বাংলাদেশের মূর্তি ও ভাস্কর্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
TowfiqSultan (আলোচনা | অবদান) অ →ঐতিহাসিক গুরুত্ব: Fixed Typo ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা |
অ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী সংস্কৃতি সরিয়ে মূল বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশি সংস্কৃতি স্থাপন |
||
৮৮ নং লাইন: | ৮৮ নং লাইন: | ||
[[বিষয়শ্রেণী:বঙ্গের প্রাচীন শিল্পকলা]] |
[[বিষয়শ্রেণী:বঙ্গের প্রাচীন শিল্পকলা]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার ইতিহাস]] |
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার ইতিহাস]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী: |
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশি সংস্কৃতি]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:মূর্তি]] |
[[বিষয়শ্রেণী:মূর্তি]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:ভাস্কর্য]] |
[[বিষয়শ্রেণী:ভাস্কর্য]] |
১০:৪৫, ২ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
ভাস্কর্য শিল্প বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের ভাস্কর্যও আবিষ্কৃত হয়েছে যা থেকে বোঝা যায় সুদূর অতীতকাল থেকে এখানে ভাস্কর্যশিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মূর্তি ও ভাস্কর্য বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরব বহন করে চলেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
প্রাচীন বাংলার ঐতিহাসিক পরিচয় উদঘাটনে এখানের মূর্তি ও শিল্পকর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যদিও প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে এখানে মূর্তিশিল্পের উদ্ভব ঘটে তবুও গুপ্ত যুগ, পাল যুগ এবং সেন শাসনামলে মূর্তি নির্মাণকলা সবচেয়ে বেশি উৎকর্ষ পেয়েছিল।
গুপ্ত যুগের মূর্তি
গুপ্ত শাসকগণ মূলত বৈষ্ণবধর্মের অনুসারী ছিলেন। গুপ্ত যুগের বেশিরভাগ মূর্তিতেই বিষ্ণু বা বিষ্ণুর কোন অবতারকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রাজশাহীর মাচমৈল বাগমারার ধূসর বেলেপাথরের বিষ্ণুমূর্তিটি সম্ভবত এ যুগের প্রাপ্ত মূর্তিগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। দেবমূর্তিটি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে যেখানে দেবতার সম্মুখভাগ দণ্ডায়মান অবস্থায় দেখা যায়। যদিও এর ভঙ্গি এবং মূর্তিতাত্ত্বিক লক্ষণ গুপ্ত যুগের সঙ্গে সম্পূর্ণ একরূপ নয় তবে এর সূক্ষ্ম কারুকাজের স্বল্পতা দেখে এটি কুষাণ যুগ ও গুপ্ত যুগের সন্ধিক্ষণের বলে মনে হয়। মূর্তিটি আরও কয়েকটি গুপ্তযুগের বিষ্ণুমূর্তির সঙ্গে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর এ সংরক্ষিত আছে। গুপ্তযুগের অধিকাংশ ভাস্কর্যই ধর্মীয় মূর্তি যেগুলো মধ্যভারতীয় পুরোহিতদের বর্ণনার মত করে নির্মিত।
পাল যুগের মূর্তি
খ্রিষ্টাব্দ অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত চারশ বছরের দীর্ঘ পাল শাসনামলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মূর্তিশিল্পের কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। এসব কেন্দ্রে নির্মিত হওয়া ভাস্কর্যগুলো বৈচিত্র্যে ও সংখ্যায় প্রচুর। পাল আমলের প্রায় সহস্রাধিক ভাস্কর্য পাওয়া গেছে যা দেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ইউরোপ আমেরিকার জাদুঘরেও ঠাঁই করে নিয়েছে। সোমপুর মহাবিহার খনন করে পাল যুগের প্রচুর ভাস্কর্য উদ্ধার করা হয়। পাল ভাস্কর্যগুলোয় গুপ্তযুগের শেষভাগের প্রভাব থাকলেও পরবর্তীকালে এটি অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়।
