গঙ্গাসাগর মেলা

স্থানাঙ্ক: ২১°৩৮′১২″ উত্তর ৮৮°০৩′১৯″ পূর্ব / ২১.৬৩৬৭৫৬২° উত্তর ৮৮.০৫৫৪১২৫° পূর্ব / 21.6367562; 88.0554125
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গঙ্গাসাগর মেলা
ধরনমেলা, ধর্মীয় সমাবেশ
পুনরাবৃত্তিপ্রতিবছর
ঘটনাস্থলগঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের সংগম
অবস্থান (সমূহ)গঙ্গাসাগর, পশ্চিমবঙ্গ
স্থানাঙ্ক২১°৩৮′১২″ উত্তর ৮৮°০৩′১৯″ পূর্ব / ২১.৬৩৬৭৫৬২° উত্তর ৮৮.০৫৫৪১২৫° পূর্ব / 21.6367562; 88.0554125
দেশভারত
পূর্ববর্তী ঘটনা২০২৪
পরবর্তী ঘটনা২০২৫
অংশগ্রহণকারীতীর্থযাত্রী
উদ্যোক্তাপশ্চিমবঙ্গ সরকার[১]
ওয়েবসাইট
gangasagar.in

গঙ্গাসাগর মেলা[২][৩] হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণে সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রমে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত একটি মেলা ও ধর্মীও উৎস। হুগলি নদী (গঙ্গা) ও বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থানকে বলা হয় গঙ্গাসাগর। এটি একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলাভূমি। এই দুয়ের মেলবন্ধনে আবদ্ধ গঙ্গাসাগর মেলা।

সাগর দ্বীপের দক্ষিণপ্রান্তে হুগলি নদী (গঙ্গা নদী) বঙ্গোপসাগরে এসে পতিত হয়েছে। এই সাগর দ্বীপ হল বঙ্গোপসাগরের মহাদেশীয় সোপানে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি কলকাতা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গঙ্গা নদীর মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর।

গঙ্গাসাগর মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা (কুম্ভমেলার পরে)। সাগর দ্বীপের দক্ষিণে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। তাই প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন; তবে উত্তর ভারত থেকে আগত পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক।[৪] মেলাটি এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পরিচালিত হয়, তবে মকর সংক্রান্তির (পৌষ সংক্রান্তি) দিনটি একক দিন হিসাবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থীদের আকর্ষণ করে। গঙ্গাসাগর মেলায় ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পুণ্যার্থীদের সমাগম ঘটেছিল, যা ছিল প্রায় ১ কোটি।[৫]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও লোকগাথা[সম্পাদনা]

মহাভারত-এর বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে, যা ১৫০০-২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তীর্থক্ষেত্রটির অস্তিত্বের প্রমাণ প্রদান করে। মহাভারত অনুযায়ী পাণ্ডবগণ কৌশিক নদী তটদেশ থেকে যাত্রা করে গঙ্গাসাগরসংগমে – গঙ্গা ও সাগরের (সমুদ্র) মিলনস্থল – উপস্থিত হন।[৬][৭] হিন্দু ধর্মবিশ্বাসীদের মত অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলে গঙ্গার প্রধান দুটি শাখার একটি ভাগীরথী-হুগলি নদীর মোহনায় অবস্থিত সাগরদ্বীপের গঙ্গাসাগর হল মহাভারত-এ উল্লেখিত "গঙ্গাসাগরসংগম"।

কিংবদন্তি আছে, গঙ্গাসাগরে সাংখ্য দর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সগর রাজার পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন।[৮][৯]

প্রাচীনযুগ[সম্পাদনা]

মহাকবি কালিদাস কর্তৃক খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে রচিত সংস্কৃত ভাষার কাব্য রঘুবংশম থেকেও গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত, ব্রজেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংবাদপত্রে সেকালের কথা বই-এ ঊনবিংশ শতাব্দীর সংবাদপত্র হরকরা পত্রিকায় কপিল মুনি মন্দির নির্মাণের বিষয়ক উল্লেখের কথা বলা হয়েছিল। হরকরা পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ অনুযায়ী, গঙ্গাসাগরে সর্বপ্রথম ৪৩৭ খ্রিস্টাব্দে কপিল মুনি মন্দির নির্মিত হয়েছিল।[১০]

পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে তার গঙ্গাসাগর-সংগমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে।

মধ্যযুগ[সম্পাদনা]

মধ্যযুগীয় সময়ে, দেশের প্রতিটি কোণ থেকে তীর্থযাত্রীরা বহু বাঁধা ও বিপদ উপেক্ষা করে মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে উপস্থিত হয়েছেন। বিপদজনক যাত্রার সময়, তীর্থযাত্রীদের কলেরা ও পক্সের মতো রোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিপদ ও মৃত্যু সম্মুখীন হওয়ার কারণে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে এই বচনের উৎপত্তি হয়েছে — "সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার।"[১০]

