আমাজন অরণ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমাজন চিরহরিৎ বন
অরণ্য
আমাজন বনাঞ্চাল, মানাউস, ব্রাজিল
আমাজন বনাঞ্চাল, মানাউস, ব্রাজিল
আমাজন বনাঞ্চাল, মানাউস, ব্রাজিল
দেশসমূহ ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম, ফ্রান্স (ফরাসি গায়ানা)
অংশ দক্ষিণ আমেরিকা
নদী আমাজন নদী
ক্ষেত্র ৫৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (২১,২৩,৫৬২ বর্গমাইল)
আমাজন রেইনফরেস্ট ইকোরিজিয়নের মানচিত্র WWF দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। হলুদ রেখা প্রায় আমাজন নিষ্কাশন বেসিনকে ঘিরে রেখেছে। কালো রঙে দেখানো জাতীয় সীমানা। নাসা থেকে স্যাটেলাইট ছবি।
আমাজন রেইনফরেস্ট ইকোরিজিয়নের মানচিত্র WWF দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। হলুদ রেখা প্রায় আমাজন নিষ্কাশন বেসিনকে ঘিরে রেখেছে। কালো রঙে দেখানো জাতীয় সীমানা। নাসা থেকে স্যাটেলাইট ছবি।
আমাজন রেইনফরেস্ট ইকোরিজিয়নের মানচিত্র WWF দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। হলুদ রেখা প্রায় আমাজন নিষ্কাশন বেসিনকে ঘিরে রেখেছে। কালো রঙে দেখানো জাতীয় সীমানা। নাসা থেকে স্যাটেলাইট ছবি।

আমাজন অরণ্য (পর্তুগীজ:Floresta Amazônica or Amazônia; স্প্যানিশ:Selva Amazónica, Amazonía or usually Amazonia; ফরাসি:Forêt amazonienne; ডাচ:Amazoneregenwoud), আমাজন জঙ্গল নামেও পরিচিত যা দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী বিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি। ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯ টি দেশ জুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। আমাজন অরণ্য ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩% রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনামফরাসি গায়ানা। পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট তার অর্ধেক টাই এই অরণ্য নিজেই। নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন।এই বনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে যেগুলো প্রায় ১৬০০০ প্রজাতিতে বিভক্ত।

ম্যাকাও

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

'আমাজন' নামটি ফ্রান্সিসকো ডি ওরেলানা তাপুয়া এবং অন্যান্য উপজাতিদের সাথে লড়াই করা একদল যোদ্ধা নারী আমাজন-এর নাম থেকে উদ্ভূত বলে বলা হয় । গ্রীক পুরাণ অনুসারে সেইসব নারী যোদ্ধারা ছিল পুরুষদের চাইতেও অত্যধিক শক্তিশালী এবং দক্ষ । হেরোডোটাস এবং ডিওডোরাস দ্বারা বর্ণিত গ্রীক পুরাণের 'আমাজন' থেকে ওরেলানা 'অ্যামাজনাস' নামটি গ্রহণ করেছেন ।

জীববৈচিত্র্য, উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত[সম্পাদনা]

আমাজন জঙ্গলে বিরল প্রজাতির প্রাণী মানুষ যারা রয়েছে যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। আমাজনে ৮৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিপজ্জনক অনেক প্রাণীই আমাজনে বসবাস করে। আমাজনে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর সাপ অ্যানাকোন্ডা। এছাড়া রয়েছে লাল চোখা ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, জাগুয়ার, বানর, বৈদ্যুতিক ইল, পিরানহা, বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগসহ অসংখ্য বিষাক্ত জাতের সাপ ও বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ প্রাণী।[১]

আমাজনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে যা প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত। হরেক রকমের গাছপালা দিয়ে আবৃত এ বনে বেশির ভাগই চিরহরিৎ বৃক্ষ। তাই এ বনকে চিরহরিৎ বনও বলা হয়। পৃথিবী জুড়ে যেসব রেইনফরেস্ট রয়েছে তার অর্ধেকটাই এ অরণ্য। তাই একে রেইন ফরেস্টও বলা হয়। আমাজনকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয় বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। প্রচণ্ড গরমের কারণে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যার কারণে আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হয়।[১]

পরিবেশ বিপর্যয়[সম্পাদনা]

যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিজ্ঞানী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে আমাজন অরণ্য আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ব্যাপক অপরিকল্পিত বন নিধনই হবে এর কারণ। পেনিসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জেম্‌স্‌ এল্‌কক বিবিসি কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য প্রদান করেন। তার মতে জটিল প্রতিক্রিয়া নামক পরিবেশ সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় এমনটা ঘটতে পারে। [২]

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

আমাজন অরণ্যের গুরুত্ব অনেক। পৃথিবীর ২০% অক্সিজেন আসে আমাজন থেকে। এর জন্যে একে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। আমাজন পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি। এই বনের নদী বা আমাজন নদী বেশির ভাগ নদীর উৎস। এই নদী বিশ্বে প্রচুর পানির যোগান দিয়ে থাকে। এছাড়াও আমাজনে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরিসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। পাশাপাশি আমাজন নদীতে ৩০০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী আছে।

আদিবাসী[সম্পাদনা]

এই বনে বড় ৩০০শ এর বেশি আদিবাসী বাস করে। মোট আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০লাখেরও বেশি। তারা বেশির ভাগ ব্রাজিলীয়। এছাড়া তারা পর্তুগীজ, স্প্যানিস ইত্যাদি ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও এদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু যাযাবর। এদের বহিঃবিশ্বের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রহস্যে ঘেরা আমাজন,মহিমা আক্তার, ঢাকা টাইমস। প্রকাশের তারিখ:১০ মার্চ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ।
  2. Amazon forest 'could vanish fast'. বিবিসি রিপোর্ট, জুন ২৫, ২০০১।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]