বিষ্ণুপুর জেলা, মণিপুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষ্ণুপুর জেলা
মণিপুরের জেলা
মণিপুরে বিষ্ণুপুরের অবস্থান
মণিপুরে বিষ্ণুপুরের অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যমণিপুর
সদরদপ্তরবিষ্ণুপুর শহর
তহশিল
আয়তন
 • মোট৪৯৬ বর্গকিমি (১৯২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৪,০৪,০৫৪
 • জনঘনত্ব৮১০/বর্গকিমি (২,১০০/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
 • লিঙ্গানুপাত১০০০
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট
কেইনু থংখা হ্রদে প্রাকৃতিক দৃশ্য

বিষ্ণুপুর জেলা (Pron:/ˌbɪʃnʊˈpʊə/) ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মণিপুর রাজ্যের ক্ষুদ্রতম আয়তম বিশিষ্ট জেলা। জেলাটি মণিপুর সেন্ট্রাল ভ্যালি এলাকার দক্ষিণ পশ্চিমে ২৪ o ১০' ও ২৪ o ৪৫' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৩ o ৪০'ও ৯৩ o ৫২' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। জেলার মোট আয়তন ৪৯৬ বর্গকিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ৮২২.১৮ মিটার। জেলাটি দক্ষিণে চূড়াচাঁদপুর জেলা দ্বারা, উত্তরে ইম্ফল পশ্চিম জেলা দ্বারা,এবং পূর্বদিকে ইম্ফল জেলাথৌবাল জেলা-র দ্বারা সীমাবদ্ধ। বিষ্ণুপুরের মূল নাম ছিল লুমলাংডং (বর্তমানে লামংডং) যার অর্থ "নৃত্যরত হরিণ"[১]

নামকরণের ইতিহাস[সম্পাদনা]

লামাংডং-এ অবস্থিত একটি বিষ্ণু মন্দির-এর নামে এই জেলার নামকরণ হয় বিষ্ণুপুর। 

ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুর শহর হল জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর। জেলার অন্যান্য বড় শহরগুলির মধ্যে নাম্বোল, মৈরাং,নিংথৌকং এবং কুম্বি। .জেলার প্রধান প্রধান কিছু গ্রাম হল নাচৌ, গাইখং খুল্লেন,তৌবল, খৈজুমান খুল্লেন। 

ভূপ্রকৃতি[সম্পাদনা]

ভূপ্রকৃতিগতভাবে জেলাটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত করা যেতে পারেঃ *উপত্যকা বা পললভূমি সমতল এলাকা *জলভূমি এবং হ্রদ এবং *পাহাড় ও বনভূমিতে ঢেকে থাকা অংশ।

জেলার বেষিরভাগ অংশই জলাভূমি বা সমভূমি এবং লোকতাক হ্রদের দিকে বয়ে চলা ঢাল এই জেলার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য [১]

হ্রদ সমূহ[সম্পাদনা]

লোকটাক হ্রদ, গাক্রাপাত, আওগৌসী, লাইসোই, জিংপট, লৌকপাত ইত্যাদি হ্রদ ছড়িয়ে রয়েছে জেলার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে। লোকতাক হ্রদের আয়তন প্রায় ২৪৭ বর্গকিলোমিটার এবং বর্ষাকালে ের গভীরতা থাকে প্রায় ১০-১৫ মিটার। এটি উত্তরপূর্ব ভারতের বৃহত্তম স্বাদুজলের হ্রদ।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

শীতকালে শীতল আবহাওয়া এবং গরমকালে উষ্ণ আবহাওয়া থাকে এখানে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৩ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং জানুয়ারিতে ন্যূনতম তাপমাত্রা হয় ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যাইহোক, একটি সম্পূর্ণ হিসাবে জেলা তাপমাত্রা মধ্যপন্থী এবং এখানে কোন চরম জলবায়ু নেই। অনিয়মিত বৃষ্টি মাস শুরু হয় এপ্রিল মাসে এবং মের শেষেও অব্যাহত থাকে এই বৃষ্টিপাত। সাধারণ মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হয় জুনের প্রথমার্ধ থেকে এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের ৮০শতাংশই দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুর জেলায় বিভিন্ন ধর্মীয় জনসংখ্যা
ধর্ম শতকরা
হিন্দু
  
৯১.৫৬%
অন্যান্য
  
১৬.২০%
মুসলিম
  
৭.৮৭%
খ্রীষ্টান
  
১.৮০%
অনুল্লেখিত
  
০.৩১%
বৌদ্ধ
  
০.০৩%
শিখ
  
০.০২%
জৈন
  
০.০১%

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর জেলার জনসংখ্যা  ২৪০,৩৬৩[২]  যা প্রায় ভানুয়াতু.[৩] রাষ্ট্রের সমান। জনসংখ্যার বিচারে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে বিষ্ণুপুরের অবস্থান ৫৮৩তম ।জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৮৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (১,২৬০ জন/বর্গমাইল) . ২০০১-২০১১ দশকে, জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫.৩৬%. বিষ্ণুপুর জেলার লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০০ জন মহিলা প্রতি ১০০০ পুরুষে এবং সাক্ষরতার হার ৭৬.৩৫%.

