বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি বা বঙ্গীয় ইঙ্গ-ভারত সমিতি ১৮৪৩ সালের ২০ এপ্রিল কলকাতায় জর্জ টমসন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক জনসংগঠন। এ ধরনের প্রথম সংগঠন ছিল ১৮৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত জমিদারদের সংগঠন ‘জমিনদারি অ্যাসোসিয়েশন’। পূর্ববর্তী সংগঠনটির মতো এটিও ছিল সীমিত পর্যায়ে ইন্দো-ব্রিটিশ সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত একটি প্রকাশ্য রাজভক্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অন্তমুখী জমিদারদের সংগঠন, যেটি ভূমিভিত্তিক অভিজাতবর্গের স্বার্থসমূহকেই কেবল তুলে ধরত, থেকে ভিন্নতর বঙ্গীয় ইঙ্গ-ভারত সমিতি ছিল এমন একটি সংগঠন যেখানে কর্তৃত্ব করত বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ, বিশেষত ইয়ং বেঙ্গল গ্র‚প, যারা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বুদ্ধির মাধ্যমে অর্জিত আভিজাত্যের গর্ব করত।

বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রবক্তা ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জর্জ টমসন, যিনি প্রগতিশীল উইগীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে এবং ভারতের ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে নিজেকে প্রধান করে ১৮৯৯ সালে লন্ডনে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি (ইঙ্গ-ভারত সমিতি) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৪৩ সালের বসন্তকালে ভারতে তার সাময়িক আবাসকালে কলকাতায় একদল শিক্ষিত বাঙালির সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। তাদেরকে নিয়ে তিনি জমিদারদের সংগঠনের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। সম্ভবত তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, নবগঠিত প্রতিষ্ঠানটি তার নিজস্ব সংগঠন ইঙ্গ-ভারত সমিতির সংযোজিত অংশ হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ নামে আবির্ভূত হয় এবং ইঙ্গ-ভারত সমিতি ও ভারতীয় সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি ঘোষণা করা হয় এভাবে: ভারতীয় জনগণের মধ্যে সুনাগরিকের গুণাবলি গড়ে তোলা, তাদের মনে ব্রিটিশ শাসনের অবস্থা ও নিজেদের ‘ন্যায্য অধিকারসমূহ’ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ইংল্যান্ডের শাসনকর্তা সার্বভৌম রাজা বা রানীর ব্যক্তি ও সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের সাথে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগভাবে এগুলি আদায় করার জন্য চেষ্টা চালানো।

কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নয় এমন সকল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এর সদস্যপদ উন্মুক্ত ছিল। তাদেরকে সমিতির তহবিলে চাঁদা দিতে অথবা দান করতে এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি সজ্ঞানে সমর্থন করতে হতো। কিন্তু জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে সুস্কষ্ট অবস্থান নেওয়ায় ভূমি-অভিজাতবর্গ নিজেদেরকে এ সংগঠন থেকে ইৃতভাবে দূরে সরিয়ে রাখেন। এর সম্পাদক নিজস্ব মঞ্চ থেকে এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও জমিদার এবং নীলকরদের ওপর তীক্ষ্ম আঘাত হানতে শুরু করেন।

সোসাইটির প্রথম ১৫-সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন চারজন ইউরোপীয়ান ও এগারজন ভারতীয়। তাদের মধ্য থেকে জর্জ টমসন প্রেসিডেন্ট, জি.এফ রেমফ্রাইরামগোপাল ঘোষ ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্যারীচাঁদ মিত্র সম্পাদক ছিলেন। কমিটির ভারতীয় সদস্যবৃন্দ ছিলেন তারাচাঁদ চক্রবর্তী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ব্রজনাথ ধর, কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জী, হরি মোহন, গোবিন্দচন্দ্র সেন, চন্দ্রশেখর দেব, শ্যামাচরণ সেনসাতকড়ি দত্ত। এঁদের সকলেই ইয়ং বেঙ্গল গ্রুপের সাথে জড়িত ছিলেন।

সোসাইটির মূল কাজ ছিল আমলাতন্ত্রের সাথে ‘লবিং’ করা এবং সরকারের নিকট আবেদন-পত্র পেশ করা। সরকারি অফিসমূহে ভারতীয়দের নিয়োগ বৃদ্ধি ও বিচার বিষয়ক সংস্কারের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়ে সরকারের নিকট বঙ্গীয় ইঙ্গ-ভারত সমিতি অনেক আবেদন-পত্র পাঠিয়েছিল। ভারতীয়দের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগদান ও নিবন্ধন বিভাগে সংস্কার সাধন এ প্রচেষ্টার ফল বলে মনে করা হয়। কিন্তু বঙ্গীয় ইঙ্গ-ভারত সমিতি অথবা জমিদারদের সমিতির মধ্যে কোনটিই খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারে নি, যদিও ভারতে রাজনৈতিক দলসমূহের জন্মলাভে এগুলি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিল। ১৮৫০ সাল নাগাদ উভয় প্রতিষ্ঠানই নিস্তেজ হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]