মাদার টেরিজা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
Faisal Hasan (আলোচনা | অবদান) অ রেফারেন্স+ |
||
৭৫ নং লাইন: | ৭৫ নং লাইন: | ||
মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০; এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০ট৫ই মিশনের মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব মিশনের মধ্যে ছিল [[এইড্স]], [[কুষ্ঠরোগ]] ও [[যক্ষ্মা]] রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়। |
মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০; এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০ট৫ই মিশনের মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব মিশনের মধ্যে ছিল [[এইড্স]], [[কুষ্ঠরোগ]] ও [[যক্ষ্মা]] রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়। |
||
==তথ্যসূত্র== |
|||
<references/> |
|||
== বহিসংযোগ == |
== বহিসংযোগ == |
||
৯৯ নং লাইন: | ১০২ নং লাইন: | ||
{{বাঙালি ভারতরত্ন প্রাপক}} |
{{বাঙালি ভারতরত্ন প্রাপক}} |
||
[[বিষয়শ্রেণী:১৯১০-এ জন্ম]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৯৭-এ মৃত্যু]] |
|||
[[বিষয়শ্রেণী:রোমান ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী]] |
[[বিষয়শ্রেণী:রোমান ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতরত্ন প্রাপ্ত]] |
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতরত্ন প্রাপ্ত]] |
০৯:২৭, ১৮ জুলাই ২০১০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
মাদার টেরিজা কলিকাতার স্বর্গীয় টেরিজা আগ্নেস্ গঞ্জা বয়াজু | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারত (১৯৪৭-১৯৯৭) |
পেশা | ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, সমাজসেবী,[১] Christian missionary.[২] |
পরিচিতির কারণ | মিশনারিজ অফ চ্যারিটি |
উত্তরসূরী | সিস্টার নির্মলা |
পুরস্কার | নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৭৯) ভারতরত্ন (১৯৮০) প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (১৯৮৫) বালজান পুরস্কার (১৯৭৮) |
মাদার তেরেসা (আলবেনীয় ভাষায়: Nënë Tereza ন্যন্য টেরেজ়া, Agnes Gonxhe Bojaxhiu, মেসিডোনীয় ভাষায়: Агнес Гонџа Бојаџиу আগ্নেস্ গঞ্জা বয়াজু) (২৬শে আগস্ট, ১৯১০ - ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭) তৎকালীন উসমানীয় সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় রোমান ক্যাথলিক মিশনারি কর্মী। তিনি সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৯৫০ সালে ভারতের কলকাতায় মিশনারিস অফ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তাঁর এই মানবসেবার সূচনা ঘটে। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, এতিম ও মুমূর্ষু মানুষের সেবা করেছেন। সেই সাথে মিশনারির বিকাশ ও উন্নয়নে অক্লান্ত পরীশ্রম করেছেন। প্রথমে ভারত ও পরে সমগ্র বিশ্বে তাঁর এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭০-এর দশকে মানবতাবাদী কর্মী এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সুহৃদ হিসেবে বিশ্বব্যাপী তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। ম্যালকম মাগারিজের সামথিং বিউটিফুল ফর গড নামক প্রামাণ্য চিত্র ও বইয়ের মাধ্যশেই তাঁর নাম সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল। মানবতাবাদী কার্যক্রমের জন্য তেরেসা ১৯৭৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন লাভ করেন। মিশনারিজ অভ চ্যারিটি বিস্তৃত হতে থাকে। তাঁর মৃত্যুর সময় ১২৩টি দেশে মোট ৬১০টি মিশনের মাধ্যমে এই মিশনারি তাঁর কাজ করে যাচ্ছিল। মিশনারির পাশাপাশি তারা এইড্স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের জন্য আবাসন, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও অসংখ্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল।
মৃত্যুর পর পোপ জন পল ২ মাদার তেরেসাকে স্বর্গীয় বলে আখ্যায়িত করেন এবং তাঁর নাম দেন কলকাতার স্বর্গীয় তেরেসা (ইংরেজি: Blessed Teresa of Calcutta ব্লেসেড্ তেরেসা অভ্ ক্যাল্কাটা)।
জীবনী
প্রাথমিক জীবন
