নাস্তিকদের প্রতি বৈষম্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Discrimination against atheists থেকে পুনর্নির্দেশিত)
Atheist Death Penalty Map
যে দেশগুলিতে স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মত্যাগ বা নিন্দার জন্য ২০১৩ অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি কেবল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং উত্তর নাইজেরিয়ার কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে ঘটে থাকে।[১][২][৩][৪]

নাস্তিকদের প্রতি বৈষম্য, বর্তমান এবং ঐতিহাসিক উভয় সময়ে, নাস্তিক হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের সাথে নিপীড়ন ও বৈষম্যকে বোঝায়। এছাড়াও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কুসংস্কার, শত্রুতা, ঘৃণা, ভয়, বা নাস্তিকদের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং নাস্তিক্যবাদ নাস্তিকদের সাথে বৈষম্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ নাস্তিকতাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, বিভিন্ন সময় বা বিভিন্ন জায়গায় তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ বা নির্যাতনের ভিত্তিতে তাদেরকে নাস্তিক না বলে মনে করা হয়েছে। ১৩টি মুসলিম দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নাস্তিকতা বা স্বধর্ম ত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ডকে শাস্তি হিসেবে নির্ধারণ করেছে, যেখানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের "অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগুরুরা" বলেছেন এমন নাগরিকদের প্রতি যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখে না, বেশি হলে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ হতে পারে এবং সবচেয়ে গুরুতরভাবে অভিযুক্ত অপরাধের জন্য তাদের প্রতি নিন্দা হিসাবে জেল হতে পারে"।[২]

কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নাস্তিকরা নির্যাতন ও কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হন যেমন আইনি অবস্থান প্রত্যাহার বা ধর্মত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পেয়ে থাকেন।[৫]

অন্যান্য নাম[সম্পাদনা]

কখনও কখনও এই জাতীয় বৈষম্যকে নাস্তিকতাভয়,[৬] নাস্তিক্যভয়,[৭] নাস্তিকবিরোধী বৈষম্য বলা হয়[৮]

প্রারম্ভিক আধুনিক যুগ এবং সংস্কার[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক আধুনিক সময়কালে, "নাস্তিক" শব্দটি একটি অপমানজনক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হত এবং বিস্তৃত আকারে বিভিন্ন লোকদের বোঝানোর জন্য প্রয়োগ করা হত, যাদের মধ্যে রয়েছে ধর্মতত্ত্বের বিশ্বাসের বিরোধিতা কারীরা এবং সেইসাথে যারা আত্মহত্যা করেছে, অনৈতিক বা স্ব-অসংযত ব্যক্তি এমনকি যাদুবিদ্যার প্রতি অবিশ্বাস কারীরা।[৯][১০][১১]

আধুনিক যুগ[সম্পাদনা]

ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেন[সম্পাদনা]

উনিশ শতকে ব্রিটিশ নাস্তিকরা সংখ্যায় কম হলেও বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছিল।[১২] নাস্তিকতার প্রয়োজনীয়তা শিরোনামের একটি পুস্তিকা প্রকাশের কারণে কবি পার্সি বিশি শেলিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং তার কাছ থেকে নিজ দুই সন্তানের ভরণপোষণ কেড়ে নেয়া হয়েছিল।[১৩] বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে যারা খ্রিস্টীয় শপথ গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল, তারা ১৮৬৯ এবং ১৮৭০ সালের পাস হওয়া আইনটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আদালতে বিচার পাওয়ার পক্ষে প্রমাণ দিতে অক্ষম ছিল।[১২]

বর্তমান সময়[সম্পাদনা]

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ[সম্পাদনা]

নাস্তিক এবং স্বীকৃত ধর্মত্যাগকারী ধর্ম থেকে বিচ্যুত হওয়ার অভিযোগে অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে পারেন।[১৪] আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী ও নৈতিক ইউনিয়ন অনুসারে, অন্যান্য জাতির তুলনায়, "অবিশ্বাসী ... ইসলামী দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি- কিছু ক্ষেত্রে নৃশংস- আচরণের মুখোমুখি হতে পারেন"।[৩] নাস্তিক ও ধর্মীয় সংশয়ীরা চৌদ্দটির মতো দেশে মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত হতে পারেন: আফগানিস্তান, ইরান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সুদান, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন[২][১৫]

আলজেরিয়া[সম্পাদনা]

ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি আলজেরিয়ান শিশুর সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষা একটি আবশ্যিক বিষয়।

নাস্তিক বা অজ্ঞবাদী পুরুষদের জন্য মুসলিম মহিলাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে (আলজেরিয়ান পারিবারিক কোড I.II.31)।[১৬]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশী ইসলামী চরমপন্থী সংগঠন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কর্তৃক বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী নাস্তিককে হত্যা করা হয়েছে, এবং তারা একটি "হিট লিস্ট" জারি করেছে। সক্রিয় নাস্তিক ব্লগাররা হত্যার হুমকিতে বাংলাদেশ ত্যাগ করছেন।[১৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Fenton, Siobhan (৩০ মার্চ ২০১৬)। "The 13 countries where being an atheist is punishable by death"The Independent। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. Robert Evans (৯ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Atheists face death in 13 countries, global discrimination: study"Reuters। ২৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২০  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "reuters131210" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  3. "International Humanist and Ethical Union – You can be put to death for atheism in 13 countries around the world"। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "iheu report" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  4. "The Freedom of Thought Report"International Humanist and Ethical Union। ২০১৫। ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৬ 
  5. "'God Does Not Exist' Comment Ends Badly for Indonesia Man"। ২০১২-০১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-২০ 
  6. Warf, Barney (২০১৫)। "Atheist Geographies and Geographies of Atheism"। The Changing World Religion Map। পৃষ্ঠা 2225। আইএসবিএন 978-94-017-9375-9 – Amazon.com-এর মাধ্যমে। 
  7. Ribeiro, Henrique Jales (২০০৯-১২-০১)। Rhetoric and Argumentation in the Beginning of the XX Century (ইংরেজি ভাষায়)। Imprensa da Universidade de Coimbra / Coimbra University Press। আইএসবিএন 9789898074775 
  8. Cragun, Ryan T.; Joseph H. Hammer (২০১৩)। "North America"The Oxford Handbook of Atheism। Oxford University Press। পৃষ্ঠা xiii, 615+। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; davidson নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; books.google নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  11. Laursen, John Christian; Nederman, Cary J. (১৯৯৭)। Beyond the Persecuting Society: Religious Toleration Before the Enlightenment। University of Pennsylvania Press। পৃষ্ঠা 142। আইএসবিএন 978-0-8122-1567-0 
  12. Larson, Timothy (২০০৩)। "Victorian England"। Cookson, Catharine। Encyclopedia of religious freedomবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। New York: Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-94181-5 
  13. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; gey253 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  14. Robert Evans (৯ ডিসেম্বর ২০১২)। "Atheists around world suffer persecution, discrimination: report"Reuters। ২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২০ 
  15. "International Humanist and Ethical Union (IHEU)"। ২০১৫। ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২০ 
  16. "de beste bron van informatie over Lexalgeria. Deze website is te koop!"। lexalgeria.net। ২ জানুয়ারি ২০১১। ২৩ জুন ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১১ 
  17. Writer, Staff (৩০ মে ২০১৫)। "'You'll be next': Bangladeshi blogger gets death threat on Facebook"The times of India। Kolkata। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]