তিউনিসীয় চতুর্পাক্ষিক জাতীয় আলোচনা পরিষদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তিউনিশিয়ান ন্যাশনাল ডায়লগ কুয়ার্টেট
তিউনিশিয়ায় জুঁই বিপ্লব পরবর্তী অবস্থা
তিউনিশিয়ান ন্যাশনাল ডায়লগ কোয়ার্টেট(জাতীয় চতুর্মুখী আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো) ২০১৬ সালের মার্চে ভিয়েনায় মিলিত হয়।বাম থেকে ডান দিকে আব্দেসসাত্তার বিন মুসা (তিউনিশিয় মানবাধিকার সংস্থা),নুরেদ্দিন এলেজ (উকিল সংগঠন) হোসিন আব্বাসি (ইউজিটিটি), উইদেদ বুখামাওই (ইউটিআইসিএ)
তারিখপ্রতিষ্ঠা তারিখ ( আগস্ট,২০১৩-জানুয়ারি,২০১৪)
অবস্থান
লক্ষ্যসমূহ
  • রাজনৈতিক সংঘাতের সমাপ্তি
  • অন্তর্বতীকালীন সরকার স্থাপন
  • একটি সংবিধান অনুমোদন
ফলাফল
  • ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মেহেদী জমার নেতৃত্বে টেকনোক্র‍্যাট(কৌশুলীদের) সরকার
  • নতুন সংবিধান অনুমোদন
  • রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও আইনসভা নির্বাচনের আয়োজন
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
নেতৃত্ব দানকারীগণ

সরকারি নেতৃবৃন্দ

হত্যাকৃত বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ

তিউনিসীয় চতুর্পাক্ষিক জাতীয় আলোচনা পরিষদ (আরবি: الرباعي التونسي للحوار الوطني‎); ফরাসি: Quartet du dialogue national; ইংরেজি: Tunisian National Dialogue Quartet) এমন চারটি বেসামরিক সংগঠনের সমষ্টিকে বোঝায় যারা ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় জুঁই বিপ্লব নামক ঐতিহাসিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ও একটি স্থায়ী সংবিধান (তিউনিসিয়ার সংবিধান সমঝোতা ২০১৪) তৈরির উদ্দেশ্যে আলোচনায় অংশ নেন।[1]

২০১৩-১৪ সালে তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক সংকটের কারণে দেশটিতে সাংবিধানিক কার্যক্রম থেমে গেলে, ২০১৩ এর গ্রীষ্মে এই আলোচনা পরিষদ গঠন করা হয়।[১] ইনাহদা বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে মধ্যস্থতায় বাধ্য করা,ঐতিহাসিক একটি সংবিধান তৈরি করা ইত্যাদি সাফল্যের জন্য ২০১৫ সালের ৯ই অক্টোবর এই আলোচনা পরিষদকে (কুয়ার্টেট) নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১৫ দেয়া হয়।[২][৩]

"চতুপাক্ষিক জাতীয় আলোচনা পরিষদ" নামক এই আলোচনা পরিষদটি তিউনিসিয়ার নিম্নোক্ত বেসামরিক সংগঠন নিয়ে গঠিত:[৪]

তিউনিসিয়ার নাগরিক সমাজের ভূমিকা[সম্পাদনা]

২০১০ সালের ডিসেম্বরে সিদি বোউজিদ শহরে মোহাম্মদ বৌয়াজিজি আত্মহত্যা করার পর,তিউনিসিয়া প্রথম আরব দেশে পরিণত হয় যেখানে আরব বসন্ত বা গণ আন্দোলন শুরু হয়।আন্দোলনটি সর্বপ্রথমে সিদি বোউজিদের গ্রাম্য শ্রমিক ও যুবকদের দ্বারা শুরু হলেও পরে তা সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

তিউনিসীয় শ্রমিক সংঘ এ আন্দোলনে অংশ নেবে কিনা তা মানুষের কাছে প্রথমে অপরিষ্কার ছিল।স্বাধীনতার পর থেকেই,তিউনিসিয়ার সাধারণ শ্রমিক সংঘ (ফরাসী ভাষায় সংক্ষেপে UGTT বলা হয়) রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় একটি সংগঠন।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তিউনিসিয়ার সরকারকে ভর্তুকি কমাতে বাধ্য করলে এটি তার প্রতিবাদ করে,যদিও বিন আলীর সরকার শ্রমিক সংঘের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছিল।১৯৭৮ সালে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক বৃদ্ধি ও অপরিবর্তিত বেতনের বিরুদ্ধে 'কালো বৃহস্পতিবার' আন্দোলন বা ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এর চাপিয়ে দেয়া ভর্তুকি হ্রাস ও জীবনধারণের খরচ অত্যধিক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এসবের নেতৃত্ব দিয়েছিল শ্রমিক সংঘ (ইউজিটিটি) তবে এসব গণআন্দোলন বিন আলীর অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে করার সুযোগ ছিল না।[৫] এই দমন-পীড়নমূলক সরকারব্যবস্থার সময়,তিউনিসীয় মানবাধিকার সংস্থা নামক বেসরকারি সংস্থাটিই ছিল সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একমাত্র মানবাধিকার সংস্থা। [৬] ২০১১ সালের আরব ব্যারোমিটার সমীক্ষা অনুযায়ী,আন্দোলনকারীদের মাত্র ৩℅ (সংগৃহীত নমুনার ভেতর) কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল যেখানে মিশরে আন্দোলনকারীদের ১০% ই ছিল কোন না কোন সংগঠনের সদস্য।[৭]

এসবের পরেও,বিন আলীর শাসনামলে শ্রমিক সংঘ ইউজিটিটির(UGTT) সারাদেশে ১৫০ টি স্থানীয় দপ্তরে আট লাখের বেশি সদস্য ছিল; এই সংগঠনের সদস্যপদ থাকা মানেই সরকারি দলের বিরোধীতা মনে করা হত।[৮] ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে আন্দোলনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।প্রধানমন্ত্রী নাজিফ সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে, শুধুমাত্র ২০০৬ ও ২০০৭ সালেই ১০০,০০০ তিউনিসিয়ান আন্দোলনে অংশ নেয় যেখানে ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত আন্দোলনকারীর সংখ্যা ছিল বছরে ৫০,০০০ এর কম।[৯]

