মাহমুদ হাসান দেওবন্দির ছাত্রদের তালিকা

শায়খুল হিন্দ নামে খ্যাত মাহমুদ হাসান দেওবন্দি ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবির প্রধান তিন ছাত্রের একজন। তিনি ১৯২০ সালে আলিগড়ে অবস্থিত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ভিত্তিপ্রস্থর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি উর্দু ভাষায় তাফসীরে উসমানী রচনা করেছিলেন যা কুরআনের অন্যতম প্রামাণ্য দক্ষিণ এশীয় অনুবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

প্রফেসর ইব্রাহিম মূসা, মাহমুদ হাসান দেওবন্দির ছাত্রদের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন

তাঁর ছাত্ররা মাদ্রাসা নেটওয়ার্কে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনজীবনে ধর্মীয় পাণ্ডিত্য, রাজনীতি এবং প্রতিষ্ঠান গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখে।

নিন্মে মাহমুদ হাসান দেওবন্দির উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের তালিকা দেওয়া হল:

নাম	পরিচিতি	তথ্যসূত্র
আব্দুর রাজ্জাক পেশওয়ারি	সৈয়দ মেহবুব রিজভী লিখেছেন, পেশওয়ারি আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন।
আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি	তিনি ১২ বছর দারুল উলুম দেওবন্দের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুহাম্মদ ইকবাল তার প্রশংসা করে বলেন, আল্লামা কাশ্মীরি নিঃসন্দেহে গত ৫০০ বছরে জন্মগ্রহণকারী সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিত।
আসগর হুসাইন দেওবন্দি	দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দিস হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত, তিনি আজমগড়ে “মাদ্রাসাতুল ইসলাহের” ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে সুনান আবু দাউদ এবং তাফসীরে জালালাইনের পাশাপাশি দুররে মুখতারের মত ফিকহের বই পড়িয়েছিলেন।
আশরাফ আলী থানভী	হাকীমুল উম্মত হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত, যিনি এক হাজারেরও বেশি বই লিখেছিলেন, যার মধ্যে বয়ানুল কুরআন ও বেহেশতী জেওর হানাফিদের মধ্যে প্রতিদিনের পাঠ্য।
আজিজুর রহমান উসমানি	দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
সৈয়দ ফখরুদ্দিন আহমদ	মাদ্রাসা শাহী মুরাদাবাদের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের প্রাক্তন সভাপতি দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক শায়খুল হাদিস।
হাফেজ মুহাম্মদ আহমদ	দারুল উলুম দেওবন্দের ৫ম প্রধান মুফতি হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুফতি।
হুসাইন আহমদ মাদানি	দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, শায়খুল ইসলাম ও আসীরে মাল্টা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। তার লিখিত মুত্তাহেদায়ে কাওমিয়াত আওর ইসলাম ভারত বিভক্তির বিরোধীতার উপর অন্যতম প্রামাণিক কাজ।
ইজাজ আলী আমরুহী	শায়খুল আদব হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত, তার লিখিত নফহাতুল আরব দরসে নিজামির পাঠ্যবই। তিনি দুই মেয়াদে দারুিল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি ছিলেন।
কারিম বখশ শাম্বলি	তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে: হাবিবুর রহমান আজমি, মানজুর নোমানী ও সৈয়দ ফখরুদ্দিন আহমদ।
কেফায়তুল্লাহ দেহলভী	হযরত মুফতীয়ে আযম ও ভারতের প্রাক্তন প্রধান মুফতি হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত, তার লিখিত “কিফায়াতুল মুফতি” হানাফি মাযহাবের প্রামাণ্য গ্রন্থ। তিনি জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সভাপতি। তার লিখিত “তালিমুল ইসলাম” বিভিন্ন মাদ্রাসার পাঠ্য।
মানাজির আহসান গিলানি	সুলতানুল কালাম হিসেবে সর্বাধিক খ্যাত, উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগের সাবেক ডিন। তাদভিনে হাদিস,মুকাদ্দামা তাদভিনে ফিকহ, সাওয়ানিহ কাসেমি, আন নাবিয়ুল খাতিম ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য রচনা। এছাড়াও তিনি সূরা কাহফের তাফসির লিখেছিলেন।
মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি	তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা।
মুহাম্মদ মিয়াঁ মনসুর আনসারি	তিনি রেশমি রুমাল আন্দোলনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত, তিনি মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবির নাতি। হুকুমতে ইলাহী, আসাস ইনকিলাব, দস্তুরে ইমামত এর মত রাজনীতি বিষয়ক কিছু বই লিখেছিলেন।
মুহাম্মদ সাহল ভাগলপুরি	দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন প্রধান মুফতি।
কারী মুহাম্মদ তৈয়ব	হাকীমুল ইসলাম নামে সর্বাধিক পরিচিত, প্রায় ৫০ বছর দারুল উলুম দেওবন্দের আচার্য ছিলেন। বিভিন্ন বইয়ে তার বক্তৃতাসমূহ সংকলিত হয়েছে।
শাব্বির আহমেদ উসমানি	শায়খুল ইসলাম নামে সর্বাধিক পরিচিত, জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, তিনি ১৯২০ সালের অক্টোবরে আলিগড়ে মাহমুদুল হাসান দেওবন্দির উদ্বোধনী ভাষণটি পড়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের প্রবক্তা ছিলেন এবং ভারত বিভাগের পরে পাকিস্তানের গণপরিষদের এর সদস্য হন এবং ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সদস্য ছিলেন। আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি মারা যাওয়ার পরে জামিয়া ইসলামিয়া তালিমুদ্দিন, দাভেলের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন।
মুহাম্মদ শফি উসমানি	পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধান মুফতি ও দারুল উলুম করাচির প্রতিষ্ঠাতা।
উবায়দুল্লাহ সিন্ধি	ইমামে ইনকিলাব নামে সর্বাধিক পরিচিত, তিনি রেশমি রুমাল আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি শাহ ওয়ালিউল্লাহর দর্শন প্রচারের জন্য ১৯৪০ সালে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় বায়তুল-হিকমাহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়।
উজাইর গুল পেশওয়ারি	তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মী, যিনি মাল্টায় মাহমুদ হাসান দেওবন্দির সাথে কারাগারে বন্দী ছিলেন। তিনি রেশমি রুমাল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মুহাম্মদ ইয়াসিন সিরহিন্দী	জামিয়া খায়রুল মাদারিসের প্রতিষ্ঠাতা খায়র মুহাম্মদ জলন্ধরি তার উল্লেখযোগ্য ছাত্র।

আরও দেখুন

• মাজাহির উলুম, সাহারানপুরের শিক্ষার্থীদের তালিকা
• দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন ছাত্রদের তালিকা
• জামিয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসা শাহীর শিক্ষার্থীদের তালিকা
• দারুল উলুম হাটহাজারীর শিক্ষার্থীদের তালিকা

গ্রন্থপঞ্জি

• রিজভী, সৈয়দ মেহবুব। তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ [দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস]। ২। মুরতাজ হুসাইন এফ কুরায়শি কর্তৃক অনূদিত (১৯৮১ সংস্করণ)। দেওবন্দ: দারুল উলুম দেওবন্দ।