তারাবাঈ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তারাবাঈ
Tarabai
১৯২৭ সালে, বিখ্যাত মারাঠি চিত্রকর এম. ভি. ধুরন্ধর দ্বারা অঙ্কিত, যুদ্ধে তারবাইয়ের চিত্র।
জন্ম(১৬৭৫-০৪-১৪)১৪ এপ্রিল ১৬৭৫
মৃত্যু৯ ডিসেম্বর ১৭৬১(1761-12-09) (বয়স ৮৬)
সাতারা
দাম্পত্য সঙ্গীরাজারাম ছত্রপতি
বংশধরশিবাজী দ্বিতীয়
পিতাহাম্বিরাও মোহিত

তারাবাঈ ভোঁসলে (জন্ম ১৪ই এপ্রিল ১৬৭৫ - মৃত্যু ৯ই ডিসেম্বর ১৭৬১)[১] ১৭০০ থেকে ১৭০৮ সাল পর্যন্ত ভারতের মারাঠা সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন। তিনি ছত্রপতি রাজারাম ভোঁসলের রাণী এবং মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর পুত্রবধূ এবং শিবাজী দ্বিতীয়র মাতা ছিলেন। তার স্বামীর মৃত্যুর পর, মারাঠা অঞ্চলে মুঘল দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাবার জন্য, তার ভূমিকা প্রশংসিত। তার পুত্র নাবালক থাকার সময়ে তিনি সাম্রাজ্যের শাসন কার্যের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

তারাবাঈ মোহিত বংশের [২] বিখ্যাত মারাঠা জেনারেল হাম্বিরাও মোহিতের কন্যা ছিলেন। তিনি সোয়রাবাঈয়ের ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন এবং সেই সূত্রে, তার স্বামী রাজারামের সম্পর্কিত বোন ছিলেন।

১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে রাজারামের মৃত্যুতে, তিনি তার শিশুপুত্র শিবাজী দ্বিতীয়কে রাজারামের উত্তরাধিকারী এবং নিজেকে শাসক হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।[৩]

মারাঠা বাহিনীর সেনাপতি[সম্পাদনা]

আওরঙ্গজেবের বাহিনীর বিরুদ্ধে, শাসক হিসেবে, তিনি যুদ্ধের দায়িত্ব নেন। অশ্বারোহী বাহিনী সঞ্চালনায় তারাবাঈ দক্ষ ছিলেন এবং যুদ্ধের সময় নিজেই কৌশলগত পরিচালনা করতেন। তিনি একাই যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান। মুঘলদের কাছে তিনি এমনভাবে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, মুঘল সম্রাট অবিলম্বে তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তারাবাঈ মারাঠা প্রতিরোধ চালিয়ে যান। ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে, মারাঠারা নর্মদা নদী পার হয়ে মালওয়াতে আক্রমণ চালায়, এবং অবিলম্বে ফিরে আসে। ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে ঔরঙ্গাবাদের খুলদাবাদে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর খবরে মারাঠা অঞ্চল নিশ্চিন্ত হয়।[৪]

১৭০০-১৭০৭ সাল সম্বন্ধে, যদুনাথ সরকার বলেছিলেন: "এই সময়ের মধ্যে, মহারাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্দেশক বাহিনীর শক্তি, বিধবা রাণী তারাবাঈ মোহিত ছাড়া আর কোন মন্ত্রী ছিলেন না। তাঁর প্রশাসনিক প্রতিভা এবং চরিত্রের শক্তিমত্তা, ভয়াবহ সংকটের সময়ে, জাতিকে রক্ষা করেছিল। "[৫]

সাহুজীর সঙ্গে যুদ্ধ[সম্পাদনা]

মারাঠা আক্রমণকে বিভাজিত করার উদ্দেশ্যে, মুঘলরা বিশেষ কিছু শর্তে, শম্ভাজীর পুত্র এবং তারাবাঈয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র সাহুজীকে মুক্তি দেয়। তিনি অবিলম্বে মারাঠা শাসনের নেতৃত্বের জন্য তারাবাঈ এবং শিবাজী দ্বিতীয়কে প্রতিদ্বন্দিতায় আহবান করেন। পেশওয়া বালাজী বিশ্বনাথের কূটনীতিতে, এবং আইনগত অধিকারবলে, সাহু অবশেষে জয়লাভ করেন এবং তারাবাঈকে বিতাড়িত করেন। তারাবাঈ ১৭০৯ সালে কোলহাপুরে একটি বিরুদ্ধ দরবারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিন্তু রাজারামের অন্য বিধবা স্ত্রী, রাজাসাবাঈ, তাকে পদচ্যুত করেন এবং তার নিজের পুত্র, সম্ভাজী দ্বিতীয়কে সিংহাসনে বসান। সম্ভাজী দ্বিতীয়, তারাবাঈ এবং তার পুত্রকে কারারুদ্ধ করেছিলেন। ১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দে শিবাজী দ্বিতীয়র মৃত্যু হয়। তারাবাঈ পরবর্তী কালে, ১৭৩০ সালে, ছত্রপতি সাহুর সাথে মিটমাট করে নেন এবং কোনো রাজনৈতিক শক্তি ছাড়াই সাতারায় বসবাস করতে থাকেন।[৬]

পেশওয়া বালাজী বাজিরাও এর সঙ্গে দ্বন্দ্ব[সম্পাদনা]