তিউনিসীয় সাধারণ শ্রমিক সংঘ (ইউজিটিটি), যেটি ২০০৮ সালের গাফসা বিদ্রোহে শ্রমিকদের সমর্থন পায়নি,তিউনিসিয়ায় জুঁই বিপ্লব শুরু হলে পরিস্থিতি নিজেদের আয়ত্তে আনতে সমর্থ হয়।[১০] বোউয়াজিজির আত্মহত্যার পর ইজিটিটি সিদি বোজিদ শহর ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে ধর্মঘট ডাকে।[১১] সাধারণ শ্রমিক সংঘের সহ-সাধারণ সম্পাদক মৌলদি জেনদোবি,আন্দোলনের সমর্থন বাড়াতে সক্ষম হন ও ১৪ই জানুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকেন।[১২]

২০০৮ সালে সংগঠনটি (ইউজিটিটি) আন্দোলনের যে সুযোগ হারিয়েছে,এ সময়ে তার বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়(বিন আলীর সরকারের বিরুদ্ধে জনমত ও তাদের ঐতিহাসিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে)।এর মাধ্যমে ইউজিটিটি (সাধারণ শ্রমিক সংঘ) আন্দোলনের অগ্রদূতে পরিণত হয় ও পরবর্তীতে ঐতিহাসিক জাতীয় মধ্যস্থতা আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কুয়ার্টেট গঠনের পটভূমি[সম্পাদনা]

বিন আলীর পদত্যাগের পরও, তিউনিসিয়ার ইসলামিক ইনাহদা পার্টির নেতৃত্বে শাসকগোষ্ঠী তিউনিসিয়ার গণপরিষদে কোন স্থায়ী সাংবিধানিক সমাধান আনতে ব্যর্থ হয়।সংসদে ২১৭ আসনের মাত্র ৮৯টিতে জয় পাওয়া ইসলামিক ইনাহদা পার্টি অন্য দুটি ধর্মনিরপেক্ষ দলের (প্রজাতন্ত্রের কংগ্রেস -সিপিআর এবং শ্রমিক-মুক্তির গণতান্ত্রিক পরিষদ -এত্তকাতোল) সাথে জোট করতে বাধ্য হয় যাদের একত্রে ক্ষমতাসীন তিনশক্তি বলা হত।[১৩] যাইহোক,জোটটি ছিল খুবই ভঙ্গুর এবং ইনাহদা পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা দেশে একটি ইসলামিক বিচারব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছিল।[১০] ইনাহদা,ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার প্রস্তাব করলে ২০১২ সালের ২০শে মার্চ দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।ইনাহদার প্রস্তাবে এটাও ছিল যে,নারীদেরকে পুরুষের সম্পূরক ধরা হবে তবে তারা সমান অধিকার পাবেনা।[১৪] ধর্মনিরপেক্ষরা ভয় পাচ্ছিলেন এই ধরনের প্রস্তাব পরবর্তীতে দেশে 'শরীয়াহ আইন' প্রবর্তনের সুযোগ করে দেবে।[১০]

তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ[সম্পাদনা]

২০১২ সালের ১৮ জুনে তিউনিসিয়ার সাধারণ শ্রমিক সংঘ (ইউজিটিটি) ইনাহদা বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয়।দেশে একটি নতুন সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের স্বার্থে নিদা তুনসসহ অনেকগুলো দল এ ডাকে সাড়া দেয়।[১৫] ঘটনাপ্রবাহের এই পর্যায়ে,শ্রমিক সংঘ ইউজিটিটিকে, ইনাহদা পার্টির ইসলামী সংস্করণের বিরুদ্ধে থাকা একটি রাজনৈতিক স্বার্থবাদী জোটের অংশ ভাবা হত।[১৫] তার কারণে,৩০শে মে ইউজিটিটির সহ সম্পাদক সমীর শেফি জাতীয় টেলিভিশনে ঘোষণা করেন যে,তাদের সংগঠন সকল পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার সময়ে নিরপেক্ষ থাকবে।[১৬]

এরপর, ২০১২ সালের ১৮ই জুন ইউজিটিটি 'জাতীয় মধ্যস্থতা'র লক্ষ্যে একটি 'রাজনৈতিক পদক্ষেপ' ঘোষণা করে।পদক্ষেপটি নানা বাধার মুখোমুখি হয় যেহেতু শাসকদল 'ইনাহদা', মধ্যপন্থী দল নিদা তুনসকে আলোচনা থেকে বাদ দেবার চেষ্টা করছিল।তাছাড়া,ইনাহদা পার্টি আলোচনায় উত্থাপিত ইউজিটিটির কয়েকটি দাবি পালনে ব্যর্থ হলে দেশব্যাপী ধর্মঘটের হুমকি, একটি ফলপ্রদ আলোচনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। [১৭] ইউজিটিটির ভেতরে ইসলামী প্রতিনিধিত্ব কম থাকার কারণে ও আশির দশকে তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কারের সময় ইসলামী প্রতিনিধিরা নিরব থাকায় ঐতিহাসিকভাবেই ইনাহদা পার্টিকে দেশীয় আন্দোলনগুলো থেকে বরাবর বাইরে রাখা হয়েছে। [১৮]

ইউজিটিটির ডাকা দেশব্যাপী ধর্মঘটে ৫০০,০০০ প্রতিবাদী যোগ দেয় এবং যার ফলে তিউনিসিয়ার অর্থনীতিতে ভয়াবহ স্থিরতা দেখা দেয়।[১৯] এরপর এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে,ইউজিটিটির 'রাজনৈতিক পদক্ষেপটি' কোন জাতীয় মধ্যস্থতায় পৌছানোর জন্য 'ইনাহদা' ও 'সিপিআর' ছাড়াও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।[২০]

নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনার পর,শ্রমিক সংঘ ইউজিটিটি তিনটি সুপরিচিত নাগরিক সংগঠনকে মধ্যস্থতায় আমন্ত্রন জানায়।তারা হল, তিউনিসীয় শিল্প,বাণিজ্য ও হস্তশিল্প বিষয়ক সংঘ বা ইউটিআইসিএ, তিউনিসিয়ার মানবাধিকার সংস্থা এবং তিউনিসিয়ার উকিল পরিষদ।২০১২ সালের অক্টোবরে 'ইনাহদা' ও 'সিপিআর' ব্যতীত বাকি সকল সংগঠন আলোচনার জন্য মিলিত হয়।[২১] ২০১৩ সালের ১৪ই জানুয়ারি শ্রমিক সংঘ ইউজিটিটির সঙ্গে একটি 'সামাজিক চুক্তি' স্বাক্ষরের মাধ্যমে শিল্প-বাণিজ্য সংঘ ইউটিআইসিএ(UTICA) এই মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[২২] এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউজিটিটি দেশব্যাপী বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক মালিকশ্রেণীর সাথে একত্রে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।[২৩] অবশ্য এ ধরনের সমঝোতা তিউনিসিয়ার নাগরিক সমাজে পূর্বেও দেখা গেছে, যেমন বাণিজ্য সংগঠন ইউটিআইসিএ(UTICA) ও শ্রমিক সংগঠন ইউজিটিটি (UGTT) একত্রে ১৯৫৬ সালে বুরগিবাতে একটি সর্বজনস্বীকৃত সরকার গঠনে নিও দেস্তুর নামক রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে।[২৩] তাছাড়া,'মানবাধিকার সংস্থা' ও 'উকিল সংঘ'কে মধ্যস্থতায় শামিল করার ফলে কুয়ার্টেটের বৈধতা বৃদ্ধি পায় (যা ইউজিটিটি আশা করছিল) ও মানবাধিকার সংস্থার অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যাদের বিন আলীর সরকারের সাথে সংযোগ ছিল,তারাও এই মধ্যস্থতায় অংশ নেয়ায় 'কুয়ার্টেটের' উপর সবার আস্থা বৃদ্ধি পায় বা কুয়ার্টেটটি সর্বজনস্বীকৃত হয়।[২৪]

