বাগিচায় বুলবুলি তুই
"বাগিচায় বুলবুলি তুই" | |
---|---|
কে মল্লিক কর্তৃক নজরুল গীতি | |
ভাষা | বাংলা |
মুক্তিপ্রাপ্ত | ১৯২৮ |
বিন্যাস | আর পি এম রেকর্ড |
রেকর্ডকৃত | ১৯২৮ |
স্থান | কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান)পশ্চিম বঙ্গ, ভারত |
ধারা | নজরুল গীতি |
লেবেল | হিজ মাস্টার্স ভয়েস |
লেখক | কাজী নজরুল ইসলাম |
সুরকার | কাজী নজরুল ইসলাম |
প্রযোজক | কাজী নজরুল ইসলাম |
'বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল' একটি বাংলা গজল।[১][২] কাজী নজরুল ইসলাম বঙ্গাব্দ ১৩৩৩[৩] (১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ) সালে গজলটি রচনা ও সুরারোপ করেন, যা কে মল্লিকের কন্ঠে প্রথম ধারণ ও প্রকাশ করা হয়।[২] ১৯২৮ সালে দুর্গাপুজার সপ্তাহে কলকাতা হতে তৎকালীন হিজ মাস্টার্স ভয়েস রেকর্ড কোম্পানি এই সঙ্গীত বা গানটি প্রথম প্রকাশ করে।[২] একইবছর, কলকাতার ডি এম লাইব্রেরী হতে নজরুল গীতি সংকলন 'বুলবুল'-এর প্রথম খণ্ডে গানটির গীত সংকলিত হয়।[৪] নজরুল এই গজলে বুলবুলি এবং তার প্রিয় একটি ফুলের মধ্যকার রূপক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রেম এবং বিষাদ উভয়ই তুলে ধরেছেন।[১] বাংলা গজল হিসেবে গানটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিল্পী কর্তৃক পুনরায় গাওয়া হয়েছে।
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯২৬ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণনগরে সপরিবারে থাকতেন। তার দ্বিতীয় ছেলে (অরিন্দম খালেদ বুলবুল) অসুস্থ হলে, ছেলের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে রেলগাড়িতে করে কলকাতায় কল্লোল পত্রিকার কার্যালয়ে আসার পথে গাড়িতে পাওয়া একটি কাগজে ছাপা বিজ্ঞাপনের উল্টা পৃষ্ঠায় পেনসিল দিয়ে গজলটি লিখেছিলেন। টাকা জোগাড়ের পর নৃপেনকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়কে গজলটি দিয়ে দ্রুত চলে যান। নজরুল গজলটি কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই আনমনে লিখেছিলেন।[৫]
গীতি
[সম্পাদনা]বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল।
আজো তা'র ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি,
তন্দ্রাতে বিলোল।
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল।
আজো হায় রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশিদিন,
আসেনি দখিণা হাওয়া গজল গাওয়া, মৌমাছি বিভোল।
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল।
কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি' আসবে বাহিরে,
কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরি' আসবে বাহিরে,
শিশিরের স্পর্শসুখে ভাঙ্গবে, রে ঘুম রাঙবে, রে কপোল।
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে...
ফাগুনের মুকুল জাগা দুকুল ভাঙ্গা আসবে ফুলের বান,
ফাগুনের মুকুল জাগা দুকুল ভাঙ্গা আসবে ফুলের বান,
কুঁড়িদের ওষ্ঠপুটে লুটবে হাসি, ফুটবে গালে টোল।
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে...