সেন যুগের মূর্তি
সেন শাসনামলে (খ্রিষ্টাব্দ ১০৯৭ থেকে ১২২৩) শৈল্পিক নান্দনিকতাযুক্ত প্রচুর হিন্দু দেব ও দেবীর মূর্তি নির্মাণ করা হয়। শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এগার শতক পর্যন্ত সেন যুগের মূর্তিগুলোয় পাল যুগের অস্পষ্ট ছাপ রয়েছে। পাল যুগের শেষদিকে প্রচলিত কৃশ গঠনের দেবপ্রতিকৃতি সেন যুগেও বহাল থাকে তবে গুণগত মান অনেকটা বিচ্যুত হয়ে পড়ে।
উপকরণ
বাংলাদেশে প্রাপ্ত ভাস্কর্যসমূহ মূলত টেরাকোটা, ব্রোঞ্জ ও কষ্টিপাথর বা পাথর দ্বারা নির্মিত। সবচেয়ে পুরনো যে ভাস্কর্য পাওয়া গেছে তা একটি টেরাকোটা এবং এর সময় খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক। ৭ম শতক থেকে ভাস্কর্য নির্মাণে ব্রোঞ্জ এর ব্যবহার শুরু হয়। পাথর, বিশেষত কষ্টিপাথরের ব্যবহারও তখন থেকেই শুরু হয়।
টেরাকোটা
বাংলায় টেরাকোটার ব্যবহার শুরু হয় মৌর্য্য যুগ(খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪-১৮৭) থেকে। ধারণা করা হয় প্রাক-মৌর্য্য যুগে মাতৃকা দেবীগণের মূর্তি প্রধান ছিল। মৌর্য্য যুগের ভাস্কর্যের শিল্পরূপ ও নান্দনিকতা দেখে মনে হয় সেসময় ভাস্কর্যের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় থেকে ১ম শতকের দিকে ভাস্কর্যগুলো আরও অভিজাত, পরিশোধিত ও সুদৃশ্য আকারের হয়ে ওঠে।
ব্রোঞ্জ
খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভাস্কর্য নির্মাণে ব্রোঞ্জ এর ব্যবহার শুরু হয়। এ অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্য থাকায় অধিকাংশ মূর্তিই গৌতম বুদ্ধের প্রতিকৃতি। অবশ্য পরবর্তীকালে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তিতেও ব্রোঞ্জ ব্যবহৃত হয়।
পাথর
খ্রিস্টীয় প্রথম তিন শতকের বাংলাদেশে প্রাপ্ত মূর্তির সংখ্যা খুব কম। এসব মূর্তির ক্ষেত্রে উত্তর ভারতীয় প্রভাব দেখা যায়। এসব মূর্তিশিল্পের কেন্দ্র ছিল মথুরা, এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন এ তিনটি প্রধান ধর্মের উপাস্য দেবতার মূর্তি তৈরি করা হত। পরবর্তীকালে পাথর দিয়ে প্রচুর মূর্তি নির্মিত হয়েছিল।
ধর্মীয় গুরুত্ব
বাংলাদেশে পাওয়া প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভাস্কর্যগুলোকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- হিন্দুদের উপাস্য সত্তা এবং বৌদ্ধদের উপাস্য সত্তা(বিশেষত গৌতম বুদ্ধ)। এছাড়া দুএকটি জৈনমূর্তি দেখা যায়, যা সংখ্যায় খুব কম।
হিন্দু মূর্তি
ধারণা করা হয় গুপ্ত শাসনামল থেকে এদেশে হিন্দু ধর্মীয় মূর্তি নির্মাণ আরম্ভ হয়েছিল। অধিকাংশ মূর্তিতে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রতিকৃতি দেখা যায়। অন্যান্য উপাস্য সত্তার মধ্যে শিব, দুর্গা, ব্রহ্মা, গণেশ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মহাস্থানগড় জাদুঘরে সংরক্ষিত বগুড়া থেকে পাওয়া মহিষমর্দিনী মূর্তিটি কেবল বাংলা নয়, বরং সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন নিদর্শন।
বৌদ্ধ মূর্তি
বৌদ্ধ ধর্মীয় ভাস্কর্যসমূহের মধ্যে গৌতম বুদ্ধ প্রধান। মনে করা হয় বাংলাদেশের প্রাচীনতম বৌদ্ধমূর্তিসমূহ পুণ্ড্রবর্ধন নগরের মূর্তি ছিল। এসকল মূর্তি ও ভাস্কর্য বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা বিশেষত রাজশাহী ও রংপুর এলাকা হতে সংগৃহীত হয়।