মাদার তেরেসার আসল নাম আগ্নেস গঞ্জা বয়াজু (আ-ধ্ব-ব: 'agnɛs 'gɔndʒa bɔ'jadʒu)। আলবেনীয় ভাষায় আগ্নেস্ গঞ্জা শব্দের অর্থ "গোলাপকুঁড়ি"। তাঁর জন্ম ১৯১০ সালের ২৬শে আগস্ট বর্তমান মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী স্কোপিয়েতে। বাবা নিকোলা বয়াজিউ আলবেনীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। মায়ের নাম দ্রানাফিল বয়াজিউ। বয়াজিউ পরিবারের মূল বাসস্থান ছিল আলবেনিয়ার Shkodër (শ্কড্যর্) নামক স্থানে। আগনেস ছিলেন পরিবেরের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। ১৯১৯ সালে এক রাজনৈতিক সমাবেশে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুখেই তিনি মারা যান। তখন আগনেসের বয়স ছিল আট। বাবা মারা যাওয়ার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে বড় করতে থাকেন। ছোটবেলাতেই রোমান ক্যাথলিক মিশনারি ও সাধু-সন্ন্যাসিদের কাহিনী শুনু তিনি মুগ্ধ হতেন। ১২ বছর বয়সেই বুঝতে পারেন, তাকে ধর্মীয় আদর্শে জীবন পরিচালনা করতে হবে। ১৮ বছর বয়সে ধর্মীয় কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সিস্টার্স অফ লোরেটো-তে মিশনারি হিসেবে যোগ দেন। এর পর আর কোনও দিনই নিজের মা এবং বোনদের সাথে তার দেখা হয় নি।
মিশনারি জীবনের প্রথমেই আগনেস আয়ারল্যান্ডের রাথফার্নহামের "লোরেটো অ্যাবি"-তে যান ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য। কারণ সিস্টার্স অফ লোরেটোর মিশনারিরা ভারতের স্কুলগুলোতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এই ভাষাই ব্যবহার করতো। ১৯২৯ সালে প্রাথমিক অধ্যয়ন শেষে হিমালয় পর্বতমালার পাশে দার্জিলিং শহরে নবিস হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ১৪ই মে মঠবাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই শপথের সময়ই "তেরেসা" নামটি বেছে নেন। উল্লেখ্য রোমান ক্যাথলিক মিশনারির প্যাট্রন সেইন্ট Thérèse de Lisieux এর নামানুসারেই তিনি এই নাম পছন্দ করেছিলেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ই মে তেরেসা চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় কলকাতার পূর্বাঞ্চলের এক লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।
স্কুলে পড়াতে তেরেসার বেশ ভাল লাগত। কিন্তু তার আশপাশের দারিদ্র্য, খাদ্যাভাব আর বিশৃঙ্খলা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তিনি সাধারণ মানুষের দুর্দশা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতেন। ১৯৪৩ সালে বঙ্গ অঞ্চলে গুরুতর দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। কলকাতার অনেক মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৪৬ সালে হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। এ সময় ভীতি ও হতাশা শহরটিকে গ্রাস করে। তেরেসার উপর এই পরিবেশের বিশাল প্রভাব পড়েছিল।
মিশনারিস অফ চ্যারিটি
১৯৪৬ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ধর্মীয় নির্জনবাসের জন্য দার্জিলিং যাওয়ার সময় তার মধ্যে এক গভীর উপলব্ধি আসে। এই অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে "the call within the call" হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ নিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন,
“ |
কনভেন্ট ত্যাগ করে দরিদ্রদের মাঝে বাস করা এবং তাদের সহায়তা করা আমার জন্য আবশ্যক ছিল। এটা ছিল এক সরাসরি আদেশ। এই আদেশ পালনে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ ছিল বিশ্বাস ভেঙে ফেলা |
” |
১৯৪৮ সালে এই মোতাবেক দরিদ্রের মাঝে মিশনারি কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। এ সময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমে মতিঝিলে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকেন। তার এই কার্যক্রম অচিরেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
প্রথম দিকের এই দিনগুলো তার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। এ নিয়ে ডায়রিতে অনেক কিছুই লিখেছেন। সে সময় তার হাতে কোন অর্থ ছিল না। গরীব এবং অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হতো। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই হতাশা, সন্দেহ ও একাকিত্ব বোধ করেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, কনভেন্টের শান্তির জবনে ফিরে গেলেই বোধহয় ভাল হবে। ডায়রিতে লিখেছিলেন:
“ |
Our Lord wants me to be a free nun covered with the poverty of the cross. Today I learned a good lesson. The poverty of the poor must be so hard for them. While looking for a home I walked and walked till my arms and legs ached. I thought how much they must ache in body and soul, looking for a home, food and health. Then the comfort of Loreto [her former order] came to tempt me. 'You have only to say the word and all that will be yours again,' the Tempter kept on saying ... Of free choice, my God, and out of love for you, I desire to remain and do whatever be your Holy will in my regard. I did not let a single tear come. |
” |
