জ্যাক ক্রফোর্ড
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জন্ম | কেন হিল, সারে, ইংল্যান্ড | ১ ডিসেম্বর ১৮৮৬|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২ মে ১৯৬৩ এপসম, সারে, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৬)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম, অফ স্পিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১৪৬) | ২ জানুয়ারি ১৯০৬ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯০৪-১৯০৯ | সারে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯০৯/১০-১৯১৩/১৪ | দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১৪/১৫ | ওতাগো | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১৯-১৯২১ | সারে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১০ এপ্রিল ২০১৯ |
জন নেভিল ক্রফোর্ড (ইংরেজি: Jack Neville Crawford; জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৮৮৬ - মৃত্যু: ২ মে, ১৯৬৩) সারের কেন হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯০৬ থেকে ১৯০৮ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যথাক্রমে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ও ওতাগোর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শৌখিন মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা অফ স্পিন বোলিং করতেন জ্যাক ক্রফোর্ড।
১৯০৪ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান ছিল জ্যাক ক্রফোর্ডের। দ্রুত লয়ে ও আক্রমণাত্মক শক্তিশালী মারের কারণে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি। মিডিয়াম পেস অফ স্পিন আকারের বোলিং করতেন। বলে নিখুঁততা আনয়ণ ও পিচে বলকে জোড়ালোভাবে বাঁক খাওয়াতে পারদর্শী ছিলেন তিনি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার হিসেবে অপ্রত্যাশিতভাবে খেলা চলাকালীন চশমা পরিধান করতেন।
বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থাতেই অসাধারণ ক্রিকেটারের স্বীকৃতি পান জ্যাক ক্রফোর্ড। ২১ বছর বয়স হবার পূর্বেই ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিতে পেরেছেন। ১৯০৭-০৮ মৌসুমে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্যরূপে সফলতম সময় অতিবাহিত করেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে মাত্র বারো টেস্ট খেললেও ক্রিকেটবোদ্ধারা তাকে অন্যতম সেরা প্রতিভারূপে গণ্য করতেন ও ভবিষ্যতে ইংরেজ ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন। উপর্যুপরী দুই ইংরেজ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১,০০০ রান ও ১০০ উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল লাভের কৃতিত্ব রয়েছে তার।
বেশ কয়েকজন পেশাদার খেলোয়াড়কে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বাদ দেয়ার পর ১৯০৯ সালে গুরুত্বপূর্ণ খেলায় সারে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ক্রফোর্ড ও সারে কর্তৃপক্ষের মধ্যে তিক্ততা বাড়তে থাকে। ক্লাবের সাথে থাকলে কোন ভবিষ্যৎ নেই এ কথা তাকে বলা হলে জ্যাক ক্রফোর্ড অস্ট্রেলিয়া চলে যান। সেখানে তিনি শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। পাশাপাশি, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান। আর্থিক সংঘাতের কারণে সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সাথে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলে নিউজিল্যান্ডে চলে যান ও ওতাগোর পক্ষে খেলতে থাকেন। ঐ দলের সাথে সম্পর্কও তার খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। ওতাগো ত্যাগ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে নিউজিল্যান্ড সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে যান ও সারের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাব বজায় রাখেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরভাবে খেলেন। কিন্তু, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বারংবার ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার হন তিনি।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে বারোটি টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করেছিলেন জ্যাক ক্রফোর্ড। ২ জানুয়ারি, ১৯০৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩২.৬০ গড়ে ৯৪৮৮ রান ও ২০.৬৬ গড়ে ৮১৫ উইকেট পেয়েছেন। এর পাশাপাশি, নিচেরস্তরের ক্রিকেটেও অংশ নিয়েছেন জ্যাক ক্রফোর্ড। জীবনের বাদবাকী সময় নিভৃতচারী ছিলেন। ২ মে, ১৯৬৩ তারিখে ৭৭ বছর বয়সে সারের এপসম এলাকায় জ্যাক ক্রফোর্ডের দেহাবসান ঘটে।
শৈশবকাল
[সম্পাদনা]১ ডিসেম্বর, ১৮৮৬ তারিখে সারের কোলসডন এলাকার কেন হিলে জ্যাক ক্রফোর্ডের জন্ম। রেভ জন চার্লস ক্রফোর্ড ও অ্যালাইস দম্পতির তিন পুত্রের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এ দম্পতির আরও তিন কন্যা ছিল। ক্রিকেটীয় পরিবেশে জ্যাক ক্রফোর্ড বড় হয়ে উঠেন। তার বাবা ও কাকা ফ্রাঙ্ক ক্রফোর্ড কেন্টের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার অপর ভ্রাতা - ভিভিয়ান ও রেজিনাল্ড প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১] পুরো পরিবারই ক্রিকেটের সাথে জড়িত ছিল ও ক্রফোর্ডকে কিশোর অবস্থা থেকেই অনুপ্রেরণা দেয়া হতো। এগারো বছর বয়সেই প্রাপ্ত বয়স্কদের সাথে নিয়মিতভাবে খেলতে শুরু করেন।[২]
ইস্টবোর্নের গ্লেনগ্রোভ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।[৩] এরপর সেখান থেকে হেনলি-অন-টেমসের সেন্ট উইনফ্রেডস স্কুলে চলে যান। সেখানকার ক্রিকেট দলে দুই বছর খেলে ২,০৯৩ রান ও ৩৬৬ উইকেট লাভ করেন।[১] ১৯০২ সালে রেপটন স্কুলে চলে যান। প্রথম বছরেই ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন।[১] ১৯০৫ সালে বিদ্যালয় ত্যাগ করার পূর্বপর্যন্ত প্রথম একাদশে খেলেছিলেন।[৪] খেলায় তার প্রভাব অসামান্য ছিল। ১৯০৬ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পূর্ববর্তী ৪৯ বছরে সেরা তিনজন বিদ্যালয় বালক ক্রিকেটারের অন্যতমরূপে ঘোষিত হন। অন্যরা হলেন - এ. জি. স্টিল ও স্ট্যানলি জ্যাকসন।[৫] ক্রিকেট ঐতিহাসিকেরাও রেপটনে থাকাকালীন তার ক্রিকেট প্রতিভার কথা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। বেনি গ্রীন মন্তব্য করেন যে, তার এ অর্জন বিদ্যালয় বালকদের কাছে আদর্শস্থানীয়।[৬] জেরাল্ড ব্রডরিবের অভিমত, খুব সম্ভবতঃ বিদ্যালয় বালক ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ।[৭]
১৯০৪ সালের মধ্যে রেপটন ক্লাবে জ্যাক ক্রফোর্ডের একাধিপত্য ছিল। ৭৫৯ রান তোলার পাশাপাশি ৭৫ উইকেট দখল করেন। উইকেট সংগ্রহের দিক দিয়ে তার এ সংগ্রহটি দলের সকল বোলারের চেয়েও বেশি ছিল।[৮] সামগ্রিকভাবে বিদ্যালয় দলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছিলেন।[৮] উইজডেনের প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ঐ বছর তিনি ইংল্যান্ডের সর্বাপেক্ষা সেরা শৌখিন বোলার ছিলেন।[৮] তিনি মিডিয়াম-পেস অফ স্পিন বোলিং করতেন। তবে, তার ডেলিভারীকৃত বলগুলোয় গতির ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। শুরুতে ধীরলয়ে ও পরবর্তীতে ধীর ধীরে দ্রুতগতিতে বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন।[১][৬][৯]
সারে অধ্যায়
[সম্পাদনা]সারে ক্লাব দ্রুত তার প্রতিভা লক্ষ্য করে ১৯০৩ সালে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। ১৯০৪ সালের সুন্দর ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপন করায় কাউন্টি দলে খেলার জন্য আমন্ত্রিত হন।[১০] অনেক খেলোয়াড়ের মাঝে জ্যাক ক্রফোর্ডকেই পরীক্ষামূলকভাবে খেলানো হয় ও সর্বাপেক্ষা সফলতার স্বাক্ষর রাখেন।[১১] কেন্টের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অভিষেক ঘটে তার। তিন উইকেট পান ও সারে দলের পক্ষে ৫৪ রান তুলে শীর্ষ রান সংগ্রাহক হন। পরবর্তী সাত খেলায়ও তিনি যথেষ্ট ভালো খেলেন।[১] গণমাধ্যমে তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়।[১২] গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭/৪৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ও খেলায় সর্বমোট দশ উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান।[১][১৩] ঐ মৌসুমে ১৬.৯৩ গড়ে ৪৪টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভের মাধ্যমে বোলিং গড়ে কাউন্টির শীর্ষস্থান দখল করেন ও ১৬.৩৫ গড়ে ২২৯ রান তুলেন।[৬][১৪][১৫]
