্রাণীতে পূর্ণ। পাপী ব্যক্তি যখন এই বৈতরণী নদীতে নিক্ষিপ্ত হয়, তখন সেখানকার হিংস্র জলচরেরা তাকে ভক্ষণ করতে শুরু করে। কিন্তু তার ভয়ঙ্কর পাপকর্মের ফলে তার প্রাণ বহির্গত হয় না। সে তার পাপকর্মের কথা স্মরণ করতে করতে বিষ্ঠা, মুত্র, পুঁজ, রক্ত, কেশ, নখ, অস্থি, মেদ, মাংস এবং চর্বিপূর্ণ সেই নদীতে যন্ত্রণাভোগ করতে থাকে।[২][৪]
- পূয়োদ: শূদ্রা-রমণীদের নির্লজ্জ পতিরা ঠিক একটি পশুর মতো জীবন যাপন করে এবং তাই তাদের জীবন সদাচার, শৌচ এবং নিয়মবিহীন। মৃত্যুর পর তাদের পূয়োদ নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়, যা পুঁজ, মূত্র, শ্লেষ্মা, লালা ইত্যাদি ঘৃণিত বস্তুতে পূর্ণ একটি সমুদ্র। সেখানে তারা এই সমস্ত অতি ঘৃণিত পদার্থ ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়।[২][৪]
- প্রাণরোধ: উচ্চ বর্ণের মানুষ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য) যদি কুকুর, গর্ধভ ইত্যাদি পশু পালনে আসক্ত হয় এবং অনর্থক মৃগয়ায় গিয়ে পশু হত্যা করে, তা হলে মৃত্যুর পর তাকে প্রাণরোধ নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে যমদূতেরা তাকে তাদের লক্ষ্য বানিয়ে বাণের দ্বারা বিদ্ধ করে।[২][৪]
- বিশসন: যে ব্যক্তি ইহলোকে ধন ও প্রতিষ্ঠার গর্বে গর্বিত হয়ে, দম্ভ প্রকাশ করার জন্য যজ্ঞে পশুবলি দেয়, তাকে মৃত্যুর পর বিশসন নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে যমদুতেরা তাকে অশেষ যন্ত্রণা দিয়ে বধ করে।[২][৪]
- লালাভক্ষ: যে মূর্খ দ্বিজ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য) তার সবর্ণা পত্নীকে বশে রাখার জন্য নিজের শুক্র পান করায়, পরলোকে যমদূতেরা তাকে লালাভক্ষ নামক নরকে নিক্ষেপ করে এবং সেখানে শুক্রনদীর মধ্যে তাকে শুক্র পান করায়।[২][৪]
- সারমেয়াদন: ইহলোকে যে সমস্ত ব্যক্তি দস্যুবৃত্তি করে পরগৃহে অগ্নি দেয় অথবা বিষ প্রদান করে, অথবা যে সমস্ত রাজা বা রাজপুরুষ আয়কর আদায়ের নামে অথবা অন্যান্য উপায়ে বণিক সম্প্রদায়কে লুণ্ঠন করে, মৃত্যুর পর সেই সমস্ত অসুরদের সারমেয়াদন নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে ৭২০টি বজ্রের মতো দন্ত সমন্বিত কুকুর রয়েছে। যমদূতের নির্দেশে সেই কুকুরগুলি অত্যন্ত তৃপ্তির সঙ্গে সেই সমস্ত পাপীদের ভক্ষণ করে।[২][৪]
- অবীচিমৎ: যে ব্যক্তি ইহলোকে সাক্ষ্য প্রদান করার সময়, ক্রয়-বিক্রয় করার সময় এবং দান করার সময় কোন প্রকার মিথ্যা কথা বলে, পরলোকে যমদূতেরা তাকে শত যোজন উন্নত পর্বত শিখর থেকে মাথা নিচের দিকে করে অবীচিমৎ নামক নরকে নিক্ষেপ করে। সেই নরকের কোন অবলম্বন স্থান নেই এবং প্রস্তর নির্মিত পৃষ্ঠস্থল জলের মতো প্রতীত হয়। কিন্তু সেখানে কোন জল নেই, তাই তাকে বলে অবীচিমৎ (জলহীন)। সেই পাপীদের বার বার পাহাড়ের উপর থেকে নিক্ষেপ করা হলেও এবং তাদের দেহ তিল তিল করে বিদীর্ণ হলেও, তাদের মৃত্যু হয় না এবং তারা নিরন্তর সেই যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকে।[২][৪]