১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর তেরেসা "ডায়োসিসান কনগ্রেগেশন" (বিশপের এলাকার মত সমাবেশ) করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি লাভ করেন। এ সমাবেশই পরবর্তীতে মিশনারিস অফ চ্যারিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য তেরেসার নিজের ভাষায় বললেই ভাল শোনাবে:
“ |
Its mission is to care for the hungry, the naked, the homeless, the crippled, the blind, the lepers, all those people who feel unwanted, unloved, uncared for throughout society, people that have become a burden to the society and are shunned by everyone. |
” |
কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,০০০ এরও বেশি নান কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরীশ্রম করে যাচ্ছেন।
১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নির্মল হৃদয়। এই কেন্দ্রে যারা আশ্রয়ের জন্য আসতের তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। মুসলিমদেরকে কুরআন পড়তে দেয়া হয়, হিন্দুদের গঙ্গার জলের সুবিধা দেয়া হয় আর ক্যাথলিকদের প্রদান করা হয় লাস্ট রাইটের সুবিধা। এ বিষয় তেরেসা বলেন, "A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels — loved and wanted." এর কিছুদিনের মধ্যেই তেরেসা হ্যানসেন রোগে (সাধারণ্যে কুষ্ঠরোগ নামে পরিচিত) আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন যার নাম দেয়া হয় শান্তি নগর। এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়।
মিশনারি শিশুদের লালন-পালন করতো। এক সময় শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তেরেসা তাদের জন্য একটি আলাদা হোম তৈরীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই অনুভূতি থেকেই ১৯৫৫ সালে নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক ধরণের স্বর্গ।
অচিরেই মিশনারিস অফ চ্যারিটি দেশ-বিদেশের বহু দাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এর ফলে অনেক অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ভারতের সর্বত্র চ্যারিটির অর্থায়ন ও পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে এর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সিস্টারকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে শাখা কোলা হয়। ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সাথে অবশ্য তার দর্শন ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কিছু সমালোচনাও হয়। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে সমালোচকরা খুব কম তথ্যই হাজির করতে পেরেছিলেন। একথা স্বীকার করে নিয়েই ডেভিড স্কট বলেন, মাদার তেরেসা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের বদলে ব্যক্তি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া কষ্টভোগ বিষয়ে তার মনোভাবও সমালোচিত হয়েছে। অ্যালবার্টার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি মনে করতেন, কষ্টভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায়। এছাড়া ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও দ্য ল্যান্সেট পত্রিকায় তার সেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকেই এক হাইপোডার্মিক সূচ একাধিক বার ব্যবহারের কথা বলেছেন। কেন্দ্রগুলোর জীবনযাত্রার নিম্ন মানও সমালোচিত হয়েছে। তার উপর চ্যারাটির অ-বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পদ্ধতিগত রোগ-নিরূপণকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল।
আন্তর্জাতিক কার্যক্রম
১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের চূড়ান্ত প্রতিকূল সময়ে মাদার তেরেসা যুদ্ধের একেবারে ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে পড়া ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। ইসরায়েলী সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনী গেরিলাদের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে পরিবেশ কিছুটা অনুকূলে এনেছিলেন। এই সুযোগেই রেড ক্রসের সহায়তায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে যান। বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলো থেকে কম বয়সের রোগীদের সরিয়ে আনেন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশেই মিশনারি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৮০-'র দশকে ইউরোপের সে অংশ তুলনামূলক উদার হয়ে উঠে। এ সময়েই মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কয়েক ডজন প্রকল্পের মাধ্যমে তার কাজ শুরু হয়েছিল। এ সময় গর্ভপাত এবং বিবাহবিচ্ছেদ-এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেন। কিন্তু তেরেসা সব সময় বলতেন, "No matter who says what, you should accept it with a smile and do your own work."