আধুনিক যুগ[সম্পাদনা]

গঙ্গাসাগরে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মকর সংক্রান্তির উপলক্ষে তীর্থযাত্রীদের জমায়েতের একটি দৃশ্য।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত কপালকুণ্ডলা-এ গঙ্গাসাগরে পৌঁছানোর জন্য একটি বিপজ্জনক যাত্রার আভাস রয়েছে।[১০] ডিস্ট্রিক্ট গেজেটে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে উইলসন নামে এক জন কপিলমুনির মন্দিরের উল্লেখ করেছেন। উক্ত ব্যক্তির লেখনি অনুযায়ী, বাঁশের বেড়া ঘেরা কপিলমুনির মন্দির ছিল অস্থায়ী, মন্দিরের সম্মুখে ছিল একটি প্রকাণ্ড বটগাছ, তার নীচে রাম ও হনুমানের মূর্তি। শ্রীযুক্ত মাধবচন্দ্র বর্মণ কর্তৃক ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ভারতের তীর্থযাত্রা গ্রন্থে গঙ্গাসাগর মেলার উল্লেখ রয়েছে। এই গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে "গঙ্গাসাগরে পৌষ বা মাঘ মাসে মকরসংক্রান্তির সময়ে তিন দিনের স্নান হয়, মেলা পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকে"।[১১]

কপিল মুনির মন্দির, যার নির্মাণ কাজ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হয়েছিল

ভারতের স্বাধীনতার পরে, তীর্থক্ষেত্রটির উন্নতি শুরু হয়। তরুণদেব ভট্টাচার্য রচিত গঙ্গাসাগর মেলা ও প্রাচীন ঐতিহ্য গ্রন্থে মন্দিরের ছবি প্রকাশিত হয়। উক্ত গ্রন্থ অনুযায়ী, স্থায়ী মন্দিরটি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পরিণত মন্দিরের আকার আবির্ভূত হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৭০-এর দশকে স্থায়ী মন্দির নির্মাণে সহায়তা করে। পরবর্তী দশকগুলিতে মেলায় তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমান সময়ে, গঙ্গাসাগর মেলা ও তীর্থক্ষেত্র উপলক্ষে প্রত্যেক বছর পৌষ মাসে মকরসংক্রান্তি বা পৌষ-সংক্রান্তির পূণ্যতীথিতে (জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি) লক্ষ্য লক্ষ্য লোকের সমাগম ঘটে।[১১]

দিনক্ষণ, অবস্থান এবং প্রস্তুতি[সম্পাদনা]

২০১৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত গঙ্গাসাগর মেলার সময় কপিল মুনি মন্দির।

দিনক্ষণ[সম্পাদনা]

গঙ্গাসাগর মেলা সাধারণত মকর সংক্রান্তির (১৪ই বা ১৫ই জানুয়ারি) পূন্য স্নান উপলক্ষে আয়োজিত হয়।[১২][১৩] মকর সংক্রান্তি সৌর পঞ্জি দ্বারা নির্ধারিত হয়, এবং সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের ঘটনাটি জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। এটি এমন একটি দিনে পালন করা হয় যেটি সাধারণত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ১৪ই জানুয়ারি হিসাবে চিহ্নিত হয়, কিন্তু অধিবর্ষের ক্ষেত্রে ১৫ই জানুয়ারি। মকর সংক্রান্তির তারিখ ও সময় রাশিচক্রের মকর রাশির (যখন সূর্য প্রবেশ করে) পার্শ্বীয় সময়ের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।[১৪]

অবস্থান[সম্পাদনা]

সাগরদ্বীপের গঙ্গাসাগরে গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অন্তর্গত। কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার জন্য নির্ধারিত স্থানটি গঙ্গা (ভাগীরথী-হুগলি) ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমস্থলে সমুদ্র তটে অবস্থিত।

মেলার প্রস্তুতি[সম্পাদনা]

কলকাতায় ২০১২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পের দৃশ্য।

গঙ্গাস্নান ও মেলা উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তীর্থযাত্রীদের আগম ঘটে। সাগরদ্বীপে পোঁছানোর জন্য বেশিরভাগ তীর্থযাত্রী প্রথমে কলকাতায় উপস্থিত হন। তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতিবছর কলকাতায় ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপিত হয়। এই ক্যাম্পসমূহে সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হয়।

