সেন্ট লরেন্স উপসাগর

স্থানাঙ্ক: ৪৮°৩৬′ উত্তর ৬১°২৪′ পশ্চিম / ৪৮.৬০০° উত্তর ৬১.৪০০° পশ্চিম / 48.600; -61.400
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কানাডার মানচিত্রে সেন্ট লরেন্স উপসাগর।

সেন্ট লরেন্স উপসাগর (ফরাসি: গোল্ফ ডু সেন্ট-লরেন্ট) হচ্ছে সেন্ট লরেন্স নদীর মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরে উত্তর আমেরিকার বৃহৎ হ্রদসমূহের নির্গমনপথ। উপসাগরটি একটি অর্ধ-বদ্ধ সাগর, এর আয়তন প্রায় ২২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার (৮৭,০০০ বর্গ মাইল) এবং প্রায় ৩৪,৫০০ ঘন কিলোমিটার (৮,৩০০ ঘন মাইল) পানি ধারণ করে, উপসাগরটির গড় গভীরতা ১৫২ মিটার (৪৯৯ ফুট)।[১]

ভূগোল[সম্পাদনা]

প্লেজেন্ট উপসাগরে তটরেখা, এনএস

সেন্ট লরেন্সে উপসাগরের উত্তরে ল্যাব্রাডর উপদ্বীপ এবং কুইবেক, পূর্বে সেন্ট-পিয়েরি এবং নিউফাউন্ডল্যান্ড, দক্ষিণে নোভা স্কশিয়া উপদ্বীপ এবং কেপ ব্রেটন দ্বীপ, এবং পশ্চিমে গ্যাসপে উপদ্বীপ, নিউ ব্রুনসুইক এবং কুইবেক অবস্থিত। সেন্ট লরেন্সের উপসাগরের উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিকোস্টি দ্বীপ, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ, ইলেস-দে-লা-মেডেলিন, কেপ ব্রেটন দ্বীপ, সেন্ট পিয়েরি দ্বীপ এবং মিকুয়েলন-ল্যাংলেড।

কানাডার দশটি প্রদেশের অর্ধেক এই উপসাগর সংলগ্ন: নিউ ব্রান্সউইক, নোভা স্কশিয়া, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ, নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর এবং কুইবেক।

সেন্ট লরেন্স নদী ছাড়াও, সেন্ট লরেন্স উপসাগরে পতিত হওয়া উল্লেখযোগ্য নদীগুলির মধ্যে রয়েছে মিরামিচি নদী, নাতাশকান নদী, রোমাইন নদী, রেস্টিগচ নদী, মার্গারি নদী এবং হাম্বার নদী।

উপসাগরীয় শাখাগুলির মধ্যে রয়েছে চ্যালেউর উপসাগর, ফরচুন উপসাগর, মিরামিচি উপসাগর, সেন্ট জর্জ উপসাগর, সেন্ট জর্জ উপসাগর, দ্বীপ উপসাগর এবং উত্তরবারল্যান্ড প্রণালী।

নির্গমনপথ[সম্পাদনা]

নিম্নলিখিত নির্গমনপথ দ্বারা উপসাগরটি আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবাহিত হয়:

  • ল্যাব্রাডর এবং নিউফাউন্ডল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত বেল আইল প্রণালী: মধ্যবর্তী দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মাইল) ও ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) প্রশস্ত এবং এর গভীরতম অংশ ৬০ মিটার (২০০ ফুট) গভীর।
  • নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং সেন্ট-পিয়েরি ও কেপ ব্রেটন দ্বীপের মধ্যবর্তী ক্যাবোট প্রণালী: ১০৪ কিমি (৬৫ মাইল) প্রশস্ত এবং গভীরতম স্থান ৪৮০ মিটার (১,৫৭০ ফুট) গভীর।
  • কেপ ব্রেটন দ্বীপ এবং নোভা স্কশিয়া উপদ্বীপের মধ্যবর্তী ক্যানসো প্রণালী: ১.০ কিমি (০.৬ মাইল) প্রশস্ত এবং এর গভীরতম স্থান ৬০ মিটার (২০০ ফুট) গভীর। ১৯৫৫ সালে প্রণালীর আড়াআড়ি ক্যানসো বাঁধ নির্মাণের কারণে, এটি দিয়ে আর সেন্ট লরেন্স উপসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে পানি চলাচল করতে পারে না।

বিস্তার[সম্পাদনা]

সকল স্থানাঙ্কের মানচিত্র: ওপেনস্ট্রীটম্যাপ 
এই হিসেবে স্থানাঙ্ক ডাউনলোড করুন: KML · GPX

উৎসের মধ্যে সেন্ট লরেন্স উপসাগরের সীমা পরিবর্তিত হয়।

আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ বিষয়ক সংস্থা সেন্ট লরেন্স উপসাগরের সীমা নিম্নোক্তভাবে নির্ধারণ করেছে:[২]