তাৎক্ষণিক এসব ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও নেতৃত্ব স্থানীয় কয়েকজন গুপ্তহত্যার স্বীকার হলে, আলোচনা প্রক্রিয়া ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়।

রাজনৈতিক সংকট[সম্পাদনা]

ওয়াতাদ বা গণতান্ত্রিক স্বদেশী দলের নেতা শোখরি বেলাইদ ও তিউনিসীয় গণআন্দোলন দলের নেতা মোহাম্মদ ব্রাহ্মী – এই দুই বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যা করা হলে সারা দেশে পুনরায় আন্দোলন শুরু হয় যা তিউনিসিয়ার গণপরিষদের কার্যক্রম প্রায় থমকে দেবার উপক্রম করে।বিশেষ করে,ব্রাহ্মীর গুপ্তহত্যার পর কিছু দল গণপরিষদ থেকে বেরিয়ে গেলে তা দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থার উপর একটি ব্যাপক আঘাত হানে।[২৫] ব্রাহ্মীর হত্যার পরপরই একটি ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদল (জাতীয় পরিত্রাণ পরিষদ) ইনাহদা পার্টির ইস্তফার দাবিতে ২০১৩ সালের জুলাই মাসজুড়ে প্রতিবাদের আয়োজন করে।[২৫] আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ঘটে 'বার্দো জাতীয় জাদুঘরে' যেখানে মিলিত হয়ে আন্দোলনকারীরা একত্রে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।মিশরের বিপ্লবের মতই, আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে ইরহাল দাবি করে (আরবি এই শব্দের অর্থ 'প্রস্থান')।[২৫]

আনসার শরীয়া নামক লিবিয়ার একটি ইসলামিক দল মোহাম্মদ ব্রাহ্মীর হত্যার জন্য দায়ী মনে করা হয় এবং এই হত্যাকাণ্ডের পরও ক্ষমতাসীন তিন রাজনৈতিক দল (তিনশক্তি) এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকে।[২৬] এ সময় নাগরিক সমাজ ও বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে মিশরে ঘটে যাওয়া তামারদ আন্দোলনকে তিউনিসিয়ার জাতীয় পরিত্রাণ পরিষদ দলের কর্মীরা অনুকরণীয় মনে করত (ইসলামিক সরকারের পতন ঘটানোর ক্ষেত্রে)। [২৫] শেষপর্যন্ত, বিন আলীর সরকার ও নানা বাণিজ্যিক সংস্থার সাথে সম্পর্ক থাকায় (এবং গণআন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায়)শ্রমিক সংগঠন ইউজিটিটি একটি মধ্যস্থতা ঘটাতে সক্ষম হয়।[২৭]

আলোচনা প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিরোধীদলীয় নেতা শোখরি বেলাইদ গুপ্তহত্যার শিকার হবার পর, ইউজিটিটি জাতীয় আলোচনার গঠনপ্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে।[২৮] কিন্তু,শোখরি বেলাইদের হত্যার পেছনে শাসকদল ইনাহদা জড়িত থাকার একটি অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে,রাষ্ট্রপতি(ভারপ্রাপ্ত) মনসেফ মারজোকির ডাকা আলোচনায় যেতে ইউজিটিটি অস্বীকৃতি জানায়।[২৮] এই ভয়ানক ঘটনার পরপরই,২০১৩ সালের ২৫শে জুলাই ধর্মনিরপেক্ষ নেতা মোহাম্মদ ব্রাহ্মীর হত্যাকাণ্ড ঘটলে জাতীয় আলোচনার সব পথ বন্ধ হবার উপক্রম হয়।[২৯] এ সময় ইউজিটিটি দেশব্যাপী দুইদিনের ধর্মঘট ডাকে ও ('ইয়ান হার্টসনের' মতে)ইউজিটিটির ৫০% সদস্য এই আন্দোলনে সাড়া দেয়।[৩০] তিউনিসিয়ার গণপরিষদের সামনে (বার্দো প্রাসাদ) হাজার হাজার প্রতিবাদকারীদের আগমণ ঘটতে শুরু করে।[৩১] এসময় তারা অবস্থান কর্মসূচীর পাশপাশি প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো বা 'তিনশক্তির' পদত্যাগ দাবি করে।[৩১] অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহ ওমরির বর্ণনায়,ব্রাহ্মীর হত্যাকাণ্ডের পর যখন শাসকদল ইনাহদা স্বীকার করতে বাধ্য হয় রাজনৈতিক বিরোধীদের সাথে কুয়ার্টেটের আনুষ্ঠানিক জোট হলে তা সরকার পতনের পূর্বাভাস হতে পারে, তখন ইতিমধ্যে গণআন্দোলনের মাত্রা সংকটপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে।[৩২] এ পর্যায়ে একটি গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ও ৬ই আগস্ট গণপরিষদের সভাপতি মুস্তফা বিন জাফর আইনসভার সমস্ত কাজ স্থগিত ঘোষণা করেন।[৩৩]

এরপর,২০১৩ সালের ২৫শে অক্টোবর তৃতীয়বারের মত জাতীয় আলোচনা সমাবেশের আয়োজন করা হলে একটি স্থায়ী সমাধান আসে।[২৯] প্রথমেই ইউজিটিটি নেতৃত্বাধীন জোট এটা পরিষ্কার করে দেয় যে তারা সাময়িকভাবে এমন একটি অরাজনৈতিক সরকার গঠন করতে চায় যেখানে চরমপন্থার কোন স্থান থাকবে না (যে চরমপন্থা তিউনিসিয়ার রাজনীতিতে ইনাহদার সরকার বয়ে এনেছে)।এর ভিত্তিতে,আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ২৪ টি দলের মধ্যে ২১টি দল ২০১৩ সালের অক্টোবরে এই সমাবেশের মূল লক্ষ্যের একটি রূপরেখা স্বাক্ষর করতে সক্ষম হয়।[৩৪] মূল লক্ষ্যগুলো হল:

১# মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া চলাকালীন একজন 'অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি' নিয়োগ দেয়া।

২# রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও আইনসভা নির্বাচনের নিয়মাবলী এবং একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা।

৩# একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন স্থাপন করা।

৪# একটি সংবিধান প্রণয়ন ও অনুমোদনের লক্ষ্যে গণপরিষদে পাঠানো।[৩৫]

'বাণিজ্য সংঘ ও আরব বিপ্লব:তিউনিসিয়ায় ইউজিটিটির ভূমিকা'তে হেলা ইউসুফি বলেছেন,জাতীয় আলোচনাকে এগিয়ে নিতে দুটি বিষয় মূখ্য ভূমিকা রেখেছে – একটি অরাজনৈতিক, কুশলীদের (টেকনোক্র‍্যাট) সরকার গঠন ও সকল সরকারি দমন-পীড়নের অবসান ঘটানো।[২৩] গুপ্তহত্যাগুলোর পর,একটি বড় রাজনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে রাজী হয়।বিশেষ করে,ইউজিটিটির সাধারণ সম্পাদক হোসিন আব্বাসি সংকটপূর্ণ মুহুর্তে আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং কুয়ার্টেটের শক্তিশালী অবস্থানকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সাংবিধানিক সমাধানে পৌছাতে চাপ দেন। [৩৬] আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নানা লোকের সাক্ষাৎকার নিয়ে লেখা হেলেন ইউসুফির বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, আলোচনায় কোন আলোচনায় সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না গেলে আব্বাসি, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের (সমাধান না আসা অব্দি)সেই কক্ষেই থাকতে বলতেন।[৩৬]

ইউটিআইসিএ (বাণিজ্য সংঘ) আর ইউজিটিটির (শ্রমিক সংঘ) আগ্রহে ও সবদলের 'জোট' গঠনের ফলে কুয়ার্টেটের সফলতা নিশ্চিত হয়।ইউজিটিটি কর্মকর্তাদের মন্তব্য ও ইউটিআইসিএ এর সভাপতি উইদেদ মুকামাউই এর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার হয় যে,তিউনিসিয়ায় বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া কুয়ার্টেটের একটি লক্ষ্য ছিল।[৩৭] যদিও ইউজিটিটির কিছু চরমপন্থী এর পক্ষে ছিল না,তবুও বাকিদের সহযোগিতায় কুয়ার্টেট,ইউটিআইসিএ এর সাথে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করতে সক্ষম হয় যার ফলে জাতীয় পর্যায়ের মধ্যস্থতায় কুয়ার্টেটের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়।[৩৭]

আলোচনার মাধ্যমে আইনসভা ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন – উভয়ের তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়।[৩৮] আইনসভা নির্বাচনে জাতীয় পরিত্রাণ পরিষদ জোটের নিদা তুনস নামক রাজনৈতিক দল তিউনিসিয়ার সংসদে জনপ্রতিনিধিদের সমাবেশকক্ষ সংখ্যাগরীষ্ঠতা লাভ করে (২০১৪ তিউনিসিয়া নির্বাচন)।[৩৮] এছাড়াও, ২০১৪ সালের ২৪শে নভেম্বর নিদা তুনস নেতা বেনজি কায়েদ এসসেবসি, সিপিআর নেতা ও সরকারের সাথে সমঝোতাকারী মারজুকিকে নির্বাচনে পরাজিত করেন।[৩৮]

২০১৫ নোবেল শান্তি পুরস্কার[সম্পাদনা]

২০১৫ সালের ৯ই অক্টোবর, ২০১১ সালের জুঁই বিপ্লবের পর তিউনিসিয়ায় একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য 'কুয়ার্টেটকে' নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়।[২]

কুয়ার্টেটের ব্যাপারে নোবেল কমিটির সভানেত্রী কাচি কুলমান ফাইভ বলেন,”এই সংগঠনটি এমন এক সময়ে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান এনেছে যখন তিউনিসিয়া গৃহযুদ্ধের দাঁড়প্রান্তে ছিল”।[৩৯] নোবেল কমিটি এটিও আশা রাখে যে, তিউনিসিয়ার এই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান অন্য দেশগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।[৪০]

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

  • নোবেল পুরস্কার প্রসঙ্গে তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি বেজি কেইদ এসসেবসি বলেন, পুরস্কারটি তিউনিসিয়ার ‘ঐক্যমত'কে স্বীকৃতি দিয়েছে।এছাড়া তিনি আরও বলেন,আলোচনা ছাড়া তিউনিসিয়ায় মতাদর্শগত পার্থক্য নিরসনের অন্য কোন উপায় নেই।[৩৯] তিউনিসিয়ার উকিল সংঘের প্রধান মোহাম্মদ ফাদেল মাফুদ বলেন,'পুরস্কারটি এই আলোচনা প্রক্রিয়ার স্বীকৃতি।এই আলোচনা প্রক্রিয়া তিউনিসিয়ায় স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যেখানে সবাই হবে মুক্ত,তাছাড়া এটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যারা মুক্তি ও গণতন্ত্র চায়।'[৪১]
  • মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বলেন, সাধারণ জনগণের ভবিষ্যত নির্ধারনে জনতার ক্ষমতায়নই শুধু স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা বয়ে আনতে পারে - তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই কুয়ার্টেট।তিনি আরও বলেন,কুয়ার্টেটের সাফল্যে প্রমাণিত হয় ,মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গণতন্ত্র আনা সম্ভব ও তা প্রয়োজন।[৩৯][৪১]
  • জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মারকেলের মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট জানান,গণতন্ত্র নিয়ে যারা কাজ করেন ও স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটানো জনগণকে এক নতুন সরকার উপহার দিতে যারা কাজ করেন তারা আসলেই 'নোবেল শান্তি পুরস্কারের' যোগ্য।[৪১]
  • জাতিসংঘের মুখপাত্র আহমেদ ফৌজি জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের এমন নাগরিক সমাজেরই প্রয়োজন যারা শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।[৩৯]
  • জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক বান কি-মুন বলেন,”এই সম্মান তাদের জন্য যারা আরব বসন্তের জন্ম দিয়েছেন ও বহু মানুষের আত্মত্যাগের চেতনাকে বাঁচাতে লড়াই করে চলেছেন,এবং এই সম্মান এটা প্রমাণ করে যে কোন সমস্যার স্থায়ী সমাধান পেতে সকল পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।আরব বসন্ত অনেক আশা নিয়ে শুরু হলেও অনেক জায়গায় এটি নিয়ে সন্দেহ দানা বাধতে শুরু করেছে।আরব বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠা হতাশাকে কাটিয়ে উঠে তিউনিসিয়া এক নতুন উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।"[৪১]