রেপটনে থাকা অবস্থায় ১৯০৫ সালে বিদ্যালয়ে থাকাকালে আঘাতের কারণে খেলোয়াড়ী জীবন বাঁধাগ্রস্ত হলেও ৮৫ গড়ে ৭৬৬ রান তুলেছিলেন। পাঁচ খেলায় ১৩ রানেরও কম গড়ে ৫৫ উইকেট পান।[১][৫] আগস্টের ছুটির দিনগুলোয় সারের পক্ষে পুনরায় খেলেন।[জ ১] নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৯০ রান ও তৃতীয় খেলায় ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৯ রানের প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেন। এরফলে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাউন্টির পক্ষে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিকারীর রেকর্ড টিকেছিল।[১৭] এরপর নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ৮/২৪ পান ও লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১৪২ রান তুলেছিলেন।[১৩] ঐ মৌসুমের শেষদিকে হ্যাস্টিংস উৎসবের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন জ্যাক ক্রফোর্ড।[১৮] ইংল্যান্ড সাউথের সদস্যরূপে বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, কাউন্টি চ্যাম্পিয়ন ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে বাদ-বাকী ইংল্যান্ডের সদস্যরূপে খেলেন তিনি।[১৩] ১৯০৫ সালে সারের ব্যাটিং গড়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেন। সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩৩.৯৩ গড়ে ৫৪৩ রান ও ১৮.৪৬ গড়ে ৪৭ উইকেট পান তিনি।[৬][১৪][১৫] মৌসুম শেষে ঐ বছরের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের উদ্দেশ্যে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্য হবার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা পান।[১৯]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
[সম্পাদনা]বিদ্যালয় জীবন শেষ করার পর জ্যাক ক্রফোর্ড ১৯০৫-০৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন।[জ ২][১] দলটি পূর্বেকার সফরকারী ইংরেজ দলের ন্যায় শক্তিধর ছিল না। ক্রিকেটবোদ্ধারা দলের শক্তিমান মাঝারিসারির কাউন্টি দলের সাথে তুলনা করেন।[২২] এছাড়াও, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যমে শক্তিধর খেলোয়াড়দের অবজ্ঞা করার বিষয়েও এমসিসি সমালোচিত হয়।[২৩] দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জ্যাক ক্রফোর্ডকে চিরাচরিত দায়িত্ব সংবাদ প্রতিবেদন লেখার দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় ও নিজ দেশে এ সফরকালে নিয়মিতভাবে প্রেরণ করতেন।[২৪] দলটি ওয়েস্টার্ন কেপের ওরচেস্টারে খেলাকালীন স্থানীয় গণমাধ্যমে ক্রফোর্ডের দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানের পরিকল্পনার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ১৯০৬ সালের উইজডেন সংস্করণেও একই কথা তুলে ধরা হয়েছিল।[২৫] ১৯০৫ সালে তার সফলতার বিষয়ে মন্তব্য করা হয় যে, তিনি কতদিন খেলায় অংশ নিবেন তা অনিশ্চিত। এছাড়াও, যদি তিনি টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন, তাহলে ইংল্যান্ড না-কি দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে খেলবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ক্রিকেট ঐতিহাসিক নাইজেল হার্ট উইজডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিষয়ে উল্লেখের ব্যাপারে অনুসন্ধান করেন। পাঁচ বছর পূর্বে তার কাকা দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে চলে যাবার সাথে যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করেন।[২৬]
এ সফরের সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে জ্যাক ক্রফোর্ড ৩১.২৩ গড়ে ৫৩১ রান তুলেন।[১৪] ব্যাটিং গড়ে তৃতীয় স্থান দখল করেন তিনি।[২২] বল হাতে ১৮.৪৪ গড়ে ৩৪ উইকেট পান।[১৫] এর ফলে, নিয়মিত বোলারদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে চলে আসেন।[২২] সফরের শুরুরদিকের খেলাগুলো থেকে দুইবার ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পেয়েছিলেন ও ৯৮ রান তুলেন।[১৩]
টেস্ট অভিষেক
[সম্পাদনা]১৯ বছর ৩২ দিন বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংরেজ দলের সদস্যরূপে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। এরফলে ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে ব্রায়ান ক্লোজ তার এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।[২৭] ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। প্রথম ইনিংসে ৪৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রান তুলতে সমর্থ হন।[২৮]
নিজস্ব প্রথম বলেই বার্ট ভগলারের উইকেট পান তিনি।[২৯] দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি কোন উইকেট পাননি। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বোলিং করেছিলেন। খেলায় স্বাগতিক দল এক উইকেটে জয় পায়।[৩০][৩১] উইজডেন মন্তব্য করে যে, উভয় ইনিংসেই জ্যাক ক্রফোর্ড বেশ ভালোমানের ব্যাটিং করেছিলেন।[৩২]
এক মাসব্যাপী অনুষ্ঠেয় টেস্টগুলোর মাঝে গুরুত্বহীন খেলায় ২১২ রান তুলেন।[১৩] বাদ-বাকী খেলাগুলো ইংরেজ দল মানসিক অবসাদে ভোগে।[৩৩] দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তিত হয় তার। অবস্থানের উত্তরণ ঘটিয়ে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ও পুরো সিরিজে তা বজায় থাকে।[২৮] চূড়ান্ত খেলায় ৭৪ রান তুলেন। এটিই তার প্রথম অর্ধ-শতরানের ইনিংস ছিল ও পরবর্তীতে তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ রানে পরিণত হয়।[২৮] এ খেলাতেই নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন। ৩/৬৯ লাভ করেন তিনি।[৩১]
টেস্ট সিরিজে ৩১.২২ গড়ে ২৮১ রান ও ৩৫.৭৭ গড়ে নয় উইকেট পেয়েছিলেন।[৩৪][৩৫] ঐ সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে ইংল্যান্ড দল পরাজয়বরণ করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকান গুগলি বোলারদেরকে যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে না পারাই এর প্রধান কারণ ছিল। উইজডেন তাদের প্রতিবেদনে ক্রফোর্ডের ব্যাটিং দলের কিছু ইতিবাচক বিষয়গুলোর অন্যতমরূপে তুলে ধরে।[৩৬] সফরের বিষয়ে নিজদেশে লেখাকালে এমসিসি অধিনায়ক পেলহাম ওয়ার্নার ক্রফোর্ডের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ও তরুণ বয়সে তার খেলার সামর্থ্যের কথা উল্লেখ করেন। ক্রফোর্ডের আত্মজীবনীকার মাইকেল বার্নসের অভিমত, ক্রফোর্ডের প্রতি ওয়ার্নার মোহাবিষ্ট ছিলেন।[৩৭] অন্য সমালোচকদের বিশ্বাস ছিল যে, বোলার হিসেবে তিনি আরও সফলতা লাভ করতে পারতেন। কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাটিং উইকেটের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।[জ ৩] তিনি বলকে বাউন্স করাতে সক্ষম ছিলেন ও উইকেটে বলকে বাঁক খাওয়াতে দক্ষ ছিলেন। এছাড়াও, বলে আরও স্পিন আনার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ফলশ্রুতিতে বলে নিখুঁততা আনতে পারেননি।[৪০]
সারে দলে সাফল্য
[সম্পাদনা]ইংল্যান্ডে ফিরে ১৯০৬ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১,০০০ রান ও ১০০ উইকেট লাভের ডাবল অর্জন করেন। ঐ সময়ে এটিই সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে এ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।[জ ৪][১] গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ১৪৮ রান নেয়ার পর ৭/৮৫ ও ৪/৬৩ পান। এছাড়াও, পরের খেলাতেই দশ উইকেট নিয়েছিলেন।[১৩] ৩০.১০ গড়ে সর্বমোট ১,১৭৪ রান পেয়েছিলেন তিনি[১৪] ও ২০.২৮ গড়ে ১১৮ উইকেট লাভ করেন।[১৫] এর স্বীকৃতিস্বরূপ লর্ডস ও ওভালে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে মনোনীত হন। তিনি শৌখিন খেলোয়াড়সমৃদ্ধ জেন্টলম্যানের পক্ষে খেলেছিলেন।[১] এ মৌসুম শেষে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। এতে উল্লেখ করা হয় যে, খুব কম ক্রিকেটারই এতো অল্প বয়সে এ ধরনের সমান গুণে গুণান্বিত।[১]
এ পর্যায়ে জ্যাক ক্রফোর্ড আক্রমণাত্মক, শক্তিশালী শট খেলে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন।[৪২] ১৯০৭ সালে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ওভালে অনুষ্ঠিত দুইটি ভিন্ন খেলায় নিজ দল ও স্বাগতিক দলের বিশ্রাম কক্ষে বল ফেলেন। ঐ মৌসুমের শেষদিকে কেন্টের বিপক্ষে ৯০ মিনিটে ১০৩ রান তুলেন। এটিই ঐ মৌসুমে তার একমাত্র সেঞ্চুরি ছিল। বেশ কয়েকটি বল দর্শকদের মাঝে ফেলেন তিনি। টাইমসের অভিমত, এ ইনিংসটি উড্ডীয়মান পাখীর ন্যায়।[১৩][৪২] সামগ্রিকভাবে ক্রফোর্ডের ব্যাটিং রেকর্ড পূর্ববর্তী মৌসুমের ন্যায় ছিল। ৩০.৪৭ গড়ে ১,১৫৮ রান তুলেন তিনি। [১৪] বল হাতে নিয়ে ১৬.৯৫ গড়ে ১২৪ উইকেট পান ও নিজস্ব দ্বিতীয় ডাবল লাভের অধিকারী হন।[১৫] আরও একবার জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলার জন্যে মনোনীত হন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় খেলায় ৬/৫৪ পান।
