ইয়ারমুকের যুদ্ধ
ইয়ারমুকের যুদ্ধ ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে রাশিদুন খিলাফত ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হয়। ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে ইয়ারমুক নদীর তীরে ছয়দিনব্যপী এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বর্তমানে এই নদী সিরিয়া, জর্ডান ও ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এবং তা গ্যালিলি সাগরের পূর্বে অবস্থিত। এই যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের ফলে সিরিয়ায় বাইজেন্টাইন শাসনের অবসান ঘটে। সামরিক ইতিহাসে এই যুদ্ধ অন্যতম ফলাফল নির্ধারণকারী যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়।[৭][৮] মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর পর এই যুদ্ধ জয় মুসলিম বিজয়ের প্রথম বৃহৎ বিজয় হিসেবে দেখা হয়। এর ফলে খ্রিষ্টান লেভান্টে ইসলাম দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
আরবদের অগ্রযাত্রা রোধ ও হৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য সম্রাট হেরাক্লিয়াস ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে লেভান্টে একটি বড় অভিযান প্রেরণ করেন। রোমান বাহিনী অগ্রসর হওয়ার পর আরবরা কৌশলগত কারণে সিরিয়া থেকে পিছু হটে এবং আরবের কাছাকাছি ইয়ারমুকের সমভূমিতে জমায়েত হয়। পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর মুসলিমরা সংখ্যাধিক বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করে। এই যুদ্ধ সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা.) অন্যতম বৃহৎ সামরিক বিজয়। এর মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ রণকুশলী ও অশ্বারোহী কমান্ডার হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।[৯]
প্রারম্ভিক ঘটনা
[সম্পাদনা]শেষ বাইজেন্টাইন-সাসানীয় যুদ্ধ চলার সময় ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে হেরাক্লিয়াস বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সম্রাট হন।[১০] সাসানীয়রা ৬১১ খ্রিষ্টাব্দে মেসোপটেমিয়া জয় করে নেয় এবং আনাতোলিয়ায় প্রবেশ করে কাইসারিয়া মাজাকা দখল করে। ৬১২ খ্রিষ্টাব্দে হেরাক্লিয়াস আনাতোলিয়া থেকে পার্সিয়ানদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। কিন্তু তার পরের বছর ৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ায় পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে পরাজিত হন।[১১] পরের এক দশকে পার্সিয়ানরা ফিলিস্তিন ও মিশর জয় করতে সক্ষম হয়। এদিকে হেরাক্লিয়াস পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন এবং নিজ সেনাবাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করেন। নয় বছর পর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হেরাক্লিয়াস তার অভিযান শুরু করেন।[১২] ককেসাস ও আর্মেনিয়ায় পার্সিয়ান ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে হেরাক্লিয়াস মেসোপটেমিয়ায় পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। এসময় তার নিনেভেহর যুদ্ধে বিজয়ের ফলে পার্সিয়ান রাজধানী তিসফুনের উপর হুমকি তৈরী হয়। এসকল পরাজয়ের কারণে দ্বিতীয় খসরু তার পুত্র দ্বিতীয় কাভাদের অভ্যুত্থানে পদচ্যুত ও নিহত হন।[১৩] কাভাদ অধিকৃত সকল বাইজেন্টাইন এলাকা ফিরিয়ে দিতে সম্মত হন। হেরাক্লিয়াস ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে ট্রু ক্রসকে জেরুজালেমে পুনস্থাপন করেন।[১৪]
একই সময়ে আরবে দ্রুত রাজনৈতিক আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। মুহাম্মদ (সা) ইসলাম প্রচার শুরু করার পর ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ অধিকাংশ আরবকে সফলভাবে একক রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীনে আনেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পর আবু বকর (রা.) খলিফা হিসেবে তার উত্তরসুরি মনোনীত হন। এসময় বেশ কিছু আরব গোত্র ইসলাম ত্যাগ করে বিদ্রোহ করে। আবু বকর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। রিদ্দার যুদ্ধে আবু বকর তাদের দমন করে পুনরায় খিলাফতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।[১৫]
বিদ্রোহ দমন করার পর আবু বকর (রা.) বিজয় অভিযান শুরু করেন। প্রথমে ইরাক জয় করা হয়। আবু বকর (রা.) তার সবচেয়ে দক্ষ সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে (রা.) ইরাক পাঠান। সাসানীয় পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধের পর ইরাক মুসলিমদের হস্তগত হয়। খালিদ (রা.) ইরাকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তাকে ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় অভিযানে পাঠানো হয়।[১৬] সিরিয়া অভিযান সুকৌশলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং অপারেশনগুলো উত্তমরূপে সংগঠিত ছিল।[১৭] মুসলিম সেনাবাহিনী বাইজেন্টাইনদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় সেনাপতিরা আরো সৈন্য সরবরাহের আবেদন করেন। ফলে আবু বকর (রা.) সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে (রা.) ইরাক থেকে সিরিয়া পাঠান এবং সেখানকার নেতৃত্ব দেন। ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে আজনাদয়ানের যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বরের দামেস্কের পতন ঘটে। এরপরে সংঘটিত ফাহলের যুদ্ধে ফিলিস্তিনে শেষ গুরুত্বপূর্ণ গেরিসন মুসলিমদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।[১৮]
৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে আবু বকর (রা.) মারা যান এবং উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তার উত্তরসুরি হন। তিনি সিরিয়ায় অভিযান অব্যাহত রাখেন।[১৯] খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা.) পূর্ববর্তী অভিযানগুলো সফল হলেও খলিফা উমর (রা.) আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে (রা.) খালিদের স্থলাভিষিক্ত করেন। দক্ষিণ ফিলিস্তিন সুরক্ষিত করার পর মুসলিমরা বাণিজ্য রুটের দিকে অগ্রসর হয়। বড় কোনো প্রতিরোধ ছাড়া টাইবেরিয়াস ও বালবিকের পতন ঘটে এবং ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিকে এমেসা জয় করা হয়। সেখান থেকে মুসলিমরা লেভান্টে অভিযান অব্যাহত রাখে।[২০]
বাইজেন্টাইন পাল্টা আক্রমণ
[সম্পাদনা]এমেসা অধিকারের পর মুসলিমদের জন্য বাইজেন্টাইন শক্ত ঘাটি আলেপ্পো ও এন্টিওকের দিকে যাত্রা সহজ হয়। হেরাক্লিয়াস এসময় এন্টিওকে অবস্থান করছিলেন। ধারাবাহিক পরাজয়ের কারণে উৎকণ্ঠিত হয়ে হৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য হেরাক্লিয়াস পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন।[২১][২২] ৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সাসানীয় সম্রাট তৃতীয় ইয়াজদিগার্দ বাইজেন্টাইন সম্রাটের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে উদ্যোগী হন। মিত্রতা মজবুত করার জন্য হেরাক্লিয়াস তার মেয়ে মানয়ানকে (প্রচলিত ধারণা মতে তার নাতনি) তৃতীয় ইয়াজদিগার্দের সাথে বিয়ে দেন। হেরাক্লিয়াস লেভান্টে একটি বড় আকারের আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার সময় ইয়াজদিগার্দের ইরাকে একই প্রকার আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। এসকল আক্রমণ সমন্বিতভাবে করার প্রয়োজন ছিল। ৬৩৬ খ্রিষ্টব্দের মে মাসে হেরাক্লিয়াস তার আক্রমণ শুরু করার পর ইয়াজদিগার্দ তার সাথে সমন্বয় করতে পারেননি।[২৩]
ইয়ারমুকে মুসলিমরা বাইজেন্টাইন বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়। এরপর তৃতীয় ইয়াজদিগার্দের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করা হয়। তিন মাস পর ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে কাদিসিয়ার যুদ্ধে সাসানীয়রা পরাজিত হয় ফলে পারস্যে সাসানীয় শাসনের অবসান হয় এবং পারস্য মুসলিমদের হস্তগত হয়।
৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিকে বাইজেন্টাইনদের প্রস্তুতি শুরু হয় এবং ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের মে নাগাদ হেরাক্লিয়াস উত্তর সিরিয়ার এন্টিওকে তার বিরাট বাহিনী প্রস্তুত করেন।[২৪] এই বাহিনীতে বাইজেন্টাইন, স্লাভ, ফ্রাঙ্ক, জর্জিয়ান, আর্মেনীয়, খ্রিষ্টান আরব বংশোদ্ভূত সৈনিক ছিল।[২৫] পুরো বাহিনীকে পাঁচটি অংশে ভাগ করা হয়। সম্মিলিত কমান্ডার ছিলেন থিওডোর ট্রিথিরিয়াস দ্য সাকেলারিওস। ভাহান ছিলেন একজন আর্মেনীয় এবং এমেসার প্রাক্তন গেরিসন কমান্ডার।[২৬] তাকে সামগ্রিক ফিল্ড কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।[২৭] তার অধীনে সম্পূর্ণ আর্মেনীয়দের নিয়ে গঠিত বাহিনীকে প্রদান করা হয়। বুকিনেটর ছিলেন একজন স্লাভিক রাজপুত্র। তিনি স্লাভদের নেতৃত্বে ছিলেন। গাসানি আরবদের রাজা জাবালা ইবনুল আইহাম খ্রিষ্টান আরবদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাকি সৈনিকরা ছিল ইউরোপীয়। তাদেরকে গ্রেগরি ও দাইরজানের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।[২৮][২৯] হেরাক্লিয়াস ব্যক্তিগতভাবে এন্টিওক থেকে কর্মকাণ্ড তদারক করতেন। বাইজেন্টাইন সূত্রে পারস্যের সেনাপতি শাহরবারাজের ছেলে নিকেটাসকে অন্যতম সেনাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তবে তিনি কোনো অংশের নেতৃত্বে ছিলেন তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।[৩০]
এসময় রাশিদুন সেনাবাহিনী চারভাগে বিভক্ত ছিল: ফিলিস্তিনে আমর ইবনুল আস (রা.) , জর্ডানে শুরাহবিল ইবনে হাসানা (রা.) , দামেস্ক-কাইসারিয়া অঞ্চলে ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.) এবং এমেসায় খালিদ বিন ওয়ালিদের সাথে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) এই অংশগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন। মুসলিম সেনাবাহিনী ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে হেরাক্লিয়াস এই সুযোগ কাজে লাগাতে উদ্যোগী হন এবং হামলার পরিকল্পনা করেন। তিনি কেন্দ্রীয় অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করতে চেয়েছিলেন। তার পরিকল্পনা ছিল বিরাট বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমদের প্রত্যেকটি বাহিনী সংগঠিত হওয়ার আগে পৃথকভাবে তাদের পরাজিত করা। মুসলিমদের পিছু হটিয়ে বা পৃথকভাবে বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে হৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। হেরাক্লিয়াসের ছেলে তৃতীয় কনস্টান্টাইনের অধীনে কাইসারিয়ায় বাড়তি সেনা সহায়তা পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ানের বাহিনীকে ধরাশায়ী করার জন্য এই বাহিনী প্রেরণ করা হয়ে থাকতে পারে। ইয়াজিদের বাহিনী শহরটি অবরোধ করেছিল।[২৮] বাইজেন্টাইন রাজকীয় বাহিনী ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের জুনের মাঝামাঝি সময়ে এন্টিওক ও উত্তর সিরিয়া থেকে বের হয়।
বাইজেন্টাইন রাজকীয় বাহিনী নিম্নোক্ত পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করার পরিকল্পনা করে:
- জাবালার খ্রিষ্টান আরবরা আলেপ্পো থেকে হামা হয়ে এমেসা যাত্রা করবে এবং এমেসায় মূল মুসলিম বাহিনীকে আক্রমণ করবে।
- দাইরজানের পার্শ্বভাগ থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। উপকূল ও আলেপ্পোর পথের মধ্যে চলাচল করে পশ্চিম দিক থেকে এমেসায় এসে মুসলিমদের বাম অংশকে আক্রমণ করার কথা ছিল। এসময় সামনের দিকে জাবালা থাকবেন।
- গ্রেগরির মুসলিমদের ডান পাশ থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। মেসোপটেমিয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরপূর্ব দিক থেকে তাকে এমেসায় যেতে বলা হয়।
- কানাটিরের উপকূলীয় পথ দিয়ে গিয়ে বৈরুত দখল করার পরিকল্পনা ছিল। এখান থেকে পশ্চিম দিক থেকে দামেস্ক আক্রমণ করে এমেসার মূল মুসলিম বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়।
- ভাহানের বাহিনীকে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয় এবং তাদের হামা হয়ে এমেসায় যেতে বলা হয়।[৩১]
মুসলিম কৌশল
[সম্পাদনা]রোমান বন্দীদের কাছ থেকে মুসলিমরা হেরাক্লিয়াসের প্রস্তুতির খবর পায়। তাই যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য খালিদ (রা.) পরামর্শ সভা আহ্বান করেন। তিনি আবু উবাইদাকে (রা.) পরামর্শ দেন যাতে ফিলিস্তিন এবং উত্তর ও মধ্য সিরিয়া থেকে মুসলিম বাহিনীকে ফিরিয়ে এনে এক স্থানে জমায়েত করা হয়।[৩২][৩৩] আবু উবাইদা (রা.) এরপর বাহিনীগুলোকে জাবিয়ার নিকটের বিস্তৃত সমভূমিতে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেন। এখানকার নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকার কারণে অশ্বারোহীদের আক্রমণে নিয়োজিত করা এবং খলিফা উমরের পাঠানো সেনা সহায়তা পৌছানোও সহজ ছিল। ফলে বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার জন্য মজবুত বাহিনী গঠন সম্ভব হয়।[৩৪] মুসলিমদের একটি শক্তঘাটি নজদ থেকে এই স্থান নিকটে থাকায় প্রয়োজনে পিছু হটার জন্য স্থানটি সুবিধাজনক ছিল। বিজিত অঞ্চলের অমুসলিম বাসিন্দাদের প্রদত্ত জিজিয়া ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ প্রদান করা হয়।[৩৫] জাবিয়ায় জড়ো হওয়ার পর মুসলিমদেরকে বাইজেন্টাইনপন্থি গাসানি বাহিনীর হামলার স্বীকার হতে হয়। কাইসারিয়াতে একটি শক্তিশালী বাইজেন্টাইন বাহিনীর অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে অবস্থান বিপজ্জনক ছিল। কারণ এর ফলে সামনের দিকে বাইজেন্টাইন বাহিনী ও পেছনের দিকে কাইসারিয়ার বাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। খালিদের পরামর্শে মুসলিমরা দারা ও দাইর আইয়ুবে পিছু হটে ফলে ইয়ারমুকের গিরিসংকট এবং হারা লাভা ভূমির মধ্যবর্তী ফাকা স্থান সুরক্ষিত হয়[৩২] এবং ইয়ারমুকের পূর্ব অংশের সমভূমিতে ক্যাম্পের সারি স্থাপিত হয়। এই পদক্ষেপ প্রতিরক্ষার দিক থেকে শক্তিশালী ছিল এবং মুসলিম ও বাইজেন্টাইনদের মধ্যে চূড়ান্ত যুদ্ধে সহায়তা করে।[৩৬] এসকল পদক্ষেপের সময় খালিদের (রা.) মোবাইল গার্ডদের সাথে বাইজেন্টাইন অগ্রবর্তী বাহিনীর খন্ডযুদ্ধ ছাড়া কোনো লড়াই হয়নি।[৩৭]
যুদ্ধক্ষেত্র
[সম্পাদনা]যুদ্ধক্ষেত্রটি বর্তমানে গোলান মালভূমির দক্ষিণপূর্বে সিরিয়ার হাওরান অঞ্চলে অবস্থিত। এই উচ্চভূমি অঞ্চলটি গ্যালিলি সাগরের পূর্ব দিকে সিরিয়া, জর্ডান ও ইসরায়েলের সীমান্তে রয়েছে। ইয়ারমুক নদীর উত্তরদিকে সমতল ভূমিতে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর পশ্চিম অংশ ওয়াদি-উর-রুক্কাদ নামক গভীর গিরিসংকট দেয়া ঘেরা। এই জলধারার তীর খাড়া পাড় বেষ্টিত যার উচ্চতা ৩০ মি (৯৮ ফু)–২০০ মি (৬৬০ ফু)। উত্তরে জাবিয়া সড়ক এবং পূর্বে আজরা পাহাড় অবস্থিত। তবে এই পাহাড়গুলো মূল যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে রয়েছে। কৌশলগতভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ১০০ মি (৩৩০ ফু) উচু তেল আল জুমা একমাত্র লক্ষণীয় স্থান। মুসলিমরা এখানে জড়ো হয়। এখান থেকে ইয়ারমুক সমভূমির দৃশ্য ভালভাবে দেখা যেত। ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধক্ষেত্রের পশ্চিমের গিরিখাত মাত্র কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রবেশযোগ্য ছিল। এখানে পারাপারের জন্য আইন দাকারের কাছে রোমান সেতু (জিসর-উর-রুক্কাদ) ছিল।[৩৮][৩৯] ইয়ারমুকের সমতল ভূমিতে দুই বাহিনীর টিকে থাকার মত পানির সরবরাহ যথেষ্ট ছিল। অশ্বারোহীদের জন্য স্থানটি উৎকৃষ্ট ছিল।[৪০][৪১]
সৈন্য মোতায়েন
[সম্পাদনা]প্রাথমিক সূত্রগুলোতে মুসলিম সৈনিকের সংখ্যা ২৪,০০০ থেকে ৪০,০০০ এবং বাইজেন্টাইন সৈনিকের সংখ্যা ১,০০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। আধুনিক হিসাবে এই সংখ্যার তারতম্য ঘটে। বেশিরভাগ হিসাব মতে বাইজেন্টাইন বাহিনীতে ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ সৈনিক ছিল। তবে কিছু হিসাবে তা ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ দেখানো হয়েছে।[৪২][৪৩] অন্যদিকে হিসাব অনুযায়ী রাশিদুন সেনাবাহিনীর সৈনিক সংখ্যা ২৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ এর মধ্যে। মূল হিসাব প্রধানত আরব সূত্রগুলোতে পাওয়া যায়। বাইজেন্টাইন ও তার মিত্রদের সৈন্য সংখ্যা মুসলিমদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল এই ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।m[›] এ বিষয়ে একমাত্র বাইজটাইন সূত্র হলে থিওফানস। তিনি এক শতাব্দী পরে এ বিষয়ে লিখেছেন। কিছু বিবরণে যুদ্ধের স্থায়িত্বকাল একদিন এবং কিছু বিবরণে কয়েকদিন বলে উল্লেখ রয়েছে।
রাশিদুন সেনাবাহিনী
