সূরা নূর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আন নূর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আন নূর
শ্রেণীমাদানী সূরা
নামের অর্থআলো
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম২৪
আয়াতের সংখ্যা৬৪
রুকুর সংখ্যা
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা মু'মিনূন
পরবর্তী সূরা →সূরা ফুরকান
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরা আন নূর মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ২৪ তম সূরা। সূরার নামের বাংলা অর্থ আলো। এটি মাদানী সূরা। এ সূরায় হযরত আয়েশা রা. এর উপর দেওয়া অপবাদ খন্ডন করা হয়েছে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

পঞ্চম রুকূ’র প্রথম আয়াত তথা ৩৫ তম আয়াত থেকে সূরার নাম গৃহীত হয়েছে।[১] উক্ত আয়াতে আল্লাহ নিজের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে নূর শব্দ ব্যবহার করেছেন।

মূল পাঠ, উচ্চারণ[সম্পাদনা]

আরবি ভাষায় বাংলা ভাষায়
  • 1. بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ سُورَةٌ أَنْزَلْنَاهَا وَفَرَضْنَاهَا وَأَنْزَلْنَا فِيهَا آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
  • 2. الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
  • 3. الزَّانِي لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
  • 4. وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
  • 5. إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
  • 6. وَالَّذِينَ يَرْمُونَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ شُهَدَاءُ إِلَّا أَنْفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ أَحَدِهِمْ أَرْبَعُ شَهَادَاتٍ بِاللَّهِ ۙ إِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ
  • 7. وَالْخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ
  • 8. وَيَدْرَأُ عَنْهَا الْعَذَابَ أَنْ تَشْهَدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ بِاللَّهِ ۙ إِنَّهُ لَمِنَ الْكَاذِبِينَ
  • 9. وَالْخَامِسَةَ أَنَّ غَضَبَ اللَّهِ عَلَيْهَا إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ
  • 10. وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ وَأَنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ حَكِيمٌ
  • 11. إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالْإِفْكِ عُصْبَةٌ مِنْكُمْ ۚ لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَكُمْ ۖ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَكُمْ ۚ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ مَا اكْتَسَبَ مِنَ الْإِثْمِ ۚ وَالَّذِي تَوَلَّىٰ كِبْرَهُ مِنْهُمْ لَهُ عَذَابٌ عَظِيمٌ
  • 12. لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَٰذَا إِفْكٌ مُبِينٌ
  • 13. لَوْلَا جَاءُوا عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ ۚ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاءِ فَأُولَٰئِكَ عِنْدَ اللَّهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ
  • 14. وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِي مَا أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
  • 15. إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ
  • 16. وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَٰذَا سُبْحَانَكَ هَٰذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ
  • 17. يَعِظُكُمُ اللَّهُ أَنْ تَعُودُوا لِمِثْلِهِ أَبَدًا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
  • 18. وَيُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ ۚ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
  • 19. إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
  • 20. وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ وَأَنَّ اللَّهَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
  • ১.এটা একটা সূরা যা আমি নাযিল করেছি, এবং দায়িত্বে অপরিহার্য করেছি। এতে আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।
  • ২.ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
  • ৩.ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।
  • ৪.যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।
  • ৫.কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।
  • ৬.এবং যারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং তারা নিজেরা ছাড়া তাদের কোন সাক্ষী নেই, এরূপ ব্যক্তির সাক্ষ্য এভাবে হবে যে, সে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার সাক্ষ্য দেবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী।
  • ৭.এবং পঞ্চমবার বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর লানত।
  • ৮.এবং স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম খেয়ে চার বার সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী;
  • ৯.এবং পঞ্চমবার বলে যে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তবে তার ওপর আল্লাহর গযব নেমে আসবে।
  • ১০.তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে এবং আল্লাহ তওবা কবুল কারী, প্রজ্ঞাময় না হলে কত কিছুই যে হয়ে যেত।
  • ১১.যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।
  • ১২.তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?
  • ১৩.তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি; অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী।
  • ১৪.যদি ইহকালে ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, তজ্জন্যে তোমাদেরকে গুরুতর আযাব স্পর্শ করত।
  • ১৫.যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল।
  • ১৬.তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ।
  • ১৭.আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে তখনও পুনরায় এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না।
  • ১৮.আল্লাহ তোমাদের জন্যে কাজের কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
  • ১৯.যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
  • ২০. যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত এবং আল্লাহ দয়ালু, মেহেরবান না হতেন, তবে কত কিছুই হয়ে যেত।

শানেনুযুল[সম্পাদনা]

এ সূরাটি যে বনু মুসতালিক যুদ্ধের সময় নাযিল হয়, এ বিষয়ে সবাই একমত ।[২] কুরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের ঘটনা প্রসংগে এটি নাযিল হয় । হযরত আয়েশা রা. বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ (ইফকের ঘটনা) খন্ডন করে দেওয়া হয় এ সূরা নাজিলের মাধ্যমে।

সূরার তথ্য[সম্পাদনা]

সূরা ক্রমঃ ২৪,
সূরার ধরনঃ মাদানী সূরা
মোট আয়াতঃ ৬৪,
রুকুঃ

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

সূরায় ব্যভিচারের শাস্তি ঘোষণা করা হয়। কারো বিরুদ্ধে অহেতুক ব্যাভিচারের অপবাদ দেবার শাস্তি ঘোষিত হয়। ১১ নং আয়াতে হযরত আয়েশা রা. এর বিরুদ্ধে আনা অপবাদের জবাব দেওয়া হয়। ২৭ নং আয়াতে অনুমতি ছাড়া অপরের ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করে আইন করা হয়। ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে যথাক্রমে পুরুষ ও নারীদের জন্যে পর্দার বিধান দিয়ে দৃষ্ঠি নিচু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ আয়াতে গাইরে মাহরামদের (যাদের সাথে বিয়ে জায়েয কিন্তু দেখা দেওয়া হারাম) তালিকা দেওয়া হয়। ৩৫ আয়াতে আল্লাহ একটি উপমার দ্বারা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন । পরবর্তী আয়াতগুলোতে সৃষ্ঠিজগতের প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক কিছু নিদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত করে পরকালের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সূরা নূর; আয়াত ৩৫
  2. তাফহীমুল কুরআন (সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী); বাংলা অনুবাদ-সূরা নূরের ভুমিকা
  3. http://tanzil.net/#24:1 বাংলা অনুবাদ নির্বাচন করুন

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]