সৌদি আরবের ভূগোল
মহাদেশ | এশিয়া |
---|---|
অঞ্চল | আরব |
স্থানাঙ্ক | ২৫°০০′ উত্তর ৪৫°০০′ পূর্ব / ২৫.০০০° উত্তর ৪৫.০০০° পূর্ব |
আয়তন | ১২তম |
• মোট | ২১,৪৯,৬৯০ কিমি২ (৮,৩০,০০০ মা২) |
• স্থলভাগ | ১০০% |
• জলভাগ | ০% |
উপকূলরেখা | ২,৬৪০ কিমি (১,৬৪০ মা) |
সীমানা | সর্বমোট: ৪,৪১৫ কিমি (২,৭৪৩ মা) |
সর্বোচ্চ বিন্দু | জাবাল সাওদা, ৩,০০০ মি (৯,৮৪৩ ফু) ; জাবাল ফারওয়া, ৩,০০০ মি (৯,৮৪৩ ফু) |
সর্বনিম্ন বিন্দু | পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর ০ মি (০ ফু) |
দীর্ঘতম নদী | ওয়াদি আল-রুম্মাহ ৬০০ কিমি (৩৭৩ মা) |
বৃহত্তম হ্রদ | আল আসফার হ্রদ ২০,০০০ হেক্টর (৪৯,৪২১ একর) |
জলবায়ু | উষ্ণ মরুভূমি জলবায়ু, শুষ্ক |
ভূখণ্ড | অধিকাংশ মরুভূমি আচ্ছাদিত, কিছু পার্বত্য অঞ্চল এবং সমভূমি |
প্রাকৃতিক সম্পদ | পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, মাছ |
প্রাকৃতিক বিপত্তিসমূহ | কুয়াশা, ধূলিঝড়, বালিঝড় |
পরিবেশগত সমস্যা | মরুকরণ; ভূগর্ভস্থ জল হ্রাস; বহুবর্ষজীবী নদী বা স্থায়ী জলাশয়ের অভাব; ছড়ানো তেল থেকে উপকূলীয় দূষণ |
এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল | ২,২৮,৬৩৩ কিমি২ (৮৮,২৭৬ মা২) |
সৌদি আরবীয় রাজতন্ত্র হচ্ছে আরবের বৃহত্তম দেশ যা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায়, আরব উপদ্বীপের পাশে, পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের সীমানা ঘেঁষে, ইয়েমেনের উত্তর দিকে অবস্থিত। পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের উপর দেশটির বিস্তৃত উপরেখাগুলি পারস্য উপসাগর ও সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে পরিবহনে (বিশেষভাবে অপরিশোধিত তেল) বিরাট সুবিধা দেয়। দেশটির মধ্যে আরব উপদ্বীপের ৮০% ভূখণ্ড রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেনীয় প্রজাতন্ত্রের (সাবেক দুই পৃথক রাষ্ট্র: ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র অথবা উত্তর ইয়েমেন; এবং গণপ্রজাতন্ত্রী ইয়েমেন বা দক্ষিণ ইয়েমেন) সাথে দেশটির সীমান্তের বেশিরভাগই অনির্দিষ্ট। তাই দেশটির সঠিক আকার অজানা রয়ে গেছে। সৌদি সরকারের অনুমান অনুযায়ী এটি হচ্ছে ২,২১৭,৯৪৯ বর্গকিলোমিটার। অন্যান্য নামকরা অনুমানগুলি ২,১৪৯,৬৯০ ও ২,২৪০,০০০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মোট অঞ্চলের ১% এরও কম চাষাবাদযোগ্য। ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে, উত্তর ও পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চ, ঘনবসতিপূর্ণ অভ্যন্তরীণ মরুদ্যান, এবং বিশাল ও প্রায় শূন্য মরুভূমিগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার ব্যাপক তফাৎ ছিল।
বাহ্যিক সীমানা