মেলা উপলক্ষে নির্মিত অস্থায়ী জেটি ও তীর্থযাত্রীদের ভিড়।

সাগরদ্বীপে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হল মুড়ি গঙ্গা নদী। তীর্থযাত্রীদের যাত্রাপথে এই নদী অতিক্রম করতে হয়। তবে নদীর স্বল্প নাব্যতার কারণে জোয়ার ব্যতীত নদী অতিক্রম সম্ভব নয়। প্রতিবছর নদীপথে নিরবিছিন্নভাবে ফেরী পরিচালনার জন্য নদীর তলদেশ থেকে পলিমাটি খনন (ড্রেজিং) করা হয়।[১৫] মেলা ও গঙ্গাস্নান উপলক্ষে কাকদ্বীপ ও সাগরদ্বীপের কচুবেরিয়ার মধ্যে ফেরী পরিষেবা পরিচালিত হয়। বেশ কিছু অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয় দ্রুত ও অধিক তীর্থযাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুম থেকে সমস্ত ভেসেল ও বাসে নজরদারি চালানো যাবে। নজরদারির জন্য সাগরদ্বীপের সব পরিবহণে জিপিএস ও নেভিক (নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।[১৬] কুয়াশায় জন্য দৃশ্যমানতার সমস্যা রুখতে ভেসেলে নেভিগেশন লাইটের ব্যবস্থাও করা হবে।[১৫]

মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে তীর্থযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু অস্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণ করা হয়। গঙ্গাসাগরসংগমে অস্থায়ী ঘাট, এবং ঘাট থেকে মন্দিরে তীর্থযাত্রীদের চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়। মেলা প্রাঙ্গণে পানীয় জলের সুবিধা ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার মেলায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে, এবং গুরুতভাবে অসুস্থ পুণ্যার্থীদের দ্রুত আকাশপথে (এয়ারলিফ্‌ট) কলকাতায় পৌঁছে দেওয়া হয়।[১৭] চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতালও তৈরি করা হয়।[১৮] সরকারের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেলায় প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে আরম্ভ করে সেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে।

আচার-অনুষ্ঠান[সম্পাদনা]

গঙ্গাসাগরসংগমে পুণ্যার্থীদের ভিড়।

স্নান[সম্পাদনা]

প্রার্থনা সহ স্নান, বা নদীর জলে ডুব দেওয়া হল সমস্ত তীর্থযাত্রীদের জন্য গঙ্গাসাগর মেলার কেন্দ্রীয় আচার-অনুষ্ঠান। হিন্দু মতে জন্ম ও মৃত্যুর যে অনন্তচক্র তার থেকে মুক্তিই হল মোক্ষ। হিন্দুদের বিশ্বাস, মকরসংক্রান্তির মহালগ্নে সাগরসংগমে পবিত্র জলে স্নান করলে মানুষের মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। সেই কারণে সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাসাগরের উপস্থিত হন।[১৯] ঐতিহ্যগতভাবে, মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তিতে – স্নানের জন্য সবচেয়ে লালিত দিন – হিন্দু তীর্থযাত্রীরা নির্ধারিত স্নানযোগ বা স্নানের সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। উক্ত দিন, হিন্দু ভক্তরা খুব ভোরে গঙ্গাসাগরসংগমে উপস্থিত হন এবং গঙ্গা ও সাগরের সঙ্গমে (মোহনা) নদীতে পবিত্র স্নান সম্পন্ন করেন। তীর্থযাত্রীদের স্নানের আচার-বিধিতে পুরোহিতগণ সাহায্য করেন, অনেক ক্ষেত্রে তীর্থযাত্রীরা সাধারণ ডুব যা ব্যক্তিগত ভাবে স্নান সম্পন্ন করেন। এই নদীর ধারের আচার-অনুষ্ঠানের পরে, তীর্থযাত্রী জলে ডুব দেয়, কিছুক্ষণ প্রার্থনা করেন। তারা সূর্য দেবকে নৈবেদ্য প্রদান করেন এবং ভগবান সূর্য দেবের উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করেন।

পূজা[সম্পাদনা]

কপিলমুনি মন্দিরে গঙ্গা দেবী, কপিলমুনিসাগর রাজার ভাস্কর্য।

গঙ্গাসাগর তীর্থক্ষেত্রের প্রধান কেন্দ্র হল কপিল মুনির মন্দির। স্নানের আচার-অনুষ্ঠান শেষ করার পর, পুণ্যার্থীরা কপিল মুনির পূজা করেন এবং কেউ কেউ গঙ্গা স্নানের দিনে যজ্ঞ ও হোমও করেন। এমনকি কিছু ভক্ত গঙ্গা স্নানের দিনগুলিতে কঠোর উপবাস পালন করেন। সন্ধ্যায় সাগরপাড়ে পণ্ডিতদের মন্ত্রপাঠের সহিত পুণ্যার্থীদের দ্বারা দেশী ঘি দিয়ে একটি প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয় ও গঙ্গাসাগরসংগমে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।[১৯] গঙ্গা স্নানের এই শুভ দিনে, ভক্তরা দেবী গঙ্গার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং জ্ঞাতসারে বা অজান্তে তাদের অপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