[সম্পাদনা]যুদ্ধসভার সময় মুসলিম বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদকে (রা.) কমান্ড প্রদান করেন।[৪৪] এরপর খালিদ (রা.) সেনাবাহিনীকে ৩৬টি পদাতিক রেজিমেন্ট ও ৪টি অশ্বারোহী রেজিমেন্টে বিভক্ত করেন এবং তার মোবাইল গার্ড বাহিনীকে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়। বাহিনীকে তাবিয়া ফর্মেশনে সংগঠিত করা হয়। এটি ছিল একটি প্রতিরক্ষামূলক পদাতিক ফর্মেশন।[৪৫] বাহিনীর সামনের অংশ পশ্চিমমুখী হয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার (৭.৫ মা) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং এর বাম অংশ দক্ষিণে ইয়ারমুক নদীর দিকে ছিল। এই স্থান ছিল ওয়াদি আল আল্লাহ শুরু হওয়ার এক মাইল আগে। ডান অংশ ছিল উত্তরে জাবিয়া সড়কের তেল আল জুমার দিকে।[৪৬] সামনে থাকা বাইজেন্টাইনদের ১৩ কিলোমিটার (৮.১ মা) সারির সাথে মিল হওয়ার জন্য অংশগুলোর মধ্যবর্তী ফাকা স্থান। বাহিনীর কেন্দ্রভাগ আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) (বাম কেন্দ্র) ও শুরাহবিল ইবনে হাসানার (রা.) (ডান কেন্দ্র) অধীনে ছিল। বাম অংশ ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান এবং ডান অংশ আমর ইবনুল আসের (রা.) অধীনে রাখা হয়।[৪৪] মধ্য, বাম ও ডান অংশকে অশ্বারোহী বাহিনী প্রদান করা হয় যাতে বাইজেন্টাইনরা তাদের পিছু হটালে রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মধ্যভাগের পেছনে খালিদের (রা.) ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে মোবাইল গার্ড অবস্থান নেয়। যদি খালিদ (রা.) বাকি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেন তবে সেক্ষেত্রে দিরার ইবনুল আজওয়ার মোবাইল গার্ডের পাওয়ার কথা ছিল। যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে খালিদ (রা.) তার এই অশ্বারোহী বাহিনীর সফল ব্যবহার করেছেন।[৪৪] বাইজেন্টাইনদের পরযবেক্ষণের জন্য খালিদ (রা.) বেশ কিছু গুপ্তচর নিয়োগ করেন।[৪৭] ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ের শেষের দিকে ভাহান জাবালার মাধ্যমে তার খ্রিষ্টান আরব বাহিনীকে আক্রমণের জন্য পাঠিয়েছিলেন তবে মোবাইল গার্ড বাহিনী তাদের প্রতিহত করে। এরপর এক মাস ধরে কোনো সংঘর্ষ হয়নি[৪৮]
অস্ত্র
[সম্পাদনা]ব্যবহৃত হেলমেটের মধ্যে সাসানীয় সাম্রাজ্যের রৌপ্য হেলমেটের মত গিল্ড করা হেলমেট ছিল। মুখ, ঘাড় ও গলা ধাতব আচ্ছাদনে আবৃত থাকত। ভারী চামড়ার জুতা এবং পাশাপাশি রোমান ধাচের বুট মুসলিম বাহিনীতে ব্যবহৃত হত।[৪৯] বর্মের মধ্যে ছিল চামড়া বা ধাতব বর্ম। পদাতিক সৈনিকরা অশ্বারোহীদের তুলনায় ভারী বর্ম ব্যবহার করত। বড় কাঠের ঢাল ব্যবহৃত হত। পদাতিক সৈনিকদের বর্শা ২.৫ মি (৮.২ ফু) দীর্ঘ এবং অশ্বারোহীদের বর্শা ৫.৫ মি (১৮ ফু) দীর্ঘ হত। রোমান ক্ষুদ্র গ্লাডিয়াস ও সাসানীয় দীর্ঘ তলোয়ার উভয় প্রকার তলোয়ার ব্যবহৃত হয়। সাধারণত অশ্বারোহীরা দীর্ঘ তলোয়ার ব্যবহার করত। তলোয়ারের খাপ কাঁধে ঝোলানো বেল্টে যুক্ত থাকত। ধনুক স্বাভাবিক অবস্থায় ২ মিটার (৬.৬ ফু) দীর্ঘ হত যা ইংলিশ লংবোর অণুরূপ। প্রথাগত আরব ধনুকের সর্বোচ্চ কার্যকরী পাল্লা ছিল প্রায় ১৫০ মি (৪৯০ ফু)। প্রথম যুগের মুসলিম তীরন্দাজরা মূলত পদাতিক হিসেবে কাজ করত। তারা হালকা ও বর্মহীন অশ্বারোহী আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম ছিল।[৫০]
বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী
[সম্পাদনা]মুসলিমরা ইয়ারমুকের সমতল ভূমিতে ক্যাম্প করার কিছু দিন পরে বাইজেন্টাইন বাহিনী ও হালকাভাবে সজ্জিত অগ্রবর্তী গাসানিরা অগ্রসর হয়ে ওয়াদি-উর-রুক্কাদের উত্তরে উত্তম প্রতিরক্ষা সংবলিত ক্যাম্প স্থাপন করে।[৫১]j[›] বাইজেন্টাইন বাহিনীর ডান অংশ সমভূমির দক্ষিণ প্রান্তে ইয়ারমুক নদীর নিকটে এবং ওয়াদি আল আলান শুরু হওয়ার এক মাইল আগে অবস্থান করছিল। বাম অংশ ছিল উত্তরে জাবিয়া পাহাড় শুরু হওয়ার কিছু দূরত্ব আগে এবং তারা তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান ছিল। ভাহান রাজকীয় বাহিনীকে পূর্বমুখী করে অবস্থান করান এবং এর সামনের অংশ প্রায় ১৩ কিলোমিটার (৮.১ মা) দীর্ঘ ছিল।[৩৮] তিনি দক্ষিণে ইয়ারমুকের গিরিসংকট থেকে উত্তরে মিশরের রোমান পথের মধ্যবর্তী এলাকা সুরক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন খালি স্থানগুলো বিভিন্ন বাইজেন্টাইন ডিভিশনগুলোর মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। ডান অংশ গ্রেগরি ও বাম অংশ কানাটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মধ্যভাগ দাইরজান ও ভাহানের আর্মেনীয় বাহিনী নিয়ে গঠিত ছিল এবং দাইরজান এর সার্বিক নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। রোমান নিয়মিত ভারি অশ্বারোহী, বর্মাচ্ছাদিত ভারী অশ্বারোহীদেরকে চারটি বাহিনীর মধ্যে সমভাবে বণ্টন করে দেয়া হয়। প্রত্যেক বাহিনীতে পদাতিকদের সামনের দিকে এবং অশ্বারোহীদের পেছনের দিকে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়। ভাহান ঘোড়া ও উষ্ট্রারোহী জাবালার খ্রিষ্টান আরবদেরকে লড়াইয়ে পাঠান যাতে মূল বাহিনী আসার আগ পর্যন্ত তাদেরকে আড়াল করে রাখা যায়।[৫২] প্রথম যুগের মুসলিম সূত্রগুলো অনুযায়ী গ্রেগরির বাহিনীতে পদাতিক সৈনিকদের শেকল দিয়ে যুক্ত করে দেয়া হয় এবং তারা মৃত্যুর শপথ নেয়। শেকলগুলো প্রতিপক্ষের অশ্বারোহীদের ঠেকানোর জন্যও ব্যবহার করা যেত। তবে আধুনিক ইতিহাসবিদদের অভিমত হল বাইজেন্টাইনরা গ্রেকো-রোমান টেসটুডো ফর্মেশন ব্যবহার করেছিল। এতে সৈনিকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায় এবং ১০ থেকে ২০ জন সৈনিক আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সবদিক থেকে সম্পূর্ণভাবে ঢাল দেয়া ঘেরা থাকে এবং প্রত্যেক সৈনিক তার পাশের সৈনিককে সুরক্ষা প্রদান করে।[৩৮]
অস্ত্র
[সম্পাদনা]বাইজেন্টাইন অশ্বারোহীরা স্পেথিওন নামক দীর্ঘ তলোয়ার ব্যবহার করত। এর পাশাপাশি ছিল কোনটারিওন নামক হালকা কাঠের বর্শা, ধনুক, ঘোড়ার জিনে বা বেল্টে ঝোলানো তূণীরের ভেতর চল্লিশটি তীর। [৫৩] স্কুটাটোই বলে পরিচিত ভারী পদাতিকরা ছোট তলোয়ার ও ছোট বর্শা ব্যবহার করত। হালকাভাবে সজ্জিত সৈনিক এবং তীরন্দাজরা ছোট বর্ম, কাঁধ থেকে ঝোলানো ধনুক এবং তীর ভর্তি তূণীর ব্যবহার করত। অশ্বারোহীদের বর্ম ও হেলমেট থাকত। এই হেলমেটে গলার সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল। পদাতিকরাও অণুরূপ বর্ম, হেলমেট ও পায়ের বর্ম পরিধান করত। হালকা পাত ও ধাতব টুকরার বর্মও ব্যবহার হত।[৫৪]
বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীতে উত্তেজনা
[সম্পাদনা]খালিদ (রা.) অধিকৃত এলাকা থেকে সেনা ফিরিয়ে এনে এক জায়গায় জড়ো করার কারণে বাইজেন্টাইনরা তাদের পাঁচটি বাহিনীকে নিয়োজিত করতে বাধ্য হয়। কয়েক শতাব্দী ধরে বাইজেন্টাইনরা বৃহদাকার চূড়ান্ত যুদ্ধ এড়িয়ে চলছিল। তাদের বাহিনীর এক স্থানে জড়ো হওয়ার ফলে প্রয়োজনীয় কৌশলগত পদক্ষেপের জন্য তারা ভালোভাবে তৈরী ছিল না।[৩৬][৫৫] সবচেয়ে কাছের কৌশলগত ঘাঁটি ছিল দামেস্ক। কিন্তু দামেস্কের নেতা মনসুর ইয়ারমুকের সমভূমিতে জড়ো হওয়া বাইজেন্টাইন বাহিনীকে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করতে পারেননি। গ্রীষ্ম শেষ হয়ে আসছিল এবং পশুর চারণভূমি কমে আসার ফলে স্থানীয় নাগরিকদের সাথে রসদ সরবরাহ নিয়ে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। গ্রিক সূত্রে ভাহানের বিরুদ্ধে আরবদের সাথে বৃহদাকার লড়াইয়ে না নামার জন্য হেরাক্লিয়াসের যে আদেশ ছিল তা অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মুসলিম বাহিনী ইয়ারমুকে জমায়েত হওয়ার কারণে ভাহানের অন্য উপায় ছিল না। বাইজেন্টাইন কমান্ডারদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা ছিল। ট্রাইথিরিয়াস ও ভাহান, জারাজিস ও কানাটিরের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব্ব ছিল।[৫৬] খ্রিষ্টান আরব নেতা জাবালাকে বেশ উপেক্ষা করা হয়। গ্রিক, আর্মেনীয় ও আরবদের মধ্যে এই অবিশ্বাসপূর্ণ অবস্থা বজায় ছিল। মনোফিসাইট ও ক্যালকেডনিয়ানদের মধ্যে যাজকীয় শত্রুতাও অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে। এসকল শত্রুতার কারণে সমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাব সৃষ্টি হয় যা বাইজেন্টাইন পরাজয়ের অন্যতম কারণ।[৫৭]
যুদ্ধ
[সম্পাদনা]যুদ্ধক্ষেত্র চারভাগে বিভক্ত ছিল: বাম ভাগ, মধ্যবাম ভাগ, মধ্যডান ভাগ ও ডান ভাগ। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় ফলে মুসলিমদের ডান ভাগ বাইজেন্টাইনদের বাম ভাগের মুখোমুখি ছিল।n[›]).
