প্যারীচাঁদ মিত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্যারীচাঁদ মিত্র
জন্ম(১৮১৪-০৭-২২)২২ জুলাই ১৮১৪
মৃত্যু২৩ নভেম্বর ১৮৮৩(1883-11-23) (বয়স ৬৯)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পেশালেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, উদ্যোক্তা

প্যারীচাঁদ মিত্র (২২শে জুলাই, ১৮১৪- ২৩শে নভেম্বর, ১৮৮৩) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক; ছদ্মনাম টেকচাঁদ ঠাকুর

জন্ম[সম্পাদনা]

প্যারীচাঁদ মিত্র কলকাতায় ১৮১৪ সালের ২২শে জুলাই এক বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রামনারায়ণ মিত্র। তিনি কাগজ ও হুন্ডি ব্যবসায়ী ছিলেন। প্যারীচাঁদ মিত্র বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। প্যারীচাঁদ মিত্রের ভ্রাতা কিশোরীচাঁদ মিত্র৷ তাঁদের আদিনিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার পাণিসেহালা গ্রাম৷[১]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

শৈশবে একজন গুরুমহাশয়ের নিকট বাংলা, পরে একজন মুন্সির নিকট ফারসি শিখেন। ইংরেজি লাভের জন্য হিন্দু কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন। ঐ সময় ডিরোজিও নামে একজন বিখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন হিন্দু কলেজে। তিনি তার শিষ্য ও ভাবশিষ্য ছিলেন।[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। তিনি ফার্সি, বাংলাইংরেজি ভালো জানতেন। বিশেষ করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি মহিলাদের জন্য একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তার সহযোগী ছিলো রাধানাথ শিকদার। তিনি এছাড়াও জনকল্যাণ মূলক কাজও করতেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য ছিলেন। তিনি পশু-ক্লেশ নিবারণী সভারও সদস্য ছিলেন। বেথুন সোসাইটি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। জ্ঞানান্বেষণ সভার সদস্য হন তিনি ১৮৩৮ সালে। তার ইংরেজি ভাষায় রচিত লেখাসমূহ ছাপা হত ইংলিশম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড, ক্যালকাটা রিভিউ, হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতি পত্রিকায়। তিনি পুলিশি অত্যাচারিতার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন এবং সফলকামও হয়েছিলেন। তিনি স্ত্রী শিক্ষা প্রচারে যথেষ্ট সক্রিয়তার পরিচয় দেন। তিনি বিধবাবিবাহ সমর্থন করতেন। তিনি বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের বিরোধিতা করেন। তিনি আমদানি ও রপ্তানি এবং চালের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থোপার্জন করেন।[২]

সাহিত্য সম্পাদনা[সম্পাদনা]

  • আলালের ঘরের দুলাল (তার শ্রেষ্ঠ এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস)। ১৮৫৮ খ্রি. প্রকাশিত এই উপন্যাসটির অন্যতম প্রধান চরিত্র ঠকচাচা । উল্লেখ্য যে এখানে তিনি যে কথ্য ভাষা ব্যবহার করেছিলেন তা আলালী ভাষা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই গ্রন্থটি ইংরেজিতেও অনুবাদ করা হয়েছিল The spoiled child নামে।
  • মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায় (১৮৫৯) তার এ গ্রন্থে উদ্ভট কল্পনা লক্ষ করা যায়।
  • অভেদী(১৮৭১)
  • আধ্যাত্মিকা(১৮৮০)
  • The Zemindar and Ryots. এই গ্রন্থটি তখনকার সময়ে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। কারণ এটি রচিত হয়েছিলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
  • যৎকিঞ্চিৎ(১৮৬৫)
  • রামারঞ্জিকা (১৮৬০)
  • বামাতোষিণী(১৮৭১)
  • গীতাঙ্কুর(১৮৬১)
  • কৃষি পাঠ(১৮৬১)
  • ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত(১৭৭৮)
  • এত দ্দেশীয় স্ত্রীলোক দিগে পূর্বাবস্থা(১৮৭৯)

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৮৮৩ সালের ২৩শে নভেম্বর তিনি কলকাতায় মারা যান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কর্ম্মবীর কিশোরীচাঁদ মিত্র, শ্রীমন্মথনাথ ঘোষ বিরচিত, ৫৫ নং আপার চিৎপুর রোড্ আদিব্রাহ্মসমাজ-বস্ত্রালয়ে শ্রী রণগোপাল চক্রবর্তী দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত , কলিকাতা, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ, পৃ. ১১
  2. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২২৪, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