ফলশ্রুতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত তিন টেস্টের দুইটিতে খেলার সুযোগ লাভ করেন। এগুলোই ইংল্যান্ডের মাটিতে তার টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণ ছিল। তিন ইনিংস মিলিয়ে ২৬ রান ও ২৯ ওভার বোলিং করে উইকেট শূন্য ছিলেন তিনি।[৩৪][৩৫] দ্বিতীয় টেস্টে তাকে বসিয়ে রেখে ইংল্যান্ড জয় পায়। এটিই সিরিজের একমাত্র ড্রবিহীন খেলা ছিল। তবে, উইজডেন সংবাদদাতা মনে করেন যে, খেলায় পিচের অবস্থা বিবেচনায় তাকে খেলা থেকে বিরত রাখা ভুল ছিল।[৪৩] টেস্টগুলোয় সফলতা না পেলেও ঐ মৌসুমের শীতকালে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্যে তাকে মনোনীত করা হয়। তবে, তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটি শেষ হয়নি।[৪৪] তিনি গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন যে, এ সফর শেষে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় হয়তোবা থেকে যেতে পারেন।[৪৫]
অস্ট্রেলিয়া গমন, ১৯০৭-০৮
[সম্পাদনা]১৯০৭-০৮ মৌসুমে এমসিসি দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে১৯০৭-০৮ মৌসুমে এমসিসি দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে; দলটি ঠিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকারী দলের মতো, শক্তিমত্তার ব্যাপারে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। কেননা, কমপক্ষে চারজন প্রথম পছন্দের খেলোয়াড়কে দলে রাখা হয়নি। এছাড়াও, আরেকজনের জোড়ালো সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দেয়া হয়। সচরাচর, অ্যাশেজ সিরিজের জন্যে যে ধরনের প্রতিনিধিত্বকারী দল প্রেরণ করা হতো তার তুলনায় কম শক্তিশালী ছিল এ দলটি।[৪৬] সফরকারীরা টেস্ট সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে পরাভূত হয়। তবে, উইজডেনের ভাষ্য মতে, কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের তুলনায় এ সিরিজে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।[৪৭]
এ সফরের শুরুটা বেশ ভালো করেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উদ্বোধনী প্রথম-শ্রেণীর খেলায় সাত উইকেট দখল করেন।[১৩] দ্বিতীয় খেলায় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৮ মিনিটে ১১৪ রান তুলেন। ঐ সময়ে এটিই অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্রুততম শতরানের ঘটনা ছিল। এরপর বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৪০ পান।[১৩][৪২] এরপর টেস্ট সিরিজের পূর্বে ব্যাট কিংবা বল হাতে খুব কমই সফল হয়েছিলেন।[১৩] ইংল্যান্ডে অবস্থানরত ক্রিকেটার গিলবার্ট জেসপ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, জ্যাক ক্রফোর্ড নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান নন।[৪৮]
প্রথম টেস্টে তিনি কালেভদ্রে বোলিং করেছেন। খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল জয় পায়।[১৩] ইংরেজ ও অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে তার বোলিংয়ের বিষয়ে সমালোচনাধর্মী মন্তব্য প্রকাশ করা হয়।[৪৯] ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ফ্রেডরিক ফেন দ্বিতীয় টেস্টে এই দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে সঙ্গতি রেখে কিছু সময়ের জন্যে বোলিং আক্রমণ করা থেকে ক্রফোর্ডকে দূরে সরিয়ে রাখেন।[৫০] তা সত্ত্বেও, প্রথম ইনিংসে ৫/৭৯ পেয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চমৎকার ব্যাটিং উপযোগী পিচে আটকিয়ে রাখতে সমর্থ হন ও খেলায় আট উইকেট পান। এরফলে ইংল্যান্ড দল সিরিজে সমতা নিয়ে আসে।[৫১]
সিরিজের বাদ-বাকী টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দল জয় পায়। তৃতীয় টেস্টে ক্রফোর্ড সিরিজে তার একমাত্র অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ৬২ রান করে ইংল্যান্ডের ৩৬৩ রানের ইনিংসে ভূমিকা রাখেন। এরফলে তার দল প্রথম ইনিংসে লিড নেয়। তবে, অস্ট্রেলিয়া দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০৬ রান তুলে। এ পর্যায়ে প্রায় ৪৬ ওভার বোলিং করে ৩/১১৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।[১৩] চতুর্থ টেস্টেই সিরিজের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া দল বিশাল ব্যবধানের জয় পায়। বৃষ্টিবিঘ্নিত পিচের জন্য ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের পরিবেশ খুব দুরুহ হয়ে ওঠে। প্রথম দিন ক্রফোর্ড ৫/৪৮ পান। এটিই তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা বোলিং ছিল। ফলে, ব্যাটিং উপযোগী পিচেও অস্ট্রেলিয়া দল মাত্র ২১৪ রানে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়। উইজডেন লক্ষ্য করে যে, ক্রফোর্ড স্মরণীয় দক্ষতায় মিশ্র পেসে সফলকাম হন।[৫২]
সফরের এ পর্যায়ে গণমাধ্যমে তার প্রশংসা করা হয় ও তার ক্রীড়াশৈলীর গুণগান গাওয়া হয়।[৫৩] তবে, প্রচুর পরিমাণে বল করার দায়িত্ব তার স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এ সময়ে তিনি প্রায় এক স্টোন ওজন হারান। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্ট মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত হয়। এরপূর্বেই তিনি মেলবোর্নের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন ও হৃদপিণ্ডের ডানদিকে চাপ পড়েছে বলে জানানো হয়। তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলা হয়।[৫৪] ঐ খেলায় অংশ নিলেও অস্ট্রেলিয়া দল জয় পায়। তার খারাপ স্বাস্থ্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অসুস্থতা এর জন্যে দায়ী ছিল। সফর ব্যবস্থাপক পরবর্তীতে লিখেন যে, তিনি দেখতে বেশ দূর্বল হয়ে পড়েন ও তাকে খেলানো উচিত না। তাসত্ত্বেও, খেলায় তিনি ৫৪ ওভার বোলিং করে খেলায় আট উইকেট পেয়েছিলেন।[৫৫]
উইজডেন ক্রফোর্ডের বোলিংকে এ সফরের সর্বাপেক্ষা সফলতম আকর্ষণরূপে উল্লেখ করে ও বলে তার স্পিন আনয়ণের সক্ষমতার বিষয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা বাক্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এক পর্যায়ে তিনি সেরা উইকেটগুলো দখল করে খেলায় মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।[৪৭] ২৪.৭৩ গড়ে ৩০ উইকেট নিয়ে তিনি ইংরেজদের টেস্ট বোলিং গড়ে শীর্ষে ছিলেন।[৯][৩৫] তবে, প্রত্যাশার তুলনায় তার ব্যাটিং বেশ কম হয়েছে।[৪] পাঁচ টেস্টে অংশ নিয়ে ১৮.০০ গড়ে ১৬২ রান তুলেছেন। সচরাচর তিনি আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন।[২৮][৩৪] এ সফরের সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৬.৫২ গড়ে ৬১০ রান ও ২৫.১৯ গড়ে ৬৬ উইকেট পান।[১৪][১৫] ক্রফোর্ডের অবদান বেশ সাড়া জাগায় ও ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত, উত্তরোত্তর তার খেলার ধারা আরও বেগবান হবে। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ক্লেম হিল মন্তব্য করেন যে, ই খেলায় অনেক অসাধারণ ক্রিকেটার আছেন, আর আছেন একজন জ্যাক ক্রফোর্ড।[৪২] সিরিজের শেষ খেলাটিই ক্রফোর্ডের সর্বশেষ টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণ ছিল।[১৩] সর্বমোট ১২ টেস্টে অংশ নিয়ে ২২.৩৩ গড়ে ৪৬৯ রান ও ২৯.৪৮ গড়ে ৩৯ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।[৫৬]
এ সফর সমাপণের শেষদিকে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ক্রফোর্ড অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বেশ কয়েকজন অভিজাত রমণীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন ও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।[৫৭] তাসত্ত্বেও, এ সফর শেষে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।[৫৮] মে, ১৯০৯ সালে এ সফরকে ঘিরে ‘জেএন ক্রফোর্ড’স ট্রিপ টু ‘‘ক্যাঙ্গারু’’ ল্যান্ড’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করেন।[৫৯]
সারের সাথে মতবিরোধ