ভাহানকে হেরাক্লিয়াসের তরফ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যাতে কূটনৈতিক তৎপরতা শেষ হওয়া অবধি যুদ্ধ শুরু করা না হয়।[৫৮] ইরাকে তৃতীয় ইয়াজদিগার্দের সেনারা আক্রমণ শুরু করতে তখনও প্রস্তুত ছিল না বলে এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল হতে পারে। ভাহান প্রথমে গ্রেগরি ও পরে জাবালাকে আলোচনা করতে পাঠান। তবে আলোচনা সফল হয়নি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভাহানের আমন্ত্রণে খালিদ আলোচনা করার জন্য এসেছিলেন। তবে এক্ষেত্রেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। আলোচনার ফলে যুদ্ধ এক মাস পিছিয়ে যায়।[৩৮] এদিকে খলিফা উমর (রা.) পারস্যে অবস্থানরত সেনাপতি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে (রা.) পার্সিয়ানদের সাথে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেন এবং সম্রাট তৃতীয় ইয়াজদিগার্দ ও তার কমান্ডার রুস্তম ফারুখজাদ উভয়ের কাছে দূত পাঠান। ধারণা করা হয় যে তিনি সময় বৃদ্ধির জন্য এই কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন।[৫৯] ইতিমধ্যে তিনি ৬০০০ ইয়েমেনি সৈনিকের একটি বাহিনী খালিদের (রা.) কাছে সাহায্য হিসেবে পাঠান।[৩৮] এই বাহিনীতে ১,০০০ জন সাহাবি ছিলেন। এসকল সাহাবিদের মধ্যে ১০০ জন বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ যেমন জুবায়ের ইবনুল আওয়াম, আবু সুফিয়ান ও তার স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবা ছিলেন।[৬০]
বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করার জন্য উমর (রা.) সেরা মুসলিম সৈনিকদেরকে নিযুক্ত করেছিলেন। মুসলিমদের সৈন্য সরবরাহের কার্যক্রমে বাইজেন্টাইনরা বিচলিত হয়ে উঠে। মুসলিমরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে দেখতে পেয়ে বাইজেন্টাইন বাহিনী আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ইয়ারমুকে পাঠানো সৈনিকরা ছোট ছোট বাহিনীতে ভাগ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে ফলে প্রতিপক্ষের মধ্যে ক্রমাগত সৈনিক আসার ভীতি জন্ম নেয় এবং আক্রমণে বাধ্য করে।[৬১] কাদিসিয়ার যুদ্ধেও একই কৌশল প্রয়োগ করা হয়।[৪৭]
প্রথম দিন
[সম্পাদনা]৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট যুদ্ধ শুরু হয়।[৬২] ভোরে এক মাইলের কম দূরত্বে দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়। বাইজেন্টাইন বাহিনীর ডান ভাগের একজন কমান্ডার জর্জ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে মুসলিমদের নিকটে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মুসলিম পক্ষে যুদ্ধ করে নিহত হন বলে মুসলিম বিবরণগুলোতে উল্লেখ রয়েছে।[৬৩] মুসলিম মুবারিজুনদের সাথে দ্বন্দ্ব্বযুদ্ধের জন্য বাইজেন্টাইন বাহিনীর দ্বন্দ্ব্বযোদ্ধাদের প্রেরণের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়। মুবারিজুনরা ছিল বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত তলোয়ার ও বর্শাধারী সৈনিক। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের কমান্ডারদের হত্যা করে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দেয়া তাদের দায়িত্ব ছিল। দ্বন্দ্ব্বযুদ্ধে কয়েকজন কমান্ডার নিহত হওয়ার পর দুপুরে ভাহান তার পদাতিক বাহিনীর এক তৃতীয়াংশকে পাঠান যাতে মুসলিম বাহিনীর শক্তি ও কৌশল জানা সম্ভব হয়। সৈন্যসংখ্যা ও উন্নত অস্ত্রের কারণে তারা মুসলিম সেনা বিন্যাসের দুর্বল স্থানগুলো ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়। তবে বাইজেন্টাইন আক্রমণে লক্ষ্যের অভাব ছিল। রাজকীয় বাহিনীর অধিকাংশ সৈনিক মুসলিমদের বিরুদ্ধে সফল হতে পারেনি।[৬৪] কিছু ক্ষেত্রে তীব্র হলেও লড়াই মধ্যমরকমভাবে চলছিল। ভাহান রিজার্ভ হিসেবে রাখা তার দুই-তৃতীয়াংশ পদাতিকদের যুদ্ধে পাঠাননি। সূর্যাস্তের পর দুই বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে নিজ নিজ ক্যাম্পে ফিরে আসে।[৬৩]
দ্বিতীয় দিন
[সম্পাদনা]প্রথম পর্যায়: ১৬ আগস্ট ভাহান একটি যুদ্ধসভায় ভোরের ঠিক পূর্বে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন যাতে মুসলিমদের ফজরের নামাজের সময় অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের আক্রমণ করা যায়। তিনি তার বাহিনীর মধ্যভাগের দুইটি অংশকে মুসলিমদের মধ্যভাগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন যাতে তাদের এদিকে নিয়োজিত রেখে মুসলিমদের পার্শ্বভাগের বিরুদ্ধে মূল আক্রমণ চালানো যায়। এভাবে মুসলিমদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বের করে দেয়া বা মধ্যভাগের দিকে কোণঠাসা করে ফেলার পরিকল্পনা ছিল।[৬৩][৬৫] যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণের জন্য ভাহান আর্মেনীয় দেহরক্ষী দলের সাথে ডান ভাগে নির্মিত একটি প্যাভেলিয়নে অবস্থান নেন। তিনি আচমকা আক্রমণের জন্য বাহিনীকে প্রস্তুত হতে বলেন। বাইজেন্টাইনদের অজান্তে খালিদ আচমকা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য রাতের বেলা সামনের দিকে সেনা মোতায়েন করেছিলেন। ফলে মুসলিমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় পায়। বাইজেন্টাইনরা মধ্যভাগের আক্রমণে সফল হতে পারেনি। ফলে মধ্যভাগ সুরক্ষিত থাকে। তবে পার্শ্বভাগে অবস্থা ভিন্ন রকম ছিল। স্লাভদের নিয়ে গঠিত বাইজেন্টাইন বাম পার্শ্বের কমান্ডার কানাটির আক্রমণ করার পর মুসলিমদের ডান ভাগ পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুসলিমদের ডান ভাগের কমান্ডার আমর ইবনুল আস (রা.) তার অশ্বারোহী সৈনিকদের পাল্টা আক্রমণের নির্দেশ দেন ফলে বাইজেন্টাইনদের আক্রমণকে প্রতিহত করে কিছু সময় অবস্থা স্থিতিশীল করে তোলা সম্ভব হয়। তবে বাইজেন্টাইনদের সংখ্যাধিক্যের কারণে মুসলিমদেরকে পিছু হটতে হয়।[৬৬]
দ্বিতীয় পর্যায়: পার্শ্বভাগের অবস্থা বিবেচনা করে খালিদ ডান ভাগের অশ্বারোহীদেরকে বাইজেন্টাইন বাম ভাগের উত্তর অংশকে আক্রমণের নির্দেশ দেন এবং নিজে বাম ভাগের দক্ষিণ অংশের উপর তার মোবাইল গার্ডদের নিয়ে আক্রমণ চালান; এসময় মুসলিমদের ডান ভাগের পদাতিকরা সামনের দিক থেকে আক্রমণ চালায়। এসকল সমন্বিত আক্রমণের ফলে বাইজেন্টাইনদের বাম ভাগ পিছু হটে এবং আমর পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে পূর্বের অবস্থান ফিরে পান।[৬৬] মুসলিমদের বাম ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান। এই অংশের অবস্থা আরো খারাপ ছিল। ডান ভাগ মোবাইল গার্ডের সহায়তা পেলেও বাম ভাগ সহায়তা পায়নি এবং বাইজেন্টাইনদের সংখ্যাধিক্যের ফলে মুসলিমদের অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠে এবং সৈনিকদের পিছু হটতে হয়।[৬০] এই স্থানে বাইজেন্টাইনরা সৈনিকদের সারি ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়। গ্রেগরির প্রয়োগ করা টেসটুডো ফর্মেশন ধীরে কাজ করলেও প্রতিরক্ষায় ভালো কাজ দেয়। ইয়াজিদ তার অশ্বারোহীদেরকে আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যবহার করেন। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার পরও ইয়াজিদের সৈনিকরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ফলে কিছু সময়ের জন্য ভাহানের পরিকল্পনা সফল হয়। মুসলিমদের মধ্যভাগ অবরুদ্ধ হয় এবং পার্শ্বভাগ পিছু হটে। তবে ক্ষতি করা গেলেও উভয় পার্শ্ব ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি।[৬৭] পিছু হটতে থাকা মুসলিমরা শিবিরে ফেরার সময় রাগান্বিত মুসলিম মহিলাদের সম্মুখীন হয়।[৬০] হিন্দ বিনতে উতবা তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তারা তাবুর খুটি তুলে নিয়ে পুরুষদের যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেন। এসময় তারা উহুদের যুদ্ধের সময় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার গাওয়া একটি গান আবৃত্তি করেছিলেন।
তোমরা যারা সৎ নারীর কাছ থেকে পালাও
যার সৌন্দর্য ও গুণ দুটিই আছে;
এবং তাকে কাফিরদের কাছে ছেড়ে দাও,
ঘৃণ্য ও খারাপ কাফিরগণ,
অধিকার, অপমান ও ধ্বংসের জন্য।[৬৬]
এর ফলে পিছু হটতে থাকা মুসলিমদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং তারা পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসে।[৬৮]