- অয়ঃপান: যে ব্রাহ্মণ অথবা ব্রাহ্মণী সুরাপান করে, কিংবা যে ক্ষত্রিয় কিংবা বৈশ্য ব্রতপরায়ণ হয়ে প্রমাদবশত সোমরস পান করে, যমদূতেরা তাদের অয়ঃপান নরকে নিয়ে যায়। অয়ঃপান নরকে যমদূতেরা তাদের পা দিয়ে পাপীদের বক্ষঃস্থল চেপে ধরে তাদের মুখে অত্যন্ত উত্তপ্ত তরল লোহা ঢেলে দেয়।[২][৪]
- ক্ষারকর্দম: যে নীচ কুলোদ্ভূত এবং অধম হওয়া সত্ত্বেও 'আমি বড়' বলে মিথ্যা অহঙ্কারপূর্বক জন্ম, তপস্যা, বিদ্যা, আচার, বর্ণ অথবা আশ্রমে তার থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করে না, সে জীবিত অবস্থাতেই মৃত এবং মৃত্যুর পর তাকে ক্ষারকর্দম নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে সে যমদূতদের দ্বারা প্রচণ্ডভাবে নির্যাতিত হয়ে অত্যন্ত দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করে।[২][৪]
- রক্ষোগণ ভোজন: এই পৃথিবীতে অনেক পুরুষ এবং স্ত্রী রয়েছে, যারা ভৈরব অথবা ভদ্রকালীর কাছে নরবলি দিয়ে তাদের মাংস খায়। যারা এই ধরনের যজ্ঞ করে, তাদের মৃত্যুর পর যমালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারা যাদের বলি দিয়েছিল, তারা রাক্ষস হয়ে সুতীক্ষ্ন অস্ত্রের দ্বারা সেখানে তাদের খণ্ড খণ্ড করে কাটে। ইহলোকে যজ্ঞকারী ব্যক্তি যেভাবে নরবলি দিয়ে তার রক্ত পান করে আনন্দে নৃত্য-গীত করে, হিংসিত ব্যক্তিরাও তেমন পরলোকে যজ্ঞকারীর রক্ত পান করে আনন্দে নৃত্য-গীত করে।[২][৪]
- শূলপ্রোত: যে সমস্ত মানুষ ইহলোকে গ্রামে বা অরণ্যে জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখীদের আশ্রয় দান পূর্বক বিশ্বাস জন্মিয়ে শূল অথবা সূত্রের দ্বারা তাদের বিদ্ধ করে এবং তারপর ক্রীড়নকের মতো ক্রীড়া করে প্রবল যন্ত্রণা দেয়, তারা মৃত্যুর পর যমদূতদের দ্বারা শূলপ্রোত নামক নরকে নীত হয় এবং তাদের শরীর তীক্ষ্ন শূল ইত্যাদির দ্বারা বিদ্ধ করা হয়। সেখানে তারা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় পীড়িত হয় এবং চতুর্দিক থেকে বক, শকুন প্রভৃতি তীক্ষ্ন-চঞ্চু পক্ষী এসে তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। এইভাবে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তারা তখন তাদের পূর্বকৃত পাপকর্মের কথা স্মরণ করতে থাকে।[২][৪]
- দন্দশূক: যারা ইহলোকে সর্পের মতো ক্রোধপরায়ণ হয়ে অন্য প্রাণীদের যন্ত্রণা দেয়, তারা পরলোকে দন্দশূক নামক নরকে পতিত হয়। সেই নরকে পঞ্চমুখ ও সপ্তমুখ সর্পেরা তাদের মূষিকের মতো গ্রাস করে।[২][৪]
- অবটনিরোধন: যারা ইহলোকে অন্য প্রাণীদের অন্ধকূপে, গোলায় বা পাহাড়ের গুহায় রুদ্ধ করে কষ্ট দেয়, মৃত্যুর পর তাদের অবটনিরোধন নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে অন্ধকূপাদিতে বিষাক্ত ধূম এবং বহ্নির দ্বারা শ্বাসরোধ করে তাদের কঠোরভাবে যন্ত্রণা দেওয়া হয়।[২][৪]
- পর্যাবর্তন: যে গৃহপতি অতিথি অভ্যাগত দেখলে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং পাপকুটিল দৃষ্টি দ্বারা যেন তাদের ভস্মীভূত করতে উদ্যত হয়, তাকে পর্যাবর্তন নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়, যেখানে বজ্রের মতো কঠিন চক্ষুবিশিষ্ট শকুন, বক, কাক ইত্যাদি পক্ষীরা সেই পাপদৃষ্টি ব্যক্তির চক্ষু সহসা বলপূর্বক উৎপাটন করে।[২][৪]