[সম্পাদনা]সৌদি আরব সাতটি দেশ ও তিনটি জলাধার দ্বারা সীমাবদ্ধ। পশ্চিমে আকাবা উপসাগর ও লোহিত সাগর প্রায় ১,৮০০ কিমি (১,১০০ মা) দৈর্ঘ্যের একটি উপকূলীয় সীমানা গঠন করে যা ইয়েমেনের দক্ষিণ অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং নাজরানের আশেপাশে প্রায় ৩২০ কিমি (২০০ মা) পর্যন্ত একটি পর্বতমালা অনুসরণ করে। ইয়েমেনের সাথে সীমান্তের এই অংশটি ১৯৩৪ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং কোন প্রতিবেশী দেশের সাথে স্বল্প কয়েকটি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত সীমানার একটি। নাজরান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলমান সৌদি সীমান্ত অবশ্য এখনও নির্ধারিত। ১৯৯০ সালের দশকের গোড়ার দিকে অনির্দিষ্টকৃত সীমানা একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছিল, যখন অঞ্চলটিতে তেল আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং সৌদি আরব বিদেশী সংস্থাগুলির ইয়েমেনের পক্ষে বাণিজ্যিক অনুসন্ধানের প্রতি আপত্তি জানিয়েছিল। ১৯৯২ এর গ্রীষ্মে, সৌদি আরব এবং ইয়েমেনের প্রতিনিধিরা জেনেভাতে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করতে বৈঠক করেন।
সৌদি আরব উত্তর দিকে জর্ডান, ইরাক ও কুয়েতের সীমানা বেষ্টিত। উত্তরের সীমান্ত পশ্চিমে আকাবা উপসাগর থেকে পারস্য উপসাগরে রাস আল-খাফজি পর্যন্ত প্রায় ১,৪০০ কিমি (৮৭০ মা) বিস্তৃত। ১৯৬৫ সালে, সৌদি আরব ও জর্ডান অঞ্চল বিনিময়সহ সীমান্ত নির্ধারণে সম্মত হয়। জর্ডান আকাবা উপসাগরে ১৯ কিমি (১২ মা) ভূমি ও অভ্যন্তরে ৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল পায়, এবং ৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার জর্ডান-শাসিত স্থলবেষ্টিত অঞ্চল জর্ডানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।[১]
১৯২২ সালে ইবন সাউদ ও ইরাকি স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিটিশ কর্মকর্তারা মোহাম্মারার চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ইরাক ও ভবিষ্যৎ সৌদি আরবের সীমান্ত প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে সেই বছরে দুই পক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত উকাইর খসড়াচুক্তি কুয়েতের পশ্চিম প্রান্ত সংলগ্ন হীরক-আকৃতির প্রায় ৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার একটি সৌদি আরব-ইরাক নিরপেক্ষ অঞ্চল তৈরিতে সম্মত হয়, যেখানে ইরাক বা সৌদি আরব কেউই স্থায়ী বাসস্থান বা স্থাপনা তৈরি করবে না। চুক্তিটি উভয় দেশের বেদুইনের জন্য এলাকাটিতে পানির অধিকার রক্ষার্থে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৮৩ সালের মে মাসে, ইরাক ও সৌদি আরব অঞ্চলটির প্রশাসন সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। ৪৩ বছর পরে, সৌদি আরব ও ইরাক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা দুই দেশের মধ্যেকার সীমানা নির্ধারণ করে এবং তাদের মধ্যে নিরপেক্ষ অঞ্চলটি বণ্টনের জন্য শর্ত আরোপ করে। চুক্তিটি কার্যকরভাবে এই নিরপেক্ষ অঞ্চলের অবসান করেছে। ইবন সাউদের নাজদের অঞ্চলগুলো ও পূর্ব প্রদেশ এবং ব্রিটিশ সংরক্ষণতন্ত্রী কুয়েতের মধ্যেকার সীমানা সর্বপ্রথম ১৯২২ সালে আল উকাইর সম্মেলন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অঞ্চল সম্পর্কিত বিবাদ এড়ানোর প্রচেষ্টায় কুয়েতের সরাসরি দক্ষিণে আরেকটি হীরক-আকৃতির ৫,৭৯০ বর্গ কিলোমিটার সৌদি-কুয়েত নিরপেক্ষ অঞ্চল স্থাপিত হয়। ১৯৩৮ সালে কুয়েতের দক্ষিণ বুরকান ক্ষেত্রে তেল আবিষ্কৃত হয় এবং উভয় দেশই বিভক্ত অঞ্চলটিতে অনুসন্ধান কার্য চালানোর