মাদার তেরেসা ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের কাছে যেতেন, ভ্রমণ করতেন চেরনোবিল বিকিরণে আক্রান্ত অঞ্চলে। আমেরিকার ভূমিকম্পে আক্রান্তদের মাঝে সেবা পৌঁছে দিতেন। ১৯৯১ সালে মাদার তেরেসা প্রথমবারের মত মাতৃভূমি তথা আলবেনিয়াতে ফিরে আসেন। এদেশের তিরানা শহরে একটি "মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম" স্থাপন করেন।
১৯৯৬ সালে পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশে মোট ৫১৭টি মিশন পরিচালনা করছিলেন। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের ব্যবধানে তা কয়েক হাজারে পৌঁছোয়। তারা সবাই বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০টি কেন্দ্রে মানবসেবার কাজ করে যাচ্ছিল। গরিবদের মধ্যেও যারা গরিব তাদের মাঝে কাজ করতো এই চ্যারিটি, এখনও করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রথম শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্ক্স বরোর দক্ষিণাঞ্চলে। ১৯৮৪ সালের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রায় ১৯টি শাখা সক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করে।
চ্যারিটি দাতব্য কাজের জন্য যে অর্থ পেতো তার ব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকজন সমালোচনা করেছেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স ও স্টার্ন সাময়িকী সমালোচনা করে বলেছে, গরীবদের উন্নয়নের কাজে চ্যারিটিতে যত অর্থ আসে তার কিছু অংশ অন্যান্য কাজেও ব্যয় করা হয়।
স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যু
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয় রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কলকাতার আর্কবিশপ Henry Sebastian D'Souza বলেন, তেরেসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি এক ধর্মপ্রচারককে এক্জোর্সিজ্ম করতে বলেছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল, কোন শয়তান তেরেসাকে আক্রমণ করেছে।
মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০; এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০ট৫ই মিশনের মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব মিশনের মধ্যে ছিল এইড্স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র
- ↑ PBS Online Newshour (5 September 1997). Mother Teresa Dies, www.pbs.org. Retrieved August, 2007
- ↑ Mother Teresa EBCOhost Library Sponsored Research Content
বহিসংযোগ
- জীবনী - ভ্যাটিকানের ওয়েবসাইট
- মাদার তেরেসা স্মারক নিবন্ধগুচ্ছ
- মাদার তেরেসা: দি এঞ্জেল অফ মার্সি
- মাদার তেরেসা: দি পাথ অফ লাভ
- নোবেল ফাউন্ডেশনে নোবেল বিজয়ী মাদার তেরেসার জীবনী
- নোবেল বক্তৃতা, ডিসেম্বর ১১, ১৯৭৯
- মাদার তেরেসা (দি নোবেল প্রাইজ ইন্টারনেট আর্কাইভ)
- মাদার তেরেসা: দি এঞ্জেল অফ মার্সি (সিএনএন)
- The TIME 100: শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি - মাদার তেরেসা
- লিসেন টু মাদার তেরেসা প্রে হার ডেইলি প্রেয়ার
- স্পিচ এট নেশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট, ওয়াশিংটন, ডি.সি., ফ্রেব্রুয়ারি ৩, ১৯৯৪
- Peggy Noonan, “Still, Small Voice,” Crisis, 1 February 1998 (নেশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট স্পিচ)
- মাদার তেরেসা (ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ)
- সমালোচনা