তৃতীয় পর্যায়: ডান ভাগের অবস্থান সংহত করার পর খালিদ মোবাইল গার্ডদের বাম ভাগের উপর নজর দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি দিরার ইবনুল আজওয়ারের অধীনে একটি বাহিনী পাঠান এবং তাকে বাইজেন্টাইন মধ্যবাম ভাগে দাইরজানের অংশের সামনে থেকে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। বাকি অশ্বারোহীদের নিয়ে তিনি গ্রেগরির অংশকে আক্রমণ চালান। এখানে অগ্র ও পার্শ্বভাগ থেকে ক্রমাগত আক্রমণের জন্য বাইজেন্টাইনরা পিছু হটে। কিন্তু ফর্মেশন রক্ষা করার জন্য তাদের ধীরে পিছু হটতে হয়।[৬৯] সূর্যাস্তের পর উভয় বাহিনী নিজেদের মূল অবস্থানে ফিরে যায়। দাইরজানের মৃত্যু ও ভাহানের যুদ্ধ পরিকল্পনার ব্যর্থতার ফলে বাইজেন্টাইন বাহিনীর মনোবল তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়। অন্যদিকে সংখ্যা স্বল্পতা সত্ত্বেও খালিদের সফল আক্রমণের ফলে মুসলিমদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।[৭০]
তৃতীয় দিন
[সম্পাদনা]৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট ভাহান আগের দিনে তার ব্যর্থতাগুলো পর্যালোচনা করেন। তার একজন কমান্ডারের মৃত্যু তাকে বেশি বিচলিত করে তোলে। এরপর বাইজেন্টাইনরা কম উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেয়। ভাহান নির্দিষ্ট কিছু স্থানে মুসলিম বাহিনীকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তুলনামূলকভাবে বেশি প্রকাশিত ডান ভাগের উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন। এখানে মুসলিম বাম ভাগের তুলনায় তার আরোহী সৈনিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থা ছিল। সিদ্ধান্ত হয় যে মুসলিম মধ্যডান ও ডান ভাগের সংযোগস্থলে আক্রমণ করা হবে এবং তাদেরকে পৃথকভাবে লড়াই করতে বাধ্য করা হবে।
প্রথম পর্যায়: মুসলিমদের ডান ভাগ ও মধ্যডান ভাগে বাইজেন্টাইনদের হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়।[৭১] প্রথমদিকে আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা গেলেও পরে প্রথমে মুসলিমদের ডান ভাগ ও এরপর মধ্যডান ভাগ পিছু হটে। মুসলিমরা এবারও পুনরায় মহিলাদের সম্মুখীন হয়েছিল বলা হয়ে থাকে। মুসলিমরা শিবির থেকে কিছু দূরে সংগঠিত হতে সক্ষম হয় এবং পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়। [৬৬]
দ্বিতীয় পর্যায়: বাইজেন্টাইন বাহিনী মুসলিমদের ডান ভাগের উপর জোর দিচ্ছে বুঝতে পেরে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) মোবাইল গার্ড ও ডান ভাগের অশ্বারোহীদের নিয়ে আক্রমণ চালান। তিনি বাইজেন্টাইনদের মধ্যবাম ভাগের ডান অংশের উপর হামলা চালান এবং মুসলিম মধ্যডান ভাগের রিজার্ভ অশ্বারোহীরা মধ্যবাম ভাগের বাম অংশের উপর হামলা চালায়। এদিকে তিনি মুসলিম ডান ভাগের অশ্বারোহীদেরকে বাইজেন্টাইনদের বাম ভাগের উপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। এই লড়াই শীঘ্রই রক্তস্নাত অবস্থার সৃষ্টি করে। দুই পক্ষের অনেকে নিহত হয়। খালিদের (রা.) সময়মত আক্রমণের ফলে সেদিনও মুসলিমদের অবস্থা সুরক্ষিত থাকে এবং সন্ধ্যা নাগাদ বাইজেন্টাইনরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়কার তাদের মূল অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।[৬৬]
চতুর্থ দিন
[সম্পাদনা]১৮ আগস্ট অর্থাৎ চতুর্থ দিন ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে।
প্রথম পর্যায়: ভাহান আগের দিন মুসলিমদের ডান ভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারায় যুদ্ধপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার চিন্তা করেন। কানাটির স্লাভদের দুইটি বাহিনীকে মুসলিমদের ডান ও মধ্যডান অংশের উপর আক্রমণ চালান। আর্মেনীয় ও জাবালার নেতৃত্বাধীন খ্রিষ্টান আরবরা এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে। মুসলিমদের এই অংশ পুনরায় পিছিয়ে পড়ে।[৭২] খালিদ (রা.) পুনরায় তার মোবাইল গার্ডদের নিয়ে উপস্থিত হন। তিনি পুরো যুদ্ধক্ষেত্রজুড়ে হামলার আশঙ্কা করেছিলেন তাই সতর্কতা হিসেবে আবু উবাইদা (রা.) ও ইয়াজিদকে যথাক্রমে মধ্যবাম ও বাম অংশের দায়িত্ব দেন এবং স্ব স্ব স্থানের সম্মুখে থাকা বাইজেন্টাইন বাহিনীকে আক্রমণের দায়িত্ব দেন। এই হামলার ফলে বাইজেন্টাইন বাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করা সম্ভব হয়।[৭৩]
দ্বিতীয় পর্যায়: খালিদ (রা.) তার মোবাইল গার্ডদের দুইটি অংশে বিভক্ত করে বাইজেন্টাইনদের মধ্যবাম অংশের দুই দিক থেকে আক্রমণ করে। এসময় মুসলিমদের মধ্যডান অংশ সামনে থেকে আক্রমণ করে। এই তিনটি আক্রমণের মাধ্যমে বাইজেন্টাইনদের পিছিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ইতিমধ্যে মুসলিমদের ডান অংশ তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করে; এতে পদাতিকরা সামনের দিক থেকে এবং অশ্বারোহীরা বাইজেন্টাইনদের বাম ভাগের উত্তর অংশে আক্রমণ চালায়। বাইজেন্টাইনদের মধ্যবাম অংশ পিছু হটার পর বাম অংশও পিছু হটে আসে।[৭২]
খালিদ (রা.) ও তার মোবাইল গার্ডরা পুরো বিকেল জুড়ে আর্মেনীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অন্যত্র অবস্থা শোচনীয় হতে শুরু করে।[৭৪] বাইজেন্টাইন অশ্বারোহী তীরন্দাজরা যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান নিয়ে আবু উবাইদা (রা.) ও ইয়াজিদের বাহিনীর উপর তীব্রভাবে তীর নিক্ষেপ শুরু করে ফলে তারা বাইজেন্টাইনদের সারি ভেদ করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। তীরের আঘাতের কারণে অনেক মুসলিম সৈনিক দৃষ্টি হারায়। ফলে এই দিনের নাম পরে "হারানো চোখের দিন" হয়।[৭৫] আবু সুফিয়ানও সেদিন তার এক চোখের দৃষ্টি হারান।[৭৫] ইকরিমা ইবনে আবি জাহল ছাড়া বাকি অংশগুলো পিছিয়ে আসে। এই অংশ আবু উবাইদার (রা.) সেনাদের বামে ছিল। বাইজেন্টাইন বাহিনীকে তার চারশত অশ্বারোহী সৈনিকদের নিয়ে বাধা দানের মাধ্যমে পিছিয়ে আসা মুসলিমদের আড়াল করে দেন। এসকল অন্যান্য অংশগুলো পাল্টা আক্রমণ ও হারানো স্থান উদ্ধারের জন্য সংগঠিত হতে থাকে। ইকরিমার সব সৈনিক মারাত্মক আহত বা নিহত হয়। খালিদের (রা.) বাল্যবন্ধু ইকরিমা নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হন এবং সেদিন সন্ধ্যায় মারা যান।[৭৪]
পঞ্চম দিন
[সম্পাদনা]চতুর্থ দিন ভাহানের সৈনিকরা মুসলিমদের ভেদ করতে ব্যর্থ হয় এবং মোবাইল গার্ডের আক্রমণের সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধের পঞ্চম দিন ১৯ আগস্ট দিনের বেলায় ভাহান মুসলিম শিবিরে সন্ধির জন্য দূত পাঠান। সম্ভবত তিনি বাহিনীকে সংগঠিত করার জন্য সময় চাইছিলেন। কিন্তু খালিদ বিজয় নিকটবর্তী দেখতে পেয়ে সন্ধি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।[৭৬] এই পর্যন্ত মুসলিমরা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান থেকে লড়াই করছিল। কিন্তু বাইজেন্টাইন বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসুক না জানার পর খালিদ আক্রমণাত্মক অবস্থানে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং মুসলিম বাহিনীকে সংগঠিত করা শুরু করেন। মোবাইল গার্ডদের কেন্দ্র করে সকল অশ্বারোহী সৈনিকদের নিয়ে তিনি একটি শক্তিশালী অশ্বারোহী বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনীতে এসময় প্রায় ৮,০০০ অশ্বারোহী সৈনিক ছিল। বাকি দিন তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাইজেন্টাইন বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার সকল পথ বন্ধ করে খালিদ তাদের ফাদে ফেলার পরিকল্পনা করেন। যুদ্ধক্ষেত্রের তিনটি গিরিসংকট ছিল এখানকার প্রাকৃতিক বাধা। এগুলো হল পশ্চিমে ওয়াদি-উর-রুক্কাদ, দক্ষিণে ওয়াদি-আল-ইয়ারমুক এবং পূর্বে ওয়াদি-আল-আল্লাহ। উত্তরের পথ মুসলিম অশ্বারোহীরা বন্ধ করে দেয়।[৭৭] পশ্চিমের ওয়াদি-আর-রুক্কাদে ২০০ মিটার (৬৬০ ফু) খাদের মধ্য দিয়ে কিছু পথ ছিল। তাদের মধ্যে আইন আল দাকারের একটি সেতু ছিল কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাতের বেলা খালিদ দিরারকে ৫০০ অশ্বারোহী সৈনিক দিয়ে সেতু রক্ষার জন্য পাঠান। দিরার বাইজেন্টাইন বাহিনীর উত্তরের পাশ দিয়ে গিয়ে সেতু দখল করে নেন।[৭৮]
ষষ্ঠ দিন