[সম্পাদনা]১৯০৮ মৌসুমে জ্যাক ক্রফোর্ড অল্পের জন্যে তৃতীয় ডাবল লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন। ৩৭.০৫ গড়ে ১,৩৭১ রান ও ২১.৪৮ গড়ে ৯৮ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[১৪][১৫] মৌসুমের শুরুতেই সারের অধিনায়কত্বের বিষয়ে সম্ভাব্য বিরোধের সূচনা ঘটে। ১৯০৮ সালে এইচ. ডি. জি. লেভেসন গাওয়ারকে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু আঘাতপ্রাপ্তি ও বিবাহবন্ধনের কারণে মৌসুমের শুরুতেই চার খেলায় অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। ক্রফোর্ডও মৌসুমের শুরুতে খেলা থেকে বিরত ছিলেন। সাবেক অস্ট্রেলীয় টেস্ট অল-রাউন্ডার ও মিডলসেক্সের খেলোয়াড় আলবার্ট ট্রট সংবাদপত্রে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে, লেভেসন গাওয়ারের অনুপস্থিতিতে দলের অধিনায়কত্ব প্রদান না করায় ক্রফোর্ড দলের বাইরে অবস্থান করেছিলেন। তার পরিবর্তে পাঁচ বছর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের বাইরে থাকা হ্যারি বুশকে দলের নেতৃত্বভার প্রদান করা হয়েছিল। ট্রট ক্রফোর্ডের প্রতি সদয়বান ছিলেন। এতে মন্তব্য করেন যে, সারে কর্তৃপক্ষ তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করতে পারেন।[জ ৫][৬১]
মৌসুমের বাদ-বাকী সময়ে সমারসেটের বিপক্ষে ২৩২ রান তুলেন। এটিই তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল। এছাড়াও, ডার্বিশায়ার ও হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।[১৩] তবে, সারের বোলিং বিভাগ শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় তার সুযোগ সীমিত হতে শুরু করে। তিনি সংরক্ষিত বোলার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকেন ও পূর্ববর্তী মৌসুমের তুলনায় কম বোলিং করতে থাকেন।[৬২] সমসাময়িক প্রতিবেদনগুলোয় তার খেলায় ভূমিকা রাখার বিষয়ে উল্লেখ করা হয় যে, ঐ মৌসুমে তিনি বেশ ম্রিয়মান ছিলেন। সম্ভবতঃ অতিরিক্ত ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের ক্লান্তি ও বলে স্পিন আনয়ণের চেষ্টা এর প্রধান কারণ ছিল।[৬৩] সারের অধিনায়কত্ব তখনো অস্থিতিশীল ছিল। বেশ কয়েকবার জ্যাক ক্রফোর্ড দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ঐ মৌসুমের সর্বশেষ খেলায় সহোদর ভ্রাতা ভিভিয়ানের নেতৃত্বাধীন লিচেস্টারশায়ারের মুখোমুখি হয় তার দল।[৬৩][৬৪]
ক্রফোর্ড শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে খেলায় অংশ নিতেন। তবে, তিনি যথেষ্ট সম্পদশালী ছিলেন না। ১৯০৮ সালে তার খরচের বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, অন্যান্য আর্থিক চুক্তির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে করতে পারেননি। ১৯০৫ সালে কর্তৃপক্ষ তার ধোঁপা খরচের ব্যয় প্রদান করে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তা দিতে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন করে। পাশাপাশি, ১৯০৭ সালে অনুপস্থিত খেলাগুলোর ব্যয় প্রদান না করার কথা জানায়।[৬৫] তার আর্থিক দূরাবস্থায় উপযুক্ত চাকরি লাভের অক্ষমতাও দায়ী ছিল ও সারে কর্তৃপক্ষ একই শর্তে তাকে না খেলানোর কথা জানায়। প্রয়োজনে তিনি জীবনধারনের উপযোগী ক্ষেত্র তৈরী করতে পারেন বলে জানায়।[৬৬]
পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় ১৯০৯ মৌসুমে ক্রফোর্ডের খেলার মান তুলনামূলকভাবে দূর্বল ছিল।[১৪][১৫] শুরুতে বেশ ভালো করলেও আঘাতের কারণে পরবর্তীতে বোলিং করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।[৬৭] এছাড়াও, তার ব্যাটিং গড় নিচেরদিকে পড়তে থাকে।[১৪] এ মৌসুমে সারে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজন পেশাদার খেলোয়াড়ের সাথে শৃঙ্খলাভঙ্গের সমস্যার সাথে জড়িয়ে পড়ে।[৬৮] ক্লাবের সভাপতি, লর্ড অ্যালভারস্টোন মন্তব্য করেন যে, পেশাদারী দলের জয়ের চেয়ে পরাজয়বরণকারী শৌখিন দলকেই তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। তার এ বক্তব্যের পর বেশ কয়েকজন পেশাদার খেলোয়াড় দল থেকে বাদ পড়েন।[৬৯] কয়েকজন খেলোয়াড়ের খেলোয়াড়ী জীবনে এর প্রভাব পড়লেও বেশ কয়েক মৌসুমে দলের অগ্রযাত্রা বেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।[৭০] ক্রফোর্ড অ্যালভারস্টোনের সাথে দ্বিমত পোষণ করলেও মৌসুমের অধিকাংশ সময় নিয়মিত অধিনায়ক লেভেসন গাওয়ারের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিতেন।[৬৯]
১৯০৯ সালে সফররত অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সারের ঐতিহাসিক জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে পেশাদার বোলার টম রাশবি’র অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।[৭১] তবে, তার অধিনায়কত্বের বিষয়ে বিশেষতঃ বোলিংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ না রাখার বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনাধর্মী মন্তব্য প্রকাশ করা হয়।[৭২] এ পর্যায়ে, ক্রফোর্ডের খেলার ধারও ক্রমশঃ ম্রিয়মান হতে থাকে। ব্যাট হাতে প্রায়শঃই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রচেষ্টায় আউট হতে থাকেন ও বোলার হিসেবে তার কার্যকারিতা ক্ষীণ হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে, অ্যাশেজ সিরিজকে সামনে রেখে জেন্টলম্যানের পক্ষে খেলায় তাকে মনোনীত করা হয়নি। তার নেতৃত্বে সারে ভালো ফল করতে থাকলেও গণমাধ্যম ক্রমাগত তার অধিনায়কত্বের বিষয়ে সমালোচনা করতে থাকে। বার্নস মন্তব্য করেন যে, বার্নস মন্তব্য করেন যে, একজন তরুণ খেলোয়াড় যার ক্রিকেট মাঠে ধারাবাহিক ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার কোন পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই, তার জন্য এই সময়টি নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদারক।[৭৩]
এ সময়ে সারের অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। চেস্টারফিল্ডে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে খেলার জন্য রওয়ানাকালে রাস্তায় সংঘটিত ঘটনায় আটজন পেশাদার খেলোয়াড় গ্রেফতার হন। বিষয়টি মীমাংসা করা হয় ও গণমাধ্যমে পুলিশের বাড়াবাড়ির কথা তুলে ধরা হয়।[৭৩] জুলাইয়ের প্রথমদিকে অনুষ্ঠিত খেলাটিতে ডার্বিশায়ারকে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। রাশবি ও তার সতীর্থ পেশাদার খেলোয়াড় ওয়াল্টার লিস ও ডব্লিউ. সি. স্মিথ বল হাতে নিয়ে ব্যাপক সফলতা পান।[৬৭] এর পরপরই রাশবি ও লিস অজানা কারণে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। লেভেসন গাওয়ার তাদেরকে দল থেকে বের করে দেন ও সফররত অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে সারের দ্বিতীয় খেলায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখেন।[৬৭][৭৪] ক্রফোর্ডকে ঐ খেলায় নেতৃত্বদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৬৮] কিন্তু, রাশবি ও লিসের অনুপস্থিতি ও [৭১] অপর বোলারের বাইরে চলে যাওয়া ও নিজে কাঁধের আঘাতের কারণে বোলিংয়ের অগ্রসর হতে না পারার বিষয়ে বিবেচনায় এনে দূর্বল আক্রমণ নিয়ে অগ্রসর হবার বিষয়টি তিনি ভেবে নিলেন।[৬৭] ফলশ্রুতিতে, তিনি অধিনায়কত্ব করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন।[৬৮] এরফলে দূর্বলমানের দলের বিষয়ে অস্ট্রেলীয়দের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।[৭১]
ক্রিকেট সংবাদদাতারা পরবর্তী খেলাগুলোয় সারে দলের পেশাদার খেলোয়াড়সহ ও ক্রফোর্ডের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করেন। লক্ষ্য করেন যে, ক্রফোর্ড এখন ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করছেন।[৭৫] এর অব্যবহিত পরপরই অ্যালভারস্টোন ক্রফোর্ড বরাবর লিখেন যে, সারে কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে রাশবি ও লিসের দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে লেভেসন গাওয়ারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। তিনি যদি লেভেসন গাওয়ারের কাছে ক্ষমা না চান তাহলে তাকে আর দলে নেয়া হবে না।[৭৪]
১৯১০ মৌসুমের শেষদিকে জ্যাক ক্রফোর্ড ইংল্যান্ডের মাটিতে ১০ বছরের মধ্যে তার সর্বশেষ খেলাগুলোয় অংশ নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে ইংল্যান্ড একাদশের ও সাউথ জেন্টলম্যানের পক্ষে খেলেন তিনি।[১৩] এরপূর্বে অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেটার ভিক্টর ট্রাম্পারের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। ক্লেম হিলের কাছ থেকে অ্যাডিলেডের সেন্ট পিটার্স কলেজে শিক্ষকতার পেশায় অংশগ্রহণই এর উপজীব্য বিষয় ছিল। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকায় এমসিসি দলের সফরের অন্যতম সদস্য হবার বিষয়টি জানতে পেরে মার্চ, ১৯১৯ সালে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মতবিরোধ তুঙ্গে উঠলে কলেজ কর্তৃপক্ষকে রেসিডেন্ট মাস্টার পদে নিয়োগের লক্ষ্যে টেলিগ্রাম মারফত জানান। বছরে তার বেতন ধার্য্য করা হয় £১৬০ পাউন্ড।[৬৩][৭৬] কাজের এ প্রস্তাবনাই সারে কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে অবস্থানে উদ্দীপনা জোগায় বলে বার্নস মন্তব্য করেন।[৭৭] অক্টোবর, ১৯১০ সালে ঐ কলেজে অর্ডিনারি মাস্টার পদের প্রস্তাবনা পান। দ্রুত আসলে ভ্রমণ খরচ বাবদ £৫০ পাউন্ড লাভের কথা জানানো হয়। দুই দিন পরই পরিবারের সদস্যদের রেখে তিনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন।[৭৮] এ সময় কোন দলীয় সঙ্গীকে দেখা যায়নি। কেবলমাত্র গণমাধ্যমের ব্যক্তিরাই উপস্থিত ছিলেন।[৭৯]
সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় অন্তর্ভূক্তি
[সম্পাদনা]সেন্ট পিটার্স স্কুলে থাকাকালে শিক্ষকতার পাশাপাশি খেলাধূলায়ও দেখাশোনা করতেন। তন্মধ্যে, ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব পালনও এর অংশ ছিল।[৮০] বেশ কয়েকবার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার জন্যে প্রধানশিক্ষকের কাছে অনুরোধ ব্যক্ত করেছেন।[৮১] ডিসেম্বর, ১৯০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অবতরণের পর এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা পর্যায়ের ক্রিকেটে ইস্ট টোরেন্সের পক্ষে খেলেন। শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতায় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার শেষ তিন খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৯৩-৯৪ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো দলটি শিরোপা জয় করে। দলের এ সফলতায় ক্রফোর্ড বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলেন।[৮২] খেলায় তার অংশগ্রহণের বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শুরুতে নিউ সাউথ ওয়েলস আপত্তি জানায়। কিন্তু, তিন মাস অবস্থানের বিষয়ের ফলে এ আপত্তি ধোপে টিকেনি। এনএসডব্লিউসিএ নির্বাহী কমিটি ক্রফোর্ডের বিষয়ে তাদের আপত্তি তুলে নিলেও পূর্ণাঙ্গ এনএসডব্লিউসিএ অসন্তুষ্টিজ্ঞাপন করে।[৮২] চার মৌসুমের অধিক সময় ধরে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২২ খেলায় অংশ নেন। ৪০.৮৬ গড়ে ১,৫১২ রান ও ২৩.৮৬ গড়ে ১২০ উইকেট পান তিনি।[৮৩][৮৪] গ্রীন মন্তব্য করেন যে, এ ধরনের ক্রীড়াশৈলী যে-কোন অস্ট্রেলীয়র পক্ষে টেস্ট দলে খেলার সুযোগ লাভের জন্যে যথেষ্ট ছিল।[৮৫] উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, অস্ট্রেলিয়ায় তার এ রেকর্ড বেশ আশাব্যঞ্জক।[৯]
১৯১০-১১ মৌসুমে অংশগ্রহণকৃত প্রত্যেক প্রথম-শ্রেণীর খেলাতেই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু, বল হাতে কম সফল হয়েছিলেন তিনি।[৮৬] সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে বেশ সফলতা পান। এছাড়াও, ইতোপূর্বে তিনি গুগলি বোলারদেরকে স্বার্থকভাবে মোকাবেলা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ঐ বছরে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের সদস্য হবার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ান কন্ট্রোল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে, যেহেতু তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট খেলার স্বাদ নিয়েছেন, তাই তাকে দলে না রাখার পক্ষপাতী।[৮৭] তার পরিবর্তে অল-রাউন্ডার চার্লি কেলেওয়েকে দলের সদস্য হিসেবে রাখা হয়।[৮৬] গণমাধ্যমে তার খামারী হবার সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে মার্চ, ১৯১১ সালে সেন্ট পিটার্সের পদ থেকে ইস্তফা দেন।[৮৮] এক পর্যায়ে তিনি হয়তো দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু, ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অ্যাডিলেড ওভালের কেরাণী হিসেবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। এ পদে তিনি বার্ষিক £২০০ পাউন্ড লাভ করেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কোচিং ও তরুণদের স্কাউটিং করার কথা বলা হয়।[৮৬] অন্যদিকে, ইংল্যান্ডে তার পিতা সারে কর্তৃপক্ষের মন পরিবর্তনের চেষ্টা চালালেও তা ব্যর্থ হয়। এছাড়াও, কমিটিতে নিজের নির্বাচনেও ব্যর্থ হন।[৮৯] ১৯১০ সালের দিকে সারে কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত পত্রে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মার্চ, ১৯১১ সালে কমিটি সহানুভূতির সাথে তা পর্যালোচনা করে কাউন্টিতে ক্রফোর্ডের খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।[৯০]
গণমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, পরবর্তী ১২ মাসেই ক্রফোর্ডের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। এছাড়াও, ১৯১২ মৌসুমে ইংল্যান্ডে ফিরে আসার কথা বলা হয়। তাসত্ত্বেও, ১৯১১-১২ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করেন।[৯১] তুলনামূলকভাবে কম সফল হলেও, প্রতিনিধিত্ববিহীন অস্ট্রেলিয়া একাদশের সদস্যরূপে অ্যাশেজ খেলার উদ্দেশ্যে আগত সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলেন। ঐ সময়ের বিশ্বের সেরা বোলার সিডনি বার্নসের ন্যায় বোলারদের বিপক্ষে অনেক সময় নিয়ে ১১০ রান তুলেছিলেন।[৯২][৯৩] পরের মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়া শিল্ডের শিরোপা জয় করে। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭/৩১ পান। তন্মধ্যে, হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি। ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ১৭৭ মিনিটে ১৬৩ রান তোলার পর প্রথম ইনিংসে ৮/৬৬ পান।[৯৪]
১৯১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে উত্তর আমেরিকা গমন করেন। ঐ দলটির সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন এডগার মেইন নামীয় দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান। তিনি অস্ট্রেলিয়ান কন্ট্রোল বোর্ডের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক দল প্রেরণের চেষ্টা চালান। কিন্তু বোর্ড তা করতে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন করে।[৯৫] সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে জ্যাক ক্রফোর্ড সহস্রাধিক রান ও দুই শতাধিক উইকেট পান। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় বোলার হিসেবে তিনি বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।[৯৬] পরবর্তীতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার দেখা এটিই সেরা সফর ছিল। গণমাধ্যমে এ সফর শেষে তার ইংল্যান্ড গমনের কথা বলা হলেও দলের বাদ-বাকী সদস্যদের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।[৯৭]
বিতর্কিত ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯১৩-১৪ মৌসুমে বেশ সফল সময় অতিবাহিত করেন। ৩৪ উইকেট পান তিনি। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ৮৯ মিনিটে ৯১ রান তুলেন। এরপর ১০ উইকেট পান। ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে পান এগারোটি উইকেট।[৯৮] তন্মধ্যে, শেষ খেলাটিই দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বশেষ খেলায় অংশগ্রহণ ছিল তার।[১৩] ১৯১৪ সালের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়ান কন্ট্রোল বোর্ডের অনুমোদনবিহীন দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান।[৯৯] দলটিকে ক্যান্টারবারির সাবেক ব্যাটসম্যান আর্থার সিমস নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[১০০] সফরের প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় তিনি ২১ উইকেট লাভ করেন ও সেঞ্চুরির সন্ধান পান। তবে, গুরুত্বহীন খেলায় সেরা ইনিংস খেলেন। সাউথ ক্যান্টারবারি পঞ্চদশের বিপক্ষে সোয়া পাঁচ ঘণ্টায় ৩৫৪ রান তুলেন। ইনিংসটিতে ১৪ ছক্কা ও ৪৫টি চারেরর মার ছিল। ভিক্টর ট্রাম্পারের সাথে ৬৯ মিনিটে ২৯৮ রান তুলেন। মন্টি নোবেল তাকে ৯ মিনিটে ৫০ রান তুলতে সহায়তা করেন। এরফলে অস্ট্রেলিয়া দল ৯২২/৯ করে।[১০১]