  উত্তর-পূর্বে
বাউল্ড অন্তরীপ (কিরপন দ্বীপের উত্তর বিন্দু, ৫১°৪০′ উত্তর ৫৫°২৫′ পশ্চিম / ৫১.৬৬৭° উত্তর ৫৫.৪১৭° পশ্চিম / 51.667; -55.417) থেকে বেল আইলের পূর্ব চরম বিন্দু হয়ে এবং উত্তর-পূর্বে শৈলস্তবক (৫২°০২′ উত্তর ৫৫°১৫′ পশ্চিম / ৫২.০৩৩° উত্তর ৫৫.২৫০° পশ্চিম / 52.033; -55.250) এর দিকে চলমান একটি রেখা। এর পরে শৈলস্তবক থেকে একটি রেখা ল্যাব্রাডরের সেন্ট চার্লস অন্তরীপের পূর্ব দিকের চরম সীমা (52°13'N) পর্যন্ত যোগ করেছে।

দক্ষিণপূর্বে
ক্যানসো অন্তরীপ (৪৫°২০′ উত্তর ৬১°০′ পশ্চিম / ৪৫.৩৩৩° উত্তর ৬১.০০০° পশ্চিম / 45.333; -61.000) থেকে ব্রেটন অন্তরীপের রেড বিন্দু (৪৫°৩৫′ উত্তর ৬০°৪৫′ পশ্চিম / ৪৫.৫৮৩° উত্তর ৬০.৭৫০° পশ্চিম / 45.583; -60.750) পর্যন্ত, এই দ্বীপ হয়ে ব্রেটন অন্তরীপ [৪৫°৫৭′ উত্তর ৫৯°৪৭′ পশ্চিম / ৪৫.৯৫০° উত্তর ৫৯.৭৮৩° পশ্চিম / 45.950; -59.783] পর্যন্ত এবং সেন্ট পিয়ের দ্বীপের পয়েন্টে ব্লাঞ্চে (৪৬°৪৫′ উত্তর ৫৬°১১′ পশ্চিম / ৪৬.৭৫০° উত্তর ৫৬.১৮৩° পশ্চিম / 46.750; -56.183) এবং এরপর মরগান দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম বিন্দু (৪৬°৫১′ উত্তর ৫৫°৪৯′ পশ্চিম / ৪৬.৮৫০° উত্তর ৫৫.৮১৭° পশ্চিম / 46.850; -55.817) পর্যন্ত একটি রেখা।

পশ্চিমে
পয়েন্টে-জাউন (৪৯°০৪′ উত্তর ৬৪°৩০′ পশ্চিম / ৪৯.০৬° উত্তর ৬৪.৫° পশ্চিম / 49.06; -64.5) থেকে ম্যাগপি (৫০°১৯′ উত্তর ৬৪°৩০′ পশ্চিম / ৫০.৩১° উত্তর ৬৪.৫° পশ্চিম / 50.31; -64.5) পর্যন্ত ৬৪°৩০'পশ্চিম এর মধ্যরেখা, তবে সম্পূর্ণ আন্টিকোস্তি দ্বীপটি উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

কানাডার মৎস আহরণ এবং মহাসাগরীয় পশ্চিম সীমানাটি পয়েন্ট-দেস-মন্টসে পর্যন্ত, ৬৪ °৩০'পশ্চিম মধ্যরেখা থেকে প্রায় ১৩৮ কিমি (৮৫.৮ মাইল) পশ্চিম পর্যন্ত।[৩]

সংক্ষিত এলাকা[সম্পাদনা]

কেপ ব্রেটন দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকের বাইরে অবস্থিত নোভা স্কশিয়ার সেন্ট পল দ্বীপ অনেক জাহাজ-ডুবির কারণে "উপসাগরের কবরস্থান" হিসাবে পরিচিত। এই দ্বীপে প্রবেশ কানাডার কোস্ট গার্ড নিয়ন্ত্রণ করে।

গ্যাসপে উপদ্বীপের পূর্ব দিকের বোনাভেঞ্চার দ্বীপ, ম্যাগদালেন দ্বীপপুঞ্জের[৪] উত্তর-পূর্বে রচেস্টার-অক্স-ওসেঅক্স (বার্ড রক) এবং ইলে ব্রিয়ন হচ্ছে কানাডার ওয়াইল্ড লাইফ সার্ভিস পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য।

কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের গ্যাস্পে উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে সেন্ট লরেন্স উপসাগরের পাশে ফরিলন জাতীয় উদ্যানে জাতীয় উদ্যান, দ্বীপের উত্তর তীরে প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ জাতীয় উদ্যান, নিউ ব্রান্সউইকের উত্তর-পূর্ব উপকূলে কচিবিউগাক জাতীয় উদ্যান, কেপ ব্রেটেন দ্বীপের উত্তর অংশে কেপ ব্রেটন হাইল্যান্ডস জাতীয় উদ্যান, নিউফাউন্ডল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে গ্রস মরনে জাতীয় উদ্যান এবং কুইবেকের কোতে-নর্দ এর মিনগান দ্বীপপুঞ্জের সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান রয়েছে।