[সম্পাদনা]২০ আগস্ট ছিল যুদ্ধের চূড়ান্ত দিন।[৭৯] খালিদ (রা.) আক্রমণের সরল কিন্তু কার্যকরী পরিকল্পনা প্রয়োগ করেন। তার বৃহৎ অশ্বারোহী বাহিনীকে নিয়ে তিনি বাইজেন্টাইন অশ্বারোহীদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হন যাতে পদাতিকরা কোনো অশ্বারোহী সমর্থন না পায় এবং পার্শ্বভাগ ও পশ্চাদভাগ থেকে সহজে আক্রমণ করা যায়। একই সাথে তিনি বাইজেন্টাইন বাহিনীর বাম ভাগকে আক্রমণ করে পশ্চিমের গিরিসংকটের দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন।[৭৮]
প্রথম পর্যায়: বাইজেন্টাইন বাহিনীর সামনের অংশে আক্রমণের জন্য খালিদ নির্দেশ দেন এবং অশ্বারোহীদের নিয়ে তিনি বাম অংশের দিকে এগিয়ে যান। তাদের কিছু অংশ বাম অংশের অশ্বারোহীদের সাথে লড়াই করে এবং অবশিষ্টরা বাম অংশের পদাতিকদের উপর হামলা চালায়। ইতিমধ্যে মুসলিমদের ডান অংশ সামনে থেকে হামলা চালিয়েছিল। এই দুইটি হামলার ফলে বাইজেন্টাইনদের বাম অংশ পিছিয়ে যায় এবং বাইজেন্টাইনদের মধ্যবাম অংশে গিয়ে তাকে বিশৃঙ্খল করে ফেলে।[৭৬] বাকি মুসলিম অশ্বারোহীরা এরপর বাইজেন্টাইনদের বাম অংশের অশ্বারোহীদের পেছনের অংশে হামলা চালায়। এসময় বাইজেন্টাইনদের সামনেও মুসলিম অশ্বারোহীরা ছিল। তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রের উত্তরদিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর মুসলিমদের ডান অংশের পদাতিকরা বাইজেন্টাইনদের মধ্যবাম অংশের বাম পাশে এবং মুসলিমদের মধ্যডান অংশ সামনের দিক থেকে আক্রমণ করে।
দ্বিতীয় পর্যায়: মুসলিম অশ্বারোহীদের তৎপরতা দেখতে পেয়ে ভাহান তার অশ্বারোহীদেরকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেন। তবে তিনি কিছু করার আগে খালিদ (রা.) তাদের উপর আক্রমণ করেন। অবস্থান গ্রহণের সময় তাদের উপর অগ্রভাগ ও পার্শ্বভাগ থেকে হামলা চালানো হয়। অসংগঠিত ও বিশৃঙ্খল বাইজেন্টাইন অশ্বারোহীরা সহজেই বিতাড়িত হয় এবং উত্তরের দিকে বিক্ষিপ্ত হয়। এর ফলে পদাতিকরা একা হয়ে পড়ে।[৮০]
তৃতীয় পর্যায়: বাইজেন্টাইন অশ্বারোহীদের তাড়িয়ে দেয়ার পর খালিদ (রা.) মধ্যবাম অংশের দিকে মনোনিবেশ করেন। ইতিমধ্যে তারা মুসলিমদের দুইটি আক্রমণের সম্মুখীন হয়। তাদেরকে খালিদের (রা.) অশ্বারোহীরা পেছনের দিক থেকে আক্রমণ করে এবং ভেদ করে ফেলতে সক্ষম হয়।[৮০]
শেষ পর্যায়: বাইজেন্টাইনদের মধ্যবাম অংশের পিছু হটার পর বাইজেন্টাইনদের ব্যাপকভাবে পিছু হটা শুরু হয়। খালিদ (রা.) উত্তরের পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করার জন্য তার অশ্বারোহীদেরকে নিযুক্ত করেন। বাইজেন্টাইনরা পশ্চিমে ওয়াদি-উর-রুক্কাদের দিকে পিছু হটে। এখানে গিরিসংকট অতিক্রমের জন্য আইন আল দাকার সেতু ছিল।[৭৪] খালিদের (রা.) পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দিরার আগের রাতে সেতুটি দখল করে নিয়েছিলেন। এই অংশ বন্ধ করার জন্য ৫০০ অশ্বারোহী সৈনিকের দল পাঠানো হয়েছিল। খালিদ (রা.) চাইছিলেন যাতে বাইজেন্টাইনরা এই পথে পালায়। বাইজেন্টাইনরা এসময় সব দিক থেকে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।[৭৬]k[›] তাদের কেউ কেউ গভীর গিরিখাতের ভেতর পড়ে যায়, কেউ বা নদীপথে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু নিচে পাথরের কারণে আঘাত পায় এবং মৃত্যুবরণ করে। তবে অনেক সৈনিক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।[৮১] দামেস্ক বিজয়ের সময় রাশিদুন সেনাবাহিনীর গ্রিক সংবাদাতা জোহান এই যুদ্ধে মারা যায়। এই যুদ্ধে মুসলিমরা কাউকে বন্দী করেনি। তবে পরবর্তীতে অগ্রসর হওয়ার সময় কেউ কেউ বন্দী হয়।[৮২] থিওডোর ট্রাইথিরিয়াস যুদ্ধের সময় মারা যান। নিকেটাস পালিয়ে এমেসা চলে যেতে সক্ষম হন। জাবালা ইবনুল আইহাম পালিয়ে যান এবং পরে মুসলিমদের সাথে সন্ধিতে আসেন। কিন্তু শীঘ্রই পক্ষত্যাগ করে পুনরায় বাইজেন্টাইন পক্ষে চলে যান।[৮৩]
পরবর্তী অবস্থা
[সম্পাদনা]যুদ্ধের এসকল পর্যায়ের পর খালিদ (রা.) ও তার মোবাইল গার্ড বাহিনী উত্তরদিকে পিছু হটা বাইজেন্টাইন বাহিনীকে অণুসরণ করেন। দামেস্কের নিকটে তাদের সাথে তার বাহিনী মুখোমুখি হয় এবং লড়াই শুরু হয়। এই লড়াইয়ের সময় সেনাপতি আর্মেনীয় রাজপুত্র ভাহান নিহত হন।[৮৪] খালিদ (রা.) এরপর দামেস্কে প্রবেশ করেন। সেখানে তাকে স্থানীয়রা স্বাগত জানায়। এভাবে শহর পুনরায় মুসলিমদের হাতে আসে।[৩৩][৮৫]
বিপর্যয়ের সংবাদ এন্টিওকে সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে পৌছানোর পর তিনি ভেঙে পড়েন।[৮৬] এই পরাজয়ের জন্য তিনি তার ভুল কর্মের জন্য বিশেষত তার ভাগ্নি মারটিনাকে বিয়ে করাকে দোষারোপ করেন।[৮৭] সম্পদ থাকাকালীন সময়ে তার প্রদেশগুলো পুনরায় জয় করা উচিত ছিল কিন্তু এখন তার সৈনিক বা অর্থ কোনোটাই নেই। তিনি এন্টিওকের ক্যাথেড্রালে প্রার্থনা করতে যান।[৮৬] তিনি তার উপদেষ্টাদের নিয়ে ক্যাথেড্রালে বৈঠকে বসেন এবং পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে। তাকে বলা হয় যে জনগণ ও তার পাপের কারণে এমনটা হয়েছে এবং এ কথা তিনি মেনে নিয়েছিলেন।[৮৮] এরপর হেরাক্লিয়াস রাতের বেলা জাহাজে চড়ে কনস্টান্টিনোপল রওয়ানা হন। সিরিয়ার প্রতি হেরাক্লিয়াস বিদায়বার্তা হিসেবে নিম্নোক্ত কথা বলেছেন বলে লিপিবদ্ধ রয়েছে:
বিদায়, দীর্ঘ বিদায় সিরিয়া,l[›][৮৬] আমার চমৎকার প্রদেশ। তুমি এখন শত্রুদের হাতে। তুমি শান্তিতে থাকো, হে সিরিয়া - শত্রুদের জন্য তুমি কত সুন্দর ভূমি.[৮৮]
হেরাক্লিয়াস ট্রু ক্রস ও জেরুজালেমে রক্ষিত অন্যান্য আরো স্মৃতিচিহ্নসহ সিরিয়া ত্যাগ করেন। এগুলো পার্থিয়া অফ জেরুজালেম গোপনে জাহাজে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।[৮৬] বলা হয় যে সম্রাটের পানির ভয় ছিল।[৮৯] তাই বসফরাস পার হওয়ার জন্য পন্টুন সেতু তৈরী করা হয়েছিল। সিরিয়া ত্যাগ করার পর হেরাক্লিয়াস আনাতোলিয়া ও মিশর রক্ষার জন্য তার বাকি বাহিনীকে সংগঠিত করা শুরু করেন। ৬৩৮-৩৯ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন আর্মেনিয়া মুসলিমদের হাতে আসে। এরপর তারসুস শহরের পূর্ব দিকের দুর্গগুলো খালি করার নির্দেশ দিয়ে হেরাক্লিয়াস মধ্য আনাতোলিয়ায় একটি বাফার অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেন।[৯০] ৬৩৯-৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিমরা মিশর জয় করে। ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ডান অংশের কমান্ডার আমর ইবনুল আস এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।[৯১]
মূল্যায়ন
[সম্পাদনা]সংখ্যা স্বল্পতা সত্ত্বেেও দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে বেশি শক্তিশালী বাহিনীকে তুলনামূলক কম শক্তিশালী বাহিনী পরাজিত করায় সামরিক ইতিহাসে ইয়ারমুকের যুদ্ধকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়।
বাইজেন্টাইন কমান্ডাররা প্রতিপক্ষকে নিজ পছন্দমত যুদ্ধক্ষেত্রে আসার সুযোগ দেন। কিন্তু এরপরও তাদের কোনো কৌশলগত অসুবিধা হয়নি।[৫১] খালিদ (রা.) তার বাহিনীর সংখ্যা স্বল্পতার কথা বুঝতে পেরেছিলেন এবং শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান থেকে যুদ্ধ করেছেন। শেষ দিনে চূড়ান্ত আক্রমণের সময় তিনি তার কল্পনা, দূরদৃষ্টি ও সাহসের সাথে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং এক্ষেত্রে বাইজেন্টাইন কমান্ডারদের ছাড়িয়ে যান। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র বাহিনী পরিচালনা করলেও দূরদৃষ্টির কারণে তিনি তার একটি অশ্বারোহী বাহিনীকে চূড়ান্ত আক্রমণের আগের রাতে প্রতিপক্ষের পিছু হটার রাস্তা অবরোধ করতে নিযুক্ত করেছিলেন।[৭৮]
ইয়ারমুকের নেতৃত্বের কারণে খালিদ বিন ওয়ালিদকে (রা.) ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি হিসেবে গণ্য করা হয়।[৯] অশ্বারোহী সেনাদের সফল ব্যবহারের কারণে তাদের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণার প্রমাণ পাওয়া যায়। তার মোবাইল গার্ড বাহিনী দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারত। তাদের উপস্থিতি যুদ্ধের অবস্থা বদলে দিতে সক্ষম ছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের এক স্থান থেকে অন্যত্র গমন যুদ্ধক্ষেত্রে সফলতা নিয়ে আসে।[৯২]