আন্তর্জাতিক সাড়া ও সহযোগিতা[সম্পাদনা]

বহির্বিশ্ব, তিউনিসিয়ায় ক্ষমতা বদলের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে ও বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে।বিশেষ করে,যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক সাহায্যের মাধ্যমে শাসক দল ‘ইনাহদা’কে আলোচনার বিষয়বস্তু মেনে চলতে উৎসাহ প্রদান করে। [২৭] এ সময় এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে,তিনশক্তির পদত্যাগ ও আলোচনার অগ্রগতির উপর নির্ভর করবে, বিশ্ব ব্যাংকআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তিউনিসিয়াকে কোন সহযোগিতা করবে কি না।[২৭]

আলোচনার পর থেকে আরো কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকে ত্বরান্বিত করার জন্য।ইউএসএআইডি(আন্তর্জাতিক উন্নয়নে মার্কিন সহযোগিতা) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি, তিউনিসিয়া ২০২০ নামক ফোরামটি তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা,কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ৭০টি দেশ থেকে সরকারি ও ব্যক্তিগত সাহায্যরুপে প্রায় $১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে।[৪২] উল্লেখ্য, 'ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক' ও 'আরব অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক' যথাক্রমে তিউনিসিয়াকে ৩.১ ও ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধার দিয়েছে।[৪৩] ২০১৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাথে এক সাক্ষাৎকারে, ইউটিআইসিএ প্রধান ও নোবেলজয়ী উইদেদ বুকামাওই বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারটি পুনরাবৃত্তি করেন।বুকামাউই বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে মুক্ত অর্থনীতি তৈরির কথা বলেন,”কিছু আইন সংশোধনের প্রয়োজন আছে।প্রশাসনের ধীরগতি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে।বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তিউনিসিয়ায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ পান না তার কারণ তারা মনে করেন এখানকার আইনগুলো পরিষ্কার নয় অথবা এখানে আইনের সঠিক প্রয়োগ হয় না.”[৪৪] নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণকালে দেয়া বক্তৃতাতেও কুয়ার্টেটের নেতারা তিউনিসিয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রন জানান।তারা এটা স্বীকার করেন যে যদিও কুয়ার্টেট,শাসনপ্রক্রিয়া ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে তবুও দেশের যুবসমাজের জন্য কর্মক্ষেত্রের অভাব রয়ে গেছে, “আমাদেরকে তিউনিসিয়ার অর্থনীতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাবার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে,পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে,সমাজের নানা গোষ্ঠীর পাশাপাশি অর্থনীতির সাথে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।“[৪৫]

কুয়ার্টেটের সমালোচনা[সম্পাদনা]

যদিও আলোচনা প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক মহল(সরকারি পর্যবেক্ষক ও বেসরকারি নানা সংগঠন) কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল,তবুও উগ্র শ্রমিকনেতারা অভিযোগ করেন এই আলোচনা পরিষদ তিউনিসিয়ার দরিদ্র শ্রমিকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।বিশেষ করে বাণিজ্য সংঘ ইউটিআইসিএর সাথে সমঝোতা করা (যে সময়ে তিউনিসিয়ার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন করছিল) কিছু শ্রমিক নেতার কাছে শ্রমিকশ্রেণীর মতাদর্শ বহির্ভূত একটি কাজ বলে মনে হয়।[৩৬] কুয়ার্টেটের আরেকটি সমালোচনা হল,যখন তিউনিসিয়া সর্বাত্মক স্বাধীনতার জন্য লড়ছিল তখন বিদেশী বিনিয়োগ,সাহায্য ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে কুয়ার্টেট তিউনিসিয়াকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পেতে দেয়নি।যেমন,২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বার্দো প্রাসাদসহ দেশের নানা স্থানে আন্দোলনকারীরা যখন ছড়িয়ে পড়ে ও পূর্ববর্তী সরকার পদত্যাগ করে তখন আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) $১.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ আটকে দেয়।পরবর্তীতে,জমার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হলে তিউনিসিয়াকে $৫০০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়।[৪৬] আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এই ভূমিকা অনেক তিউনিসীয় নাগরিকের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি করে যে,জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে না হতেই তিউনিসিয়াকে বিদেশী কুশলীদের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়া হচ্ছে।[৪৭] এছাড়া, জাতীয় আলোচনা পরিষদ(কুয়ার্টেট), বিভিন্ন পার্টি সদস্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত সরকারি আমলাদের গুরত্বপূর্ণ সব পদে বসালে অনেক তিউনিসীয় নাগরিক এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেন।[৪৮] আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংক তিউনিসিয়াকে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত হিসেবে ঘোষণা করে ও ২০১৬ সালে তিউনিসীয় সরকারের ঋণ সমস্যা সমাধানে 'অতিরিক্ত সহযোগিতা প্রকল্পের' আওতায় অতিরিক্ত $২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবার ব্যবস্থা করে।[৪৯]

কিছু ঐতিহাসিক বলেন যে,কুয়ার্টেট তৈরির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় আনতে পারলেও,দুই সংগঠন ইউজিটিটি ও ইউটিআইসিএ অর্থনীতি পুনর্গঠনে উদ্যোগ নিতে পারেনি।জোয়েল বেনিনের মত সমালোচকরা মনে করেন যদিও এসব সংগঠন ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল,তবুও দেশের অর্থনীতি অপরিবর্তিতই থেকে গেছে।[৫০] বিরোধী ঐক্যের পরেও তিউনিসিয়ার 'বিদেশী বিনিয়োগ প্রচার সংস্থা'তে কোন পরিবর্তনই আসেনি।[৫০] সমালোচকরা এই নতুন জনপ্রশাসনকে স্বীকৃতি দিলেও,২০১৪ সেপ্টেম্বরে আয়োজিত তিউনিসিয়া বিনিয়োগ কনফারেন্সে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতি সরকারের নমনীয়তার সমালোচনা করা হয়।[৫০]

