আলী আল-উরাইদি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আলী আল-উরাইদি ইবনে জাফর সাদিক
علي العريضي بن جعفر الصادق‎
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
মদিনা, আব্বাসীয় খিলাফত (বর্তমান সৌদি আরব)
মৃত্যু
সমাধিস্থলআল-উরাইদ
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাখিলাফত
সন্তান
  • আহমাদ আল-শারানী
  • হাসান
  • জাফর আল-আসগর
  • মুহাম্মদ আল-নাকিব
পিতামাতা
জাতিসত্তাআরব
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
(আব্বাসীয় যুগ)
যে জন্য পরিচিতহাদিস বিশারদ
কাজইসলামি পণ্ডিত

আলী আল-উরাইদি ইবনে জাফর আল-সাদিক, (আরবি: علي العريضي بن جعفر الصادق) আলী আল-উরাইদি নামেই বেশি পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন শিয়া ইমাম ; জাফর সাদিকের পুত্র এবং ইসমাঈল, মুসা কাজিম, আবদুল্লাহ আল-আফতাহ ও মুহাম্মদ আল-দিবাজের ভাই। তিনি আল-উরাইদি উপাধিতে পরিচিত ছিলেন, কারণ তিনি মদিনা থেকে প্রায় ৪ মাইল (বা ৬.৪ কিমি) দূরে উরাইদ নামে একটি এলাকায় বাস করতেন। তিনি আবুল হাসান (অর্থাৎ হাসানের পিতা) ডাকনামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন মহান মুসলিম পণ্ডিত ছিলেন। শিয়া ইসলামের শুমাত্তিয়া সম্প্রদায় তাকে জাফর আস সাদিকের পরবর্তী ইমাম মনে করে৷

জীবন[সম্পাদনা]

আলী আল-উরাইদি ( علي العريضي) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন জাফর আল-সাদিকের কনিষ্ঠ পুত্র। তার পিতা মারা যাওয়ার সময় তখন তিনি শিশু ছিলেন, তিনি মদিনা ছেড়ে আল-উরাইদ শহরে চলে যান, সেখানে তিনি বসতি স্থাপন করেন এবং সমস্ত বনু হাশিমের শেখ হন ও মুহাম্মদ (দ.)'র বংশধরদের নকিব (কর্তা) হন। জাফর আস সাদিকের পর একদল শিয়ারা তাকে ইমাম হিসেবে মনে করে৷ এরা শুমাত্তিয়া নামে পরিচিত৷

তিনি ছিলেন একজন পরিশ্রমী সাধক, উদার ও মহান পণ্ডিত।

তিনি তার ভাই মুসা আল-কাজিমের প্রপৌত্র আলী আল-হাদি (৮২৮-৮৬৮) এর সময় পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং আল-উরাইদে মারা যান ও সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।

বংশধর[সম্পাদনা]

আলী আল-উরাইদির সন্তান ও বংশধররা আল-উরাইদিয়ুন নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তারা আল-উরাইদ, কুফা, বাগদাদ, শাম (বৃহত্তর সিরিয়া), নুসাইবিন, তুরস্ক, আহওয়াজ, রেই (তেহরান), ইসফাহান, ইয়াজদ, কোম, খাওয়ারেজমআফগানিস্তান সহ অনেক অঞ্চলে বসবাস করে। তার ছেলেরা ছিল:

  • আহমদ আল-শারানী
  • হাসান
  • জাফর আল-আসগর
  • মুহাম্মদ আল-নকিব - যিনি মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার মৃত্যুর পর, তিনি বসরায় চলে যান, যেখানে তিনি আহলে বাইতের নকীব (কর্তা) হন। তিনি একজন মহান জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করতেন ও তার জুহদ (সংযম) এর জন্য পরিচিত ছিলেন।[১]
    • ইসা আল-রুমি - তিনি একজন মহান আলিম (শিক্ষিত পণ্ডিত) ও আরিফ (আধ্যাত্মিক গুরু) ছিলেন। তিনি বসরায় আহলে বাইতের নকীব ছিলেন।[১]
      • আহমদ আল-মুহাজির (৮৭৩-৯৫৬/২৬০-৩৪৫ হিজরি) - যিনি বসরায় জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত আলিম ও ইতিহাসবিদ আল-তাবারি তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে ধরে রাখতেন ও তাকে অপরিসীম সম্মান করতেন। তিনি অন্যান্যদের মধ্যে বিশর আল-হাফির সঙ্গ ধরেছিলেন। ৩১৮ হিজরিতে হজ করার পর তিনি একই বছর হাদরামাউতে হিজরত করেন ও সেখানেই বসবাস শুরু করেন। হাদরামাউত থেকে তিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন। তাকে আল-মুহাজির (অভিবাসী) উপাধি দেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি মূলত আল্লাহর পথে ভ্রমণ করেছিলেন ও দ্বিতীয়ত কারণ তিনি ইরাক থেকে হাদরামাউতে হিজরত করেছিলেন। হাদরামাউত থেকে তার বংশধররা বিশিষ্ট আলাভী সাদাত হয়ে ওঠে এবং ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাসকারী বেশিরভাগ সৈয়দহাবিব তারই বংশধর।[১]
    • মুহাম্মদ। তার বংশধররা বর্তমানে ইরানের ইসফাহানে বসবাস করছে।
    • ইয়াহিয়া। তার বংশধরেরা বর্তমানে ইরাকের হিল্লায় বসবাস করছে।
    • আলী (আবু জাফর): তার বংশধররা সিরিয়ার হোমসে বসবাস করে।