সেন্ট লরেন্স উপসাগরের সীমানায় পাঁচটি প্রদেশেরও বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক উদ্যান রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি উপকূলীয় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করে।

সমুদ্র তলদেশের বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

লরেন্তিয়ান প্রণালী উপসাগরের তলের একটি বৈশিষ্ট্য যা পূর্ব বরফ যুগে গঠিত হয়েছিল, এই সময়ে সমুদ্র স্তর নিমগ্ন হলে সেন্ট লরেন্স নদীর দ্বারা মহীসোপান ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়। লরেন্তিয়ান প্রণালীটি প্রায় ২৯০ মিটার (৯৫০ ফুট) গভীর এবং মহীসোপান থেকে সেন্ট লরেন্স নদীর মুখ পর্যন্ত প্রায় ১,২৫০ কিমি (৭৮০ মাইল) দীর্ঘ। ২ থেকে ৬.৫° সেন্টিগ্রেড (৩৬ থেকে ৪৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর মধ্যে তাপমাত্রা সহ গভীর পানি মহাদেশীয় ঢালে উপসাগরে প্রবেশ করে প্রণালীটি ধীরে ধীরে চলাচলের দ্বারা প্রবাহিত হয়। [৫] বিংশ শতাব্দীতে প্রণালীর শেষ প্রান্তের (যেমন সেন্ট লরেন্স মোহনায়) নীচের পানির অক্সিজেন কমে যায় (হাইপোক্সিক)।[৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর বাস্ক বসতি এবং স্থানসমূহ

বিভিন্ন প্রথম জাতি যারা সহস্রাব্দ ধরে এর তীরে বাস করেছে তাদের জন্য উপসাগরটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক মৎস আহরণ কেন্দ্র এবং পরিবহনের জন্য এর পানি পথ ব্যবহার করেছে।

১৫৩৪ সালে প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে ফরাসি অনুসন্ধানকারী জাক কার্তিয়ে এই উপসাগরে ভ্রমণ করে বলে নথি পাওয়া যায়। কার্তিয়ে সেন্ট লরেন্স নদীর তীরের নাম রেখেছিলেন "কানাডা দেশ", এই দেশীয় শব্দের অর্থ "গ্রাম" বা "বসতি" আর এই নামেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির নামকরণ হয়েছে।[৭]

প্রায় একই সময়ে বাস্করা বর্তমান কানাডার আটলান্টিক এবং কুইবেক প্রদেশের প্রথম জাতির লোকদের সাথে তিমি শিকার এবং ব্যবসায়ের জন্য ঘন ঘন এই অঞ্চলে আসতো। তারা এলাকার অনেক জায়গায়- ফেরিঘাট, চুল্লি, কবরস্থান ইত্যাদিতে তাদের উপস্থিতির স্বত্ব ছেড়ে দিয়েছিল। দেখুন বাস্ক তিমিশিকারের ইতিহাস, নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর অনুচ্ছেদ

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Atlantic region, Government of Canada, page 86" (পিডিএফ)publications.gc.ca। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৮ 
  2. "Limits of Oceans and Seas, 3rd edition" (পিডিএফ)। International Hydrographic Organization। ১৯৫৩। ৮ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  3. "Fisheries and Oceans Canada - Quebec Region - Estuary and Gulf of St. Lawrence"www.qc.dfo-mpo.gc.ca। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৮ 
  4. "Parks Reserves and Natural Sites"। Tourisme Îles de la Madeleine। 
  5. Galbraith, P.S., Pettipas, R.G., Chassé, J., Gilbert, D., Larouche, P., Pettigrew, B., Gosselin, A., Devine, L. and Lafleur, C. 2009. Physical Oceanographic Conditions in the Gulf of St. Lawrence in 2008. DFO Can. Sci. Advis. Sec. Res. Doc. 2009/014. iv + 69 p.
  6. Gilbert, D., B. Sundby, C. Gobeil, A. Mucci and G.-H. Tremblay. 2005. A seventy-two-year record of diminishing deep-water oxygen in the St. Lawrence estuary: The northwest Atlantic connection. Limnol. Oceanogr., 50(5): 1654–1666.
  7. Document "Discovers Gulf of Saint Lawrence" http://www.csmonitor.com/The-Culture/Family/2013/0812/1912-eighth-grade-exam-Could-you-make-it-to-high-school-in-1912/Discoverers-Gulf-of-Saint-Lawrence/ Document "Discovers Gulf of Saint Lawrence" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Marginal seas of the Atlantic Ocean