এছাড়া,কুয়ার্টেট দ্বারা (উচ্চশ্রেণীভুক্ত) আমলা ও কুশলীদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন সংস্থারও সমালোচনা করা হয়।কিছু পর্যবেক্ষক,২০১১ সালের নির্বাচন পরিচালনাকারী দপ্তর ও ২০১৪ সালের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে তৈরি দপ্তরের মধ্যে তুলনা করেছেন।যেমন,অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন ২০১১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি 'বিপ্লবের উদ্দেশ্য উপলব্ধি,রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ক কর্তৃপক্ষ' নামক একটি দপ্তর গঠনের মাধ্যমে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জনগণকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা চালিয়েছে।[৫১]

প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন ও স্মৃতি[সম্পাদনা]

তিউনিসীয় সাধারণ শ্রমিক সংঘ (UGTT) নতুন সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলোতে শ্রমিকদের প্রধান কিছু দাবির প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়।বিন আলীর সরকারের সময় নাগরিক সমাজের পাশাপাশি ইউজিটিটির শ্রমিক আন্দোলনের উপর থাকা কড়া নিয়ন্ত্রণের পর এটি ছিল ভিন্নধর্মী ও উল্লেখযোগ্য একটি অর্জন। ইউজিটিটি (কুয়ার্টেটের মধ্যে কাজ করার মাধ্যমে) তিউনিসিয়ার ২০১৪ সংবিধানে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার ও ইচ্ছানুযায়ী নতুন সংগঠন তৈরির অধিকার নিশ্চিত করে।[৫২] নতুন সংবিধানটি অনুমোদনের আগপর্যন্ত, ১৯৯৪ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী,গুরুত্বপূর্ণ সব শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের এসব 'কার্যক্রম' অবৈধ ছিল।[৫২] এভাবেই,জাতীয় আলোচনা পরিষদের সাফল্য তিউনিসিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রমবান্ধব সংবিধানটি উপহার দিয়েছে এবং একইসাথে এটি দেশের শীর্ষ পর্যায়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে (জাতীয় রাজনীতির নানা সমস্যা সমাধানে) ইউজিটিটির দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছে।[৫২]

২০১৪ সালের সংবিধানে যুক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অনুচ্ছেদ ১২৫ (যার মাধ্যমে সরকারের ভেতরের দূর্নীতি দমনের জন্য একটি সংস্থা তৈরি করা হয়),এটি তিউনিসিয়ার ভবিষ্যত সরকারগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হয়।[৫৩] কুয়ার্টেট গঠন ও আলোচনা পরিষদের সাফল্যের ধারাবাহিকতায়,২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী হাবিব এসসিদ তার সরকার,ইউজিটিটি ও ইউটিআইসিএ থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি 'জাতীয় সামাজিক আলোচনা পরিষদ' তৈরি করেন।[৫৪] পরিষদে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষ এই পদক্ষেপের প্রশংসা জানিয়ে এটি 'স্থায়ী,নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ত্রিমুখী' আলোচনার সুযোগ করে দেবে বলে আশা করে।[৫৪]

চুক্তিবদ্ধ ক্ষমতা হস্তান্তর[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক গবেষকরা মনে করেন,জাতীয় আলোচনার মাধ্যমে নাগরিক সমাজ,ক্ষমতাসীন তিনশক্তি ও বিরোধীদলের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সমঝোতা সম্ভব হয়েছিল।কিছু পর্যবেক্ষক এই আলোচনাকে 'চুক্তিবদ্ধ ক্ষমতা হস্তান্তরের' একটি উদাহরণ হিসেবে দেখেন।[৫৫]

চুক্তিবদ্ধ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া তখনই ঘটতে পারে যখন একটি দেশে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো একিভূত হয় ও সমাজের নানা স্তরের ক্ষমতাধরেরা একটি সাধারণ রূপরেখার মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনে একমত হতে পারে।এই ধরনের রূপরেখায় মূলত সহিংসতা এড়ানো,প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করা ও গণআন্দোলন বন্ধের বিষয়গুলো যোগ করা থাকে।১৯৯০ এর দশকের প্রথমদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া বৈষম্য দূরীকরণ আলোচনা এ ব্যাপারে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।যদিও এসব ক্ষেত্রে সরকারের মনোভাব,সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও পূর্বনির্ধারিত অবস্থা প্রভাব ফেলে তবুও তিউনিসিয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণটি প্রযোজ্য ছিল যেহেতু তিউনিসিয়ার সরকারও ছিল এলিট(সমাজের তথাকথিত উচ্চশ্রেণী)দের নিয়ে গঠিত।[৫৫] গ্যারি এ. স্ট্র‍্যাডিওট্টো এবং সুজিয়ান গুও এ ধরনের 'সাংবিধানিক চুক্তিকে' স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে যাবার উদ্দ্যেশ্যে সরকারি ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে হওয়া আলোচনার ফসল বলে উল্লেখ করেন।[৫৬] জাতীয় আলোচনা পরিষদকে এই সংজ্ঞার আওতায় ফেলা যায় যেহেতু বিরোধী দলগুলো,ক্ষমতাসীন তিনশক্তি ও নাগরিক সমাজ মধ্যস্থতার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে একটি সমাধানে আসতে সক্ষম হয়।কিছু বিশ্লেষক অবশ্য প্রথাগত 'চুক্তিবদ্ধ ক্ষমতা হস্তান্তর' আর তিউনিসিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যে শক্ত পার্থক্য খুঁজে পান।[৫৭]

