হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দার্জিলিং শহরের উপর থেকে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান
দার্জিলিং শহর থেকে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানের দৃশ্য। দার্জিলিং শহরের খুবই কাছে এই চা বাগানটি অবস্থিত।
হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান, দার্জিলিং
হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান, দার্জিলিং

হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত একটি চা বাগান। এটি দার্জিলিং-এর দ্বিতীয় সবচেয়ে পুরনো চা বাগান। ১৮৫৪ সালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান চালু হয়। দার্জিলিং শহরের ৩ কিলোমিটার (১.৯ মা) উত্তরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,১০০ মিটার (৬,৯০০ ফু) উচ্চতায় ১৭৭ হেক্টর (৪৪০ একর) জমির উপর এই চা বাগানটি অবস্থিত। দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক ও কর্মচারী এখানে কাজ করেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

দার্জিলিং-এর সবচেয়ে পুরনো চা বাগানটি হল স্টেইনথাল চা বাগান। সেটি চালু হয়েছিল ১৮৫২ সালে।[১] তার ঠিক দুই বছর পর চালু হয় হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান। ২,১০০ মিটার (৬,৯০০ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত এই চা বাগানটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত চা কারখানাগুলির মধ্যে একটি।[২] ডেভিড উইলসন নামে এক ইংরেজ বাগানটির নাম দিয়েছিলেন উইলসন টি এস্টেট। ১৮৬০ সালের মধ্যে তিনি সেখানে চা উৎপাদন শুরু করে দেন। ১৯০৩ সালে এই চা বাগানের মালিকানা হস্তান্তরিত হয়ে যায় হুগলি-চুঁচুড়ার (হুগলি) বাসিন্দা তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বাঙালি জমিদারের হাতে। ১৯২৯ সালে তিনি নিকটবর্তী উইন্ডসর টি এস্টেটটিও কিনে নেন এবং দুইটি চা বাগান জুড়ে দিয়ে নাম রাখেন ‘হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান’।[৩] এরপর জি. সি. ব্যানার্জি বাগানটির মালিক হন। তিনি তার স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী ও তিন মেয়ে ননীমুখী, মনমায়া ও সাবিত্রীকে নিয়ে কিছুদিন সেখানে বাস করেছিলেন। অন্নপূর্ণা দেবী বাপের বাড়ির সূত্রে খান্ডোয়ার বিখ্যাত গাঙ্গুলি পরিবারের আত্মীয় ছিলেন। তার মামা ছিলেন বলিউডের বিখ্যাত গাঙ্গুলিদের বাবা কুঞ্জলাল বিহারী গাঙ্গুলি।

২০০৭ সালে প্রায় চার বছর চা ব্যবসায় মন্দাভাবের জন্য চা বাগানটি প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে আম্বোটিয়া টি গ্রুপের এস কে বনসল বাগানটি কিনে নেন। তিনি বাগান চত্বরের মধ্যে একটি নতুন কারখানা চালু করেন এবং অর্গ্যানিক ফার্মিং চালু করে চা উৎপাদনের আধুনিকীকরণ ঘটান।[১] তারপর ২০০৮ সালে আগেকার কারখানাটিকে একটি জাদুঘরে পরিণত করে বাগানটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেখানে সিঙ্গল পিস্টন স্লো-স্পিড এঞ্জিন ও শ্যাফট মেশিনগুলি প্রদর্শিত হয় এবং চা-সংক্রান্ত স্মারক বিক্রি করা হয়। এখন দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক ও কর্মচারী চা বাগান ও চা উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত।[২]

২০০৮ সালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানের হ্যান্ড-রোলড চা যুক্তরাজ্যের হ্যারোডসে বিক্রির জন্য নির্বাচিত হয়। সেখানে প্রতি কিলোগ্রাম চায়ের দাম ছিল ৫,০০০ (US$ ৬১.১২) থেকে ৬,০০০ (US$ ৭৩.৩৪)[৪] এছাড়া এই চা ফ্র্যান্সের মারিয়েজ ফেরেসেও পাওয়া যায়।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,১০০ মিটার (৬,৯০০ ফু) উচ্চতায় ১৭৭ হেক্টর (৪৪০ একর) জমির উপর অবস্থিত। বাগানের চা গুল্মগুলির বয়স কমপক্ষে ৮০ বছর। কয়েকটি গুল্মের বয়স ১৫০ বছর। সাম্প্রতিক অতীতে খুব কম ক্ষেত্রেই পুনরায় গুল্ম রোপণ করা হয়েছে। দার্জিলিং শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে হিল কার্ট রোডের নিচে এই বাগানটি অবস্থিত। শহরের লকনগর রোড ও চকবাজার থেকে এখানে যাওয়া যায়। এটিই দার্জিলিং শহরের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত। পর্যটকেরা প্রায়ই এই বাগানে বেড়াতে যান। বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এই বাগানটির ব্যস্ততম সময়। এই সময় চা পাতা তোলা ও প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলে। মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল আটটা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বাগানটি খোলা থাকে।[৫]

সূত্র[সম্পাদনা]

  1. "India Brews a Stronger Cup"। TIME। ১৫ নভেম্বর ২০০৭। ২৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৭ 
  2. "Tea factory to be open to tourists"। The Hindu। ২৫ মার্চ ২০০৮। ২৮ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৭ 
  3. Happy Valley Tea Estate
  4. "Harrods to sell hand-rolled Darjeeling tea"। Indian Express। ৩১ মে ২০০৮। 
  5. "Happy Valley Tea Estate"। Lonely planet। 
  • Chattopadhyay S.S. The valley of resilience. Frontline. Volume 20– Issue 25, 6–19 December 2003.

টেমপ্লেট:Darjeeling District