ইদারা মাবাহিছে ফিকহিয়্যাহ
ادارہ مباحث فقہیہ | |
গঠিত | ১৯৭০ |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি |
আইনি অবস্থা | ধর্মীয় সংগঠন |
উদ্দেশ্য | ফিকহ |
যে অঞ্চলে কাজ করে | ভারত |
ওয়েবসাইট | jamiatulamaihind.com |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
ইদারা মাবাহিছে ফিকহিয়্যাহ (উর্দু: ادارہ مباحث فقہیہ, অনুবাদ 'ফিকহি গবেষণা কেন্দ্র') জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭০ সালে ইসলামি আইনজ্ঞ মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ফিকহ গবেষণা কেন্দ্র।[১][২] এটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ইসলামি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নীতি ও বিধিগুলোর সাথে সঙ্গতি রেখে শরিয়াহ সংক্রান্ত উদ্ভুত বিভিন্ন নতুন সমস্যা নিয়ে ইসলামি আইনজ্ঞদের সমষ্টিগত চিন্তাভাবনা, পারস্পরিক পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে যাতে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়।
প্রথমদিকে মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি এই কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন। তিনি উদ্ভুত বিভিন্ন ফিকহি সমস্যা নিয়ে খসড়া তৈরি করতেন, তা সমাধানের জন্য উলামাদের নিকট পাঠাতেন এবং আল জমিয়ত পত্রিকায় তার ফলাফল প্রকাশ করতেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করেছিলেন যার মধ্যে হানাফি ফিকহের আলোকে চাঁদ দেখা কমিটির জন্য নিয়মকানুন প্রণয়ন অন্যতম।[৩][৪] তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে জমিয়তের সর্বভারতীয় সভাপতি আসআদ মাদানি কেন্দ্রটিকে পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৫টি জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করেছে।[৫] এসব সেমিনারে সমসাময়িক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। দারুল উলুম দেওবন্দ, মাজাহির উলুম সাহারানপুর, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা, মাদ্রাসা শাহী মুরাদাবাদ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত ইসলামি আইনজ্ঞ প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত এবং প্রতিষ্ঠানটির আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে অংশগ্রহণ করে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:[৬]
- কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবা এবং ইসলামি পণ্ডিতদের মতামত থেকে ইসলামিক কাঠামো অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং সাম্প্রতিক উন্নয়নের কারণে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা।
- ভারতে মুসলমানদের চাহিদা, তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য শরিয়তের বিধানের আলোকে সম্মিলিত ফতোয়া জারি করা।
- ভারতে আলেমদের মধ্যে ব্যবধান দূর করা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফিকহি মতামতের ব্যাপারে তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির জন্য কাজ করা।
- আধুনিক যুগের উন্নয়ন এবং সমষ্টিগত গবেষণার মাধ্যমে ইসলামি ফিকহের নীতির আলোকে নতুন গবেষণা ও সংশোধনের প্রয়োজন এমন সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা।
- বিদ্যমান সমস্যাগুলো সম্পর্কে সমসাময়িক নির্ভরযোগ্য আলেম এবং নির্ভরযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ফতোয়া এবং মতামত পাওয়া এবং তারপর সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে তার প্রচার করা।
সেমিনার