এ.এ. হোমস আর কে.কোহলার যুক্তি দেখান টেরি কার্লের দেয়া সংজ্ঞার শর্তগুলো তিউনিসিয়ায় রক্ষিত হয়নি যেহেতু আলোচনা শুরুর পরেও ইনাহদা আন্দোলনইনাহদা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলতে থাকে যার অর্থ ক্ষমতাসীনরা এসব আন্দোলন থামাতে সক্ষম হয়নি বা থামাতে চায়নি।[৫৫] ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তোজুরে ধর্মঘট ডাকার ব্যাপারে ইউজিটিটির হুমকি থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।[৩৮] এছাড়া,হোমস এবং কোহলার শোকরি বেলাইদমোহাম্মদ ব্রাহ্মীর হত্যা, তিউনিসিয়ার গণপরিষদে আন্দোলনসহ বিরোধীদের পদত্যাগকে নির্দেশ করে এটা দেখান যে আলোচকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি।[৫৮] তিউনিসিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলামিস্টদের মধ্যে মতপার্থক্য ২০১১-২০১৩ সালে এতই বেড়ে যায় যে, তিউনিসিয়ার ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীদের ৬০% জানান তারা ইসলামিস্টদের বিশ্বাস করেন না। [৫৯] মতপার্থক্য এই পর্যায়ে পৌছায় যে,২০১৩ সালের জুলাইয়ে তিউনিসিয়ার জাতীয় পরিত্রাণ পরিষদ তাদের জোটে তামারদ আন্দোলন নামক একটি দলকে যোগ করে যাদের মিশর শাখা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোরসীকে পদচ্যুত করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।[৫৮] এসব ঘটনার কারণে তিউনিসিয়ায় 'ক্ষমতা হস্তান্তরের' ঘটনাকে অনেক রাজনীতিবিশারদ 'চুক্তিবদ্ধ' বলতে অস্বীকৃতি জানান।মতানৈক্য,কুয়ার্টেটের মধ্যস্থতার মধ্যে চলা আন্দোলন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের দলবদলের হুমকি ইত্যাদি তিউনিসিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরকে কার্লের সংজ্ঞানুসারে ‘চুক্তিবদ্ধ ক্ষমতা হস্তান্তর' বলার পথে বাধা সৃষ্টি করে।[৫৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Melvin, Don (৯ অক্টোবর ২০১৫)। "Boost for Arab Spring: Tunisian National Dialogue Quartet wins Nobel Peace Prize"। CNN। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৫ 
  2. "Announcement - The Nobel Peace Prize for 2015"। ৯ অক্টোবর ২০১৫। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল|আর্কাইভের-ইউআরএল= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "The Nobel Peace Prize 2015"। Nobelprize.org। ৯ অক্টোবর ২০১৫। 
  4. "The Nobel Peace Prize 2015 - Press Release"। Nobelprize.org। ৯ অক্টোবর ২০১৫। 
  5. Benin, Joel (২০১৬)। Workers and Thieves: Labor Movements and Popular Uprisings in Tunisia and Egypt। Palo Alto: Stanford University Press। পৃষ্ঠা 49। আইএসবিএন 978-0804798044 
  6. Beinin, Joel (২০১৬)। Workers and thieves : labor movements and popular uprisings in Tunisia and Egypt। Palo Alto: Stanford University Press। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 9780804798044ওসিএলসি 936010139 
  7. Beissinger, Mark; Jamal, Amaney; Mazur, Kevin (অক্টোবর ২০১৫)। "Explaining Divergent Revolutionary Coalitions: Regime Strategies and the Structuring ofParticipation in the Tunisian and Egyptian Revolutions"Comparative Politics48 (1): 9। জেস্টোর 43664167 
  8. Omri, Mohamed-Salah (২০১৬)। Confluency (tarafud) between trade unionism, culture and revolution in Tunisia। The Tunisian General Union of Labour। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 9789938143744ওসিএলসি 1049180857 
  9. Beinin, Joel (2016). Workers and thieves : labor movements and popular uprisings in Tunisia and Egypt. Palo Alto: Stanford University Press. p. 72. আইএসবিএন ৯৭৮০৮০৪৭৯৮০৪৪. ওসিএলসি ৯৩৬০১০১৩৯.
  10. Masri, Safwan (সেপ্টেম্বর ২০১৭)। Tunisia: An Arab Anomaly (First সংস্করণ)। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 9780231179508 
  11. Masri, Safwan (সেপ্টেম্বর ২০১৭)। Tunisia: An Arab Anomaly (First সংস্করণ)। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 9780231179508 
  12. Masri, Safwan (সেপ্টেম্বর ২০১৭)। Tunisia: An Arab Anomaly (First সংস্করণ)। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 9780231179508 
  13. Masri, Safwan (২০১৭)। Tunisia: An Arab Anomaly। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 9780231179508 
  14. Wilde, Gabriele; Sandhaus, Jasmin (২০১৮)। Civil Society and Gender Relations in Authoritarian and Hybrid Regimes: New Theoretical Approaches and Empirical Case Studies (1 সংস্করণ)। Verlag Barbara Budrich। পৃষ্ঠা 174। আইএসবিএন 9783847407294জেস্টোর j.ctvdf01h0 
  15. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭), Trade Unions and Arab Revolutions: the Tunisian Case of UGTT, Routledge, পৃষ্ঠা 197, আইএসবিএন 9781315313610, ডিওআই:10.4324/9781315313610-5 
  16. Yousfi, Hela (২০১৮)। Trade unions and Arab revolutions : the Tunisian case of UGTT। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 169। আইএসবিএন 9781138232051ওসিএলসি 1044516053 
  17. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions: the Tunisian Case of UGTT। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 198। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  18. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions: the Tunisian Case of UGTT। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  19. Aall, Pamela; Crocker, Chester (২০১৭)। The Fabric of Peace in Africa : Looking beyond the State.। MQUP। পৃষ্ঠা 196। আইএসবিএন 9781928096429ওসিএলসি 987101809 
  20. Yousfi, Hela (2017). Trade unions and Arab revolutions : the Tunisian case of UGTT. Routledge. p. 198. আইএসবিএন ৯৭৮১১৩৮২৩২০৫১. ওসিএলসি ১০৪৪৫১৬০৫৩.
  21. Wilde, Gabriele; Zimmer, Annette; Obuch, Katharina; Panreck, Isabelle-Christine (২০১৮)। Civil society and Gender Relations in Authoritarian and Hybrid Regimes : New Theoretical Approaches and Empirical Case Studies। Verlag Barbara Budrich। পৃষ্ঠা 174। আইএসবিএন 9783847407294ওসিএলসি 1055202039 
  22. Omri, Mohamed-Salah (২০১৬)। Confluency (tarafud) between trade unionism, culture and revolution in Tunisia। The Tunisian General Union of Labour। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 9789938143744ওসিএলসি 1049180857 
  23. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions: The Tunisian Case of UGTT। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  24. Hostrup, Haugbølle; Verfasser, Rikke (২০১৭)। Tunisia's 2013 National Dialogue: Political Crisis Management National Dialogue Handbook. Case Studies। Berghof Foundation। পৃষ্ঠা 32। ওসিএলসি 993019999 
  25. Masri, Safwan (২০১৭)। Tunisia: An Arab Anomaly। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 65। আইএসবিএন 9780231179508 