কবি তুই গন্ধে ভু'লে ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর,
ফুলে তোর বুক ভরেছিস, আজকে জলে ভরবে আঁখির কোল।
ফুলে তোর বুক ভরেছিস, আজকে জলে ভরবে আঁখির কোল।।
বিপণন ও সংকলন
[সম্পাদনা]এটি ভৈরবী রাগে[৬] কাহারবা তালে সুরারোপিত গজল।[৭] ১৯২৮ সালের দুর্গাপুজার সপ্তাহে এইচএমভি (হিজ মাস্টার্স ভয়েস) কোম্পানি কে মল্লিকের কন্ঠে গানটি গ্রামোফোন রেকর্ড(নম্বরঃ পি ১১৫১৮)[৭] হিসেবে বাজারজাত করে।[২] গ্রামোফোনের অপর পিঠে 'আমারে চোখ ইশারায় ডাক দিল কে' গানটি ছিল।[২] ১৯২৮ সালের ১৫ নভেম্বর, কলকাতার ডি এম লাইব্রেরী হতে প্রকাশিত নজরুল গীতি সংকলন 'বুলবুল'-এর প্রথম খণ্ডে গানটি ৪৯টি গানের প্রথম গান হিসেবে এটি সংকলিত হয়।[৪]
সংস্করণ
[সম্পাদনা]কোক স্টুডিও বাংলা (২০২২)
[সম্পাদনা]"বুলবুলি" | |
---|---|
ঋতুরাজ বৈদ্য ও সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা কর্তৃক সঙ্গীত | |
মুক্তিপ্রাপ্ত | ১৪ এপ্রিল ২০২২ |
ধারা | ফিউশন |
দৈর্ঘ্য | ৫:৪৬ |
লেবেল | কোক স্টুডিও বাংলা |
লেখক | কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন |
সুরকার | শুভেন্দু দাস শুভ |
প্রযোজক | শায়ান চৌধুরী অর্ণব |
কোক স্টুডিও বাংলা গজলটি 'বুলবুলি' শিরোনামে ঋতুরাজ বৈদ্য ও সানজিদা মাহমুদ নন্দিতার কন্ঠে ধারণ করে। এটির সাথে সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের ‘দোল দোল দোল দিয়েছে’ শিরোনামের শ্লোক যুক্ত করে পরিবেশনা করা হয়।[১] শায়ান চৌধুরী অর্ণব সংস্করণটির প্রযোজনা এবং শুভেন্দু দাস শুভ সংগীতায়োজন করেন। গানের সঙ্গীতায়োজনে গজলের মূল সুরের নেপথ্যে স্পেনীয় সুরের মিশ্রণ করা হয়েছে।[৮][৯] স্পেনীয় ফ্ল্যামিঙ্কো ও রুম্বা ছন্দ, ড্রামে জ্যাজ ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে।[১০]
কোক স্টুডিও বাংলা'র প্রথম মৌসুমের দশটি গানের মধ্যে তৃতীয় গান হিসেবে এটি বঙ্গাব্দ ১৪২৯-এর নববর্ষের দিন (২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল) প্রকাশিত হয়।[৮] প্রকাশের পর গানটি শ্রোতাদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে। ঋতুরাজ ও নন্দিতার গায়কী প্রশংসিত হলেও নজরুলগীতি'র সাথে অন্যগান যুক্ত করে পরিবেশনের জন্য নজরুলভক্তরা সমালোচনা করেন।[১১][১২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ "বুলবুলি: কোক স্টুডিও বাংলায় এবার নজরুলের গজল"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ২০২২-০৪-১৫। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ সরদার, অরিন্দম সাহা (২০২০-০৫-৩১)। "তিরিশের দশকের সূচনার খানিক আগে থেকেই নজরুল কবিতা গল্প উপন্যাস লেখার ধারা ধীরে ধীরে গান রচনার দিকে ব"। এই সময়। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ শাকুর, আব্দুস (২০১০-০৬-০২)। "কাজী নজরুল ইসলাম: এক স্বয়ম্ভর সংগীতসভা"। বিডিনিউজ২৪.কম। ২০১৪-০৮-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬।
- ↑ ক খ "বুলবুল (১ম খন্ড)"। কাজীনজরুলইসলাম.অর্গ। ২০২০-০৫-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬।
- ↑ "কবি নজরুলের একটি গান ও কিছু কথা"। অন্য দিগন্ত। ২০২১-০৩-১৩। ২০২২-০৪-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ ইসলাম, রফিকুল (২০১৪-০৫-০৫)। "নজরুল সঙ্গীত"। বাংলাপিডিয়া। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ ক খ "বাগিচায় বুলবুলি তুই"। nazrulgeeti.org। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ ক খ "কোক স্টুডিও বাংলা: ঋতুরাজ-নন্দিতার কণ্ঠে এলো 'বুলবুলি'"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০২২-০৪-১৫। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ ঘোষাল, রূপসা (২০২২-০৪-১৬)। "গজল-স্প্যানিশের যুগলবন্দি! নয়া গানে চমক কোক স্টুডিও বাংলার"। এই সময়। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ আকবর, প্রতীক (২০২২-০৪-১৮)। "'বুলবুলি' বিতর্ক ও ঋতু রাজকে ফিরে পাওয়া"। নিউজবাংলা২৪.কম। ২০২২-০৫-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ "কোক স্টুডিও বাংলায় প্রশংসিত নজরুলের গজল"। দৈনিক সময়ের আলো। ২০২২-০৪-১৭। ২০২২-০৫-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।
- ↑ "কোক স্টুডিও বাংলার নববর্ষের চমক 'বুলবুলি'"। সময় টিভি। ২০২২-০৪-১৫। ২০২২-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১০।