বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল | |
---|---|
সভাপতি | রাকিবুল ইসলাম রাকিব |
সাধারণ সম্পাদক | নাসির উদ্দিন নাসির |
মাতৃ সংগঠন | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
প্রতিষ্ঠাতা | জিয়াউর রহমান |
প্রতিষ্ঠা | ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ |
সদর দপ্তর | ২৮/১ নয়া পল্টন, ঢাকা |
ভাবাদর্শ | বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতা |
স্লোগান | শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি |
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন।[১][২] এটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় ঢাকার নয়া পল্টনে অবস্থিত। বর্তমানে যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত, তাদের মধ্যে অনেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাথে যুক্ত ছিলেন।[৩]
ইতিহাস এবং সংগঠন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠার পর জিয়াউর রহমান বুঝতে পারেন যে ভবিষ্যতের বিএনপি নেতাদের জন্য একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজন, এরই প্রেক্ষিতে তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ তারিখে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রদল ১৯ দফার একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা মূল দল বিএনপির কাঠামো এবং পন্থার ভিত্তিতে নির্মিত। ছাত্রদল ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে অগ্রণী সংগঠন ছিল।[৪][৫]
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি কমিটির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, যার সব সদস্যই ছাত্র। ছাত্রদলের ৭৩৬ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে। ২০১৬ সালে গঠিত এই কমিটি ছাত্রদের বাদ দিয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দলীয় কর্মীদের সমালোচনার শিকার হয়; যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিরাও এর সদস্য ছিলেন।[৬]
সহিংসতা
[সম্পাদনা]১৯৯২ সালের ১৩ই মার্চ গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল চলাকালে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের গোলাগুলি চলাকালে মিছিলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু নিহত হন। রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল নিহতদের স্মরণে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য নির্মিত হয়।[৭][৮]
২০০৪ সালে, ছাত্রদলের সদস্যরা প্রশিকা নামক একটি এনজিও-কে হয়রানি করে, যার ফলে মেহদিগঞ্জ, বরিশাল-এ এর সদর দপ্তর এবং দুটি স্থানীয় অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঘটনাগুলি তখনকার বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অধীনে ঘটে।[৯] ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে, ছাত্রদল সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আআমস আরেফিন সিদ্দিকের অফিস ভাঙচুর করে।[১০] ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, দৌলতপুরের বি এল কলেজে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে, যার ফলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।[১১]
২০০২ সালের ৮ জুন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সনি ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।[১২][১৩] ১৯ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে, ছাত্রদলের সদস্যরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাঁচ কর্মীকে আক্রমণ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা ফাটায়।[১৪] সিলেটে সংঘর্ষের সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার জন্য ১৫০ জন ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে।[১৫] ৯ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে, ছাত্রদলের ঝিনাইদহ ইউনিটের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম পিন্টুকে একটি বন্দুক ও বোমাসহ আটক করা হয়।[১৬]
১৯ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে, ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপের সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়, তাদের মধ্যে একজন প্রক্টর এবং চারজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।[১৭] ১২ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে, ২০০ জন ছাত্রদল কর্মী তাদের প্রধান কার্যালয় নয়া পল্টনে ইউনিট কমিটি গঠনের প্রতিবাদে হামলা চালায়।[১৮] ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী সাইদুজ্জামান পাশার বন্দুকধারী ছবি প্রকাশের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে।[১৯]
২৬ মে ২০১৩ তারিখে, ছাত্রদলের সদস্যরা ঢাকা শহরে তারেক রহমানের সমর্থনে বিক্ষোভের সময় ২৫টি যানবাহন ভাঙচুর করে।[২০] ১৫ আগস্ট ২০১৩ তারিখে, ছাত্রদল চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হয়।[২১] ২৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে, ছাত্রদল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর ছাত্র শাখা বাংলাদেশ ছাত্র লীগের এক বিক্ষোভে হামলা চালায়, যার ফলে দুই ছাত্র লীগ সদস্যের মৃত্যু হয়।[২২]
নয়া পল্টনে ১৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে ছাত্রদল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।[২৩] ৭ মার্চ ২০১৫ তারিখে, একটি বোমা তৈরির চেষ্টা করার সময় চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতা আহত হয়।[২৪] ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় ইয়াবা মাদকসহ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসানসহ পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।[২৫]
