মালদ্বীপীয় রন্ধনশৈলী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টুনা অনেক খাবারের অপরিহার্য উপাদান।
মালদ্বীপের বিভিন্ন ধরনের কারি এবং পরোটা
ম্যাসরশি, মালদ্বীপের মসলাদার খাবার
মালিক বন্দা (বোন্দি)
চাপাতির সাথে ম্যাস হুনি (রশি)

মালদ্বীপের রন্ধনশৈলী  বলতে মালদ্বীপ এবং মিনিকয়, কেন্দ্রশাসিত লাক্ষাদ্বীপ, ভারত এর রন্ধন প্রণালীকে বুঝায়। মালদ্বীপের সনাতন রান্না মূলত নারিকেল, মাছ এবং শ্বেতসার ও তাদের থেকে উদ্ভূত উপকরণ উপর ভিত্তি করে। নারিকেলের মালাই মালদ্বিপের অধিকাংশ তরকারির প্রধান এবং অপরিহার্য উপাদান। মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবার হানিগডি । এটি মুলত নারিকেল হতে বানানো খাবার। এছাড়া ম্যাস হানি নামে আরেকটি নারকেলের খাবার মালদ্বীপে বহুল প্রচলিত। সাগর বেষ্টিত মালদ্বীপের খাবারে আমিষের উপদান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের টুনা, স্কাড, ম্যাকরেল থাকে। শুটকি ও তাজা মাছের বিভিন্ন প্রকরণ - দুইভাবেি মাছের তরকারি রান্না হয়ে থাকে। শ্বেতসার খাবারের মধ্যে ভাত (চাল) অন্যতম, এটি সিদ্ধ অথবা ময়দার বা কন্দ জাতীয় সবজীর সাথে পরিবেশন হয়।

নারিকেল[সম্পাদনা]

তেলে ভাজা খাদ্যে নারকেল কুঁচি কুঁচি করে কেটে, নিষ্পেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত নারিকেল দুধ বা নারিকেল তেল রূপে ব্যবহার করা হয়। মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবার হানিগডি  খাবারের মধ্যে নারকেল কুঁচি কুঁচি করে কেটে ব্যবহার হয়। কুঁচি কুঁচি করে কাটা নারকেল ব্যবহার করা খাবারের মধ্যে ম্যাস হানি অন্যতম।

নারকেল দুধ প্রস্তুতিতে বিকল্প হিসাবে কুঁচি কুঁচি করে কাটা নারকেল কখনো কখনো  পানিতে ভিজিয়ে এবং নিস্পেষন পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় (কাশি কিরু)। নারকেল দুধ মালদ্বীপের প্রায় সকল তরকারি এবং অধিকাংশ খাবারের একটি অপরিহার্য উপাদান।

মাছ[সম্পাদনা]

শুটকি অথবা তাজা, দুইধরনের স্কিপজ্যাক টুনা মাছ হিসাবে মালদ্বীভিয়ানদের পছন্দ। তাদের খাবারের তালিকায় অন্যান্য সমজাতীয় মাছের মধ্যে রয়েছে, ছোট টুনা (লাতি latti), হলুদপাখনার টুনা (কানেলি kanneli), ফ্রিগেট টুনা (রাগোন্দি raagondi), বড়চোখের স্ক্যাড (মুশিমাছ mushimas), ওয়াহু (কারুমাস kurumas), মাহি-মাহি (ফিয়ালা fiyala) এবং ম্যাকেরল স্ক্যাড (রিমমাছ rimmas)। এগুলি সিদ্ধ এবং প্রক্রিয়াজাত উভয়ভাবেই তারা খেয়ে থাকে।

প্রক্রিয়াজাত টুনা (মালদ্বীপের মাছ) ছোট টুকরা বা খোসা ছাড়ানো ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কারি প্রস্তুতিতে, তাজা অথবা নরম প্রক্রিয়াজাত টুনা -ইঞ্চি-পুরু (১৩ মিমি) আকারে কেটে রান্না করা হয়। শুকনা টুনা মূলত ব্যবহৃত হয় গুলহা, ম্যাসরোশি, কুলহি বকিবা (bōkiba), কাভাবু, ভাজিয়া (ভারতীয় সামুসার স্থানীয় সংস্করণ) এবং ফাতাফলি নামের হালকা নাস্তার উপকরণ হিসাবে। নারিকেল, পেঁয়াজ ও মরিচ এর সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয় ম্যাস হুনি যা মালদ্বীভিয়ানদের সকালের নাস্তার একটি অপরিহার্য উপাদান। প্যাসিফিক দ্বীপবাসীর মতো মালদ্বীভিয়ানদের কাঁচা মাছ খাবার কোন ঐতিহ্য নাই।

টুনাকে মূল উপাদান করে তৈরিকৃত বাদামী পুরু পেষ্ট যা রিহাকুরু নামে পরিচিত, মালদ্বীভিয়ান রন্ধনশৈলির একটি অন্যতম উপাদান।[১]

শ্বেতসার খাবার সমূহ[সম্পাদনা]

শ্বেতসার খাবারের মধ্যে ভাত (চাল) অন্যতম, এটা সিদ্ধ অথবা ময়দার বা কন্দ জাতীয় সবজীর (যেমন কচু বা আলা ala, মিষ্টি আলু বা কাটালা kattala এবং কাসাভা বা ড্যন্ডিয়ালুভি dandialuvi) সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকে। অনুরুপভাবে বিভিন্ন ফলের সাথেও ব্যবহৃত যেমন কাঁঠাল (ব্যাম্বোকিয়ো bambukeyo) অথবা কেয়া (কাশিকি kashikeyo)। কন্দ এবং কাঁঠাল সিদ্ধ করে খেয়ে হয় থাকে এবং কেয়া ফল প্রধানত পাতলা কুঁচি করে কেটে কাঁচাই খেয়ে থাকে।[২]

কারি[সম্পাদনা]

মালদ্বীপের রন্ধনশৈলীতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কারি ম্যাসরিহা, এটা তাজা ছোট আকৃতির টুনা দিয়ে রান্না করা হয়ে থাকে। কোকুলু রিহা Kukulhu riha (চিকেন কারি) বিভিন্ন ধরনের মশলা মিশ্রিত করে রান্না করা হয়ে থাকে।

মালদ্বীপের সবজি কারির মধ্যে ব্যবহৃত হয়, বাশি (বেগুন), তোরা (ধুন্দুল), বারাবো barabō (কুমড়া), চিঁচান্দা chichanda (চিচিঙ্গা) এবং মারাংগা muranga (সজনে)। একইসাথে কাঁচকলা এবং কিছু নির্দৃষ্ট পাতা সবজি কারির প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত সবজি কারিতে স্বাদ বৃদ্ধির জন্যে মালদ্বীপের মাছ এর টুকরা যোগ করে থাকে। কারি মূলত খেয়ে থাকে ভাত অথবা রশি soshi এর সাথে।[২]

সংস্করণ[সম্পাদনা]

  • জেভিয়ার রোমারো-ফিয়াস, ইটিং অন আইল্যন্ডস, হিমাল সাউথাসিয়ান, ভলিউমঃ ২৬ সংখ্যাঃ ২, পৃষ্টাঃ ৬৯-৯১ আইএসএসএন 1012-9804

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মিফকো; রিহাকুরু"। ৪ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৭ 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ReferenceA নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]