ভাহান ও তার বাইজেন্টাইন কমান্ডাররা এই অশ্বারোহী বাহিনীর সাথে মোকাবেলায় সফল হননি। তারা তাদের বৃহৎ বাহিনীর সফল ব্যবহারেও ব্যর্থ হন।[৯৩] যুদ্ধে বাইজেন্টাইন অশ্বারোহীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি এবং ছয়দিনের অধিকাংশ সময়ে তারা রিজার্ভ হিসেবে ছিল।[৬১] তারা কখনো তাদের আক্রমণ এগিয়ে নিতে পারেনি এবং চতুর্থ দিন একটি ফলাফল নির্ধারণী আক্রমণ সম্ভব হলেও তারা সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। কমান্ডারদের মধ্যে সংঘাতের ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেক খ্রিষ্টান আরব ছিল সাধারণ সৈনিক। অন্যদিকে মুসলিমদের অধিকাংশ দক্ষ সৈনিক ছিল।[৯৪]
সিরিয়ায় মুসলিমদের ধ্বংস করার জন্য হেরাক্লিয়াসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কমান্ডাররা এক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেননি। হেরাক্লিয়াস যা বৃহৎ কৌশলগত স্কেলে পরিকল্পনা করেছিলেন খালিদ (রা.) তা ছোট কৌশলগত স্কেলে বাস্তবায়ন করেন। নিজ বাহিনীকে নির্দিষ্ট স্থানে দ্রুত সংগঠিত করে খালিদ (রা.) বৃহৎ বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। ভাহান তার সংখ্যাধিক্যকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন এবং সম্ভবত যুদ্ধক্ষেত্রের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বড় আকারের সেনা সমাবেশের পক্ষে অসুবিধাজনক ছিল। তবে ভাহান কোনো ক্ষেত্রে তার বৃহৎ বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সফলভাবে প্রতিপক্ষের সারি ভেদ করতে সক্ষম হননি।[৯৫] ছয়দিনের মধ্যে পাঁচদিন তিনি আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করলেও তার যুদ্ধ বিন্যাস মোটামুটি স্থির ছিল। এসকল কারণে খালিদের (রা.) জন্য শেষের দিন সুবিধাজনক অবস্থা তৈরী হয়। এসময় খালিদ (রা.) তার সকল অশ্বারোহীদের সমবেত করে সুসংগঠিতভাবে আক্রমণ করেন এবং এর ফলে বিজয় অর্জিত হয়।[৯২] জর্জ এফ. নাফজিগার তার ইসলাম এট ওয়ার গ্রন্থে যুদ্ধের বর্ণনায় লিখেছেন:
“ | ইয়ারমুকের কথা বর্তমানে কম শোনা গেলেও এটি মানুষের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান ফলাফল নির্ধারণী যুদ্ধ...... হেরাক্লিয়াসের বাহিনী জয়ী হলে বর্তমান পৃথিবী এতটাই ভিন্ন হত যে তাকে আলাদা করে চেনা যেত না।[৭] | ” |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ কেনেডি 2006, পৃ. 45
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 64–65
- ↑ সিরিয়ার ইসলামিক বিজয় আল-ইমাম আল-ওয়াকিদি কর্তৃক ফাতুহুশামের একটি অনুবাদ মাওলানা সুলায়মান আল-কিন্দি পৃষ্ঠা ৩৫২-৩৫৩ [১]
- ↑ হযরত উমর ফারুক প্রফেসর ড. মাসুদ-উল-হাসান, আশফাক মির্জা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামিক পাবলিকেশন্স লিমিটেড 13-ই, শাহ আলম মার্কেট, লাহোর, পাকিস্তান দ্বারা প্রকাশিত সৈয়দ আফজাল-উল-হক কুদ্দুসি, কুদ্দুসি প্রিন্টার্স, নাসির পার্ক, বিলাল গঞ্জ, লাহোর, পাকিস্তান দ্বারা প্রকাশিত
- ↑ ক খ আকরাম ২০০৪, পৃ. 425
- ↑ Britannica (২০০৭): "More than 50,000 byzantine soldiers died"
- ↑ ক খ ওয়াল্টন ২০০৩, পৃ. ৩০
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. ৬
- ↑ ক খ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 19
- ↑ হাল্ডোন ১৯৯৭, পৃ. 41
- ↑ গ্রেট্রেক্স-লিউ ২০০২, পৃ. 189–190
- ↑ গ্রেট্রেক্স-লিউ ২০০২, পৃ. 196
- ↑ গ্রেট্রেক্স-লিউ ২০০২, পৃ. 217–227
- ↑ হাল্ডোন ১৯৯৭, পৃ. 46
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 12–14
- ↑ Luttwak ২০০৯, পৃ. 199
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 87
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 246
- ↑ রানসিম্যান ১৯৮৭, পৃ. 15
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 298
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 60
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 112
- ↑ আকরাম ২০০৯, পৃ. 133
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 402
- ↑ Al-Waqidi 8th century, পৃ. 100
- ↑ (আর্মেনীয়) Bartikyan, Hrach. «Վահան» (Vahan). Armenian Soviet Encyclopedia. vol. xi. Yerevan: Armenian Academy of Sciences, 1985, পৃষ্ঠা 243.
- ↑ কেনেডি ২০০৭, পৃ. 82
- ↑ ক খ আকরাম ২০০৪, পৃ. 409
- ↑ Al-Waqidi 8th century, পৃ. 106
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 16
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 399
- ↑ ক খ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 61
- ↑ ক খ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 67
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 401
- ↑ al-Baladhuri 9th century, পৃ. 143
- ↑ ক খ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 134
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 407
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 64
- ↑ Schumacher 1889, পৃ. 77–79
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 122
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 63
- ↑ কায়েগি ২০০৩, পৃ. 242
- ↑ জন হাল্ডোন (2013)
- ↑ ক খ গ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 66
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 34
- ↑ ওয়াল্টন ২০০৩, পৃ. 29
- ↑ ক খ আকরাম ২০০৪, পৃ. 411
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 413
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 39
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 36
- ↑ ক খ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 124
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 65
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 29
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 30
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 39
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 132–133
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 121
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 130
- ↑ আকরাম ২০০৯, পৃ. 132
- ↑ ক খ গ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 70
- ↑ ক খ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 129
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 92
- ↑ ক খ গ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 68
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 415
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 417
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 71
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 418
- ↑ রেগান ২০০৩, পৃ. 164
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 418–19
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 419
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 420
- ↑ ক খ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 72
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 421
- ↑ ক খ গ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 75
- ↑ ক খ Al-Waqidi 8th century, পৃ. 148
- ↑ ক খ গ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 76
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 422
- ↑ ক খ গ আকরাম ২০০৪, পৃ. 423
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 114
- ↑ ক খ আকরাম ২০০৪, পৃ. 424
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 138
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 128
- ↑ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 80
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 273
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 426
- ↑ ক খ গ ঘ রানসিম্যান ১৯৮৭, পৃ. 17
- ↑ রানসিম্যান ১৯৮৭, পৃ. 96
- ↑ ক খ রেগান ২০০৩, পৃ. 167
- ↑ রেগান ২০০৩, পৃ. 169
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 148–49
- ↑ কায়েগি ২০০৩, পৃ. 327
- ↑ ক খ নিকোল ১৯৯৪, পৃ. 87–89
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 137
- ↑ আকরাম ২০০৪, পৃ. 408
- ↑ কায়েগি ১৯৯৫, পৃ. 143
টীকা
[সম্পাদনা]^ a: বর্তমান হিসাব অনুযায়ী রোমান বাহিনী:
ডোনের (১৯৮১): ১,০০,০০০
ব্রিটানিকা (২০০৭): "৫০,০০০ এর বেশি বাইজেন্টাইন সেনা নিহত হয়".
