সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ২৬ নভেম্বর ১৮৯০ শিবপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, অবিভক্ত ভারতবর্ষ |
মৃত্যু | ২৯ মে ১৯৭৭ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৮৬)
পেশা | ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
ধরন | ভাষাতত্ত্ব, সাহিত্য ও শিক্ষা |
বিষয় | ভাষা |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | ইউরোপ ভ্রমণ, বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, রবীন্দ্র সঙ্গমে, ভাষা প্রকাশ ও বাঙ্গালা ব্যাকরণ |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সাহিত্য বাচস্পতি, পদ্মবিভূষণ |
স্বাক্ষর |
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (২৬ নভেম্বর ১৮৯০ — ২৯ মে ১৯৭৭) ছিলেন একজন বাঙালি ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সুনীতিকুমার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হরিদাস চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ইংরেজদের সদাগরি অফিসের কেরানি। তিনি মতিলাল শীল ফ্রি স্কুল থেকে ১৯০৭ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯০৯ সালে ৩য় স্থান অধিকার করে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। অতঃপর প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯১১ সালে ইংরেজিতে সম্মানসহ বি.এ শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ শ্রেণিতে ১ম স্থান অর্জন করেন।
১৯১৮ সালে সংস্কৃতের শেষ পরীক্ষায় পাস করেন এবং প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি এবং জুবিলি গবেষণা পুরস্কার অর্জন করেন।[১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]কৃতিত্বের সাথে এম.এ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯১৪ - ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে তিনি ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লন্ডনে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধ্বনিবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তার অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিল 'ইন্দো-আরিয়ান ফিললজি'। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব ও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব ছাড়াও প্রাকৃত ভাষা, ফার্সি ভাষা, প্রাচীন আইরিশ ভাষা, পুরনো ইংরেজি ও গোথিক ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর লন্ডন থেকে তিনি প্যারিসে গমন করেন। সেখানে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লাভ ও ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাতত্ত্ব, প্রাচীন সগডিয়ান ও প্রাচীন খোতানি ভাষা, গ্রিক ও লাতিন ভাষার ইতিহাস এবং অস্ট্রো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়াটিক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯২২ সালে দেশে ফিরে আসার পর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের 'খয়রা' অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করার পর ১৯৫২ সালে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে পুনঃনিযুক্ত হন।
রচনাসমগ্র
[সম্পাদনা]অধ্যাপক তারাপুরওয়ালা'র কাছে আবেস্তা অধ্যয়ন করেন। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে ৩ খণ্ডের দি অরিজিন এন্ড ডেভেলপম্যান্ট অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ গ্রন্থখানি রচনা করে অসাধারণ বিদ্যাবত্তার পরিচয় প্রদান করেন।
অন্যান্য রচনাবলি হলো: বেঙ্গলি ফোনেটিক রিডার, কিরাত জনকৃতি, ভারত-সংস্কৃতি(১৯৪৪), বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা(১৯২৯), পশ্চিমের যাত্রী(১৯৩৮), ইউরোপ ভ্রমণ, জাতি সংস্কৃতি সাহিত্য(১৯৩৮), ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা(১৯৪৪), সংস্কৃতি কী, দ্বীপময় ভারত(১৯৬৫), রবীন্দ্র সঙ্গমে(১৯৬৫), শ্যামদেশ(১৯৬৫) ইত্যাদি।
রবীন্দ্র সান্নিধ্য
[সম্পাদনা]১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারজন ভ্রমণসঙ্গীর একজন হয়ে সুনীতিকুমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে যান। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর। "যাত্রী" গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ এই ভ্রমণের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন।[২] এসব দেশে তিনি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও শিল্প সম্বন্ধে বক্তৃতা প্রদান করেন।
খ্যাতি
[সম্পাদনা]- ১৯৩৫ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন।
- ১৯৪৮ সালে হিন্দি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য বাচস্পতি উপাধি লাভ করেন।
- ১৯৫০ সালে লন্ডনের সোসাইটি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সদস্য পদ লাভ করেন।
- ১৯৫২-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের অধ্যক্ষ পদে বহাল ছিলেন।
- ১৯৫৫ সালে অসলোর নরওয়েজিয়ান অ্যাকাডেমির সদস্য পদ লাভ করেন।
- ১৯৬৩ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।
- ১৯৬৬ সালে ভারতের জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা লাভ করেন।
- ১৯৬৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি সভাপতি নির্বাচিত হন।
এছাড়াও, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাচার্য উপাধি গ্রহণ করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- বাঙালি শিক্ষাবিদ
- ১৮৯০-এ জন্ম
- ১৯৭৭-এ মৃত্যু
- ভারতীয় ভাষাবিজ্ঞানী
- ভাষাবিজ্ঞানী
- স্কটিশ চার্চ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- হাওড়া জেলার ব্যক্তি
- বাঙালি লেখক
- পশ্চিমবঙ্গের পণ্ডিত
- এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি
- সাহিত্য ও শিক্ষায় পদ্মবিভূষণ প্রাপক
- লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
- বাংলার ভাষাবিদ
- সাহিত্য ও শিক্ষায় পদ্মভূষণ প্রাপক
- পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞানী
- প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- কলকাতার পণ্ডিত
- হাওড়ার ব্যক্তি