নাস্তিকের বাজি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দার্শনিক মাইকেল মার্টিন এর দ্বারা নাস্তিকের বাজি (Atheist's Wager) এর ধারণাটি জনপ্রিয় হয়। তিনি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত তার বই Atheism: A Philosophical Justification (নাস্তিকতা: একটি দর্শনগত ন্যায্যতা) তে এটি উল্লেখ করেন। এটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে যুক্তি হিসেবে প্যাসকেলের বাজি (Pascal's Wager) এর একটি নাস্তিক্যবাদী প্রত্যুত্তর, যার মাধ্যমে প্যাসকেলের বাজি এর যুক্তিকে খণ্ডন করা হয়।

নাস্তিকের বাজি থেকে একটি ভাষ্য পাওয়া যায়; তা হলো: যেহেতু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, মহান ও সবচেয়ে বেশি দয়ালু, এর অর্থ তিনি অবশ্যই ভালো কাজের জন্য ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করবেন এবং যদি ঈশ্বর নাও থাকেন, তাতে কী? ভাল কাজ করার ফলে আখেরে কোনো ক্ষতি তো আর হবে না। মৃত্যুর পরে সেই কাজ পৃথিবীতে ইতিবাচকভাবেই মুল্যায়িত হবে। অর্থাৎ, এথেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ধর্ম ব্যতীত একজন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যময়, দুশ্চিন্তাবিহীন জীবন অতিবাহিত করতে পারে।[১][২] আরেকটি ভাষ্যে বলা হয়েছে, ঈশ্বর হয়তো সৎ অবিশ্বাসীকে পুরস্কৃত করবেন, আর কঠোর শাস্তি দিবেন অসৎ বিশ্বাসীকে।[৩]

ব্যাখ্যা[সম্পাদনা]

এই বাজি এটাই উদ্ধৃত করে যে, কেও যদি চিন্তা করে দেখে, সে কীভাবে জীবন অতিবাহিত করবে, তাহলে নিম্নোক্ত সম্ভাবনাগুলোই সামনে আসবে।[১][৪][৫]

  • আপনি যদি সৎভাবে জীবনযাপন করেন ও ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। এবং যদি সত্যিই দয়ালু ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই স্বর্গে যাবেন। এক্ষেত্রে আপনার অর্জন সীমাহীন (অসীম)।
  • যদি আপনি সৎ জীবনযাপন করেন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে থাকেন এবং যদি সত্যিই দয়ালু ঈশ্বর বলে কেউ থেকে থাকেন; আপনার কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ তাহলে আপনি স্বর্গে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রেও আপনার অর্জন অসীম।
  • যদি আপনি সৎভাবে জীবনযাপন করেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করে থাকেন, কিন্তু কোনো দয়ালু ঈশ্বর না থাকেন, তাহলে আপনি স্বর্গে যেতে পারছেন না, তবে আপনার কাজ পৃথিবীতে ভালোভাবেই মূল্যায়ন হবে। এক্ষেত্রে আপনার অর্জন সসীম বা সীমিত।
  • যদি আপনি সৎভাবে জীবনযাপন করে থাকেন, কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেন এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থেকে থাকে, তাহলেও আপনার স্বর্গে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তবুও আপনার কাজ ভালোভাবে পৃথিবীতে মূল্যায়িত হবে। এক্ষেত্রেও আপনার অর্জন সীমিত বা সসীম।
  • যদি আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, কিন্তু অসৎ মানুষের ন্যায় জীবন অতিবাহিত করেন, এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বর থেকেও থাকেন, তাহলেও আপনার কাজের শাস্তিস্বরুপ আপনাকে নরকে পতিত হতে হবে। আপনার ক্ষতি এক্ষেত্রে অসীম।
  • যদি আপনি অসৎ মানুষের ন্যায় জীবনযাপন করেন ও ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাসী হন এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে আপনি নরকে পতিত হবেন। এক্ষেত্রে আপনার ক্ষতি অসীম।
  • যদি আপনি খারাপ মানুষের ন্যায় জীবনযাপন করেন, কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন এবং কোনো দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থেকে থাকে, তাহলে আপনার কাজে পৃথিবীতে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হবে। অবশ্য আপনার ক্ষতি এক্ষেত্রে সীমিত।
  • যদি আপনি খারাপ মানুষের ন্যায় জীবন-যাপন করেন, আবার ঈশ্বরেও বিশ্বাস না রাখেন, এবং দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থেকে থাকে, তাহলেও আপনার কাজ পৃথিবীতে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হবে। এক্ষেত্রেও আপনার ক্ষতি সীমিত।

এই তালিকাটিকে ছকাকারে দেওয়া হলো, যেখানে শর্তমোতাবেক জীবনব্যবস্থায় কি ফলাফল আসে, তা সহজেই বুঝা যায়:

যদি দয়ালু ঈশ্বর থেকে থাকেন
ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে (বি) ঈশ্বরে অবিশ্বাস করলে (অবি)
সৎভাবে জীবনযাপন করলে (স) +∞ (স্বর্গ) +∞ (স্বর্গ)
অসৎভাবে জীবনযাপন করলে (অস) -∞ (নরক) -∞ (নরক)
যদি দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে
ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে (বি) ঈশ্বরে অবিশ্বাস করলে (অবি)
সৎভাবে জীবনযাপন করলে (স) +X (ইতিবাচক মুল্যায়ন) +X (ইতিবাচক মুল্যায়ন)
অসৎভাবে জীবনযাপন করলে (অস) -X (নেতিবাচক মুল্যায়ন) -X (নেতিবাচক মুল্যায়ন)

মার্টিন ক্রীড়া তত্ত্ব বা গেম থিওরিকে (এই থিওরীর মাধ্যমে তুলনামুলকভাবে কোন কৌশল সবচেয়ে ভালো হবে, তা ব্যাখ্যা করা যায়) ব্যবহার করে ও এই ছক এবং তার মান উল্লেখ করে বলেন, আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেও নির্দ্বিধায় একটা সৎ ও চমৎকার জীবন অতিবাহিত করতে পারেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Martin, Michael (১৯৯০)। Atheism: A Philosophical JustificationTemple University Press। পৃষ্ঠা 232–238। 
  2. Alvin F Berry। So What If...the God of the Bible Exists...Does It Really Matter at the End ...। Dog Ear Publishing। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 9781457500206। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ 
  3. Philip A Stahl (২০০৭)। Atheism: A Beginner's Handbook: All You Wanted to Know About Atheism and Whyআইএসবিএন 9780595427376 
  4. "The Atheists Wager"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Pascal's Wager as an Argument for Not Believing in God। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