আবুল খায়ের (বীর বিক্রম)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবুল খায়ের
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

আবুল খায়ের (জন্ম: লক্ষ্মীপুর ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আবুল খায়ের১৯৩১ সালের ২৪ মার্চ বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার অন্তর্গত ৯ নং উত্তর জয়পুর ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্ৰহন করেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ, তার পিতা হাফেজ ফয়েজ বক্স ছিলেন এলাকার একজন স্বনামধন্য আলেমে দীন, তিনি জ্য়পুরের হাফেজ সাহেব নামে অধিক পরিচিত ছিলেন । তার মায়ের নাম নবীজান বানু, বাল্যকালেই তিনি মাকে হারান । তার স্ত্রীর নাম মাহবুবা খাতুন। তিনি ছিলেন চার সন্তানের জনক এক ছেলে ও দুই মেয়ে,তার মাকছুদা নামে আরো এক মেয়ে ছিল সে যুদ্ধের সময় তিন বছর বয়সে হঠাৎ ক্রনিক আমাশয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। ছেলে সবার বড় নাম মোঃ নিজাম উদ্দিন, মেঝো মেয়ের নাম মোবাশ্বেরা বেগম ও ছোট মেয়ে শাহীন আক্তার । তিনি এলাকার পাল পাড়া ডি এম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন, অতপর বাংলার পণ্ডিত সাহেবের কড়া শাস্তির প্রতিবাদে দুই বন্ধু তাকে একপ্রকার শিক্ষা দিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেন এবং সবার অজান্তে তৎকালীন ই পি আর এ সৈনিক হিসাবে যোগদান করে শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন । জাতির এই বীর বার্ধক্য জনিত কারণে ২০১৩ সালের ১লা জানুয়ারী ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন । তাকে পৈতৃক বাড়ীতে পারিবারিক করস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় ।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবুল খায়ের তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-ইপিআরে চাকরি করতেন শুরুতেই তার পদায়ন ছিল সিগনাল কোম্পানিতে । ১৯৭১ সালে তিনি দিনাজপুরে পোস্টিং ছিলেন । তার ভাষ্যমতে, ২৪ তারিখেই নিশ্চিত হন ক্যাম্পে ভয়াভহ ম্যাসাকার হবে। কারণ প্রায় সকল বাঙ্গালী সৈনিক অস্ত্রহীন ও জেসিওদের চালিকার দায়িত্ব থেকে কৌশলে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনার আভাস ও বাস্তবায়ন শুরু করায়, বাঙ্গালী সৈনিক/জেসিওদের দেশপ্রেমে ওদের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। তারা বিদ্রোহ করে কিছু পশ্চিমাকে হত্যা ও বন্দী করে। ইউনিট কিছুসময় বিদ্রোহীদের কমান্ডে থাকে। পশ্চিমাদের বিমান আক্রমনের আগেই পুরো দল নবগঠিত বাংলাদেশ ফোর্সে একীভূত হয়‌। অতপর পুরো যুদ্ধকালীণ সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ৩য় ব্যাটালিয়ানের অধীনে সাহসিকতার সাথে নিয়মিত বাহিনীর সদস্য হয়ে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তিনি পূর্বতন কর্মস্থল তথা নবগঠিত বিডিআর এ যোগদান করেন। চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন এবং নায়েক সুবেদার (সিগনাল) (জে সি ও নং ১৭৫০) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে বিডিআর থেকে অবসর নেন ।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[২][সম্পাদনা]

