বিষয়বস্তুতে চলুন

ইব্রাহিম ইবনে আবদুল্লাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইব্রাহিম ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহাদ
إبراهيم بن عبد الله بن الحسن
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম ৯৭ হিজরি
৭১৬ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু১৪৫ হিজরি
৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ
ধর্মইসলাম
পিতামাতা

ইব্রাহিম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আল-হাসান (৭১৬-৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন আরব নেতা এবং হাদিস বর্ণনাকারীদের একজন। তাকে প্রায়শই তার ভাই ইমাম মুহাম্মদ আল-নাফস আল-জাকিয়া (অর্থ: বিশুদ্ধ আত্মা) এর নামের সাথে উল্লেখ করা হয়। আব্বাসীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে তাদের অংশগ্রহণ ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। খলিফা আল-মনসুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ইতিহাস পর্যালোচনার উৎসগুলোতে এই দুই ভাইয়ের নাম একত্রে পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন কবিও ছিলেন। আরবের ইতিহাস ও কবিতার একজন বিদ্বান হিসেবে তার খ্যাতি ছিলো।

ইব্রাহিম ইবনে আব্দুল্লাহর বাবার নাম আবদুল্লাহ আল-মাহাদ এবং মায়ের নাম হিন্দ বিনতে আবি উবায়দা। তার বাবা ছিলেন হাসান ইবনে আলী এবং হুসাইন ইবনে আলী উভয়ের নাতি। এইদিক দিয়ে ইব্রাহিম ইসলামের নবী মুহাম্মাদের পরিবারের সদস্য ছিলেন। তার মা ছিলেন একজন সুপরিচিত কবি, যিনি পূর্বে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের এক পুত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

বিদ্রোহ

[সম্পাদনা]

আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ এর খিলাফতের সময় থেকে ইব্রাহিম ও তার ভাই মুহাম্মদ আল-নাফস আল-জাকিয়া একসাথে আত্মগোপনে ছিলেন। মুহাম্মদ খিলাফত প্রত্যাশা করতেন। ৭৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আল-মনসুর খিলাফত গ্রহণ করার পরেও এই দুই ভাই একইভাবে বিদ্রোহী আচরণ বজায় রেখেছিলেন।[] খলিফা আল-মানসুর এই দুই ভাইয়ের রাজনৈতিক সংস্কারবাদীতা এবং নিজের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাদেরকে ভয় করা শুরু করেন। তাদের সন্ধান এবং দমন করতে সর্বত্র খোঁজ চালিয়ে যান। ৭৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাদের দমন করতে তিনি বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে বন্দী করেন। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন তাদের বাবা আব্দুল্লাহ আল মাহাদ এবং চাচা। তাদের জেলে রেখে নানাভাবে নির্যাতন করেন। এদিকে মুহাম্মদ ও ইব্রাহিম আরব উপদ্বীপে ভ্রমণ করেন এবং তাদের সমর্থকদের একত্রিত করেন। এই সময় তারা প্রকাশ্যে কোথাও হাজির হতেন না।[]

৭৬২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, মুহাম্মদ অবশেষে মদিনায় এসে উপস্থিত হন এবং আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে শহরটি দখল করেন।[] তার একজন আত্মীয় আল-হাসান ইবনে মুয়াবিয়াকে গভর্নর হিসেবে মক্কায় পাঠান। তিনি দ্রুত মক্কা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন ও বাসিন্দাদের মুহাম্মদের পক্ষে নিয়ে আসেন। []

