ব্যবহারকারী:Md. Golam Mukit Khan/বেঞ্জামিন কস্তা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অধ্যাপক ফাদার
বেঞ্জামিন কস্তা
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য
কাজের মেয়াদ
২০১৩ – ২১ আগস্ট ২০১৭
উত্তরসূরীপ্যাট্রিক গ্যাফনি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৪২-০৯-২৬)২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪২
দড়িপাড়া গ্রাম, কালীগঞ্জ, গাজীপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি
মৃত্যু১৩ আগস্ট ২০১৭(2017-08-13) (বয়স ৭৪)
সিটি হাসপাতাল, লালমাটিয়া, ঢাকা
সমাধিস্থলভাদুন হলিক্রস কবরস্থান, গাজীপুর
জাতীয়তাবাংলাদেশী
মাতাএলিজাবেথ পালমা
পিতাম্যাথিও কস্তা
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পেশাঅধ্যাপক, ধর্মযাজক

বেঞ্জামিন কস্তা (১৯৪২—২০১৭) ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ এবং ধর্ম যাজক। পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘের এই যাজক ঢাকার নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তিনি এর প্রথম উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]

বেঞ্জামিন ১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দরিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ম্যাথিও কস্তা এবং মায়ের নাম এলিজাবেথ পালমা। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে বেঞ্জামিন ছিলেন দ্বিতীয়। তার জন্মের কিছুদিন পরই তার পরিবার পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার রাজারদিয়ার গ্রামে চলে আসেন।[১]

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

বেঞ্জামিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা হয় সেন্ট রিটাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে ১৯৫৩ সালে তিনি বান্দুরা হলি ক্রস হাই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর, ১৯৫৫ সালে পাবনায় ফিরে চাটমোহর পাইলট হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তারপর ১৯৫৮ সালে তিনি বান্দুরা হলি ক্রস হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি পাস করেন।

বান্দুরা হলি ক্রসে অধ্যায়নকালে তিনি বান্দুরা ক্ষুদ্র পুষ্প সেমিনারিতে প্রবেশ করেন এবং খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

সে বছরই তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি সেখান থেকে দর্শনশাস্ত্রে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর, সে বছরেরই সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত খ্রিস্টরাজা সেমিনারীতে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে অধ্যায়ন শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ৯ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

১৯৭৪ সালে তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে তিনি সেখান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বের উপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন।[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১২ মে বেঞ্জামিন নাগরী মিশনে ফাদার গেডার্টের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি যুদ্ধাহতদের সেবা দান করার পাশাপাশি ব্রাদার ও সিস্টারদের শিক্ষা দান করতেন। এ সময় তিনি সেন্ট নিকোলাস গির্জার সহকারী যাজকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে স্কলাস্টিক সেমিনারিয়ানদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য তাকে নটর ডেম কলেজে পাঠানো হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

১৯৭৬ সালে দেশে ফেরার পর তিনি নটর ডেম কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে, ১৯৭৯ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে এবং এরপর ১৯৮৭ সালে তিনি অধ্যাপক পদোন্নতি পান। ১৯৯১ সালে তাকে কলেজের উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৯৯৮ সালের এপ্রিলে তিনি কলেজের ৯ম অধ্যক্ষ হিসেবে জোসেফ এস পিশোতোর স্থলাভিষিক্ত হন। এ পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন কলেজে "আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ভবন" নির্মিত হয়। "নটর ডেম লেখককুঞ্জ" ও "নটর ডেম ইংলিশ ক্লাব" নামে দুটি সহশিক্ষামূলক সংগঠন গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালে তিনি ঢাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নামক একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং ২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি নটর ডেম অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে তিনি এর সভাপতির দায়িত্ব পান।

বেঞ্জামিন নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা চূড়ান্ত হলে তিনি নটর ডেম কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর উপাচার্যের দায়িত্ব পান। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এ পদে নিযুক্ত ছিলেন।[২]

