বেদবতী
বেদবতী (দেবনাগরী:वेदवती) হলেন বৃহস্পতিপুত্র কুশধ্বজের কন্যা। ইনি জন্মান্তরে মিথিলার রাজা জনক এর গৃহে সীতা রূপে জন্ম লাভ করেন যিনি রামায়ণ মহাকাব্যের নায়িকা।
জন্মবিবরণ
[সম্পাদনা]ব্রহ্মর্ষি কুশধ্বজ লক্ষ্মীকে নিজের কন্যা হিসেবে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেন । তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে লক্ষ্মী তাঁর কন্যা রূপে জন্ম নিতে সম্মত হন । একদিন কুশধ্বজ বেদ পাঠ করছিলেন এমন সময় লক্ষ্মী বাঙ্ময়ী মূর্তিতে জন্ম গ্রহণ করেন । ইনি অযোনিসম্ভবা ছিলেন । কুশধ্বজ ও তাঁর স্ত্রী মালাবতী তাঁকে নিজের কন্যা রূপে স্বীকার করেন । বেদ পাঠ কালে জন্ম লাভ করায় এঁর নাম হয় বেদবতী ।
তপস্যা ও বরলাভ
[সম্পাদনা]বেদবতী জন্ম লাভ করেই মাতা পিতার অনুমতি নিয়ে পুষ্করতীর্থে তপস্যা করতে যান । সেখানে এক মন্বন্তর তপস্যার পর দৈববাণী হয় " তুমি জন্মান্তরে বিষ্ণুকে পতি রূপে পাবে। " বেদবতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে অনেক দেবতা, গন্ধর্ব, যক্ষ , রাক্ষস তাঁকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু মহর্ষির ইচ্ছা ছিল বিষ্ণুই তাঁর জামাতা হন । এজন্য দৈত্যরাজ শুম্ভাসূর ক্রুদ্ধ হয়ে কুশধ্বজকে বধ করেন এবং তার স্ত্রী মালাবতী স্বামীর সাথে চিতারোহণ করেন। মাতৃপিতৃহীন বেদবতী হিমালয়ের বনে কঠোর তপস্যা শুরু করেন।
রাবণ কর্তৃক বেদবতীর নিগ্রহ
[সম্পাদনা]একদিন রাবণ বিচরণ করতে করতে দেখলেন এক দেবীর ন্যায় রূপসী কন্যা তপস্যা করছেন । রাবণ বেদবতীকে তাঁর পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি সবিস্তারে তা ব্যক্ত করেন । তিনি রাবণকে অতিথি হিসেবে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেন । কিন্তু রাবণ কামাতুর হয়ে তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন । কিন্তু বেদবতী তাতে সম্মত হলেন না । এতে রাবণ তাঁর বিমান থেকে নেমে বলপূর্বক তাঁকে হরণ করার জন্য তাঁর কেশ গ্রহণ করলেন । সহসা বেদবতীর হাত তরবারি হয়ে গেল । তিনি রাবণের হাতে ধরা চুল কেটে ফেললেন । এরপর চিতা জ্বালিয়ে বললেন " বর্বর রাক্ষস তোর দ্বারা স্পৃষ্ট হয়ে আমি আর জীবিত থাকতে চাই না । তোর সবংশে নিধনের জন্য আমি কোন ধার্মিকের গৃহে অযোনিজা কন্যা রূপে পুনরায় জন্ম নেব ।" এই বলে তিনি চিতার আগুনে দেহ ত্যাগ করলেন । সেই কন্যাই সীতা রূপে বিষ্ণু অবতার রাম এর স্ত্রী হয়ে রাবণের ধ্বংসের কারণ হয়েছিলেন ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- বাল্মীকি রামায়ণ - রাজশেখর বসু
- পৌরাণিক অভিধান - সুধীরচন্দ সরকার