মার্চ, ১৯১৪ সালে বছরপ্রতি £৩৫০ পাউন্ডে ওতাগো ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রফোর্ডের সাথে তিন বছর মেয়াদী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ সফরের পর অ্যাডিলেডে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে প্রত্যাবর্তন করেন। জুন, ১৯১৪ সালে ডুনেডিনে চলে যাবার প্রাক্কালে সাউথ অস্ট্রেলিয়া দল থেকে পদত্যাগ করেন।[১০২] ক্রফোর্ডকে ধরে রাখতে না পারার কারণে সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়। কমিটি জনসমক্ষে ক্রফোর্ডের চুক্তির অর্থ বৃদ্ধি ও নিউজিল্যান্ড থেকে যে-কোন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কথা জানালেও তিনি কথা রাখেননি।[১০৩] পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক নাইজেল হার্ট বায়োগ্রাফি অব ক্রফোর্ড ও ক্রিস হার্ট তার এ হিস্ট্রি অব অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে (১৯৯৩) ক্রফোর্ডকে অভিযুক্ত করেন ও সাউথ অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষের সাথে ঔদত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ আনেন। হার্ট মন্তব্য করেন যে, ক্রফোর্ড অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দেনায় আবদ্ধ ছিলেন। তবে, বার্নসের অভিমত, আসন্ন বিবাহকে কেন্দ্র করে ক্রফোর্ড সর্বোচ্চ আয়ের উৎস খুঁজছিলেন। তার সাউথ অস্ট্রেলিয়ান দলীয় সঙ্গীদের কাছ থেকে সহানুভূতি পেয়েছিলেন এবং তারা তাকে বিদায়ী অভ্যর্থনাও দিয়েছিল।[১০৪] নতুন পদে যোগ দিয়েই ক্রফোর্ড দ্রুত একটি কোল্টস দল সংগঠিত করেন, যাদের ভিতর থেকেই ওটাগোর ভবিষ্যতের অনেক খেলোয়াড় উঠে আসে। ওতাগোর পক্ষে খেলার যোগ্যতা লাভের পর ডুনেডিনের ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নেন। ৫৫৯ রান ও ৮৮ উইকেট দখল করেন তিনি।[১০২] ১৯১৪-১৫ মৌসুমে ওতাগোর পক্ষে চারটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ঐ খেলাগুলো থেকে ৩৩৭ রান ও ৩০ উইকেট পান।[১৩]
১৯১৫ সালে সংক্ষিপ্তকালের জন্যে অস্ট্রেলিয়ায় যান ও এপ্রিলে মেলবোর্নে অনিতা স্মিতের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।[১০৫] অ্যাডিলেডের তরুণী স্মিত সোসাইটি প্রেসে সুন্দরী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ও ১৮ বছর বয়সে ১৯১২ সালে ক্রফোর্ডের সাথে পরিচিত হন। এ দম্পতি অ্যাডিলেডের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন।[১০৬] বার্নসের ধারণা, অ্যাডিলেডে পাওনাদারদের এড়িয়ে যেতেই জ্যাক ক্রফোর্ড মেলবোর্নে বিবাহ অনুষ্ঠান করেছেন। বিয়ের দুই দিন পরই এ দম্পতি নিউজিল্যান্ডে চলে যান।[১০৭]
ক্রফোর্ডের বেতন নির্ধারণ নিয়ে ওসিএ কর্তৃপক্ষ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে। ১৯১৫ সালে তা বৃদ্ধির জন্য আলোচনা চালান। আবাসকালীন ক্রফোর্ড নিম্নমানের বেতন পেতেন। ফলে, মুক্তভাবে অন্যান্য ক্লাবের সাথে যুক্ত হন। ফলশ্রুতিতে, ঐ মৌসুমে স্থানীয় ক্রিকেটের বিভিন্ন ক্লাবে তাকে খেলতে দেখা যেতো। এছাড়াও, ওতাগো বয়েজ হাই স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে বেতন পেতেন। এছাড়াও, অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করে যে, তিনি ওতাগো দলে দেরীতে আসেন ও গল্ফেও প্রশিক্ষণ দেন। এর বিপরীতে, ক্রফোর্ড বলেন যে, বেশ কয়েকজন ওতাগোর খেলোয়াড় অনুশীলনীতে দেরীতে আসেন। ১৯১৬ সালে আরও অভিযোগ আসলে ওসিএ তার সাথে চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতে ক্রফোর্ড £২৪৫ পাউন্ডের কম বেতনের কথা বলেন। ওসিএ £২০০ পাউন্ডের কথা বলে। দর কষাকষির এক পর্যায়ে তিনি £৩০০ পাউন্ডে ফিরে যান। এরপর ওসিএ £১৫০ পাউন্ড দিয়ে তাকে চুক্তি থেকে বিরত রাখলে তিনি এ অর্থ নিতে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন করেন। এক পর্যায়ে £২০০ পাউন্ড নিয়ে ওতাগো ত্যাগ করেন।[১০৮]
বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
[সম্পাদনা]১৯১৭ সালের নভেম্বরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তৃতীয় বছরে পদার্পণ করে। নিউজিল্যান্ড এতে যুক্ত হয়। জুলাই, ১৯১৭ সালে ক্রফোর্ডকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।[১০৮] ১৯১৭ সালের শেষদিকে ওয়েলিংটনের কাছাকাছি প্রশিক্ষণ শিবিরে তাকে রাখা হয়।[১০৮] এ সময়ে তিনি ১৯১৮ সালের শুরুরদিকে ওয়েলিংটন ক্রিকেট দলের পক্ষে দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১৩] যখন তাকে সপ্তাহান্তের পাস দেওয়া হতো, তখন তিনি ডানেডিনে তার স্ত্রীর কাছে চলে যেতেন।[১০৯]
পশ্চিম রণাঙ্গনে মোতায়েনের পূর্বে তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন। তবে তিনি পৌছাতে দেরি করায় যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। নিউজিল্যান্ড রাইফেল ব্রিগেডের অংশ ছিলেন তিনি। তবে, তিনি কোন পদে ছিলেন তা জানা যায়নি।[১০৮] রেপটন স্কুল ওয়ার রেজিস্টারে দেখা যায় যে, তিনি রাইফেলম্যান ছিলেন। কিন্তু, নিউজিল্যান্ড গণমাধ্যমে তাকে কোয়ার্টারমাস্টার সার্জেন্ট পদবীর কথা লেখা হয়। ১৯৯২ সালে উইজডেন ক্রিকেট মান্থলিতে প্রকাশিত নিবন্ধে জিম সালিভান উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনী থাকাকালীন সময়ে ক্রফোর্ডকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছিলো।। এর কারণ জানা যায়নি। তবে, বার্নস মনে করেন যে, তিনি স্বাধীনচেতা ও বেখেয়ালী মনোভাব রাখায় সামরিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা তার জন্যে বেশ কঠিন বিষয় ছিল।[১১০]
সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তার স্ত্রী অ্যাডিলেডে চলে যান।[১১১][১১২] অনিতার বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায় যে, ১৯১৬ সালের দিকে তাদের বৈবাহিক জীবন সঙ্কটের মুখে পড়ে। ঐ বছরের নভেম্বর মাসে জ্যাক ক্রফোর্ড তাকে ফেলে রেখে চলে যান। তিনি দাবী করেন যে, ঐ সময় থেকে তিনি আর্থিক কোন সহযোগিতা পাননি। যুদ্ধ শেষ হবার পর অস্ট্রেলিয়ায় পিতামাতার কাছে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীতে কাপড়ের নকশাকার এবং ফ্যাশন ক্রেতা হিসেবে তার ক্যারিয়ার করার জন্য তাকে লন্ডনে চলে আসতে হয়েছিল। ১৯২১ সালে ঐখানে ক্রফোর্ড বসবাস করলেও এই দম্পতি আর একত্রিত হননি। তারা বিবাহ-বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হন। ১৯২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা প্রকাশিত হয়। আদালতে অনিতা উল্লেখ করেন যে, জ্যাক ক্রফোর্ড তৃতীয় পক্ষের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। এরপর অনিতা পুনরায় বিবাহ করেন ও নক্সাকার এবং অর্কেস্ট্রা পরিচালক হিসেবে একটি সফল পেশাদার ক্যারিয়ার অর্জন করতে সমর্থ হন।[১১৩]
ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন
[সম্পাদনা]প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে জ্যাক ক্রফোর্ড ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করে বসবাস করতে থাকেন।[৯] এপ্রিল, ১৯১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সেনাবাহিনী থেকে তাকে অবমুক্ত করা হয়।[১১৪] কাজের সন্ধানে তিনি সারে কর্তৃপক্ষকে খেলায় তাকে নেয়ার জন্যে লিখিতভাবে অনুরোধ করেন। তবে, কমিটি কাউন্টি দলে তাকে খেলতে বললেও কোন কাজ দিতে পারবে না বলে জানায়।[১১৫] ক্রফোর্ড হয়তো পেশাদার ক্রিকেট খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন এমন ইচ্ছাপোষণ করা একজন সাবেক পাবলিক স্কুলের ক্রিকেটারের জন্য অচিন্তনীয় ছিল; তাবে এক পর্যায়ে রেপটনে, তার প্রাক্তন বিদ্যালয়ে কাজ পান।[১১৫] ঐ সময়ে তিনি কোন পদে নিযুক্তি লাভ করেছিলেন তা জানা যায়নি। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটের কোন পদে দেখা যায়নি। খুব সম্ভবতঃ শৌখিন মর্যাদা ধরে রাখতে তিনি শিক্ষতায় নিযুক্ত ছিলেন।[১১২] ঐ শিক্ষাবর্ষের শেষদিক পর্যন্ত তিনি যুক্ত ছিলেন। ক্রিকেট দলের বাজে ফলাফলের কারণেই হয়তো তার এ স্বল্পকালীন অবস্থান ছিল। তবে, বার্নসের অভিমত, সারের প্রতিপক্ষ না হবার সাথে এর সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন রেকর্ডে তার অনিয়মিত থাকাও এর কারণ ছিল। ১৯২১ সালে ওল্ড বয়েজ ক্রিকেট দল রেপটন পিলগ্রিমস গঠন করা হলে বিদ্যালয়ের একমাত্র সাবেক প্রথিতযশা খেলোয়াড় হিসেবে তাকে এর সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি। ১৯৫২ সালের পূর্বপর্যন্ত তাকে ক্লাবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।[১১৬]
সারের সাথে মতানৈক্য দূর হবার পর ১৯১৯ সালে ক্রফোর্ড তার ইংরেজ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন।[৯] জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন। এরপর সারে দলের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ান ইম্পেরিয়াল ফোর্সেসের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ১৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। উইজডেন পরবর্তীতে এ ইনিংসটিকে তার জীবনের সেরা ইনিংস হিসেবে গণ্য করে।[৯][১৩] সফরকারীদের ৪৩৬ রানের জবাবে সারে দল ২৬/৫ অবস্থায় চলে যায়। এ সময়ে তিনি ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। নেভিল কারদাস মন্তব্য করেন যে, ক্রফোর্ড অস্ট্রেলীয় আক্রমণের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ান ও পাল্টা জবাব দেন।[১৩][১১৭] নবম উইকেট পতনের পর তিনি তার রানকে দ্বিগুণ করেন। ৩৫ মিনিটে সংগৃহীত ৮০ রানের মধ্যে তার অংশগ্রহণ ছিল ৭৩ রান। এর ফলে সারে দল ফলো-অন এড়াতে সক্ষম হয়।[১১৭] অন্যান্য সফলতার মধ্যে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৯২ রান করেন। কেন্টের বিপক্ষে ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। জ্যাক হবস ও তিনি ৩২ মিনিটে ৯৬ রান তুলেছিলেন। তাদের এ জুটির কল্যাণে সারে দল স্বল্প সময়ের অসম্ভব জয়ের লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে পূরণ করতে পেরেছিল। [১৩][১১৮]
