বাংলাদেশে ধর্মবিশ্বাস
বাংলাদেশের সংস্কৃতি |
---|
বিষয় সম্পর্কিত ধারাবাহিক |
![]() |
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২
বাংলাদেশ সাংবিধানিক ভাবে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা হল বাংলাদেশ সংবিধানের চারটি মূলনীতির একটি, যদিও বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এদেশের আইন হল ধর্মনিরপেক্ষ। ব্রিটিশ আমল থেকে এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখ আছে যে, " রাষ্ট্র হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুশীলনে সমান মর্যাদা এবং সমান অধিকার নিশ্চিত করবে"। ধর্মের স্বাধীনতা হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত মৌলিক কাঠামো, যেখানে ধর্মীয় পার্থক্য নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের আহ্বান জানানো হয় এবং বিভিন্ন ক্ষেএে ধর্মের বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ হলো কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে অন্যতম[১][২] এবং এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্ম গ্রহণ করা আইন দ্বারা বৈধ করা হয়।
ধর্ম অনুসারে জনসংখ্যা[সম্পাদনা]
ধর্ম | জনসংখ্যা |
---|---|
মুসলিম (![]() |
১৫০,৩৬০,৪০৫ |
হিন্দু (![]() |
১৩,১৩০,১১০ |
বৌদ্ধ (![]() |
১,১০৭,৪৬৬ |
খ্রিস্টান (![]() |
৪৯৫,৪৭৫ |
অন্যান্য | ১৯৮,১৯০ |
মোট | ১৬৫,১৫৮,৬২০ |
ইসলাম ধর্ম[সম্পাদনা]
২০১১ সালে বাংলাদেশে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৪৬ মিলিয়ন,যা দেশের জনসংখ্যার ৯০%। তাই বাংলাদেশ সংবিধানে ইসলামকে রাষ্টীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহওম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশ। মুসলমানরা দেশের প্রধান সম্প্রদায় এবং তারা বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের ৮৮ ভাগ বাঙালি মুসলমান এবং ২ ভাগ বিহারি মুসলমান।এই দেশের অধিকাংশ মুসলমান সুন্নি, তথাপি একটি ছোট অংশ জুড়ে আছে শিয়া সম্প্রদায়। শিয়াদের অধিকাংশই শহরে বাস করে। শিয়া ধর্মালম্বীরা নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতি হুসাইন ইবনে আলী এর শহীদ হওয়ার দিনটিকে গভীর শোকের সাথে স্মরণ করে। মুসলমানরা ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, মুহররম, মিলাদ উন নবী, শব -ই- বরাত ও চাদ রাত সারা দেশে উদ্যাপন করে। বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের মুসলমানদের বৃহত্তম ও উল্লেখযোগ্য সমাবেশ। বাংলা অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায় অর্থাৎ (বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ) ভারতের প্রভাবশালী ইসলামি ধারা থেকে স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়। বাংলাদেশের মুসলমানদের ইসলামের প্রতি সাধারণ ব্যাক্তিগত অঙ্গীকার সত্বেও ইসলামি রীতিনীতি পালন সামাজিক অবস্থান, স্থানীয় ও ব্যাক্তিগত বিবেচনা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। গ্রামাঞ্চলে কিছু বিশ্বাস এবং অনুশীলন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে যা থেকে ভিন্ন এবং প্রায়ই গোড়া ইসলামের সাথে দ্বন্দ্ব করে।
হিন্দুধর্ম[সম্পাদনা]
হিন্দু ধর্ম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। এদেশের ১২.৭৩ মিলিয়ন মানুষ হিন্দু (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় হিন্দু জনবহুল দেশ। দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম ও উওর -পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণসহ বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে হিন্দুদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুধর্ম প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের প্রচলিত হিন্দু ধর্মের রীতিনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিলে যায়। যার সাথে বাংলাদেশ ভারত বিভাগের আগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ছিল। দুর্গাপূজা, রথযাত্রা ও হিন্দু উৎসব বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম জুড়ে উৎযাপন করা হয়।
খ্রিষ্টধর্ম[সম্পাদনা]