জৈন মূর্তি
প্রাচীন বাংলা জৈনমূর্তির মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য। একটি কুমিল্লার ময়নামতি ঢিবি নং ২ থেকে এবং অন্যটি পাহাড়পুর বিহারের ১১০ নং ভিক্ষুকোঠার সামনের বারান্দা থেকে আবিষ্কৃত হয়।
প্রাচীন বাংলা ভাস্কর্যশিল্পের সমাপ্তি ও গুরুত্ব
তের শতকের প্রথমদিকে বাংলায় মুসলিম শাসকগণ বিজয়ী হয়ে এদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যাবৃদ্ধি হয় এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন ধর্মানুসারীর সংখ্যা কমে আসে। মূর্তি নির্মাণে পূর্বেকার রাজাদের মত পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ধীরে ধীরে বাংলায় পাল-সেন যুগের ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্যশৈলী স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাস্কর্যরীতি উত্তরে নেপাল ও তিব্বত; পূর্বে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড, দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে বিস্তৃত হয়।
আধুনিক ভাস্কর্য
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রের ভাস্কর্যগুলোকে আমরা আধুনিক ভাস্কর্য বলতে পারি। প্রাচীন ও মধ্যযুগের অধিকাংশ ভাস্কর্য ছিল ধর্মনির্ভর বা দৈব সত্তার প্রতিকৃতি, আধুনিক যুগে ভাস্কর্য ধর্মীয় গণ্ডি ছেড়ে প্রতীকী অর্থপূর্ণ ও নান্দনিকতার বাহন হয়েছে।
বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর
- মৃণাল হক
- সোমনাথ হোড়
- সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ
- হামিদুজ্জামান খান
- নিতুন কুন্ড
- ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী
- নভেরা আহমেদ
- শামীম শিকদার
বাংলাদেশের কয়েকটি আধুনিক ভাস্কর্য
- সাবাশ বাংলাদেশ
- অদম্য বাংলা (ভাস্কর্য)
- অপরাজেয় বাংলা
- চেতনা '৭১' (ভাস্কর্য)
- জাগ্রত চৌরঙ্গী
- বিজয় '৭১ (ভাস্কর্য)
- সংশপ্তক (ভাস্কর্য)
- স্বোপার্জিত স্বাধীনতা
- মোদের গরব
- অমর একুশে (ভাস্কর্য)
তথ্যসূত্র
- Roy, Alak (২০১২)। "Terracotta Sculpture and Mural"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- Bautze-Picron, Claudine (২০১২)। "Bronze Sculpture"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- Alam, Shamsul Alam (২০১২)। "Pala Sculpture"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- Alam, Shamsul (২০১২)। "Sena Sculpture"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- Bhattacharya, Asok K (২০১২)। "Sculpture"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- "Bangladeshi Sculptures"। fineartsbd.com। ১৬ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৩।
- "Liberation War in Sculpture"। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৩।
- "Sculptures in Bangladesh"। German Embassy, Dhaka। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৩।
- হিন্দু জৈন বৌদ্ধ মূর্তিতাত্ত্বিক বিবরণ, মোঃ মোশারফ হোসেন
- "ভাস্কর্য, বাংলাপিডিয়া"।
আরও পড়ুন
- Bengal Sculptures, Hindu Iconography upto 1250 AD by Enamul Haque
- Iconography of Buddhist & Brahmanical Sculptures in the Dacca Museum by Nalini Kanta Bhattasali