উকবা ইবনে আমির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উকবা ইবন আমির আল জুহানী(মৃত্যু-৫৮ হিজরি) মুহাম্মদ এর একজন পরিচিত সাহাবা ছিলেন । তিনি প্রাথমিক জীবনে মদিনার মরুর বুকের একজন সামান্য রাখাল থাকলেও পরবর্তী জীবনে তিনি একাধারে বিখ্যাত আলেম,ক্বারী,ফকিহ,দক্ষ যোদ্ধা,ধনী ও দানশীল,শাসনকর্তা হয়ে উঠেন ।[১] কবিতা রচনাতেও তার আগ্রহ ছিল । উমাইয়া খিলাফত কালে তিনি মিশরের শাসনকর্তা ছিলেন । তিনি একজন দক্ষ যোদ্ধা ও তীরন্দাজও ছিলেন ।[২] তিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন ।[৩]

নাম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

উকবা ইবনে আমির আল জুহানী এর মূলনাম নাম উকবা এবং ডাক নাম ছিল আবু আমর।তার পিতা ছিল আমির । তিনি মদিনার বনু জুহানা গোত্রের সন্তান ।

যুদ্ধে অংশগ্রহন[সম্পাদনা]

রাসুলের যুগে[সম্পাদনা]

উকবা ইবনে আমির বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি । রাসূল সাথে উকবা সর্ব প্রথম উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । এরপর রাসূলের জীবদ্দশায় সংঘটিত সকল যুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

উমরের যুগে[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের খিলাফতকালে তিনি একজন মুজাহিদ হিসেবে সিরিয়া অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন । দামেশক জয়ের দিনে তিনি তীর নিক্ষেপে অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। দামেশক বিজয়ের পর সেনাপতি আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ তাকে মদীনায় পাঠান খলীফাকে এ সংবাদ দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য । তিনি ৮ দিন বিরামহীন চলার পর মদীনায় খলীফার কাছে সংবাদটি পৌঁছান ।

আলীর যুগে[সম্পাদনা]

সিফফীন যুদ্ধে তিনি মুয়াবিয়ার পক্ষে অংশ গ্রহণ করেন । মিসর জয়ের পর হযরত মুয়াবিয়া তাকে এক সময় মিশরের শাসক নিয়োগ করেন । আবু আমর আল কিন্দী বলেনঃ মুয়াবিয়া তাকে মিসরের খারাজ (রাজস্ব) আদায় ও নামাযের ইমামতির দায়িত্ব অর্পণ করেন । পরে ৪৭ হিজরিতে তাকে অপসারণ করে তার স্থলে মাসলামাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় । উকবা দায়িত্ব থেকে অপসারণের পর নিজেকে গুটিয়ে নেন ।

স্বভাব-চরিত্র ও গুণাবলী[সম্পাদনা]

জ্ঞান ও মর্যাদার দিক দিয়ে হযরত উকবা ছিলেন এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব । কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, ফারায়েজ ও কাব্য ক্ষেত্রে ছিল তার এক বিশেষ স্থান ।[১] তিনি সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন । ফলে ক্বারী হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন । তিনি কবিতা রচনা করতেন বলে জীবনী গ্রন্থ প্রণেতাগণ উল্লেখ করেছেন ।এছাড়াও তিনি প্রসিদ্ধ তীরন্দাজ ও রণ সুকৌশলী ছিলেন ।[২] মৃত্যুর পরে তার কক্ষে ৭০ এর চেয়ে কিছু বেশি ধনুক ও আরো যুদ্ধাস্ত্র পাওয়া যায় ।[৪]

তিনি প্রাথমিক জীবনে গরীব থাকলেও পরবর্তীতে সচ্ছলতা অর্জন করেছিলেন ।তিনি দানশীল ও আথিত্যপরায়ন একজন ব্যক্তি ছিলেন ।

কুরআন সংগ্রহে অবদান[সম্পাদনা]

হযরত উকবা নিজ হাতে পবিত্র কুরআনের একটি সংকলন তৈরী করেন । হিজরি ৯ম শতক পর্যন্ত মিসরের ‘জামে উকবা ইবন আমির’ নামক মসজিদে এ কপিটি সংরক্ষিত ছিল। কপিটির শেষে লেখা ছিল ‘এটি উকবা ইবন আমের আল জুহানী লিখেছেন।’ এটা ছিল পৃথিবীতে প্রাপ্ত কুরআনের প্রাচীনতম কপি। কিন্তু পরবর্তীতে এই কপিটি হারিয়ে যায় ।[৫][৬][৭]

হাদিস বর্ণনা[সম্পাদনা]

তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা সর্বমোট ৫৫ টি । তার মধ্যে ৭ টি বুখারী ও মুসলিম শরীফ উভয়ই বর্ণনা করেছেন । এর মধ্যে ১ টি বুখারী শরীফ ও ৭ টি মুসলিম শরীফ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। বহু সাহাবা ও তাবেয়ী তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ।[৮]

সন্তানদের প্রতি বিখ্যাত উপদেশ[সম্পাদনা]

উকবা মিসরে অন্তিম রোগ শয্যায় তখন সন্তানদের ডেকে এই উপদেশগুলো দান করেন যা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে ।

হে আমার সন্তানেরা ! আমি তোমাদের তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করছি, ভালো করে স্মরণ রেখ,

১) নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও নিকট থেকে রাসূলুল্লাহর হাদীস গ্রহণ করো না।

২) আবা (সামনে খোলা ঢিলে ঢালা মোটা জুব্বা) পরলেও কখনও ঋণগ্রস্ত হয়ো না।

৩) তোমরা কবিতা লিখবে না। কারণ তাতে তোমাদের অন্তর কুরআন ছেড়ে সেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।[৯]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

হযরত উকবার মৃত্যু সন সম্পর্কে মতভেদ আছে। সঠিক বর্ণনামতে হযরত মুয়াবিয়ার খিলাফতকালে ৫৮ হিজরীতে মিসরে ইনতিকাল করেন। তাঁকে বর্তমান কায়রোর দক্ষিণ দিকে ‘মুকাত্তাম’ পাহাড়ের পাদদেশে দাফন করা হয় ।[১০][১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. [তাজকিরাতুল হুফফাজ ১/৪৩] 
  2. [মুসনাদে ইমাম আহমাদ-৪/১৪৮] 
  3. (বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড) 
  4. [সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা-৪/১৫০-৫১] 
  5. [তাহজীবুত তাহজীব-৭/২৪৩] 
  6. [সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা-৪/১৪৮-৪৯] 
  7. [মুহাজিরিন-২/২৩৬] 
  8. [হায়াতুস সাহাবা-৩/২৪০-৪১] 
  9. [হায়াতুস সাহাবা-৩/২০১] 
  10. [আল ইসাবা-৩/৪৮৯] 
  11. [তাজকিরাতুল হুফফাজ-১/৪৩]