নিকোল (১৯৯৪): ১,০০,০০০
আকরাম (১৯৭০): ১,৫০,০০০
কায়েগি (১৯৯৫): ১৫,০০০–২০,০০০
ম্যাংগো, সিরিল (২০০২). The Oxford History of Byzantium: ৮০,০০০
^ b: রোমান সূত্র অনুযায়ী রোমান বাহিনী:
থিওফেনেস (পৃষ্ঠা 337–338): ৮০,০০০ রোমান সৈনিক এবং ৬০,০০০ মিত্র গাসানি সৈনিক (Gibbon, খণ্ড. 5, পৃষ্ঠা 325).
^ c: মুসলিম সূত্রে রোমান বাহিনী:
Baladhuri (পৃষ্ঠা 140): ২,০০,০০০
তাবারি (খণ্ড. 2, পৃষ্ঠা 598): ২,০০,০০০
Ibn Ishaq (তাবারি, খণ্ড. 3, পৃষ্ঠা 75): ২৪,০০০ মুসলিমের বিপক্ষে ১,০০,০০০ রোমান
^ d: বর্তমান হিসাবে মুসলিম বাহিনী:
কায়েগি (১৯৯৫): ১৫,০০০-২০,০০০ সর্বোচ্চ
নিকোল (১৯৯৪): ২৫,০০০ সর্বোচ্চ
আকরাম: সর্বোচ্চ ৪০,০০০
Treadgold (১৯৯৭): ২৪,০০০
^ e: মুসলিম সূত্রে মুসলিম বাহিনী:
Ibn Ishaq (খণ্ড. 3, পৃষ্ঠা 74): ২৪,০০০
Baladhuri: ২৪,০০০
তাবারি (খণ্ড. 2, পৃষ্ঠা 592): ৪০,০০০
^ f: প্রাথমিক সূত্রে রোমান ক্ষয়ক্ষতি:
তাবারি (খণ্ড. 2, পৃষ্ঠা 596): ১,২০,০০০ নিহত
Ibn Ishaq (খণ্ড. 3, পৃষ্ঠা 75): ৭০,০০০ নিহত
Baladhuri (পৃষ্ঠা 141): ৭০,০০০ নিহত
^ g: মুসলিম সূত্রে তার নাম জাবান, ভাহান বেনাস ও মাহান হিসেবে উল্লেখিত রয়েছে। আর্মেনীয় উৎসের নাম হওয়ায় তার নাম ভাহান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
^ i: আবু বকরের শাসনামলে খালিদ বিন ওয়ালিদ সিরিয়ার কমান্ডার-ইন-চীফ ছিলেন। কিন্তু উমর ইবনুল খাত্তাব খলিফা হওয়ার পর তাকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে নিয়োগ দেন।
^ j: কিছু বাইজেন্টাইন সূত্রে ইয়াকুসাহতে একটি শিবিরের উল্লেখ রয়েছে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে ১৮ কিলোমিটার (১১ মা) দূরে ছিল। এ আই আকরামের মতে ওয়াদি-উর-রুক্কাদের উত্তরে বাইজেন্টাইনদের শিবির ছিল, তবে ডেভিড নিকোল তৎকালীন আর্মেনীয় সূত্রের সাথে একমত পোষণ করেন যাতে ইয়াকুসাহর শিবিরের কথা বলা রয়েছে। (দেখুন: নিকোল পৃষ্ঠা 61 এবং আকরাম ২০০৪ পৃষ্ঠা 410).
^ k: আকরাম আইন দাকারের সেতুকে নদীর অগভীর অংশ বলে বর্ণনা করেছেন, তবে নিকোল সঠিক ভূত্তত্বের উল্লেখ করেছেন। (দেখুন: নিকোল পৃষ্ঠা 64 এবং আকরাম পৃষ্ঠা 410)
^ m: ডেভিড নিকোলের মতে কমপক্ষে চার থেকে একটি। (দেখুন নিকোল পৃষ্ঠা 64)
^ n: যুদ্ধের বর্ণনা বোঝাতে ব্যবহৃত চিহ্ন। চিত্র-১ দেখুন।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]প্রাথমিক উৎস
[সম্পাদনা]- Al-Baladhuri, Ahmad ibn Yahya (৯ম শতাব্দী), Kitab Futuh al-Buldan এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Al-Waqidi, Abu Abdullah Muhammad Ibn Umar (8th century), Fatuh al Sham (Conquest of Syria) এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Chronicle of Fredegar, ৬৫৮
- Dionysius Telmaharensis (৭৭৪), Chronicle of Pseudo-Dionysius of Tell-Mahre
- Ibn Ishaq (৭৫০), Sirah Rasul Allah
- Ibn Khaldun (১৩৭৭), Muqaddimah
- The Maronite Chronicles, ৬৬৪
- Pseudo-Methodius (৬৯১), Apocalypse of Pseudo-Methodius
- Muhammad ibn Jarir al-তাবারি (৯১৫), History of the Prophets and Kings
- Theophanes the Confessor (৮১০–৮১৫), Chronographia
- Thomas the Presbyter (7th century), Chronicle এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - Fragment on the Arab Conquests, ৬৩৬
- Palmer, Andrew; Brock, Sebastian P; Hoyland, Robert (৮১৯), "West-Syrian Chronicle of 819", West-Syrian Chronicles, আইএসবিএন 9780853232384
দ্বিতীয় উৎস
[সম্পাদনা]- আকরাম, A.I (২০০৯), Muslim conquest of Persia, third edition, Maktabah Publications, আইএসবিএন 0-9548665-3-3
- আকরাম, A.I (২০০৪), The Sword of Allah: Khalid bin al-Waleed – His Life and Campaigns, third edition, আইএসবিএন 0-19-597714-9
- Conrad, Lawrence I. (১৯৮৮), "Seven and the Tasbīʿ: On the Implications of Numerical Symbolism for the Study of Medieval Islamic History", Journal of the Economic and Social History of the Orient, Brill Publishers, 31 (1): 42–73, জেস্টোর 3631765
- Donner, Fred McGraw (১৯৮১), The Early Islamic Conquests, Princeton University Press, আইএসবিএন 0-691-05327-8
- গ্রেট্রেক্স-লিউ; Lieu, Samuel N. C. (২০০২), The Roman Eastern Frontier and the Persian Wars (Part II, 363–630 AD), Routledge, আইএসবিএন 0-415-14687-9
- Gil, Moshe; Broido, Ethel (১৯৯৭), A History of Palestine: 634–1099, Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-59984-9
- হাল্ডোন, জন (২০০১), The Byzantine Wars, Tempus Publishing, আইএসবিএন 0-7524-1795-9
- হাল্ডোন, জন (১৯৯৭), Byzantium in the Seventh Century: the Transformation of a Culture, Cambridge, আইএসবিএন 0-521-31917-X
- Hoyland, Robert G. (১৯৯৭), Seeing Islam as Others Saw It, Darwin Press, আইএসবিএন 0-87850-125-8, ওসিএলসি 36884186
- Jandora, জন W. (১৯৮৬), "Developments in Islamic Warfare: The Early Conquests", Studia Islamica, Maisonneuve & Larose (64): 101–113, জেস্টোর 1596048
- কায়েগি, Walter Emil (২০০৩), Heraclius: Emperor of Byzantium, Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-81459-6
- কায়েগি, Walter Emil (১৯৯৫), Byzantium and the Early Islamic Conquests, Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-48455-3
- কেনেডি, Hugh N. (২০০৬), The Byzantine And Early Islamic Near East, Ashgate Publishing, আইএসবিএন 0-7546-5909-7
- কেনেডি, Hugh (২০০৭), The Great Arab Conquests: How the Spread of Islam Changed the World We Live In, Weidenfeld & Nicolson publishers: Great Britain, আইএসবিএন 0-297-84657-4
- Luttwak, Edward N (২০০৯), The Grand Strategy of the Byzantine Empire, Harvard University Press, আইএসবিএন 0-674-03519-4
- নিকোল, David (১৯৯৪), Yarmuk 636 A.D.: The Muslim Conquest of Syria, Osprey Publishing, আইএসবিএন 1-85532-414-8
- Palmer, Andrew (১৯৯৩), The Seventh Century in the West-Syrian Chronicles, Liverpool University Press, আইএসবিএন 0-85323-238-5
- রেগান, Geoffery (২০০৩), First Crusader: Byzantium's Holy Wars (1 সংস্করণ), Palgrave Macmillan: New York, আইএসবিএন 1-4039-6151-4
- রানসিম্যান, Steven (১৯৮৭), A History of the Crusades: The First Crusade (second সংস্করণ), Penguin Books: London, আইএসবিএন 978-0-521-34770-9
- Schumacher, Gottlieb; Laurence Oliphant, Guy Le Strange (১৮৮৯), Across the Jordan; being an exploration and survey of part of Hauran and Jaulan, London, Watt
- Treadgold, Warren (১৯৯৭), A History of the Byzantine State and Society, Stanford University Press, আইএসবিএন 0-8047-2630-2
- ওয়াল্টন, Mark W (২০০৩), Islam at war, Greenwood Publishing Group, আইএসবিএন 0-275-98101-0
- Wood David ২০০৭ Jews, Rats, and the Battle of Yarmūk, in The late Roman Army in the Near East from Diocletian to the Arab Conquest edited by Ariel S. Lewin, Pietrina Pellegrini, Archaeopress : Oxford, আইএসবিএন 978-1-4073-0161-7
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইয়ারমুক ইন সোর্ড অফ আল্লাহ অ্যাট গ্র্যান্ড স্ট্রাটেজি এ.আই. আকরামের দ্বারা
- ইয়ারমুকের যুদ্ধের অ্যানিমেটেড মানচিত্র[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] জোনাথন ওয়েব দ্বারা
- ইয়ারমুকের যুদ্ধ, ৬৩৬