গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট
গোর্খা ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্ট | |
---|---|
চেয়ারপার্সন | সুভাষ ঘিসিং |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৮০ |
সদর দপ্তর | ড. জাকির হুসেন রোড, দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ |
ভাবাদর্শ | গোর্খাল্যান্ড স্বায়ত্তশাসন |
জোট | তৃণমূল কংগ্রেস+ |
ভারতের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
গোর্খা ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) (নেপালি: गोर्खा राष्ट्रिय मुक्ति मोर्चा) হল পশ্চিমবঙ্গের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা দু’টি এই দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। ১৯৮০ সালে সুভাষ ঘিসিং পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি পূরণের লক্ষ্যে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১]
আদি ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৮০-এর দশকে জিএনএলএফ-এর নেতৃত্বে উত্তর পশ্চিমবঙ্গের (দার্জিলিং, ডুয়ার্স ও তরাই) নেপালি-ভাষী অধ্যুষিত অঞ্চলটিকে নিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে এক তীব্র এবং ক্ষেত্রবিশেষে সহিংস আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।[২] ১৯৮৫-৮৬ সালে এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়। ১৯৮৮ সালের ২২ অগস্ট সুভাষ ঘিসিঙের অধীনে জিএনএলএফ দার্জিলিং পার্বত্য সন্ধিচুক্তি সাক্ষর করে। এই চুক্তি বলে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ (ডিজিএইচসি) গঠিত হয় এবং তার পরিবর্তে জিএনএলএফ গোর্খাল্যান্ডের দাবি পরিত্যাগ করে।
নির্বাচনী ইতিহাস
[সম্পাদনা]রাজ্য বিধানসভা
[সম্পাদনা]জিএনএলএফ ১৯৯১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন বয়কট করেছিল। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালের নির্বাচনে জিএনএলএফ দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করে।
লোকসভা
[সম্পাদনা]১৯৮৯ সালে জিএনএলএফ প্রার্থী ইন্দরজিত খুল্লার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের প্রতিবেদক প্রাক্তন সাংবাদিক তথা সুভাষ ঘিসিঙের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দরজিত জিএনএলএফ-এর সমর্থনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করে জিএনএলএফ। এই তিনটি নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিএনএলএফ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী দাওয়া নরবুলাকে সমর্থন করেন এবং তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে জিএনএলএফ পাহাড়ের উপর কর্তৃত্ব হারায়। উক্ত নির্বাচনে এই দল কোনও প্রার্থী দেয়নি এবং কোনও দলকে সমর্থনও করেনি। এই নির্বাচনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রার্থী যশবন্ত সিং জয়লাভ করেছিলেন।
দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ
[সম্পাদনা]১৯৮৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পরপর তিনটি মেয়াদে সুভাষ ঘিসিঙের সভাপতিত্বে ডিজিএইচসি পরিচালনা করে জিএনএলএফ। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ডিজিএইচসি-তে কোনও নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সুভাষ ঘিসিং এককভাবে ডিজিএইচসি-র তত্ত্বাবধায়ক পদে আবৃত ছিলেন।[৩]
ষষ্ঠ তফসিল
[সম্পাদনা]২০০৫ সালের ৬ ডিসেম্বর গোর্খা পার্বত্য পরিষদ নামে একটি ষষ্ঠ তফসিল উপজাতি পরিষদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও জিএনএলএফ-এর মধ্যে একটি মেমোর্যা ন্ডাম অফ সেটলমেন্ট (এমওএস) সাক্ষরিত হয়। প্রথম দিকে এই উদ্যোগ জনসমর্থন লাভ করলেও, পরে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের মদন তামাং প্রমুখের নেতৃত্বে ষষ্ঠ তফসিল পরিষদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের সম্মুখীন হতে হয় জিএনএলএফ-কে।
পতন
[সম্পাদনা]২০০৪ সালে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের পূর্বনির্ধারিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। যদিও সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং তার পরিবর্তে ষষ্ঠ তফসিল পরিষদ গঠিত না পর্যন্ত সুভাষ ঘিসিংকেই এককভাবে ডিজিএইচসি-র তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করে।[৪] এর ফলে ডিজিএইচসি-র প্রাক্তন কাউন্সিলরদের মধ্যে দ্রুত অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের মধ্যে ঘিসিঙের একদা বিশ্বস্ত সহকারী বিমল গুরুং জিএনএলএফ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দার্জিলিং থেকে ইন্ডিয়ান আইডল প্রতিযোগী প্রশান্ত তামাঙের প্রতি জনসমর্থনের সূত্র ধরে বিমল গুরুং দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে এবং ঘিসিংকে ক্ষমতাচ্যূত করতে সক্ষম হন। ঘিসিং নিজের বাসভবন পরিবর্তন করে জলপাইগুড়িতে চলে যান। জিএনএলএফ-এর অধিকাংশ সমর্থক ও ক্যাডার বিমল গুরুং প্রতিষ্ঠিত নবগঠিত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় যোগদান করেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০১১
[সম্পাদনা]রাজনীতির জগতে তিন বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর জিএনএলএফ প্রধান সুভাষ গুরুং ঘোষণা করেন যে, ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে ২০১১ সালের ৮ এপ্রিল ঘিসিং দার্জিলিঙে ফিরে আসেন।[৫] ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত উক্ত নির্বাচনে অবশ্য জিএনএলএফ-এর তিন প্রার্থীই (দার্জিলিং থেকে ভীম সুব্বা, কালিম্পং প্রকাশ দহল এবং কার্শিয়াং থেকে পেমু ছেত্রী) পরাজিত হন।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Rai, Joel (১২ জুন ২০০৮)। "Redrawing the map of Gorkhaland"। Indian Express।
- ↑ Pradhan, Keshav (১৮ জানুয়ারি ২০১০)। "Gorkhaland an unfinished mission"। The Times of India।
- ↑ "Subhas Ghising resigns"। The Hindu। ১১ মার্চ ২০০৮। ১২ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "'Gorkhaland is my monkey'"। Darjeeling Times। ১১ জানুয়ারি ২০০৮। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ TNN (৯ এপ্রিল ২০১১)। "Ghisingh back in Hills after 3 yrs"। The Times of India।
- ↑ "West Bengal Legislative Assembly Election 2011 Candidate List"। Indian Broadcasting Network। ১৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।