অন্যদিকে ইব্রাহিম বসরার কাছে অবস্থান নেন। তিনি ৭৬২ সালের ২৩ নভেম্বর স্থানীয় গভর্নরের সহায়তায় শহরটি দখল করেন। উক্ত গভর্নর তাদের বিদ্রোহী আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এরপর তিনি সশস্ত্র বাহিনী পাঠিয়ে আশেপাশে অন্যান্য শহরগুলো (আল-আহওয়াজ, আল-ওয়াসিত, ফার্সের বিভিন্ন শহর) দখল করেন। এরপর সমর্থকদের সাথে নিয়ে ইব্রাহিম কুফার দিকে অগ্রসর হন। কুফার সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল ছিল। ইব্রাহিম তাঁর বিদ্রোহে অনেক ইরাকি হাদিস ও ফিকহ পণ্ডিতদের সমর্থনও পেয়েছিলেন। যারা তাঁর পক্ষে ছিলেন তাদের মধ্যে আল-আমাশ এবং আইনজ্ঞ আবু হানিফার নাম উল্লেখযোগ্য। বলা হয়ে থাকে যে, আবু হানিফা তাঁর সাথে চিঠিপত্র বিনিময় করেছিলেন এবং ৪,০০০ দিরহামের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন।[] তাঁর বিদ্রোহের আরেকজন সুপরিচিত সমর্থক ছিলেন ভাষাবিদ আল-মুফাদ্দাল আদ-দাব্বী (মৃত্যু ৭৮১ থেকে ৭৮৭ সালের মধ্যে)। বলা হয় যে তিনি ইব্রাহিমকে তাঁর বিদ্রোহের আগে অস্থায়ী আশ্রয় দিয়েছিলেন।[]

মুহাম্মদ আন-নাফসে জাকিয়্যাহ ৭৬২ সালের ৬ ডিসেম্বর আব্বাসীয় সামরিক নেতা ইসা ইবনে মুসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে, তাঁর ভাইয়ের সমর্থকরাও তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন।

পরবর্তী বছর গুলোতে খলিফা আল-মানসুর ইব্রাহিমের প্রশিক্ষিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ নেন। তিনি আবু হানিফাকে বাগদাদে নিয়ে যান এবং তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। সেখানে কিছুদিন পর তিনি মারা যান, ধারণা করা হয় যে খলিফা তাঁকে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন।[] ভাষাবিদ আল-মুফাদ্দাল আদ-দাব্বীকেও কারাবন্দি করা হয়েছিল, তবে খলিফা তাঁকে অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষমা করে দেন।[]

৭৬২ বা ৭৬৩ সালে মুহাম্মদ আল-নাফস আল-জাকিয়্যাহ এবং ইব্রাহিমের দুই ভাইয়ের বিদ্রোহ ছিল প্রাথমিক আব্বাসীয় যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা, যার ফলে পরবর্তীকালে বিভিন্ন পণ্ডিত, যেমন: মামার ইবনে আল-মুছান্না এবং উমর ইবনে শাব্বা এই বিদ্রোহ সম্পর্কে নিজস্ব গ্রন্থে প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করেন।[] যদিও এই বইগুলি হারিয়ে গেছে, তবে সেগুলির বিস্তারিত অংশ আল-তাবারির বই এবং আবু আল-ফারাজ আল-ইসফাহানির “তালিবিদের যুদ্ধ” নামক বইয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। এই দুটি গ্রন্থই দুই ভাইয়ের বিদ্রোহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাদের তৃতীয় ভাই ইদ্রিস পরে পশ্চিম আফ্রিকায় অভিবাসিত হন এবং ৭৮৯ সালে স্থানীয় বারবার উপজাতিদের সমর্থনে সেখানে ইদ্রিসীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা ১০ম শতকের শুরু পর্যন্ত বর্তমান মরক্কোর বেশিরভাগ অংশজুড়ে বিস্তৃত ছিল।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

আব্দুল্লাহ আল মাহাদ

আব্বাস ইবনে আলি

মুহাম্মাদ নফসে যাকিয়্যা

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Muth 1988, পৃ. 62।
  2. Muth 1988, পৃ. 67-69।
  3. Muth 1988, পৃ. 121-122।
  4. Muth 1988, পৃ. 145-150।
  5. Arendonk 1919, পৃ. 188।
  6. Arendonk 1919, পৃ. 52।
  7. Ilse Lichtenstädter। al-Mufaḍḍal aḍ-Ḍabbī। Encyclopaedia of Islam। পৃষ্ঠা 305–306। 
  8. Tilman, Nagel (১৯৭০)। "Ein früher Bericht über den Aufstand von Muḥammad b. ʿAbdallāh im Jahr 145 h."। Der Islam (46): 230–234।