পুনরুজ্জীবনের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নতুন সমস্যাগুলো সম্মিলিতভাবে আলোচনা ও সমাধানের জন্য ফিকহি সেমিনারের একটি সিরিজ শুরু করে। এই সেমিনার আয়োজনের পূর্বে প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশ্নপত্রের একটি তালিকা নির্ভরযোগ্য ইসলামি আইনজ্ঞদের নিকট পাঠান। তাদের উত্তর পাওয়ার পর তা সংক্ষিপ্ত করা হয় এবং তারপর সম্মিলিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের শেষে আলোচনাধীন বিষয়ের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত প্রণয়নের জন্য পেপার উপস্থাপনকারী উলামাদের একটি কমিটি নিয়োগ করা হয়। তারপর সিদ্ধান্তগুলো সিনিয়র উলামা ও মুফতিদের কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং তারপর পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার পরে সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করা হয়। এরপর চূড়ান্ত অধিবেশনে সিদ্ধান্তগুলো উপস্থাপন ও আলোচনা করা হয়। পর্যবেক্ষণের পর অংশগ্রহণকারীরা উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তারপরে সিদ্ধান্তগুলো জারি করা হয়। ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১২টি জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করেছে। যথা:[৭][৮]
নং | তারিখ | স্থান | বিষয়বস্তু |
---|---|---|---|
১ | ৮–১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ | দেওবন্দ | সুদমুক্ত সমবায় প্রতিষ্ঠান ও সমাজ |
২ | ২৮–২৯ নভেম্বর ১৯৯১ | দেওবন্দ |
|
৩ | ৭–৯ জুলাই ১৯৯৩ | চেন্নাই |
|
৪ | ২৪–২৭ অক্টোবর ১৯৯৪ | দেওবন্দ | অন্যান্য মাযহাবের ফতোয়া ও শর্ত |
৫ | ১১–১৩ ডিসেম্বর ১৯৯৫ | দেওবন্দ |
|
৬ | ২৬–২৮ মার্চ ১৯৯৭ | দেওবন্দ |
|
৭ | ২৫–২৬ অক্টোবর ২০০০ | দেওবন্দ |
|
৮ | ২৭–২৯ এপ্রিল ২০০৫ | বেঙ্গালুরু | ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ও টিভির ব্যবহার |
৯ | ১–২ জুন ২০১৩ | দেওবন্দ |
|
১০ | ১৯–২০ মার্চ ২০১৪ | মুম্বই |
|
১১ | ১৩–১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | হায়দ্রাবাদ |
|
১২ | ৪–৬ মার্চ ২০১৬ | কাশ্মীর |
|
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ ওয়ানি, বিলাল আহমদ (২০১২)। Contribution of Darul Ulum Deoband to the Development of Tafsir [তাফসিরের উন্নয়নে দারুল উলুম দেওবন্দের অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৫৫। আইএসবিএন 978-3-659-56556-4। ৪ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ আমিনী, নূর আলম খলিল (২০১৭)। পাছে মার্গে জিন্দাহ [জীবিতের মৃত্যুর পরে] (উর্দু ভাষায়) (৫ম সংস্করণ)। দেওবন্দ: ইদারা ইলম ওয়া আদব। পৃষ্ঠা ৪৮,১০৬।
- ↑ গাজী, আফতাব আহমদ; কাসেমী, আব্দুল হাসিব (২০১১)। فضلاء دیوبند کی فقہی خدمات [দেওবন্দের ফারেগদের ফিকহে অবদান]। দেওবন্দ: কুতুবখানা নঈমিয়া। পৃষ্ঠা ১৬৫।
- ↑ রহমানি, খালিদ সাইফুল্লাহ (২০০৮)। فقہ اسلامی تدوین و تعارف [ইসলামি আইনশাস্ত্রের সংকলন ও পরিচিতি]। দেওবন্দ: কুতুবখানা নঈমিয়া। পৃষ্ঠা ৩৬৫।
- ↑ "ইদারা মাবাহিছে ফিকহিয়্যাহর তিনদিন ব্যাপী সেমিনার"। মিল্লাত টাইমস (উর্দু ভাষায়)। ২৬ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২১।
- ↑ উল্লাহ ২০১৮, পৃ. ১৭৪।
- ↑ উল্লাহ, মুহাম্মদ (২০১৮)। The Contribution of Deoband School to Hanafi Fiqh A Study of Its Response to Modern Issues and Challenges [হানাফি ফিকহে দেওবন্দিদের অবদান : আধুনিক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি অধ্যয়ন] (গবেষণাপত্র)। ভারত: জামিয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৭৬–১৭৮। hdl:10603/326073।
- ↑ Idarat al-Mabahith al-Fiqhiya: Introduction, Fiqhi Seminars, Resolutions & Decisions [ইদারাত আল-মাবাহিত আল-ফিকহিয়া: পরিচয়, ফিকহি সেমিনার, সমাধান ও সিদ্ধান্ত] (পিডিএফ)। কাসেমি, মুহাম্মদুল্লাহ কর্তৃক অনূদিত। নতুন দিল্লি: জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ। ২০১৬। পৃষ্ঠা ১৮–৮১।