- সূচীমুখ: যে ব্যক্তি ইহলোকে তার ধনের গর্বে গর্বিত, সে মনে করে, "আমি কত ধনী। কে আমার সমকক্ষ হতে পারে?" এইভাবে অহঙ্কারে বক্রদৃষ্টি হয়ে সে সব সময় শঙ্কিত থাকে যে, অন্যেরা তার ধন অপহরণ করে নেবে। এমনকি সে তার গুরুজনদেরও সন্দেহ করে। এইভাবে ধন হারানোর ভয়ে তার হৃদয় ও বদন শুষ্ক হয়ে যায় এবং তার ফলে তাকে ঠিক একটি পিশাচের মতো দেখতে লাগে। সে কখনই সুখ পায় না এবং দুশ্চিন্তাহীন জীবন বলতে যে কি বোঝায়, তা সে জানতে পারে না। ধন উপার্জন, বর্ধন ও রক্ষণের জন্য যেহেতু তাকে পাপকর্ম করতে হয়, তার ফলে তাকে সূচীমুখ নামক নরকে নিক্ষেপ করা হয়, সেখানে যমদূতেরা তার সর্বাঙ্গে তাঁতীর মতো সূত্র বয়ন করে।"[২][৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Dallapiccola, Anna L. (২০০২)। "Naraka"। Dictionary of Hindu Lore and Legend। Thames & Hudson। আইএসবিএন 978-0-500-51088-9। (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় Mani, Vettam (১৯৭৫)। Puranic Encyclopaedia: A Comprehensive Dictionary With Special Reference to the Epic and Puranic Literature। Delhi: Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 368–70। আইএসবিএন 0-8426-0822-2।
- ↑ Helmuth von Glasenapp: Der Hinduismus. Religion und Gesellschaft im heutigen Indien, Hildesheim 1978, p. 248.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ Prabhupada, A. C. Bhaktivedanta Swami। "Bhagavata Purana 5.26"। The Bhaktivedanta Book Trust International, Inc.। ২০১২-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ Wilson, Horace Hayman (১৮৬৫)। "Chapter VI"। The Vishnu Purana (Translation)। II। London: Trubner & co.। পৃষ্ঠা 207–11।
- ↑ ক খ গ ঘ Hopkins, Edward (১৯৬৯)। Epic Mythology। Motilal Banarasidass। পৃষ্ঠা ১০৮–১০৯।
- ↑ Mani, পৃষ্ঠা ১৮৪
- ↑ Walker, Benjamin (১৯৬৮)। The Hindu world: an encyclopedic survey of Hinduism। Allen & Unwin। পৃষ্ঠা 253–4।
- ↑ Sivaya Subramuniyaswami (২০০০)। Loving Ganesa: Hinduism's Endearing Elephant-Faced God। Himalayan Academy Publications। পৃষ্ঠা 474–5। আইএসবিএন 9780945497776।
- ↑ cosmology. (2002). In Dictionary of Hindu Lore and Legend, Thames & Hudson. Retrieved from http://www.credoreference.com/entry/thhll/cosmology
- ↑ Bühler, Georg (১৮৮৬)। The laws of Manu। পৃষ্ঠা 142–3।
- ↑ Notes in Wilson, Horace Hayman (১৮৬৫)। "Chapter VI"। The Vishnu Purana (Translation)। II। London: Trubner & co.। পৃষ্ঠা 215।
- ↑ ক খ Dalal, Roshen (২০১০)। Hinduism an Alphabetical Guide। Penguin। পৃষ্ঠা 274। আইএসবিএন 978-0143414216।