প্রাতিশাখ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঋগ্বেদ সংশ্লিষ্ট শৌনকাচার্য প্রণীত দাশতয়ী প্রাতিশাখ্য। (নরওয়ের শ্যায়েন-এর সংগ্ৰহ)

প্রাতিশাখ্য ( সংস্কৃত: প্রাতিশাখ্য prātiśākhya) হল বৈদিক যুগের পাণ্ডুলিপিসমূহ যা শব্দের সুষ্ঠু ও সংগত উচ্চারণের উদ্দেশ্যে প্রণীত। যদ্যপি এগুলি পার্ষদ (pārṣada ) নামেও পরিচিত, [১] এই রচনাগুলি বৈদিক গ্রন্থগুলির সংরক্ষণের পাশাপাশি বেদের সঠিক আচারাবৃত্তি এবং বিশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে সন্ধিবদ্ধ শব্দের পদ্ধতিতে । প্রতিটি বৈদিক বিচারধারা (পরিষৎ বা পর্ষৎ ) এবং ভৌগোলিক বিভাগ (শাখা) তাদের নিজস্ব সারগ্ৰন্থ বা নিয়মনীতি তৈরি করে ছিল, তাই এইগুলিকে পার্ষদ বা প্রাতিশাখ্য বলা হয়। [১] [২]

এই রচনাগুলি বেদে ব্যবহৃত সংস্কৃত ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞান সম্পর্কিত, যা আসলে শিক্ষা-বেদাঙ্গের অংশবিশেষ। চারটি বেদের সকল বিচারধারার জন্যেই একটি প্রাতিশাখ্য রয়েছে। অধিকাংশ প্রাতিশাখ্যই আধুনিক যুগে টিকে আছে। বিশেষজ্ঞ হার্টমুট শার্ফের মতে, তৈত্তিরীয় প্রাতিশাখ্য ছাড়া বাকি সবই “বিচ্ছিন্ন শব্দের আবৃত্তি”-এর উপর ভিত্তি করে। [১] প্রাতিশাখ্য শুরুই হয় শব্দের পঠন দিয়ে এবং তারপর পাঠ্যের ক্রমাগত পাঠের নিয়ম অবগত করায়। [১] যদিও সমস্ত প্রাতিশাখ্য রচনাগুলির একই মৌলিক লক্ষ্য রয়েছে, তবে লক্ষ্য অর্জন পথ উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক। [১] এগুলি পাণিনির রচনার কয়েক শতাব্দী আগে রচিত হয়েছিল, কিন্তু এই রচনাগুলিতে প্রমাণ রয়েছে যে, অনেক প্রাতিশাখ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারধারা ও তাদের আঞ্চলিক প্রয়োজনানুসারে সংশোধিত ও বিবর্তিত হয়েছে। [১] [৩]

সময়কাল[সম্পাদনা]

প্রাতিশাখ্যের কয়েকটি পাণ্ডুলিপি যেগুলি আধুনিক যুগে টিকে আছে সম্ভবত ৫০০ থেকে ১৫০ পূর্বসাধারণাব্দের মধ্যে। [২] [৩] বাজসনেয়ী প্রাতিশাখ্যের ধ্বনিগত দিকগুলি পাণিনির ধ্রুপদী সংস্কৃত ব্যাকরণ রচনার দিকগুলির কাছাকাছি। [১]

বৈদিক শাখাগুলির উৎপত্তি, প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

প্রাতশাখ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৈদিক শাখার উৎপত্তি, প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে বোঝা দরকার।

ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতির ইতিহাসে এমন একটি সময় এসেছিল যখন বৈদিক ঋষিরা বৈদিক সংহিতা আকারে ঐতিহ্যবাহী বৈদিক স্তোত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তখন শিক্ষাদানের ভিত্তি ছিল শুধু মৌখিক। গুরু-শিষ্যের শ্রবণ ঐতিহ্যের মাধ্যমেই বৈদিক সংহিতা রক্ষা করা হতো। দেশভেদ এবং কালভেদ যথাক্রমে বৈদিক সংহিতার বিভিন্ন শাখার বিকাশ ঘটে।

প্রথম থেকেই বৈদিক স্তোত্র এবং সংহিতাগুলিকে আর্য জাতির পবিত্রতম সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। আর্য ঋষিরা সর্বদা বৈদিক স্তোত্র ও সংহিতা গুলোর রক্ষণ এবং অধ্যয়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে বেদের ষড়ঙ্গের (শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, শ্লোক, জ্যোতিষ) উৎপত্তি হয়।

বৈদিক সংহিতাগুলির রক্ষণ ও শব্দার্থতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে, বৈদিক পণ্ডিতরা সংশ্লিষ্ট সংহিতাগুলির পাঠ তৈরি করেছিলেন। কিছুকাল পরে,ক্রমশ ক্রমপাঠ ইত্যাদি পাঠ্যের শুরু হয়।

বেদের বিকাশের সাথে সাথে, প্রতিটি শাখার প্রচেষ্টা ছিল তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যে বৈদিক সংহিতাগুলির সঠিক উচ্চারণ সংরক্ষণ করা এবং যতদূর সম্ভব শ্লোক ও কালানুক্রমের সাহায্যে বেদের প্রতিটি শ্লোকের প্রকৃতি এবং সংহিতায় সংঘটিত শব্দের উচ্চারণ এবং স্বরবর্ণের পরিবর্তনগুলি সঠিকভাবে অধ্যয়ন করা। মূলত এটাই ছিল প্রতিশাখার প্রতিপাদ্য। কখনও কখনও ছন্দবিষয় অধ্যয়নও প্রতিশাখ্যার আওতায় আসে।

প্রাতিশাখ্যগুলি প্রায়শই সূত্র শৈলীতে রচিত হতো বলে, এগুলিকে পার্ষদসূত্র বলা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]