বিষয়বস্তুতে চলুন

লেসলি হিল্টন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লেসলি হিল্টন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
লেসলি জর্জ হিল্টন
জন্ম(১৯০৫-০৩-২৯)২৯ মার্চ ১৯০৫
কিংস্টন, জ্যামাইকা উপনিবেশ
মৃত্যু১৭ মে ১৯৫৫(1955-05-17) (বয়স ৫০)
স্পেনিশ টাউন, সেন্ট ক্যাথরিন, জ্যামাইকা উপনিবেশ
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪০)
৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২২ জুলাই ১৯৩৯ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪০
রানের সংখ্যা ৭০ ৮৪৩
ব্যাটিং গড় ১১.৬৬ ১৮.৭৩
১০০/৫০ ০/০ ০/৫
সর্বোচ্চ রান ১৯ ৮০
বল করেছে ৯৬৫ ৬,৮১১
উইকেট ১৬ ১২০
বোলিং গড় ২৬.১২ ২৫.৬২
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/২৭ ৫/২৪
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ৩১/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

লেসলি জর্জ হিল্টন (ইংরেজি: Leslie Hylton; জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯০৫ - মৃত্যু: ১৭ মে, ১৯৫৫) তৎকালীন জ্যামাইকা উপনিবেশের কিংস্টনে জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন লেসলি হিল্টন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ৮ জানুয়ারি, ১৯৩৫ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে লেসলি হিল্টনের।

১৭ মে, ১৯৫৫ তারিখে সেন্ট ক্যাথরিনের স্পেনিশ টাউনে লেসলি হিল্টনকে ফাসীকাষ্ঠে ঝোলানো হয়। এর এক বছর পূর্বে ক্রোধান্বিত হয়ে স্বীয় স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তিনি।

চরম দারিদ্রতার মধ্যে বড় হন লেসলি হিল্টন। ১৯২৭ সাল থেকে জ্যামাইকা দলের নিয়মিত সদস্যরূপে খেলতে থাকেন। বেশ কয়েকবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলায় অংশগ্রহণ থেকে উপেক্ষিত হন। অবশেষে ১৯৩৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলার সুযোগ পান তিনি ও সফরকারী ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন, ম্যানি মার্টিনডেল ও লেসলি হিল্টন - এ ত্রয়ী ফাস্ট বোলারের দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্যে চার টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয় করে। ১৯৩৯ সালে তিন টেস্টে গড়া সিরিজ খেলার জন্য ইংল্যান্ড গমন করেন। তবে দূর্বল ক্রীড়াশৈলীর কারণে টেস্ট দলের বাইরে চলে আসতে হয় তাকে। দেশে ফিরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৪২ সালে লেসলি হিল্টন পুলিশ ইন্সপেক্টরের কন্যা লারলাইন রোজের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৪৭ সালে এ দম্পতির এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ১৯৫০-এর দশকে লারলাইন হিল্টন পোশাক নকশাকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্য নিয়ে নিউইয়র্ক ফ্যাশন স্কুলে ভর্তি হন ও দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। সেখানে রয় ফ্রান্সিসের সাথে স্বাক্ষাৎ হয় ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ কথা শুনে তিনি তাকে জেরা করেন ও লারলাইন হিল্টন এ সম্পর্ক জানান। এরপর লেসলি হিল্টন তাকে সাতবার গুলি করেন। আদালতে তিনি দোষীসাব্যস্ত হন ও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।

সচরাচর, ক্রিকেট ইতিহাসে লেসলি হিল্টনের অবদানকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ১৯৫৬ সালে উইজডেনে তার মৃত্যুর তারিখ প্রকাশ করা হলেও কেন তিনি মারা গেলেন তা তুলে ধরা হয়নি। অনেক বছর পর বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীকালে লেখকেরা মনে করেন যে, আরও সহানুভূতির সাথে এ মামলাটি পরিচালিত হতে পারতো এবং লেসলি হিল্টনের মানসিক চিকিৎসার বিষয়টিও এর সাথে যুক্ত ছিল।