ভাষা[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুরের প্রধান কথ্য ভাষা মেইতেইলন। অন্যান্য প্রচলিত ভাষার মধ্যে রয়েছে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, আইমোল ভাষা যা একটি ল্যাটিন হরফে লেখা একটি সিনো-তিব্বতি ভাষা। বর্তমানে এই ভাষা ব্যাবহারকারীর সংখ্যা ৩০০০ জনের-ও কম[৪]

বিষ্ণুপুরে প্রচলিত অন্যান্য সিনো-তিব্বতি ভাষা গুলি হলঃ 

  • উত্তর কুকি ছিন ভাষা
    • কম ভাষা
    • চিরু ভাষা
    • চোথে ভাষা
  • জেমে ভাষা
    • জেমে 

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুরের প্রধান পেশা কৃষি। চাল, আলু, বাঁধাকপি, ডাল, বেগুন এবং টমেটো প্রধান চাষের ফসল। জেলাটি সমতল হওয়ার কারণে এখানে চাষাবাদের ভালো সুযোগ রয়েছে। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হল আখ।

উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুল[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালে বিষ্ণুপুর জেলাতে ৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট কেইবুল ল্যামজাও ন্যাশনাল পার্ক গড়ে ওঠে। 

প্রশাসনিক বিভাগ[সম্পাদনা]

জেলাটি তিনটি মহকুমায় বিভক্ত:

লোকসভা কেন্দ্র[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুর ইনার মণিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।

পর্যটন[সম্পাদনা]

  • লৌকৈপাত হ্রদঃ দুইটি পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা এই ছোট প্রাকৃতিক হ্রদটি বিষ্ণুপুরের একটি বিখ্যাত পর্যটক স্থান। এখানে, পাহাড়ের সৌন্দর্য হ্রদের সৌন্দর্যের সাথে এক হয়ে মিশে যায়। লৌকীপাত পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চ ঢালগুলি থেকে মণিপুর উপত্যকায় প্যানোরমিক ভিউ দর্শকদের মনোহরণ করার নিশ্চয়তা দেয়। বর্তমানে এই হ্রদটির সাথে একটি ইকো পার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।
  • বিষ্ণু মন্দিরঃ

বিষ্ণুপুরের বিষ্ণু মন্দিরটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত ভগবান বিষ্ণুর জন্যে নিবেদিত মন্দির। মণিপুরের কিং কিম্বা, পংের রাজা চোপা খাঁ কম্বা সহ, বর্তমান মিয়ানমারের কাওলো উপত্যকার কিয়ানং প্রদেশ জয় করেন। এই বিজয়ে উৎফুল্ল হয়ে পং রাজা ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি কিংবা রাজাকে উপহার দেন। রাজা কিঙ্গা লুমলাংডং এ মূর্তি পূজা করতে শুরু করেন, যা ধীরে ধীরে এই স্থানের সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ওঠে।পরবর্তীকালে, তিনি এই স্থানে একটি বিষ্ণু মন্দির নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে ভারত সরকারের এইচ.আর.ডি. (পুরাতত্ত্ব) মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুরক্ষিত ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে উঠেছে। এটি এখন প্রাচীনকালের অবশেষগুলির প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়েছে। কিমায়া শাসনকালে বিষ্ণুর পূজা আবারও শুরু হয়েছিল মনিপুরে। ১৪৭০ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের রাজার সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পর লর্ড বিষ্ণুর একটি সামান্য চিত্র পং রাজা কর্তৃক উপস্থাপিত হয়। কিমবা বিষ্ণুপুরের একটি ইটের মন্দিরে নির্মিত এবং এখানে ছবিটি স্থাপন করেছেন।

পরিবহন[সম্পাদনা]

বিষ্ণুপুরের মধ্যে দিয়ে ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাজ্য মহাসড়ক গিয়েছে যা উত্তরে রাজ্য রাজধানী ইম্ফল এবং দক্ষিণে চূড়াচাঁদপুরের সংযোগ স্থাপন করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://cgwb.gov.in/District_Profile/Manipur/Bishnupur.pdf
  2. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০ 
  3. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১Vanuatu 224,564 July 2011 est. 
  4.   |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)|শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)

External links[সম্পাদনা]