নটর ডেম ছাড়াও তিনি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ ক্যাথলিক নার্সেস গিল্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ক্যাথলিক যুব সেবা দলের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব নেন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সে পদে নিয়োজিত ছিলেন। এর মাঝে, ১৯৮২ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি বরিশালের হলি ক্রস নবিশিয়েটে নভিস মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষ্যে গঠিত কমিটিতে বেঞ্জামিনকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৮৮তে তিনি ঢাকার সেন্ট যোসেফ ইন্টারমিডিয়েট সেমিনারির পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৯১ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিনি রমনার সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালের যাজকের দায়িত্ব পালন। এরপর, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি সেক্রেড হার্ট অব জেসাস ধর্ম উপ-প্রদেশের ভাইস প্রভিন্সিয়াল পদে নিযুক্ত ছিলেন।

এছাড়াও তিনি বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি কারিতাস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[৩] তাছাড়া, ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বারাকা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রিলিজিয়াসের প্রেসিডেন্ট এবং ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্যাথলিক শিক্ষা কমিশনের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি, ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুলসেন্ট জেভিয়ার্স ফ্রান্সিস হাই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

রচিত গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]

এককভাবে রচিত ও অনূদিত বইগুলো হলো:[৪]

  • কস্তা, বেঞ্জামিন। সন্নাসব্রতীর শিক্ষাসেবা। ঢাকা: মিজান পাবলিশার্স। 
  • কস্তা, বেঞ্জামিন। বিশ্ব শান্তির জন্যে সম্প্রীতি। লেখাপ্রকাশ। 
  • ইরাগুয়ী, মার্চেলিনো (২০১৩)। যীশুতে বেড়ে ওঠা। কস্তা, বেঞ্জামিন কর্তৃক অনূদিত। লেখাপ্রকাশ। আইএসবিএন 9789849013006 
  • ইরাগুয়ী, মার্চেলিনো (২০১৩)। যীশুর সাথে বন্ধুত্ব। কস্তা, বেঞ্জামিন কর্তৃক অনূদিত। লেখাপ্রকাশ। আইএসবিএন 9789849013013 
  • শিমসন, পিয়ের (২০১৪)। সন্ন্যাস জীবনের অন্তরের অনাসক্তি বাধ্যতা চিরকৌমর্য। কস্তা, বেঞ্জামিন কর্তৃক অনূদিত। লেখাপ্রকাশ। আইএসবিএন 9789849013235 
  • কস্তা, বেঞ্জামিন (২০১৭)। প্রবন্ধসমগ্র। লেখাপ্রকাশ। [৫][৬]

এছাড়া, তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডউন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনা করেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় জ্ঞানকোষ – বাংলাপিডিয়ার লেখকদের মধ্যে তিনি একজন।[৭]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বেঞ্জামিন যকৃতে সংক্রমণ জনিত কারণে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলে ১৩ আগস্ট, শুক্রবার ঢাকার লালমাটিয়ার সিটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রমনা সেন্ট মেরি’স ক্যাথিড্রাল ও তেজগাঁও পবিত্র জপমালার গির্জায় খ্রিস্টযোগ শেষে ভাদুনের হলি ক্রস যাজকদের গোরস্থানে বেঞ্জামিনের শেষকৃত্য ও সমাধি হয়।[৮][৯][১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মল্লিক, মোস্তফা (২০১৭-১০-১৪)। "কাজের মধ্যেই যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন বেঞ্জামিন ডি কস্তা"চ্যানেল আই অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬ 
  2. "দৈনিক জনকন্ঠ || স্মরণ ॥ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা অম্লান হোক তোমার প্রদীপ শিখা"দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬ 
  3. "Rev. Father Benjamin Costa, CSC Passed Away"কারিতাস বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬ 
  4. "ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা এর বই সমূহ"www.rokomari.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৮ 
  5. "ফাদার বেঞ্জামিনের প্রবন্ধসমগ্রের প্রকাশনা উৎসব"চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৭-১২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৮ 
  6. "সাহিত্য হচ্ছে উন্নত জাতির চাবিকাঠি -ড. আনিসুজ্জামান"দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৮ 
  7. ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "লেখকবৃন্দ"বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  8. "Benjamin Costa passes away"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৮ 
  9. "ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা আর নেই"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৮ 
  10. "শিক্ষাবিদ বেঞ্জামিন কস্তা আর নেই"এনটিভি অনলাইন। ২০১৭-১০-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৮