ঘরোয়া ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন লেসলি হিল্টন। বিভিন্ন গতিবেগে স্পিন বোলিং করতেন। এছাড়াও, কার্যকর ব্যাটসম্যান হিসেবে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে এগিয়ে এসেছেন।[] ১৯২০-এর দশকে জ্যামাইকায় খুব কমই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যান্য ক্রিকেট উপনিবেশীয় এলাকা থেকে বেশ দূরে অবস্থান করায় আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতো না।[] ইংল্যান্ড থেকে আগত সফরকারী দলগুলো সময়ে সময়ে প্রথম-শ্রেণীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দলগুলোকে বেছে নিতো। ১৯২৭ সালের শুরুতে ইংল্যান্ডের সাবেক টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক লিওনেল টেনিসনের নেতৃত্বে পার্সি ফেন্ডারআর্নেস্ট টিল্ডসলের ন্যায় টেস্ট ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে ইংল্যান্ড দল আসে।[] দলটি জ্যামাইকা একাদশের বিপক্ষে তিনটি প্রতিনিধিত্বমূলক প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়। ২১ বছর বয়সী লেসলি হিল্টন স্থানীয় ক্রিকেটে বেশ ভালো খেলা উপহার দিচ্ছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ তারিখে কিংস্টনের সাবিনা পার্কে প্রথম খেলায় অংশগ্রহণের জন্য জ্যামাইকা দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন।[]

খেলাটিতে হিল্টন ৩২ ও ৭ রান তুলে উভয় ইনিংসেই অপরাজিত ছিলেন। বল হাতে কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। তবে, ফিল্ডার হিসেবে দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন তিনি।[] কিংস্টনের মেলবোর্ন পার্কে দ্বিতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায়ও অংশ নেন তিনি। বোলার হিসেবে টেনিসন একাদশের প্রথম ইনিংসে ৫/৩৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৫৩ পান।[] সুন্দর ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের ফলে খুব সহজেই জ্যামাইকা দলে স্থান করে নেন। ডিসেম্বর, ১৯২৭ সালে বার্বাডোসের ব্রিজটাউন গমন করেন। আসন্ন ১৯২৮ সালের ইংল্যান্ড গমনের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক খেলার আয়োজন করা হয়।[] খেলায় হিল্টনের খেলার মান মাঝামাঝি পর্যায়ের ছিল।[] ফলে, ইংল্যান্ড সফরের জন্যে তাকে দলে রাখা হয়নি। ক্রিকেট লেখক মার্ক হুইটেকার মনে করেন, বর্ণপ্রথাই বোধহয় লেসলি হিল্টনের দলে রাখার বিষয়ে প্রধান অন্তরায় ছিল। ব্রিজটাউনের গণমাধ্যমে তাকে বল নিক্ষেপকারী ও বাগানের বোলার হিসেবে বাতিল করে দেয়। ১৯২০-এর দশকে আন্তঃদ্বীপপুঞ্জে বর্ণপ্রথা বেশ তীব্র ছিল ও এছাড়াও তিনি বেশ কালো ছিলেন।[]

১৯২৮ সালের শুরুরদিকে টেনিসনের নেতৃত্বে আরও একটি দল জ্যামাইকায় খেলতে আসে।[] তিনটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলার সবকটিতে লেসলি হিল্টনের সপ্রতিভ অংশগ্রহণ ছিল। প্রথম দুইটিতে জ্যামাইকা দল জয়ী হয় ও তৃতীয়টি ড্রয়ে পরিণত হয়। শেষ খেলায় ব্যাটসম্যান হিসেবে উল্লেখযোগ্য সফলতা পান। উভয় ইনিংসেই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।[১০]

পরবর্তী বছরগুলোয় জ্যামাইকা দল খুব কমই শীর্ষস্তরের ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে, হিল্টনেরও নিজেকে জাহির করার সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। ১৯৩০ সালের শুরুতে সম্মানীয় এফ.এস.জি. ক্যালথর্পের নেতৃত্বে[] দূর্বলমানের এমসিসি দল চার টেস্টের সিরিজ খেলার জন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে আসলেও তাকে দলে রাখা হয়নি।[ল ১] তিনি মার্চ, ১৯৩০ সালে মেলবোর্ন পার্কে সফরকারীদের বিপক্ষে জ্যামাইকার সদস্যরূপে খেলেন। ঐ দলে ইংল্যান্ডের প্রথিতযশা টেস্ট ক্রিকেটার উইলফ্রেড রোডস, জর্জ গানসহ লেস অ্যামিসবিল ভোসের ন্যায় উদীয়মান খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ ছিল।[১২] ১৯৩০-৩১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের ন্যায় ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ড গমনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে উপেক্ষিত হন তিনি।[] মার্চ, ১৯২৮ থেকে জানুয়ারি, ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন। তন্মধ্যে, ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯ সালে মেলবোর্ন পার্কে স্যার জুলিয়েন কান একাদশের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৫/২৪ দাঁড় করান। ঐ একাদশে বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক টেস্ট খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ ছিল।[১৩]