বৈতরণী পার[সম্পাদনা]

সাগর তটে মোক্ষ লাভের আশায় বহু পুণ্যার্থী পুজোআর্চা করেন। গরুড় পুরাণের ৪৭তম অধ্যায়ে বৈতরণী নদী ও অসহায় আত্মার গরুর লেজ ধরে এই নদী পারাপারের উল্লেখ রয়েছে। গরুড় পুরাণ অনুসারে, বৈতরণী নদী হল জীবজগৎ ও মরজগতের মধ্যবর্তী সম্পর্কস্বরূপ। সেইকারণে মকর সংক্রান্তির দিন, অসংখ্য মানুষ সাগর তটে ভিড় করেন গরুর লেজ ধরে "বৈতরণী পার" আচার পালন করবার জন্য।[১৯] প্রথা অনুসারে পুণ্যার্থীরা পুণ্য অর্জনের আশায় গরুর লেজ ধরে মন্ত্র উচ্চারণ করেন। তাঁদের বিশ্বাস, এতে ভবনদী অতিক্রম করে স্বর্গে যাওয়ার পথ সহজ হয়। প্রাচীন প্রথা অনুসারে অনেক পুণ্যার্থী গো-দান করেন। [২০]

সাধুসন্তরের উপস্থিতি[সম্পাদনা]

হিমালয়ে বসবাসকারী সাধুসন্তরা মেলা উপস্থিত হন। তাঁরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে কেবল ছাইভস্ম গায়ে মেখে অনাবৃত অবস্থায় থাকার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Centre doesn't spend a single penny on Gangasagar Mela, claims Mamata Banerjee"www.hindustantimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২৩ 
  2. "Ganga Sagar Mela"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০২২ 
  3. "রাত পোহালেই কুম্ভ মেলা, সাধু, পুণ্যার্থীদের ভিড়ে জমজমাট গঙ্গাসাগর"। ২৪ ঘণ্টা। ১৩ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  4. "Makar Sankanti festival"Sun’s Transition from Sagittarius to Capricorn: Time to visit Gangasagar। Press Information Bureau, Government of India। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. "Nearly one crore pilgrims take holy dip at Gangasagar on Makar Sankranti: Official"www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। গঙ্গাসাগর। ১৬ জানুয়ারি ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ 
  6. বসু ১৯৫৪, পৃ. ১৯০।
  7. ঘোষ ২০২০, পৃ. ২০৩।
  8. বসু ১৯৫৪, পৃ. ১৮৬–১৮৭।
  9. ঘোষ ২০২০, পৃ. ২০৩–২০৪।
  10. "অতীতে গঙ্গাসাগর মেলা"www.gangasagar.in। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  11. "গঙ্গাসাগরের সাজঘরে"www.anandabazar.com। এবিপি গোষ্ঠী। ১২ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  12. "Gangasagar Mela: Devotees, seers take holy dip in Ganges on Makar Sankranti"www.business-standard.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২৩ 
  13. Ivermee 2021, পৃ. 194।
  14. "sun enters Capricorn zodiac"। ২০২১-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৯ 
  15. "গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি শুরু"www.anandabazar.com। ১ ডিসেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  16. "ইসরো-র 'নেভিক' প্রযুক্তিতে নজরদারি গঙ্গাসাগর মেলায়"www.anandabazar.com। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  17. "গঙ্গাসাগরে অসুস্থ দুই পুণ্যার্থী, এয়ারলিফ্‌ট করে নিয়ে আসা হল কলকাতায়"www.anandabazar.com। ১২ জানুয়ারি ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  18. সংবাদদাতা, আনন্দবাজার অনলাইন। "গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে আগামী ৩ জানুয়ারি সাগরদ্বীপে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  19. "আচার অনুষ্ঠান"www.gangasagar.in। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ 
  20. "বাছুরের লেজ ধরে বৈতরণী পার, গঙ্গাসাগরে আজও অটুট সনাতন রীতি"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • বসু, রাজশেখর (১৯৫৪)। মহাভারত। কলকাতা: এম সি আর সরকার অ্যান্ড সন্স। আইএসবিএন 81-7157-006-2। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ 
  • ঘোষ, বিনয় (জানুয়ারি ২০২০)। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। তৃতীয়। কলকাতা: দীপ প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-93-89584-39-4 
  • Ivermee, Robert (২০২১)। Hooghly: The Global History of a River (প্রথম সংস্করণ)। নয়ডা, উত্তরপ্রদেশ, ভারত: হার্পারকলিন্স। আইএসবিএন 978-93-5422-314-3 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]