১৯১৯ সালে তিনি সর্বমোট আটটি খেলায় অংশ নিয়ে ৪৮৮ রান ও ২০ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।[১৪][১৫] উইজডেন মন্তব্য করে যে, পূর্বের ন্যায় তার ব্যাটিং বেশ চমকপ্রদ ছিল। তবে, বলে স্পিন ও নিখুঁততার অভাব পরিলক্ষিত হয়।[১১২] এরপর তিনি আরও চারটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১৩] রোচডেলে ডানলপ রাবারের একটি কারখানায় ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯২০ সালে রোচডেল ক্রিকেট ক্লাবে শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন।[১১৯] কিন্তু, ১৯২১ সালে তিনি ঐ ক্লাব ত্যাগ করেন। ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের অনুমান তিনি সারেতে ফিরে এসেছিলেন।[১২০] মারটন পার্কে পরিবারের সাথে বসবাস করতে থাকেন ও স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবে খেলতেন।[১২১] তার খেলা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচগুলোর মধ্যে একটি ছিলো ১৯২১ সালে সফররত অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে সারের হয়ে খেলা ম্যাচ এবং বাকিগুলো ছিলো জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায়।[১৩] সমগ্র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে ৩২.৬০ গড়ে ৯,৪৮৮ রান ও ২০.৬৬ গড়ে ৮১৫ উইকেট পান তিনি।[৫৬]
১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯৫২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত এল্ডার্স এন্ড এফিসে আমদানীকারকের চাকরি করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ক্রিকেট ও হকি খেলায় অংশ নিতেন। কিন্তু, শুরুরদিকের ক্রিকেট জীবনকে আড়াল করে রাখতে চাইতেন।[১১১]
ডিসেম্বর, ১৯২৫ সালে হিল্ডা মে বেম্যান নাম্নী রমণীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। তবে, এ দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন।[১১১][১২২] তিনি ক্রিকেটের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। পেলহাম ওয়ার্নারের জন্মদিনের নৈশভোজনে, ফ্রি ফরেস্টার্স ক্রিকেট ক্লাবের শতবার্ষিকী উদযাপনে ও জ্যাক হবসের ৮০তম জন্মদিনে বেতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।[১১১] ১৯৬২ সালের শুরুতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ও বছরের বাকি সময় অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটান।[১২৩] ২ মে, ১৯৬৩ তারিখে ৭৬ বছর বয়সে সারের একটি হাসপাতালে তার দেহাবসান ঘটে।[৪][৯]
ধরন এবং শৈলী
[সম্পাদনা]দি টাইমসে ক্রফোর্ডের স্মরণে লেখা বার্তায় তাকে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত করে বলা হয়: "যদিও তিনি অবধারিতভাবে চশমা পড়েই খেলতেন, তারপরও তিনি ছিলেন সব থেকে আকর্ষণীয় খেলোয়াড়, একজন আগ্রাসী ব্যাটসম্যান এবং ভয়ংকর মাঝারি পেসের বোলার"।[৪] উইজডেন তাকে "হার্ড হিটিং" বা মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি মূলত সামনের পায়ে খেলতেন।[১] তার ব্যাটিং পদ্ধতি ছিলো কেতাদুরস্ত, তিনি ঠিকভাবে বলের দিকে পা বাড়াতেন[৯২] এবং সোজা ব্যাটে খেলতেন।[১] হার্বি কলিন্স, যিনি অস্ট্রেলিয়াতে ক্রফোর্ডের সাথে খেলেছেন, তিনি ক্রফোর্ডের একটি ইনিংসকে "হারিকেন ইনিংস, ক্লাসিকাল শটে পরিপূর্ণ এবং বিস্ফোরকের মতো আগ্রাসী" বলে মন্তব্য করেন।[১২৪]
বোলার হিসেবেও ক্রফোর্ডের টেকনিক ছিলো কেতাদুরস্ত।[৯২] তবে সাধারণত স্পিন বোলাররা বল ঘুরাতে তাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় আঙ্গুল ব্যবহার করলেও ক্রফোর্ড দ্বিতীয় ও তৃতীয় আঙ্গুল ব্যবহার করতেন।[১২৫] তার বোলিংয়ের গতি দ্রুত থেকে মাঝারি সীমার মধ্যে থাকতো এবং তিনি বল এতই ঘুরাতেন যে বল ছাড়ার সময়ে তার আঙ্গুলে শব্দ করে উঠতো।[১২৬] নিয়ন্ত্রনী বোলার হওয়ার জন্য ব্যাটসম্যানরা তার বিপক্ষে সহজে রান করতে পারতো না।[১] ক্রফোর্ড ব্যাট থেকে আউটসুইং করে বল বাইরের দিকে নিতে পারতেন, কিন্ত তার আসল শক্তি ছিলো তার করা অফ ব্রেক। ক্লেম হিল বলেন যে, ক্রফোর্ড বলকে কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত ঘুরাতে পারতেন, যদিও অস্ট্রেলিয়ার শক্ত পিচে কাজটা দুঃসাধ্য ছিলো।[৯২]জন আর্লট তাকে বিস্ময়বালক আখ্যা দিয়ে বলেন, "অন্যরা যেখানে সোজা লাইন থেকে সামান্য পরিমাণ বল ঘুরাতে একদমই সমর্থ হননি, সেখানে তিনি ছিলেন বিষ্ময়কর স্কুলবালক যিনি অস্ট্রেলিয়ান পিচে বল ঘুরাতে পারদর্শী ছিলেন"।[১২৭] ১৯৩৭ সালে হার্বি কলিন্স লেখেন, যখন ওয়ালি হ্যামন্ডকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অল-রাউন্ডার হিসাবে বিবেচনা করা হতো, তখন যারা ক্রফোর্ড আর হ্যামন্ড উভয়কেই দেখেছেন, তারা ক্রফোর্ডকেই বেশি ভালো হিসেবে মূল্যায়ন করতেন।[১২৪]
সারে কাউন্টি ক্লাবের সাথে বিরোধের জের ধরে ক্রফোর্ডের ক্যারিয়ার বাঁধাগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে নেভিল কার্ডাস বলেন, "সারের সাথে তার ভাঙ্গন অবশ্যই তাকে নিজস্ব খ্যাতি ও যশ থেকে বঞ্চিত করে, একই সাথে তা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক এক ক্ষতি। একজন মানুষের জীবন নিয়ে যদি বাজি ধরে কিছু বলা যায়, তবে বলতে হয় যদি তিনি কাউন্টি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতেন, তবে তিনি ইংল্যান্ড অধিনায়কদের ভিতরে একটি বিশেষ অবস্থানেই থাকতেন।"[১১৭] দি টাইমস মন্তব্য করে, "এটা এই শতাব্দীর প্রথম পর্বের সময়কার ইংলিশ ক্রিকেটের একটি চূড়ান্ত দুর্ভাগ্য যে তার অসাধারণ সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঠিকভাবে কখনোই ঘটেনি।"[৪] হার্ট পর্যবেক্ষণ করেন যে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত মাঠে তার অনেক সাফল্য ছিলো, তবে তারপর ইংলিশ ক্রিকেট থেকে অনুপস্থিতি তার ক্যারিয়ারকে স্থবির করে দেয়। হার্ট উল্লেখ করেন ক্রফোর্ডের "স্কোরবোর্ডে অবদান রাখার ক্ষমতা"কে। তিনি খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন, শক্তিশালীদের রুখে দিতে পারতেন, তরুণদের কাছে নিজেকে জনপ্রিয় করতে পারতেন এবং অন্তরে তরুণ ব্যক্তিদের কাছে নায়কোচিত পারফরম্যন্সকে তুলে ধরতেন।[১২৮] তিনি সমাপ্তি টানেন এই বলে যে ক্রফোর্ডের ক্রীড়াজীবনের শেষ চল্লিশ বছর "তুলনামুলক আড়ালে" কেটেছে। সারের কাউকেই কখনো ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায় নি[১১৭] এবং লেভেসন গাওয়ার ক্রফোর্ডের কথা তার জীবনীতে উল্লেখও করেন নি।[১২৯]
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ তিনি সারের হয়ে প্রাক-মৌসুমী একটি খেলায় অংশ নেন "জেন্টলমেন অফ ইংল্যান্ড" এর বিপক্ষে, এ সময়ে স্কুলের মৌসুম শুরু হয় নি।[১৩] কাউন্টিও রেপটনকে সাময়িক সময়ের জন্য খেলার অনুমতি প্রার্থনা করে লিখেছিল, তবে স্কুল সে অনুমতি দিতে প্রত্যাখ্যান করে।[১৬]
- ↑ ক্রফোর্ডের ক্যারিয়ারজুড়ে ইংরেজ ক্রিকেটের তত্ত্বাবধানে ছিলেন এমসিসি। এই সফরের সময়ে, আনুষ্ঠানিক ইংরেজ দল এমসিসির নাম, রং এবং ব্যাজ নিয়ে খেলতো এবং কেবল টেস্ট ম্যাচের সময়ে তারা "ইংল্যান্ড" নামে অলংকৃত হতো।[২০][২১]
- ↑ বিশ্বের কিছু কিছু অংশে ভালো ঘাসের পিচ তৈরী করা কঠিন বলে টার্ফের বিকল্প হিসেবে ম্যাটিং পিচ ব্যবহার করা হয়। ম্যাটিং পাট বা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি করা হতো,[৩৮] এবং কাদা, ঘাস বা পাথরের স্তরের উপরে বিছিয়ে দেওয়া হতো।[৩৯]
- ↑ ব্রায়ান ক্লোজ ১৯৪৯ সালে রেকর্ডটি ভঙ্গ করেন।[৪১]
- ↑ বার্নসের মতে এটিই ছিলো ক্রফোর্ডের অনুপস্থিতির কারণ, কারণ তার বাবা ট্রটের নিবন্ধটি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। ক্রফোর্ডের কোন খবর সংবাদমাধ্যমে আসলেই তার বাবা তা সংরক্ষণ করতেন। [৬০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ "John Crawford (Cricketer of the Year)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 1, Location 119.
- ↑ Burns, Chapter 1, Location 143.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Mr J. N. Crawford"। The Times। London। ৪ মে ১৯৬৩। পৃষ্ঠা 12।
- ↑ ক খ Green, ed (1982), p. 335.
- ↑ ক খ গ ঘ Green (1988), p. 146.