টেস্ট সিরিজ ১৯৩৪-৩৫ ব ইংল্যান্ড

[সম্পাদনা]

১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে হার্বার্ট সাটক্লিফহেডলি ভেরিটি’র ন্যায় ইংল্যান্ডের দুইজন সেরা খেলোয়াড় বাদেই এমসিসি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। তাসত্ত্বেও শক্তিমত্তার দিক থেকে কোন অংশেই দলটির কমতি ছিল না। স্থানীয় এক সংবাদপত্রে এ দলটিকে সর্বাপেক্ষা সেরা দল হিসেবে এ উপকূলে আসার বিষয়ে উল্লেখ করে।[১৪] আর.ই.এস ওয়াটের নেতৃত্বে দলটিতে ওয়ালি হ্যামন্ডমরিস লেল্যান্ডের ন্যায় ইংল্যান্ডের বর্তমান ক্রিকেট তারকাদের অংশগ্রহণ ছিল।[১৫] হিল্টন তখন তার ৩০তম জন্মদিনের কাছাকাছি বয়সে অবস্থান করছিলেন। দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে শেষ মুহুর্তে দলে রাখেন। ৮ জানুয়ারি, ১৯৩৫ তারিখে ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি।[]

খেলাটিতে বেশ কয়কবার বৃষ্টি আঘাত হানে। ব্যাটিং উপযোগী পিচে তিনদিনই খেলা আয়োজন অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিম্নমূখী রানের খেলাটি কৌশলাত্মক ভঙ্গীমায় ইনিংস ঘোষণা করলে জমে উঠে। প্রত্যেক দলই তাদের স্বাভাবিক ব্যাটিং অবস্থান পাল্টায়। খেলায় তিনি ব্যাট ও বল হাতে সফলতা পান। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ওয়ালি হ্যামন্ড, জিম স্মিথএরল হোমসকে আউট করে ৩/৮ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন।[১৬] ইংল্যান্ড ঐ টেস্টে চার উইকেটে জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়। মাত্র ৭৩ রানে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় খেলতে নেমে সফরকারী দলের সংগ্রহ একপর্যায়ে ৪৮/৬ হয়। তবে, ওয়ালি হ্যামন্ডের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে তারা রক্ষা পায়।[১৭][১৮]

"মূল বিষয় হলো ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ম্যানি মার্টিনডেল, লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন ও লেসলি হিল্টন - এ ত্রয়ীর ফাস্ট বোলিং আক্রমণে দলের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়ে। বব ওয়াট তাঁদের এ আক্রমণকে বিশ্বে প্রথম লক্ষ্য করেছেন।

উইজডেন ১৯৩৬: সফর প্রতিবেদন[১৯]

হিল্টন দলে স্থান নিশ্চিত করে চার টেস্টের সিরিজের প্রত্যেকটিতেই অংশগ্রহণ করেন। ২৪ জানুয়ারি ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল খুব সহজেই জয় পায়। খেলায় তিনি ২/৫৫ ও ৩/২৫ পান। ব্রিটিশ গায়ানার জর্জটাউনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টটি বৃষ্টির কারণে ড্রয়ের দিকে গড়ায়। তবে, ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে হিল্টন তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ১৩.২ ওভার - ৪ মেইডেন - ২৭ রান - ৪ উইকেট লাভ করেন তিনি।[২০] সিরিজের শেষ ও চূড়ান্ত টেস্টটি লেসলি হিল্টনের নিজ মাঠ সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় তিনি তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি ও কোন উইকেট লাভে ব্যর্থ হন।[২১] ঐ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইনিংস ও ১৬১ রানে বিজয়ী হয়। ফলশ্রুতিতে স্বাগতিক দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় পায়। এটিই তাদের প্রথম সিরিজ জয় ছিল।[২০] কনস্ট্যান্টাইন, মার্টিনডেল ও হিল্টনের সম্মিলিত পেস আক্রমণ পুরো সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যানলি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, এ তিনজন পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রথমবারের মতো আনন্দের সূত্রপাত ঘটাতে পেরেছেন।[২২] এ সিরিজে লেসলি হিল্টন ১৯.৩০ গড়ে ১৩ উইকেট দখল করেন।[২৩]

পরবর্তী চার বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে কোন টেস্ট খেলা হয়নি।[২১] ১৯৩৬ সালে সফরকারী ইয়র্কশায়ার দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর তিনটি খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, তৃতীয় খেলায় ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় আবির্ভূত হন তিনি। খেলায় ৮০ রান তুলেন যা তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছিল।[২৪] ১৯৩৯ সালের শুরুতে আসন্ন গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড সফরের জন্য দুইটি প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেন।[২১] কিন্তু, ১৫-সদস্যের তালিকা ঘোষণা করা হলে হিল্টনকে দলে রাখা হয়নি।[২৫]