অন্যান্য বংশধর[সম্পাদনা]

  • মুহাম্মদ আল-ফকিহ আল-মুকাদ্দাম (১১৭৮-১২৫৫) - বা'আলাভীয়া সুফি তরিকার প্রতিষ্ঠাতা।
  • আবু বকর আল-আয়দারুস (১৪৪৭-১৫০৮) - ইয়েমেনের এডেনের মানসাব (ধর্মীয় নেতা)।
  • আব্দুল্লাহ ইবনে আলাভী আল-হাদ্দাদ (১৬৩৪-১৭২০) - ইয়েমেনের তারিমের ইসলামি পণ্ডিত।

নয়জন সাধক (ওয়ালি সংগো) আল-আয়দারুস পরিবারের নয়

  • সুনান মাওলানা মালিক ইব্রাহিম (মৃত্যু: ১৪১৯ সাল) - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারের সাথে জড়িত ওয়ালী সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
    • সুনান অ্যাম্পেল - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারে জড়িত ওয়ালি সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
      • সুনান বোনাং - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারে জড়িত ওয়ালি সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
      • সুনান দরাজত - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারে জড়িত ওয়ালি সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
      • সায়ারিফাহ
        • সুনান কুদুস - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারে জড়িত ওয়ালি সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
      • আরেকজন কন্যা
        • ত্রেংগানা - যিনি দেমাক সালতানাতের নেতা হিসেবে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন।
  • সুনান গিরি - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারের সাথে জড়িত ওয়ালি সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
  • সুনান মুরিয়া - ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারে জড়িত ওয়ালি সাঙ্গার ("নয়জন সাধক") একজন।
  • আহমেদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাম্বি - ২০০৬ সালের ২৬ মে থেকে কমোরোসের রাষ্ট্রপতি।

পাকিস্তানে উরাইদির বংশধর[সম্পাদনা]

  • সৈয়দ নিজাম উদ্দীন তুলম্বি - জহির ওয়ালি ("জীবিত সাধক") (জন্ম: প্রায় ১৩৬৫ সাল, মৃত্যু ১৪২০ সালের দিকে) - হিন্দে ইসলাম প্রচারের সাথে জড়িত।
  • সৈয়দ মিয়াঁ মুহাম্মদ সাদিক - মিরান সাহেব খারোটা সৈয়দান শিয়ালকোট।
  • সৈয়দ নিজাম কবির আলী শাহ ইবনে সৈয়দ ফয়জুল্লাহ শাহ ইবনে সৈয়দ জালাল উদ্দিন তুলম্বী মালো মাহে তাহসীল ডাস্কা শিয়ালকোট।
  • সৈয়দ আবদুল খালিক শাহ যিনি দিনা ঝিলামের কাছে চক আবদুল খালিক সৈয়দিয়ানের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
  • সৈয়দ মিরান আলী হায়দার বাদশা, ঝিলম, পাকিস্তান।

ধর্মীয় জ্ঞান[সম্পাদনা]

আলী আল-উরাইদি ছিলেন একজন মহান জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি হাদিসের একজন প্রেরক ছিলেন এবং তার ও পরবর্তী যুগের বিখ্যাত উলামাদের দ্বারা লিখিত বিপুল সংখ্যক বইয়ে উদ্ধৃত করা হয়েছে।[১]

তিনি জ্ঞান অর্জন করেছেন:

অনেক লোক আলী আল-উরাইদির হাদিস প্রেরণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  • আহমদ ও মুহাম্মদ- তার দুই ছেলে।
  • আবদুল্লাহ ইবনে হাসান- তার নাতি।
  • ইসমাইল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে জাফর সাদিক- তার ভাই ইসহাকের নাতি।
  • ইমাম আল-বুজি/আল-বাজ্জি।

মুসলিম পণ্ডিতদের মতামত[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Al-'Ilm un-Nabraas fi't Tanbeeh 'alaa Minhajj i'l Akyaas, by 'Abdallah bin 'Alawi bin Hassan al-'Attas, translated by Dr. Mostafa al-Badawi