তিনি দিনাজপুরে কর্মরত থাকা অবস্থায় যুদ্ধ শুরু হয়, মার্চ মাসের শেষ দিকে অবাঙালিদের আচরনে ব্যতিক্রম দেখে বাঙালীরা সৈনিকরা একহয়ে কৌশলে নিজেদের অস্ত্র জমা না রেখে অবাঙ্গালী সেনাদের অস্রহী্ন অবস্থায় বিদ্রোহ করে ২৫ মার্চ রাতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাক সেনাকে হত্যা করেন । অতপর সদলবলে পালিয়ে বাংলাদেশ বাহিনিতে একীভূত হন । পুরো যূদ্ধকালীণ সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টএর ৩য় ব্যাটালিয়ানের কমান্ডে দিনাজপুর,রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে সাহসিকতার সাথে অনেক দুঃসাহসী অভিযান ও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন,যুদ্ধে পাকসেনা হতাহত হয়,শত্রুমুক্ত হয়, এসব যুদ্ধে অনেক সাথী শাহাদাত বরণ করেন । মেজর শাফায়াত জামিল ছিলেন ৩য় ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক তিনিও এসব সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতেন, রাধানগর যুদ্ধে শত্রূর গুলিতে আহত হন । যুদ্ধ শেষে আবুল খায়েরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে থাকার প্রস্তাব করা হয় কিন্তু তিনি তার পূর্বতন কর্মস্থলে ফিরে যেতে ইচ্ছা পোষণ করেন, তিনি ১৭/৩/৭২ তারিখে বাংলাদেশ বাহিনী থেকে রিলিজ নিয়ে আসেন এবং নবগঠিত বিডিআর এ যোগদান করেন । মেজর শাফায়াত জামিল(তিনিও বীর বিক্রম খেতাবে ভুষিত) তাকে যূদ্ধে বিশেষ কৃতিত্বের প্রশংসা করে ছাড়পত্র দেন। তিনি দেশ মাতৃকার জন্য মরণপন যুদ্ধে এতই ব্যস্ত ছিলেন এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধার খোজ পাওয়া গেলেও তিনি গ্রামে স্বজনদের সাথে সকল যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, কেউ তার খোজ খবরও দিতে পারেনি, তাই স্বজনরা ধরেই নিয়েছিলেন তিনি দিনাজপুরে যুদ্ধের শুরুতেই পাক সেনাদের বোম্বিংএ শাহাদাত বরন করেছেন । ধারনাটি প্রবল হয় বিজয়ের পর লম্বা সময় ধরে খোজ খবর না পাওয়া, তার স্ত্রীও তা মেনে নিয়েছিলেন তার ভাগ্যের কথা, তিনি স্বেচ্ছায় স্বেতবসনে অলংকার ব্যবহার করা বন্ধ করেন । প্রায় দুমাস পর তার সহ যোদ্ধাদের এক এক করে বিদায় দিয়ে ফেনী পর্যন্ত আসলে একজন বীর সহযোদ্ধাকে তার গ্রামের বাড়ীতে খবর দিতে আগাম পাঠান ।তখন স্বজনসহ পুরো এলাকা আনন্দে ভরে উঠে । তিনি প্রায়ই যুদ্ধের গল্প শোনাতেন, তবে বীর বিক্রম উপাধি নিয়ে তিনি প্রচার বিমুখ ছিলেন । অবসরের পর দুই দশকেরও অধিককাল তিনি জীবিত ছিলেন কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে কখনো কোন জাতীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় এই বীরকে সম্মান দেখিয়ে আমন্ত্রণ করা হয়নি,তাই যুদ্ধের অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা অজানা থেকে যায়। তার মৃত্যুর পরই ব্যাপক প্রচার হয় তিনি ছিলেন খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা । স্মৃতিস্বরূপ জাতীয় এই বীরের নামে এখন পর্যন্ত কোন কিছুর নাম করা হয় নি ।

্্্

সম্মাননা ও চাকরিরত অবস্থায় প্রাপ্ত পদক সমূহ [সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সরকারি ওয়েবসাইট"। ২০১৮-০১-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-১৪ – website-এর মাধ্যমে। 
  2. সরকারি ওয়েবসাইট। ৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৭ 
  3. দৈনিক আদেশ ২৪ (২১৪) ৮০ সদর ব্যাটালিয়ন

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]