ইংল্যান্ড গমন, ১৯৩৯

[সম্পাদনা]

১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট দলে লেসলি হিল্টনের উপেক্ষার বিষয়টি জ্যামাইকার গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ক্লাবের প্রভাব এ সফরে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তার পরিবর্তে ১৮ বছর বয়সী ত্রিনিদাদীয় নবীন ব্যাটসম্যান জেফ্রি স্টলমেয়ারকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।

ডেইলি গ্লেনারের প্রধান ক্রিকেট সংবাদদাতা মনে করেন, পত্রিকায় অনেকগুলো চিঠি এসেছে। ফলে, দলে অংশগ্রহণকারী চারজন জ্যামাইকান খেলোয়াড়ের প্রত্যেককেই এর প্রতিবাদস্বরূপ নাম প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। অর্থনৈতিক কারণেই হিল্টনকে পাশ কাটানোর বিষয়টি জানা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড দলে আরেকজন খেলোয়াড়ের ব্যয়ভার বহনে অক্ষম ছিল। জ্যামাইকায় ডেইলি গ্লেনারের প্রচারণায় সফরে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে হিল্টনকে সহায়তাকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ তহবিলে সঞ্চিত হয়। অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হিসেবে বোর্ড নমনীয় হয় ও হিল্টনকে সফরকারী দলে যুক্ত করা হয়।[২৬][২৫]

সফরের শুরুতে বেশ ভালো খেলেন লেসলি হিল্টন। মে মাসে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে খেলা দেখার পর ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের ক্রিকেট সংবাদদাতা নেভিল কারদাস মন্তব্য করেন যে, হিল্টন একজন নিখুঁত ও ভালোমানের বোলার। সম্ভবতঃ তিনি ভালোর চেয়েও ভালো।[২৭] তবে, তিনি বয়সের ভারে ন্যূহ। এখন তার বয়স ৩৪ ও তার শক্তি ক্রমশঃ ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে।[২৮] এ সফরে তিনি সর্বমোট ১৫টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২৭,৭১ গড়ে ৩৯ উইকেট পান ও ১৪.৩৩ গড়ে ২১৫ রান তুলতে পেরেছিলেন।[২৯] খুব কম সময়ই ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমের ছন্দ তার মাঝে বহমান ছিল। অংশগ্রহণকৃত দুই টেস্টে তেমন উল্লেখ করার মতো ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেননি। কেবলমাত্র লর্ডসে উভয় ইনিংসে লেন হাটনের উইকেট তার দখলে আসে।[৩০] ঐ টেস্টগুলোয় ৫৫.৬৬ গড়ে তিন উইকেট পান ও ব্যাট হাতে তিন ইনিংসে মোট ১৭ রান তুলতে সক্ষম হন।[২৯] তিন টেস্টে গড়া সিরিজের শেষ খেলায় তাকে দলের বাইরে রাখা হয়।[২৮] উইজডেনে টেস্টে তার ভূমিকা সম্পর্কে লেখা হয় যে, মার্টিনডেল ও কনস্ট্যান্টাইনের সাথে যুক্ত হয়ে ওয়াটের দলকে পরাজয়ের ক্ষেত্রে সাংঘাতিক রকমের বোলিং প্রদর্শন করলেও এবার তিনি ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন।[৩১] নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষেই কেবল এ সফরের সেরা খেলায় অংশ নিয়েছিলেন লেসলি হিল্টন। শেষদিকের পাঁচটি উইকেট লাভ করাসহ ৫৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন।[৩২] ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সিরিজের প্রথম টেস্টে পরাজিত হয় ও পরের দুই টেস্ট ড্রয়ের কবলে পড়ে।[৩১] আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি গুরুতর দিকে চলে যাবার প্রেক্ষিতে এ সফরটি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই শেষ হয়ে যায়। চূড়ান্ত টেস্টে বেশ কয়েকটি অধিবেশন পরিত্যক্ত রেখেই দলটি দ্রুত নিজ দেশের দিকে রওয়ানা দিতে বাধ্য হয়।[২৫][ল ২] নিজ দেশে ফিরে প্রতিনিধিত্বমূলক ক্রিকেট জগৎ থেকে নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করেন লেস হিল্টন।[২৮]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার ফলে লেসলি হিল্টনের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। দেশে ফিরে আসার পর জ্যামাইকান সিভিল সার্ভিস পুণর্বাসন অধিদপ্তরে ভালোমানের চাকরি লাভ করেন।[২৩] ১৯৪০ সালে লারলাইন রোজ নাম্নী পুলিশ ইন্সপেক্টরের কন্যার সাথে পরিচিত হন ও মেলামেশা শুরু করেন। তবে, শিক্ষাদীক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের দিক দিয়ে লেসলি হিল্টন বেশ পিছিয়ে ছিলেন।[৩৪] ক্রিকেটার হিসেবে হিল্টনের পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও লারলাইননের পরিবার সম্পর্কটি মেনে নেয়নি ও তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৪২ সালে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে।[১৭] আপাতঃদৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক ভালোভাবেই কাটছিল ও ১৯৪৭ সালে এক সন্তানের জন্ম হয়। উচ্চাভিলাসী লারলাইন হিল্টন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে বাড়ী থেকে চলে যান ও দীর্ঘ সময় ধরে নিউইয়র্কের ফ্যাশন স্কুলগুলোয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকেন। এরফলে তারা রোজের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। বিধবা শ্বাশুরী তার অনুপস্থিতিতে সন্তানের দেখাশোনা করতে থাকেন। শ্বাশুরীর সাথে সম্পর্ক তার স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু এর বিকল্পও ছিল না লেসলি হিল্টনের।[৩৪]