জন্যে বিদেশী তেল কোম্পানির সাথে চুক্তি করে। বহু বছর ধরে আলোচনার পরে, সৌদি আরব এবং কুয়েত ১৯৬৫ সালে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল যা অঞ্চলটিকে ভৌগলিকভাবে বিভক্ত করে এবং প্রতিটি দেশ তার অর্ধেক অঞ্চলকে প্রশাসিত করে। চুক্তিটি নিশ্চিত করে যে, ১৯৬৬ সালে দুটো দেশই তার অর্ধেক অঞ্চল দখলের পরে সম্পূর্ণ অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সম্পদে উভয় দেশের অধিকারকে সম্মান করা অব্যাহত থাকবে।
সৌদি আরবের পূর্ব দিকের সীমান্ত পারস্য উপসাগরকে রাস আল খাফজি থেকে কাতার উপদ্বীপ পর্যন্ত পারস্য উপসাগরকে অনুসরণ করে। ১৯৬৫ সালে সৌদি আরবের সাথে কাতারের সীমান্ত নির্ধারিত হয়। ওমান রাষ্ট্রের সাথে আরব্য উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব বন্দরে সৌদি সীমান্ত আর-রুব' আল-খালির মধ্য দিয়ে যায়। ১৯৯০ সালে সৌদি আরব ও ওমানের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুইদেশের চারণ অধিকার ও পানি অধিকারের বিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওমান, আবু ধাবি (সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আমিরাত) ও সৌদি আরবের সীমান্তের সংযোগস্থলে অবস্থিত 'আল বুরাইমি মরুদ্যানের মধ্য দিয়ে যে সীমান্তটি রয়েছে সেটি ১৯২৭ সালে জেদ্দা চুক্তির পর থেকে তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক বিবাদের জন্ম দেয়। সৌদি আরবের সাথে ১৯৭৫ সালের একটি চুক্তিতে আবু ধাবি 'আল বুরাইমি উদ্যানের ছয়টি গ্রামের উপর সার্বভৌমত্ব এবং সমৃদ্ধ যারারাহ তেল ক্ষেত্রটির ভাগাভাগি মেনে নেয়। বিনিময়ে সৌদি আরব আবুধাবি হয়ে পারস্য উপসাগরে একটি নির্গমনপথ পায়।
সৌদি আরবের সামুদ্রিক দাবির মধ্যে এর উপকূল বরাবর একটি ১২ নটিক্যাল মাইল (২২ কিমি) আঞ্চলিক সীমা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১২ নটিক্যাল মাইল (২২ কিমি) সীমা ছাড়াও দেশটি অনেক ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জের পাশাপাশি কিছু সমুদ্র সৈকত এবং অন্তর্ভূমিরও দাবি করে।
স্থল সীমান্ত:
সর্বমোট:
৪,৪১৫ কিমি
সীমান্তবর্তী দেশ:
ইরাক ৮১৪ কিমি, জর্ডান ৭২৮ কিমি, কুয়েত ২২২ কিমি, ওমান ৬৭৬ কিমি, কাতার ৬০ কিমি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪৫৭ কিমি, ইয়েমেন ১,৪৫৮ কিমি
উপকূলরেখা: ২,৬৪০ কিমি
সামুদ্রিক দাবি:
সীমান্তবর্তী অঞ্চল:
১৮ নটিক্যাল মাইল (৩৩.৩ কিমি; ২০.৭ মা)
মহীসোপান:
অনির্দিষ্ট
রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র:
১২ নটিক্যাল মাইল (২২.২ কিমি; ১৩.৮ মা)
স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল:
২,২৮,৬৩৩ কিমি২ (৮৮,২৭৬ মা২)
পানি সম্পদ
[সম্পাদনা]১৯৮০ এর দশকের আগ পর্যন্ত, সৌদি আরবের লায়লা আফলাজে হ্রদ ও 'আল-খারজে গভীর জলাশয় ছিল, যাতে প্রাগৈতিহাসিক সময়ে গঠিত এবং অনবায়নযোগ্য বিশাল ভূগর্ভস্থ জলজগুলো দ্বারা পানি সরবরাহ করে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "International Boundary Study, No. 60 – December 30, 1965, Jordan – Saudi Arabia Boundary" (পিডিএফ)। US Department of State। ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৯।