খ্রিষ্টীয় ষোড়শ থেকে সপ্তাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্তুগিজ ব্যাবসায়ী ও মিশনারিদের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম বাংলাদেশে আসে। খ্রিস্টানরা মোট জনসংখ্যার মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৪ শতাংশ এবং বেশিরভাগ একটি শহুরে সম্প্রদায়। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম বাঙালী খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রধান, অন্যদিকে বাকিরা বেশিরভাগই ব্যাপটিস্ট এবং অন্যান্য। গারো, সাওতাল, ওরাও, চাকমা, খাসি, লুশেই, বাওম ইত্যাদি কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের অল্প সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। এবং আরো অনেক সম্প্রদায় রয়েছে।
বৌদ্ধধর্ম[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ০.৬% জুড়ে আছে বৌদ্ধধর্মালম্বী জনগোষ্ঠী। প্রাচীন তত্ত্ব্য মতে, বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চল ছিল এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের মূল কেন্দ্র। দর্শন ও স্থাপত্য সহ বৌদ্ধধর্ম সভ্যতা বাংলা থেকে তিব্বত, দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করে। কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ স্থাপত্য, আংকোর ওয়াট মন্দির এবং বরোবুদুর বিহার যেমন বাংলাদেশের প্রাচীন মঠ সোমপুর বিহার। যদিও এটা এখন মুসলিম দেশ, বৌদ্ধ জাতি ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ছোট কোন খেলোয়াড় নয়। বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্মের অধিকাংশ অনুসারী চট্টগ্রাম বিভাগে বাস করে। এখানে বাংলাভাষী বড়ুয়ারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী যারা প্রায় একচেটিয়া ভাবে চট্টগ্রাম এলাকায় কেন্দ্রীভূত এবং একইসাথে বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে যেমন কুমিল্লা ময়মনসিংহ,রংপুর, সিলেট জেলায় বাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৌদ্ধদের অধিকাংশ চাকমা, মারমা, খুমি,বাওম,চক,কুকি,মুরাং,তানচাঙ্গিয়া এবং খিয়াং উপজাতির অন্তর্ভুক্ত, যারা প্রাচীন সময় থেকে বৌদ্ধধর্মের চর্চা করে আসছে। অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায় যারা অ্যানিমিজম চর্চা করে,তাদের কিছু বৌদ্ধ ধর্মের অধীনে এসেছে। এই অঞ্চলের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠান বৌদ্ধধর্ম ও প্রাচীন অ্যানিমিস্টিক বিশ্বাসের সমন্বয়। বৌদ্ধ পূর্ণিমা বাঙালি বৌদ্ধ ও বৌদ্ধ উভয় উপজাতির মধ্যে সর্বাধিক পালিত হয়।
শিখধর্ম[সম্পাদনা]
বাংলাদেশের প্রায় ১০০০০০ মানুষ এই ধর্ম মেনে চলে।এই ধর্মের উপস্থিতি ১৫০৬-০৭ সালে গুরু নানকের মাধ্যমে হয় এবং গুরু নানক ফিরে গেলে তার অনুসারীরা ধর্ম প্রচারের জন্য রয়ে যায়। যখন কিছু বাঙালি এই ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণ করে, তখন একটি শিখ সম্প্রদায়ের জন্ম হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত থেকে ১০০০০ শিখ এলে এই সম্প্রদায় বৃহত্তর হয়ে উঠে। এই শিখ সম্প্রদায় দেশে ব্যাপক অগ্রগতি করেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ টি গুরুদ্বার রয়েছে, তাদের মধ্যে ৭টি সুপরিচিত। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে নানকশাহী গুরুদ্বার। এটি ১৮৩০ সালে নির্মিত দেশের প্রাচীনতম গুরুদ্বার
অন্যান্য ধর্ম[সম্পাদনা]
বাংলাদেশে বাহাই বিশ্বাসের একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায় রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, যশোর, রাঙামাটি প্রভৃতি স্থানে এই সম্প্রদায়ের আধ্যাতিক কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশেও একটি ক্ষুদ্র ব্রাহ্ম্য সমাজ রয়েছে। এছাড়া শিখ ধর্মের নগন্য অনুসারি এবং তাদের ধর্মীয় উপসনালয় গুরুদ্বারা বাংলাদেশে রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সমূহের নিজস্ব ধর্মমত থাকলেও বর্তমানে সেগুলোর বেশিরভাগ বিলুপ্তপ্রায়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের অধিকাংশই খৃষ্টধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের অনুসারী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "A moderate Muslim country!"। The Daily Star। ৬ এপ্রিল ২০১০।
- ↑ "Is Bangladesh a country of secular Bengalis or Muslim Bangladeshis?"। ৯ মে ২০১৩।
- ↑ "Census 2022: Bangladesh population now 165 million"। ২৭ জুলাই ২০২২।
- ↑ Bangladesh Bureau of Statistics (২০১১)। "Population & Housing Census" (পিডিএফ)। Bangladesh Government। পৃষ্ঠা xiii। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৫।
Population By Religion (%) Muslim 90.39 Hindu 8.54 Buddhist 0.60 Christian 0.37 Others 0.14
- ↑ Data Archived 4 September 2011 at the Wayback Machine. Census – Bangladesh Bureau of Statistics