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করলেও জ্যামাইকার ক্রিকেট পরিমণ্ডলে লেসলি হিল্টনের উল্লেখযোগ্য পরিচিত ছিল। ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড সফরের দলীয় সঙ্গী ও ১৯৫০-এর দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক জেফ্রি স্টলমেয়ার লেসলি হিল্টনকে মনোযোগী ক্রিকেটাররূপে আখ্যায়িত করেন। তার সাথে চল্লিশ বছরের শেষদিক থেকে পঞ্চাশ বছরের শুরুরদিক পর্যন্ত একত্রে অনেকগুলো ঘণ্টা খেলা দেখা ও শেখায় মনোনিবেশ ঘটাতেন।[৩৫] স্টলমেয়ারের মতে, হিল্টনের ব্যক্তিত্ববোধ ছিল। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনে একাধিকবার ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছেন তিনি।[৩৫]

১৯৫৪ সালের মধ্য এপ্রিলে মাঝামাঝি সময়ে নিউইয়র্ক থেকে বেনামী চিঠি পান। এতে তার স্ত্রীর সাথে কোন এক রয় ফ্রান্সিসের গভীর সম্পর্কের কথা ছিল। [৩৪] তিনি বেশ মানসিকভাবে ধাক্কা খান। পরিবারের সাথে আলোচনান্তে লারলাইনকে টেলিগ্রামে অতিদ্রুত ফিরে আসার কথা জানান। তিনিও উত্তরে জানান যে, ‘দুঃশ্চিন্তা করো না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তোমার প্রিয়তমা স্ত্রী।’ লারলাইন বিমানে উঠার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।[৩৪] ২ মে তারিখে জ্যামাইকায় প্রত্যাবর্তনের পর ফ্রান্সিসের সাথে তার সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে ঘটনাটি সাময়িকভাবে চাপা পড়ে যায়।[২৩] তার দেশে ফেরার পূর্বেই লেসলি হিল্টন রিভলভারের গুলি কেনেন। নিরাপত্তার কারণে তিনি গুলি খরিদ করেছেন বলে জানান। তার বাড়ীর আশেপাশে সাম্প্রতিক সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কাজ বৃদ্ধির ফলেই গুলি কম থাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন।[৩৬]

৫ মে জানতে পারেন যে, রোজের এক বাগান মালী লারলাইনের চিঠি স্থানীয় ডাকঘরে নিয়ে গেছে। পরদিন তিনি ধাপ্পা মেরে ঐ চিঠি পড়ার কথা জানান।[৩৭] এক পর্যায়ে লারলাইন ফ্রান্সিসের সাথে তার সম্পর্ক গড়ার কথা জানান। পিতামাতার প্ররোচনায় ও সমগোত্রীয় না হওয়ার কথা বলেন। তিনি জানান যে, ‘আমি মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছি ও তাঁকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে রুখতে পারবে না। হ্যাঁ, আমি তাঁর সাথে রাতযাপন করেছি ... আমার দেহ তাঁকে সমর্পণ করেছি।’[৩৮] ঐ মুহুর্তে লারলাইন শয়নকক্ষে রক্ষিত রিভলভার হাতে নিয়ে তাকে গুলি করার চেষ্টা চালালেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।[৩৬] দস্তাদস্তির এক পর্যায়ে স্ত্রীর নিথর দেহ দেখতে পান। আকস্মিকভাবে আমি রক্ত দেখতে পাই। আমি অনুধাবন করি যে, আমি স্ত্রীকে গুলি করেছি।[৩৮] এ ঘটনার পর কেউই চিকিৎসার্থে নিয়ে যেতে অগ্রসর হয়নি। লারলাইন বেশ কয়েকটি বুলেটে জর্জরিত ছিল ও আক্রমণের পর সাথেসাথেই নিহত হয়। হিল্টন নিজেই পুলিশকে খবর দেন।

অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে মামলার শুনানী কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম পরিচিত ভিভিয়ান ব্ল্যাক হিল্টনকে সহযোগিতা করেন। ১৯৩০-এর দশকে জ্যামাইকার ক্রিকেট অধিনায়ক ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য নোয়েল নেদারসোল হিল্টনের উকিল হিসেবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ব্ল্যাককে সহায়তা করেন। ধারণা করা হয় যে, ব্ল্যাক ও নেদারসোল উভয়েই বিনা পারিশ্রমিকে হিল্টনের পাশে এগিয়ে এসেছেন।[৩৯] ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফেডারেশনের ভবিষ্যতের এটর্নি-জেনারেল হার্ভে ডাকস্তা প্রধান কৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন।[৪০] দ্বীপপুঞ্জের ভবিষ্যতের প্রধান বিচারপতি কলিন ম্যাকগ্রিগর বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ম্যাকগ্রিগর তার কঠোরতাভাব শ্রমজীবীদের দিকে ফলানোয় পরিচিত ছিলেন।[][৪১] এ মামলাটি সাধারণ জনতার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শুনানীর দিন জনতার পদচারণ লক্ষ্যণীয় ছিল। প্রতিক্ষেত্রেই তাকে দেখামাত্র তারা উদ্দীপনা যোগাতো।[৩৬]

"তুমি অপদার্থ! এতগুলো বছর তোমার সাথে থেকে আমার জীবন নষ্ট করেছি। এখন আমি মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছি যাকে আমি ভালোবাসি। তুমি আমাকে আটকাতে পারবে না। সে আমাকে আনন্দ দিয়েছে যা আমি তোমার কাছ থেকে পাইনি। আমি তাঁর সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাই। হ্যাঁ, আমি তাঁর সাথে একত্রে শুয়েছি। আমি এর আগে এমন আনন্দ পাইনি। আমার দেহ তাঁর কাছে সমর্পণ করেছি। আমি কেবল রয়ের, রয়ের, রয়ের![৩৬]

হিল্টনের বিপক্ষে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ছিল লারলাইনের শরীরে সাতটি বুলেট বিদ্ধ অবস্থায় ছিল। ঐ মুহুর্তে তিনি হয়তোবা রিভলভারে ছয়টি গুলি পুনরায় ঢুকিয়েছেন। এরফলে উন্মত্ততার বিষয়ের প্রসঙ্গটি অবান্তর।[২৩] হিল্টন দাবী করেন যে, তিনি আত্মহননের উদ্দেশ্য নিয়ে গুলি ঢুকিয়েছেন। তবে স্ত্রীর দেহ লক্ষ্য করে কতোটি গুলি ছুঁড়েছেন তা বলেননি।[৩৬]

২০ অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে শুনানী শেষ হয়।[৩৬] বিচারকমণ্ডলী রায় প্রদানে একমত পোষণ করছিলেন না। ম্যাকগ্রিগর জনতার অসন্তুষ্টি ও ব্যয়ের কারণে সিদ্ধান্ত বিলম্বের কারণ উল্লেখ করেন।[] এরপরই তারা আবারও একত্রিত হন ও আধা ঘণ্টারও বেশি সময় পর ফিরে এসে দোষীরূপে আখ্যায়িত করেন ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেন। ম্যাকগ্রিগর তার অবস্থানে অটল ছিলেন ও মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা বলেন।[৪২]

রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে জানুয়ারি, ১৯৫৫ সালে জ্যামাইকার সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। আদালতের মতে, হিল্টনের ক্রোধে উন্মত্ততার বিষয়টি পুরোপুরি অসন্তুষ্টিজনক ও তার দোষী সাব্যস্ত ও রায় প্রদান নিশ্চিত হয়েছে।[৩৬] এরপর তার আইনজীবীরা লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করেন। তবে, ২১ এপ্রিল লেসলি হিল্টন জানতে পারেন যে, ঐ আবেদনটি নাকচ হয়েছে। সর্বশেষ ভরসা ছিল জ্যামাইকার ঔপনিবেশিক গভর্নর স্যার হিউ ফুটের কৃপাদৃষ্টি। উপনিবেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় গণ্যমান্য নাগরিকের স্বাক্ষরসম্বলিত আবেদন করা হয়। ৯ মে গভর্নর তা প্রত্যাখ্যান করেন ও ১৭ মে তারিখে লেসলি হিল্টনকে ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলানোর কথা ঘোষণা করা হয়।[৪৩]

হিল্টন তার ভাগ্যকে দৃঢ়চিত্তে মেনে নেন ও শান্ত থাকেন। জীবনের শেষ দিনগুলোয় রোমান ক্যাথলিক চার্চে দীক্ষিত হন।[২৩] ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলানোর পূর্বে সাবেক সতীর্থ দলীয় সঙ্গী জেফ্রি স্টলমেয়ারের সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি সাদা গাউন পোশাক পরিধানে ছিলেন ও উচ্চস্তরের পাদ্রীদের ন্যায় দেখাচ্ছিল। শেষ সময়ে নিজেকে সংযত করতে পারেননি।[৪৪] ১৭ মে সকালে সেন্ট ক্যাথরিন ডিস্ট্রিক্ট কারাগারের বাইরে বিপুলসংখ্যক জনতা একত্রিত হয়। প্রচলিত প্রথায় সকালের নাস্তা গ্রহণে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন করেন। নিথর দেহ কারাগারেই সমাহিত করা হয়েছিল।[]

লেসলি হিল্টনকে ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলানোর পূর্বদিন বার্বাডোসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট খেলা চলছিল। জে.কে. হল্ট নামীয় একজন জ্যামাইকান খেলোয়াড় স্বাগতিক দলে খেলেন। মাঠে তিনি বেশ কয়েকবার ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি ও কঠিন সময় পার করছিলেন। এ বিষয়ে ক্রিকেট লেখক ও ধারাভাষ্যকার টনি কোজিয়ার মন্তব্য করেন যে, জঘন্যতার সঙ্কেত দিচ্ছে। দর্শকেরা ব্যানারে ‘হল্টকে ফাঁসি দাও, হিল্টনকে বাঁচাও’ লেখা প্রদর্শন করে।[৪৫]

প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

লেসলি হিল্টনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল। একটিমাত্র টেস্ট সিরিজেই তিনি বিরাট প্রভাব রেখে গেছেন। পরবর্তীকালে ধারাভাষ্যকারেরা কনস্ট্যান্টাইন ও মার্টিনডেলের সাথে তার একযোগে আক্রমণ কার্য পরিচালনার বিষয়টির সাথে ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেস জুটির সাথে তুলনা করেন যা পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।[] সাধারণভাবে ক্রিকেট বিশ্ব লেসলি হিল্টনকে বিস্মৃতির দুয়ারে রেখে গেছে। ক্রিকেট ইতিহাসে তার খেলোয়াড়ী জীবন নিয়ে খুব কমই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের উইজডেন সংস্করণে তার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করলেও কারণ তুলে ধরেনি। কেবলমাত্র অনেক বছর পরই খুনের দায়ে ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলানোর কথা যুক্ত করা হয়েছিল।[৪৬] ত্রিনিদাদীয় ঐতিহাসিক সি.এল.আর. জেমস ক্রিকেট ও সামাজিক-রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে অনেক লেখলেও হিল্টন সম্পর্কে কিছুই লেখেননি।[২৩] অন্যদিকে মাইকেল ম্যানলি ১৯৮৮ সালে ‘হিস্ট্রি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ শীর্ষক গ্রন্থ বিস্তৃত আকারে লিখেন। এতে লেসলি হিল্টনকে ভালোমানের কিন্তু, দূর্ভাগ্যে নিপতিত ফাস্ট বোলাররূপে আখ্যায়িত করেছেন। তবে, এর বিস্তৃত পটভূমি ব্যাখ্যা করেননি।[৪৭] লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনও তার বিভিন্ন ক্রিকেটবিষয়ক লেখনীতে হিল্টনের প্রসঙ্গ আনেননি।[২৩] শুধুমাত্র হিল্টনের সমসাময়িক জেফ্রি স্টলমেয়ার সংক্ষিপ্ত আকারে তার সম্পর্কে কলম ধরেছিলেন।[৪৮]