  26. El Amrani, Issandr (২০১৫-১০-১০)। "Tunisia's National Dialogue Quartet Set a Powerful Example"Crisis Group (English ভাষায়)। Archived from the original on ২০১৯-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-০১ 
  27. Masri, Safwan (সেপ্টেম্বর ২০১৭)। Tunisia: An Arab Anomaly (First সংস্করণ)। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 9780231179508জেস্টোর 10.7312/masr17950ডিওআই:10.7312/masr17950 
  28. Wilde, Gabriele; Sandhaus, Jasmin (২০১৮)। Civil Society and Gender Relations in Authoritarian and Hybrid Regimes: New Theoretical Approaches and Empirical Case Studies (1 সংস্করণ)। Verlag Barbara Budrich। পৃষ্ঠা 174। আইএসবিএন 9783847407294জেস্টোর j.ctvdf01h0 
  29. Wilde, Gabriele, editor.। Civil society and gender relations in authoritarian and hybrid regimes : new theoretical approaches and empirical case studies। পৃষ্ঠা 175। আইএসবিএন 9783847407294ওসিএলসি 1055202039 
  30. Hartshorn, Ian M. (মার্চ ১, ২০১৭)। "Organized Interests in Constitutional Assemblies"। Political Research Quarterly70 (2): 414। আইএসএসএন 1065-9129ডিওআই:10.1177/1065912917695190 
  31. Haugbølle, Hostrup; Verfasser, Rikke (২০১৭)। Tunisia's 2013 National Dialogue: Political Crisis Management National Dialogue Handbook. Case Studies। Berghof Foundation। পৃষ্ঠা 22। ওসিএলসি 993019999 
  32. Omri, Mohamed-Salah (নভেম্বর ২০১৫)। "No ordinary union: UGTT and the Tunisian path to revolution and transition"। International Journal on Strikes and Social Conflict: 27। 
  33. Haugbølle, Hostrup; Verfasser, Rikke (২০১৭)। Tunisia's 2013 National Dialogue: Political Crisis Management National Dialogue Handbook. Case Studies। Berghof Foundation। পৃষ্ঠা 30। ওসিএলসি 993019999 
  34. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 199। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  35. Aall, Pamela, Herausgeber. Crocker, Chester A, Herausgeber. Annan, Kofi, writer of foreword. (৫ জুন ২০১৭)। The fabric of peace in Africa : looking beyond the state। পৃষ্ঠা 296। আইএসবিএন 9781928096429ওসিএলসি 1037869525 
  36. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions: the Tunisian Case of UGTT। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 202। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  37. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions। Routledge। পৃষ্ঠা 203। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  38. Benin, Joel (২০১৬)। Workers and Thieves: Labor Movements and Popular Uprisings in Tunisia and Egypt। Palo Alto: Stanford University Press। পৃষ্ঠা 131। আইএসবিএন 978-0804798044 
  39. Luis Ramirez (২০১৫-১০-০৯)। "Tunisian Mediators Win Nobel Prize"VOA 
  40. "Nobel Peace Prize for Tunisian National Dialogue Quartet"BBC News। ২০১৫-১০-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-০৮ 
  41. "The Latest: Obama praises Nobel Peace Prize choice"। Washington Times। Associated Press। ২০১৫-১০-০৯। 
  42. "The $14 billion that could keep Tunisia on the path of democracy"Middle East Eye (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৭ 
  43. "Regional partners pledge billions in help for Tunisia"Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৭ 
  44. "Ouided Bouchamaoui: "Prosperity springs from trust""UNESCO (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-১৩ 
  45. "The Nobel Peace Prize 2015"NobelPrize.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-১৩ 
  46. Hostrup, Hostrup; Verfasser, Rikke (২০১৭)। Tunisia's 2013 National Dialogue: Political Crisis Management National Dialogue Handbook. Case Studies। Berghof Foundation। পৃষ্ঠা 39। ওসিএলসি 993019999 
  47. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions: The Tunisian Case of UGTT। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 203। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  48. Yousfi, Hèla (২০১৭-০৮-০৭)। Trade Unions and Arab Revolutions: The Tunisian Case of UGTT। New York City: Routledge। পৃষ্ঠা 206। আইএসবিএন 9781315313610ডিওআই:10.4324/9781315313610 
  49. "Press Release: IMF Executive Board Approves US$2.9 billion Extended Arrangement under the Extended Fund Facility for Tunisia"IMF (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৭ 
  50. Benin, Joel (২০১৬)। Workers and Thieves: Labor Movements and Popular Uprisings in Tunisia and Egypt। Palo Alto: Stanford University। পৃষ্ঠা 133। আইএসবিএন 978-0804798044 
  51. Yousfi, Hela (২০১৭)। Trade unions and Arab revolutions : the Tunisian case of UGTT। Routledge। পৃষ্ঠা 206। আইএসবিএন 9781138232051ওসিএলসি 1044516053 
  52. Hartshorn, Ian M. (মার্চ ১, ২০১৭)। "Organized Interests in Constitutional Assemblies: Egypt and Tunisia in Comparison"। Political Research Quarterly (ইংরেজি ভাষায়)। 70 (2): 415। আইএসএসএন 1065-9129ডিওআই:10.1177/1065912917695190 
  53. Masri, Safwan M., author. (২০১৭)। Tunisia : An Arab Anomaly। New York City: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 9780231545020ওসিএলসি 1054872924 
  54. Tunis Afrique Pressé (জুন ৩, ২০১৫)। "Tunisia: Cabinet Meeting Approves Draft Law On Creation of National Council of Social Dialogue"allafrica.com। Archived from the original on মার্চ ৪, ২০১৬। 
  55. Holmes, Amy Austin; Koehler, Kevin (২০১৮-০৭-৩০)। "Myths of military defection in Egypt and Tunisia"। Mediterranean Politics0: 14। আইএসএসএন 1362-9395ডিওআই:10.1080/13629395.2018.1499216 
  56. Stradiotto, Gary A., author. (২০১০)। Democratic transitions : modes and outcomes। International Journal of World Peace। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 9781138683556ওসিএলসি 936411468 
  57. Stradiotto, Gary A., author. (2010). Democratic transitions : modes and outcomes. International Journal of World Peace. p. 7. আইএসবিএন ৯৭৮১১৩৮৬৮৩৫৫৬. ওসিএলসি ৯৩৬৪১১৪৬৮.
  58. Holmes, Amy Austin; Koehler, Kevin (২০১৮-০৭-৩০)। "Myths of military defection in Egypt and Tunisia"। Mediterranean Politics: 12। আইএসএসএন 1362-9395ডিওআই:10.1080/13629395.2018.1499216 
  59. Holmes, Amy Austin; Koehler, Kevin (২০১৮-০৭-৩০)। "Myths of military defection in Egypt and Tunisia"। Mediterranean Politics: 13। আইএসএসএন 1362-9395ডিওআই:10.1080/13629395.2018.1499216 

External links[সম্পাদনা]


পুরস্কার ও স্বীকৃতি
পূর্বসূরী
Kailash Satyarthi
Malala Yousafzai
Laureate of the Nobel Peace Prize
2015
উত্তরসূরী
Juan Manuel Santos