১৭৪০-এর দশকে, সাহুর জীবনের শেষ বছরে, তারাবাঈ তার কাছে একটি শিশুকে আনেন: রাজারাম দ্বিতীয় (রামরাজ নামেও পরিচিত ছিলেন)। তিনি শিশুটিকে নিজের পৌত্র, অর্থাৎ শিবাজীর প্রত্যক্ষ বংশধর হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি দাবি করেন যে, তার সুরক্ষার জন্য তার জন্মের পরে তাকে গোপন রাখা হয়েছিল এবং এক রাজপুত সৈনিকের স্ত্রী তাকে বড় করেছেন।[৭] সাহুর নিজের সন্তান ছিল না, তিনি শিশুটিকে দত্তক নিয়েছিলেন।

১৭৪৯ সালে সাহুর মৃত্যুর পর, রাজারাম দ্বিতীয়, ছত্রপতি হিসেবে তার উত্তরাধিকারী হন। পেশওয়া বালাজী বাজীরাও যখন মুঘল সীমান্তে চলে যান, তারাবাঈ পেশওয়ার পদ থেকে তাকে অপসারণ করার জন্য রাজারামকে অনুরোধ করেছিলেন। রাজারাম প্রত্যাখ্যান করলে, ১৭৫০ সালের ২৪শে নভেম্বর, তারাবাঈ তাকে সাতারার একটি অন্ধকূপ কারাগারে বন্দী করে রাখেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, রাজারাম গোন্ধালি জাতির একজন ভণ্ড এবং তিনি মিথ্যা বলে তাকে সাহুর কাছে তার পৌত্র হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন। পেশওয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য তারাবাঈ প্রতিনিধি ও পন্থ সচিবদের মত মন্ত্রীদের আহবান করেছিলেন কিন্তু তারা তাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি নিজাম সালাবাত জঙ্গের সেবায় নিযুক্ত একজন ব্রাহ্মণ, রামদাসের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন, তাকে পেশওয়া করার প্রস্তাব দিয়ে। কিন্তু পেশওয়ার সঙ্গে নিজামের চুক্তির ফলে, তাকে সাতারাতে সৈন্য পাঠানো থেকে নিরস্ত হতে হয়।[৮]

পূর্বে, ১৭৫০ সালের অক্টোবরে, তারাবাঈ উমাবাঈ দাভাদের সাথে দেখা করেছিলেন, যাঁর পেশোয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। তারাবাঈকে সাহায্যে করার জন্য, উমাবাঈ, দামাজীরাও গাইকওয়াড়এর নেতৃত্বে ১৫,০০০ সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিলেন। উত্তর সাতারার একটি ছোট শহর নিম্ব এ, পেশওয়ার অনুগত ত্রিম্বকরাও পুরন্দরের নেতৃত্বে ২০,০০০ শক্তিশালী সৈন্যকে, গাইকওয়াড় পরাজিত করেন। তারপর তিনি সাতারার দিকে এগিয়ে যান এবং তারাবাঈ তার অভ্যর্থনা করেন। যাইহোক, ত্রিম্বকরাও তার সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করেন এবং ১৫ই মার্চ ভেন্না নদীর তীরে তাঁবুতে অবস্থানরত গাইকওয়াড়ের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে গাইকওয়াড় পরাজিত হন এবং প্রচুর ক্ষতি বহন করে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

এদিকে, পেশওয়া মুঘল সীমান্ত থেকে ফিরে আসেন এবং ২৪শে এপ্রিল সাতারায় পৌঁছোন। তিনি সাতারার ইভাতেশ্বর গ্যারিসন আক্রমণ করে তারাবাঈয়ের বাহিনীকে পরাজিত করেন। তিনি সাতারা দুর্গকে ঘিরে রেখেছিলেন এবং তারাবাঈকে বলেছিলেন, ছত্রপতি রাজারাম দ্বিতীয়কে মুক্তি দিতে। রাজারামের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিলেন। তারাবাঈ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যেহেতু সুপ্রতিষ্ঠিত এবং শক্তিশালী সাতারা দুর্গ অবরোধ করে থাকা সহজ নয়, তাই পেশওয়া পুণে ফিরে গিয়েছিলেন। এদিকে, পেশওয়ার সৈন্যরা, দামাজী গাইকওয়াড়, উমাবাই দাভাদ ও তাদের আত্মীয়দের গ্রেফতার করেছিল।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Jadhav, Bhagyashree M (১৯৯৮)। "Ch. 5 - His Contribution to Maratha History"। Dr. Appasaheb Pawar a study of his life and career। Shivaji University। পৃষ্ঠা 224। 
  2. Pati, Biswamoy (editor); Guha, Sumit; Chatterjee, Indrani (২০০০)। Issues in modern Indian history : for Sumit Sarkar। Mumbai: Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 9788171546589 
  3. Sen, Sailendra (২০১৩)। A Textbook of Medieval Indian History। Primus Books। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন 978-9-38060-734-4 
  4. Eaton, Richard M. (২০০৫)। A Social History of the Deccan, 1300–1761: Eight Indian Lives, Volume 1। Cambridge, England: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 177–203। আইএসবিএন 0-521-25484-1 
  5. Life and letters under the Mughals, Pran Nath Chopra, p.122
  6. Sumit Sarkar (২০০০)। Issues in Modern Indian History: For Sumit Sarkar। Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 978-81-7154-658-9 
  7. Biswamoy Pati, সম্পাদক (২০০০)। Issues in Modern Indian History। Popular। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 9788171546589 
  8. Charles Augustus Kincaid and Dattatray Balwant Parasnis (১৯১৮)। A History of the Maratha People Volume 3Oxford University Press। পৃষ্ঠা 2–10। 
পূর্বসূরী
রাজারাম ছত্রপতি
শাসনতন্ত্র
মারাঠা সাম্রাজ্য

১৭০০–১৭০৮
উত্তরসূরী
ছত্রপতি শাহজী