হিল্টনের মৃত্যুর দুই বছর পর জ্যামাইকার আইন পরিবর্তন হয়। যদি ঐ সময়ে আইন পরিবর্তিত হতো, তাহলে হয়তো মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পেতে পারতেন নিজেকে।[৪৯]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. From 1903, England's overseas cricket tours were organised and managed by the Marylebone Cricket Club. The teams travelled as "MCC", only becoming "England" when they played Test matches. This arrangement persisted until late in the 20th century, when the administration of English cricket was reorganised.[১১]
  2. The decision to cut the tour short, opposed by many of the players, was fortunate. Had the party waited longer, their passage home would have been on the SS Athenia, sunk by a U-boat on 3 September 1939, Britain's first shipping loss of the war.[৩৩]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Whitaker 2015, পৃ. 120–21।
  2. Manley 1990, পৃ. 21।
  3. Edwards 2001, পৃ. 136।
  4. Tregaskis 2015
  5. Jamaica v LH Ttime to timeennyson's XI: match 1 scorecard
  6. Jamaica v LH Tennyson's XI: match 2 scorecard
  7. Whitaker 2015, পৃ. 121।
  8. Trial match scorecard 1927
  9. Edwards 2001, পৃ. 139।
  10. LH Tennyson's XI in Jamaica, 1927-28
  11. History of MCC
  12. Jamaica v MCC scorecard 1930
  13. Jamaica v Cahn XI scorecard 1929
  14. Whitaker 2015, পৃ. 121–22।
  15. Manley 1990, পৃ. 45।
  16. Frindall 1979, পৃ. 250।
  17. Sengupta 2016
  18. Manley 1990, পৃ. 423।
  19. Wisden tour report 1936
  20. Manley 1990, পৃ. 45–46, 424–25।
  21. Whitaker 2015, পৃ. 122।
  22. Manley 1990, পৃ. 47।
  23. Browne 2012
  24. Yorkshire in Jamaica, 1935-36
  25. Ledbetter and Wynne-Jones, 1991, পৃ. 180।
  26. Whitaker 2015, পৃ. 122–23।
  27. Manchester Guardian 11 May 1939
  28. Whitaker 2015, পৃ. 123।
  29. Ledbetter and Wynne-Jones, 1991, পৃ. 187।
  30. Ledbetter and Wynne-Jones, 1991, পৃ. 183।
  31. Wisden 1940: tour report
  32. Ledbetter and Wynne-Jones, 1991, পৃ. 193।
  33. Stollmeyer 1983, পৃ. 41।
  34. Whitaker 2015, পৃ. 124।
  35. Stollmeyer 1983, পৃ. 39।
  36. Hibbert 2012
  37. Whitaker 2015, পৃ. 124–25।
  38. Whitaker 2015, পৃ. 125।
  39. Whitaker 2015, পৃ. 125–26।
  40. Biographical notes 1960
  41. Thompson 2012
  42. Whitaker 2015, পৃ. 126।
  43. Manchester Guardian 9 May 1955
  44. Stollmeyer 1983, পৃ. 40।
  45. Cozier 1997
  46. Wisden obituary
  47. Manley 1990, পৃ. 384।
  48. Stollmeyer 1983, পৃ. 38–40।
  49. Tregaskis 2012

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

সংবাদপত্র ও সাময়িকী

[সম্পাদনা]
  • Abrahams, Michael (১৬ মে ২০১৬)। "The Death Penalty Is Not The Answer"The Jamaica Gleaner। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৬ 
  • "Biographical notes"। Caribbean Quarterly6 (2/3): 236। মে ১৯৬০। জেস্টোর 40652768  (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  • Browne, Richard (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "The Hanging Cricketer"The Sunday Leader (Sri Lanka)। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৮ 
  • Cardus, Neville (১১ মে ১৯৩৯)। "West Indies Trouble Lancashire"The Manchester Guardian। পৃষ্ঠা 4।  (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  • Cozier, Tony (৯ জুলাই ১৯৯৭)। "Obituary: J. K. Holt"The Independent। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৮ 
  • Hibbert, Sybil (২২ জুলাই ২০১২)। "A Crime of Passion"Jamaica Observer। ১৩ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৮ 
  • "Hylton To Die for Wife Murder"The Manchester Guardian। ৯ মে ১৯৫৫। পৃষ্ঠা 7।  (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  • Thompson, Kimone (৫ আগস্ট ২০১২)। "Proud to be Jamaican"Jamaica Observer। ১৫ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৮ 
  • Whitaker, Mark (Autumn ২০১৫)। "No Brief Stay of Execution" (পিডিএফ)The Nightwatchman (11)। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ 

অন-লাইন

[সম্পাদনা]

স্কোরকার্ড

[সম্পাদনা]