- ↑ Brodribb, Gerald (১৯৮০)। "School Records"। Swanton, E. W.। Barclays World of Cricket (2nd সংস্করণ)। Collins। পৃষ্ঠা 537। আইএসবিএন 0-00-216349-7।
- ↑ ক খ গ Green, ed (1982), pp. 334–35.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "Obituaries in 1963 (Crawford's obituary)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯৬৪। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 1, Location 210.
- ↑ Hart, p. 4.
- ↑ Burns, Chapter 2, Location 235.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ "Player Oracle JN Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ "First-class Batting and Fielding in Each Season by Jack Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "First-class Bowling in Each Season by Jack Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 2, Location 317.
- ↑ Burns, Chapter 2, Location 339.
- ↑ Burns, Chapter 2, Location 373.
- ↑ Burns, Chapter 2, Location 376.
- ↑ "MCC History"। MCC। ৭ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৩।
- ↑ Peebles, I. A. R. (১৯৮৬)। "History (1900–1914)"। Swanton, E. W.; Plumptre, George; Woodcock, John। Barclay's World of Cricket (3rd সংস্করণ)। London: Willow Books in association with Barclays Bank PLC। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 0-00-218193-2।
- ↑ ক খ গ Wynne-Thomas, p. 59.
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 392.
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 398.
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 446.
- ↑ Hart, p. 6.
- ↑ Hart, p. 7.
- ↑ ক খ গ ঘ "Statsguru: JN Crawford Test matches (Innings by innings batting)"। ESPNCricinfo। ২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 496.
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 503.
- ↑ ক খ "Statsguru: JN Crawford Test matches (Innings by innings bowling)"। ESPNCricinfo। ২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "England v South Africa 1905–06 (First Test)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "England v South Africa 1905–06 (Second Test)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ গ "Test Batting and Fielding in Each Season by Jack Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ গ "Test Bowling in Each Season by Jack Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "The M.C.C.'s team in South Africa, 1905–06"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 516.
- ↑ Swanton, E. W.; Plumptre, George; Woodcock, John, সম্পাদকগণ (১৯৮৬)। "Glossary"। Barclay's World of Cricket (3rd সংস্করণ)। London: Willow Books in association with Barclays Bank PLC। পৃষ্ঠা 698। আইএসবিএন 0-00-218193-2।
- ↑ Streeton, Richard (১৯৮১)। P. G. H. Fender: A Biography। London: Faber & Faber। পৃষ্ঠা 127। আইএসবিএন 0-571-11635-3।
- ↑ Burns, Chapter 3, Location 605.
- ↑ Frindall, Bill, সম্পাদক (১৯৮৬)। The Wisden Book of Cricket Records। London: MacDonald Queen Anne Press। পৃষ্ঠা 304। আইএসবিএন 0-356-10736-1।
- ↑ ক খ গ ঘ Green (1988), p. 147.
- ↑ "England v South Africa 1907 (Second Test)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 4, Location 809.
- ↑ Burns, Chapter 4, Location 821.
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 979.
- ↑ ক খ "The MCC's team in Australia, 1907–08"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 1080.
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 1146.
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 1137.
- ↑ "Australia v England 1907–08 (Second Test)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১১।
- ↑ "Australia v England 1907–08 (Fourth Test)"। Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। ১৯০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 1206.
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 1218.
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 1223.
- ↑ ক খ "Jack Crawford (ESPNCricinfo player profile)"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1234.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1242.
- ↑ Burns, Chapter 6, Location 976.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1270.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1258.
- ↑ Hart, p. 17.
- ↑ ক খ গ Hart, pp. 17–18.
- ↑ "Surrey v Leicestershire in 1908"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1286.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1305.
- ↑ ক খ গ ঘ Hart, p. 21.
- ↑ ক খ গ Green, ed (1982), p. 222.
- ↑ ক খ McKinstry, p. 97.
- ↑ McKinstry, p. 48.
- ↑ ক খ গ Green (1988), p. 148.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1328.
- ↑ ক খ Burns, Chapter 7, Location 1366.
- ↑ ক খ "Surrey C. C. and Mr Crawford: Full Text of Correspondence"। Surrey Mirror। Redhill, Surrey। ৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৯। পৃষ্ঠা 6।
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1478.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1525.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1512.
- ↑ Hart, p. 18.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1535.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1560.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1589.
- ↑ ক খ Hart, p. 24.
- ↑ "First-class Batting and Fielding for Each Team by Jack Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১১।
- ↑ "First-class Bowling for Each Team by Jack Crawford"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১১।
- ↑ Green (1988), p. 152.
- ↑ ক খ গ Hart, p. 25.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1593.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1594.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1584.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1601.
- ↑ Hart, pp. 25–26.
- ↑ ক খ গ ঘ Cardus, Neville (১৯৮০)। "Biographies: Jack Crawford"। Swanton, E. W.। Barclays World of Cricket (2nd সংস্করণ)। Collins। পৃষ্ঠা 153। আইএসবিএন 0-00-216349-7।
- ↑ "Australian XI v Marylebone Cricket Club in 1911–12"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১১।
- ↑ Hart, p. 27.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1644.
- ↑ Hart, p. 28.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1678.
- ↑ Hart, p. 29.
- ↑ Burns, Chapter 9, Location 1705.
- ↑ Hart, pp. 30–31.
- ↑ Green, ed (1982), p. 381.
- ↑ ক খ Hart, p. 31.
- ↑ Burns, Chapter 9, Location 1717.
- ↑ Burns, Chapter 9, Location 1733.
- ↑ Hart, p. 32.
- ↑ Burns, Chapter 8, Location 1614.
- ↑ Burns, Chapter 9, Location 1742.
- ↑ ক খ গ ঘ Hart, p. 33.
- ↑ Burns, Chapter 9, Location 1797.
- ↑ Burns, Chapter 9, Location 1822.
- ↑ ক খ গ ঘ Hart, p. 3.
- ↑ ক খ গ Hart, p. 34.
- ↑ Burns, Chapter 10, Locations 1935, 1988.
- ↑ Burns, Chapter 10, Location 1848.
- ↑ ক খ Burns, Chapter 10, Location 1839.
- ↑ Burns, Chapter 10, Location 1853.
- ↑ ক খ গ ঘ Green (1988), p. 153.
- ↑ Green, ed (1982), p. 751.
- ↑ Hart, p. 36.
- ↑ Burns, Chapter 10, Location 1932.
- ↑ Burns, Chapter 10, Location 1940.
- ↑ Burns, Chapter 10, Location 2003.
- ↑ Burns, Epilogue, Location 2054.
- ↑ ক খ Collins, H. L. (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৭)। "Fine English players: Collins Recalls Old Friends"। The Courier-Mail। Brisbane। পৃষ্ঠা 9। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ Burns, Chapter 5, Location 863.
- ↑ Burns, Chapter 5, Location 873.
- ↑ Arlott, John (১৯৮৫)। Arlott on Cricket। London: Fontana/Collins। পৃষ্ঠা 242। আইএসবিএন 0-00-637007-1।
- ↑ Hart, pp. 36–37.
- ↑ Burns, Chapter 7, Location 1470.
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ক্ল্যারি গ্রিমেট
- লিওরনার্ড গার্নসি
- নরম্যান উইলিয়ামস
- উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার
- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বলেই উইকেটলাভকারী বোলারদের তালিকা
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Burns, Michael (২০১৫)। A Flick of the Fingers: The Chequered Life and Career of Jack Crawford। Worthing, Sussex: Pitch Publishing Ltd। আইএসবিএন 978-1-78531-063-8। এএসআইএন B00UXER4PM।
- Green, Benny, সম্পাদক (১৯৮২)। Wisden Anthology 1900–1940। London: Queen Anne Press। আইএসবিএন 0-7472-0706-2।
- Green, Benny (১৯৮৮)। A History of Cricket। London: Guild Publishing। আইএসবিএন 978-0-71262-080-2। ওসিএলসি 671855644।
- Hart, Nigel (২০০৩)। Whimpress, Bernard, সম্পাদক। J. N. Crawford: His Record Innings By Innings। Nottingham: Association of Cricket Statisticians and Historians। আইএসবিএন 1-902171-79-9।
- McKinstry, Leo (২০১১)। Jack Hobbs: England's Greatest Cricketer। London: Yellow Jersey Press। আইএসবিএন 978-0-224-08329-4।
- Swanton, E. W., সম্পাদক (১৯৮০)। Barclays World of Cricket (2nd সংস্করণ)। Collins। আইএসবিএন 0-00-216349-7।
- Wynne-Thomas, Peter (১৯৮৯)। The Complete History of Cricket Tours at Home and Abroad। London: Guild Publishing। আইএসবিএন 978-0-60055-782-1।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Booth, Keith; Booth, Jennifer (২০১৬)। Rebel With A Cause: The Life and Times of Jack Crawford। Sheffield: Chequered Flag Publishing। আইএসবিএন 978-0-9932152-5-4।
- Lemmon, David (১৯৮৯)। The History of Surrey County Cricket Club। London: Christopher Helm। আইএসবিএন 0-7470-2010-8।
- ১৮৮৬-এ জন্ম
- ১৯৬৩-এ মৃত্যু
- ১৮৯০ থেকে ১৯১৮ সময়কালীন ইংরেজ ক্রিকেটার
- ইংরেজ ক্রিকেটার
- ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটার
- উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার
- ওতাগোর ক্রিকেটার
- ওয়েলিংটনের ক্রিকেটার
- জেন্টলম্যানের ক্রিকেটার
- জেন্টলম্যান অব দ্য সাউথের ক্রিকেটার
- দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার
- নর্থ ভার্সাস সাউথের ক্রিকেটার
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নিউজিল্যান্ডীয় সামরিক কর্মকর্তা
- মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেটার
- সারের ক্রিকেটার