সভাপতিদের এবং সাধারণ সম্পাদকদের তালিকা
[সম্পাদনা]সভাপতির নাম | পরবর্তী ভূমিকা/সম্পৃক্ততা | সাধারণ সম্পাদকদের নাম | পরবর্তী ভূমিকা/সম্পৃক্ততা | |
---|---|---|---|---|
১ | এনামুল করিম শহীদ | এ কে এম গোলাম হোসেন | প্রফেসর, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় | |
২ | গোলাম সারোয়ার মিলন | সাবেক সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টি | ||
৩ | শামসুজ্জামান দুদু | ভাইস-চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি | ||
৪ | জালাল আহমেদ | |||
৫ | ড. আসাদুজ্জামান রিপন | ভাইস-চেয়ারম্যান, বিএনপি | আমানউল্লাহ আমান | যৌথ মহাসচিব, বিএনপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী |
৬ | আমানউল্লাহ আমান | যৌথ মহাসচিব, বিএনপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী | ||
৭ | রুহুল কবির রিজভী | যৌথ মহাসচিব, মুখপাত্র, বিএনপি | ইলিয়াস আলী | সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপি |
৮ | এ কে এম ফজলুল হক মিলন | সভাপতি, গাজীপুর জেলা বিএনপি, সাবেক সংসদ সদস্য | ||
৯ | শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি | প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বিএনপি, সাবেক সংসদ সদস্য | হাবিব উন নবী সোহেল | যৌথ মহাসচিব, বিএনপি |
১০ | হাবিব উন নবী সোহেল | যৌথ মহাসচিব, বিএনপি | ||
১১ | নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু | সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপি | শাহাবুদ্দিন লালটু | |
১২ | শাহাবুদ্দিন লালটু | আজিজুল বারী হেলাল | তথ্য সম্পাদক, বিএনপি | |
১৩ | আজিজুল বারী হেলাল | তথ্য সম্পাদক, বিএনপি | শফিউল বারী বাবু | সভাপতি, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপি |
১৪ | সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু | সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল | আমিরুল ইসলাম খান আলিম | সহকারী প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বিএনপি |
১৫ | আব্দুল কাদের জুয়েল ভূঁইয়া | মহাসচিব, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপি | হাবিবুর রশিদ হাবিব | |
১৬ | রাজীব আহসান | আকরামুল হাসান | ||
১৭ | ফজলুর রহমান খোকন | ইকবাল হোসেন শ্যামল | ||
১৮ | কাজী রওনকুল ইসলাম | সাইফ মাহমুদ জুয়েল | ||
১৯ | রাকিবুল ইসলাম রাকিব | নাসির উদ্দিন নাসির |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। "ছাত্রদল অঙ্গ নয়, স্বকীয় সহযোগী সংগঠন: ইসিকে বিএনপি"। বিডিনিউজ.২৪ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৪।
- ↑ Crossette, Barbara (৯ ডিসেম্বর ১৯৯০)। "Revolution Brings Bangladesh Hope"। The New York Times।
- ↑ "The Other Woman"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "Non-students rule new JCD committee"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য ও শহীদ মইন হোসেন রাজু"। চ্যানেল আই। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৯।
- ↑ "যেভাবে শহীদ হলেন রাজু"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৯।
- ↑ Zaman, Mustafa। "Proshika A Case Gone Sour"। Star Magazine। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "JCD let loose terror on DU campus"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭-০২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "Shibir, Chhatra Dal clash at BL College"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭-০৪-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "আফসোস নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে গেলেন সনির বাবা"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ "দেড় যুগেও হয়নি বুয়েট ছাত্রী সনি হত্যাকাণ্ডের বিচার"। thedailycampus.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ "JCD men attack Chhatra Sangram Parishad activists on DU campus"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৭-০৪-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "150 JCD men sued for violence, vandalism"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "Jhenidah Chhatra Dal leader sent to jail"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ নভেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "JCD men fight at DU"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ জানুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "Dhaka College JCD men ransack central office"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ ডিসেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "Chhatra Dal cadre Pasha arrested"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জানুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "JCD men vandalise 17 vehicles in capital"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "JCD men clash over celebration"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "2 killed on last day of blockade"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "Aggrieved JCD men postpone agitation following assurance"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৯ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "'Bomb-maker' JCD leader hurt in city"। দ্য ডেইলি স্টার। ২২ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৬।
- ↑ "JCD president, 5 others sent to jail"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৭।