রাজঘাট সমাধি পরিসর

স্থানাঙ্ক: ২৮°৩৮′২৫.৮″ উত্তর ৭৭°১৪′৫৭.৬″ পূর্ব / ২৮.৬৪০৫০০° উত্তর ৭৭.২৪৯৩৩৩° পূর্ব / 28.640500; 77.249333
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজঘাট
রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মারক
রাজঘাট সমাধি পরিসর দিল্লি-এ অবস্থিত
রাজঘাট সমাধি পরিসর
দিল্লিতে রাজঘাটের অবস্থান
সাধারণ তথ্য
ধরনসমাধি
অবস্থানচক্রপথ, শাহজাহানাবাদ, দিল্লি, ভারত
স্থানাঙ্ক২৮°৩৮′২৫.৮″ উত্তর ৭৭°১৪′৫৭.৬″ পূর্ব / ২৮.৬৪০৫০০° উত্তর ৭৭.২৪৯৩৩৩° পূর্ব / 28.640500; 77.249333
নির্মাণকাজের আরম্ভ উদযাপন১৯৪৮

রাজঘাট হল ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত একটি স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স। স্মৃতিসৌধটি প্রথমে মহাত্মা গান্ধীকে উৎসর্গ করা হয় যেখানে ৩১ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে তার দাহস্থান চিহ্নিত করার জন্য একটি কালো মর্মরের মঞ্চ নির্মাণ করা হয় এবং এর এক প্রান্তে চিরন্তন শিখা রয়েছে। দিল্লির চক্রপথ তথা দাপ্তরিকভাবে পরিচিত মহাত্মা গান্ধী সড়কে অবস্থিত জায়গাটিতে যেতে একটি পাথরের ফুটপাথ ধরে প্রাচীরের ঘেরের দিকে যেতে হয় যায় যেখানে স্মৃতিসৌধ অবস্থিত। পরে জওহরলাল নেহেরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, চৌধুরী চরণ সিংঅটল বিহারী বাজপেয়ী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স প্রসারিত করা হয়।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

রাজঘাট হলো আক্ষরিকভাবে ইংরেজি বাক্যাংশ রয়্যাল স্টেপস-এর অনুবাদ। এই বাক্যাংশের "রাজকীয়" শব্দের মাধ্যমে স্থানটির গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয় ও "ধাপ" দ্বারা যমুনা নদীর তীর থেকে আরোহণ নির্দেশ করে।[১]

অবস্থান[সম্পাদনা]

রাজঘাট পুরান দিল্লির শাহজাহানাবাদের দরিয়াগঞ্জের পূর্বে যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ঘাটের একটি অবস্থানের নাম ছিলো।[২]

স্মারক তালিকা[সম্পাদনা]

প্রারম্ভকালে মহাত্মা গান্ধীকে এই স্মৃতিসৌধ উৎসর্গ করা হয় যেখানে তার দেহাবশেষ ৩১ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে দাহ করা হয়েছিল। এটি একটি কালো মর্মরের মঞ্চ দ্বারা গঠিত যার এক প্রান্তে চিরন্তন শিখা রয়েছে। একটি পাথরের ফুটপাথ সেখানের প্রাচীর ঘেরের দিকে নিয়ে যায় যেখানে স্মৃতিসৌধ অবস্থিত। পরে রাজঘাটের আশেপাশে বিভিন্ন নেতাদের জন্য আরও কয়েকটি সমাধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স প্রসারিত করা হয়। মূলত ভারত সরকারের সাথে উদ্যানপালন কার্যক্রমের পরিদর্শক অ্যালিক পার্সি-ল্যাঙ্কাস্টার দ্বারা যৌথভাবে এই স্মারকগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন ও বৃক্ষরোপণ সঞ্চালিত হয়েছিলো।[৩][৪][৫][৬]

২০০০ সালে বাজপেয়ীর অধীনে ভারত সরকার বিভিন্ন নেতাদের জন্য পৃথক স্মৃতিসৌধ তৈরি না করার সিদ্ধান্ত নেয় কেননা ইতিমধ্যে বিদ্যমান স্মৃতিসৌধগুলো দিল্লিতে ২৪৫ একরেরও বেশি মূখ্য জমি দখল করেছে।[৭]

মহান নেতা ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্বসহ মোট ১৮ জন সদস্যকে এই স্মৃতিসৌধে দাহ করা হয়েছে। এখানে এর তালিকা নীচে দেওয়া হল:

স্মারকের তালিকা
ক্রম নাম উপাধি মৃত্যুর তারিখ স্মারকের নাম চিত্র
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ রাজঘাট
জওহরলাল নেহেরু ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ২৭ মে ১৯৬৪ শান্তিবন
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী ১১ জানুয়ারি ১৯৬৬ বিজয়ঘাট
সঞ্জয় গান্ধী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন লোকসভা সদস্য ২৩ জুন ১৯৮০ সঞ্জয় গান্ধীর সমাধি
ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪ শক্তিস্থল
জগজীবন রাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের চতুর্থ উপপ্রধানমন্ত্রী ৬ জুলাই ১৯৮৬ সমতাস্থল
চৌধুরী চরণ সিং ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী ২৯ মে ১৯৮৭ কিষাণঘাট
রাজীব গান্ধী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ২১ মে ১৯৯১ বীরভূমি
ললিতা শাস্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সহধর্মিণী ১৩ এপ্রিল ১৯৯৩ ললিতা শাস্ত্রীর সমাধি
১০ জৈল সিং ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সপ্তম রাষ্ট্রপতি ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯৪ একতাস্থল
১১ শঙ্কর দয়াল শর্মা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের নবম রাষ্ট্রপতি ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯ কর্মভূমি
১২ দেবী লাল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ষষ্ঠ উপপ্রধানমন্ত্রী ৬ এপ্রিল ২০০১ সংঘর্ষস্থল
১৩ পি. ভি. নরসিংহ রাও ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের নবম প্রধানমন্ত্রী ২৩ ডিসেম্বর ২০০৪ স্মৃতিস্থল
১৪ কে. আর. নারায়ণন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের দশম রাষ্ট্রপতি ৯ নভেম্বর ২০০৫ উদয়ভূমি
১৫ চন্দ্র শেখর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী ৮ জুলাই ২০০৭ জননায়কস্থল
১৬ রামাস্বামী ভেঙ্কটরমণ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অষ্টম রাষ্ট্রপতি ২৭ জানুয়ারি ২০০৯ একতাস্থল
১৭ ইন্দ্র কুমার গুজরাল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের দ্বাদশ প্রধানমন্ত্রী ৩০ নভেম্বর ২০১২ স্মৃতিস্থল
১৮ অটল বিহারী বাজপেয়ী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের দশম প্রধানমন্ত্রী ১৬ আগস্ট ২০১৮ সদেব অটল

বিতর্ক[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধে ব্যবহৃত কঠিন উপকরণগুলো গান্ধীয় স্থাপত্যের প্রকৃতি সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলো যেখানে রাজঘাটের স্থাপত্য ও গান্ধীবাদী স্বল্পমূল্যের আবাসন স্থাপত্যের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য পাওয়া গেছে।[৮]

পি. ভি. নরসিংহ রাও ভারতের নবম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে দিল্লির অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থানে মারা যান।[৯] তার পরিবার দিল্লির রাজঘাটে মৃতদেহ দাহ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অভিযোগ করা হয় যে তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তার সহযোগী আহমদ পটেল যেন তা নয় হয় সেটা নিশ্চিত করেছিলেন এবং তার দেহ হায়দ্রাবাদে স্থানান্তরিত হয় যেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিলো।[১০] তার মৃত্যুর প্রায় দশ বছর পর ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের নির্দেশে অবশেষে স্মৃতিস্থলে তার একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়।[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Maddipati, Venugopal (জানুয়ারি ২০১৭)। "When Landscape Became King: A Short Note on the Ascendancy of the Immediate Present as the Sovereign of Rajghat" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. H.C. Fanshawe (১৯৯৮)। Delhi, past and present। Asian Educational Services। আইএসবিএন 81-206-1318-X 
  3. "No space for 'samadhis', VVIPs to share memorial place in Delhi"Rediff.com। ১৬ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৩ 
  4. "'Rajiv' to bloom at Veer Bhumi"। The Tribune Trust। ১৮ আগস্ট ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ 
  5. "Tearful farewell to S.D. Sharma"The Tribune। The Tribune Trust। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ 
  6. "Former PM Chandrashekhar's samadhi to be called Jannayak Sthal"The Times of India। ২৩ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৫ 
  7. "History, significance of Rashtriya Smriti Sthal where Atal Bihari Vajpayee's last rites will be held"। Financial Express। ১৭ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৩ 
  8. Maddipati, Venugopal (জানুয়ারি ২০২০)। "Gandhi and Architecture: A Time for Low-Cost Housing: The Philosophy of Finitude" (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসবিএন 9780429262517ডিওআই:10.4324/9780429262517। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২০ 
  9. "Narasimha Rao passes away at the age of 83"The Hindu। ২৪ ডিসেম্বর ২০০৪। ৩০ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১২ 
  10. Sitapati, Vinay। "Day after Babri Masjid demolition, Narasimha Rao kept tabs on Sonia Gandhi courtesy the IB"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১৬ 
  11. "10 years after death, Narasimha Rao gets memorial in Delhi"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ জুন ২০১৫। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]