ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ, কুমিল্লা সেনানিবাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
২টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ০টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0.8 |
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা |
||
৭৪ নং লাইন: | ৭৪ নং লাইন: | ||
তিনি জনাব আব্রু মিয়া ও মেজর অলি আহমদকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চালু এবং শিক্ষার্থী সংগ্রহের নির্দেশ দেন। সকলের ঐক্যমতে [[জিয়াউর রহমান|কর্নেল জিয়াউর রহমানকে]] প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হয়। এমনকি [[জিয়াউর রহমান|কর্নেল জিয়া]] ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল কে একটি গাড়ি উপহার দেন।<ref name="শৈলাচল-১৯" /> |
তিনি জনাব আব্রু মিয়া ও মেজর অলি আহমদকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চালু এবং শিক্ষার্থী সংগ্রহের নির্দেশ দেন। সকলের ঐক্যমতে [[জিয়াউর রহমান|কর্নেল জিয়াউর রহমানকে]] প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হয়। এমনকি [[জিয়াউর রহমান|কর্নেল জিয়া]] ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল কে একটি গাড়ি উপহার দেন।<ref name="শৈলাচল-১৯" /> |
||
=== স্বাধীনতা-উত্তর |
=== স্বাধীনতা-উত্তর ঘটনাবলী === |
||
স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত দায়িত্ব পাওয়ার পর মাত্র কয়েকজন আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী, চারজন শিক্ষক এবং মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার মৌলিক অস্তিত্ব রক্ষা করে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয় যারা একই বছর মার্চ মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের যোগ দেন।<ref name="শৈলাচল-১৯" /> |
স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত দায়িত্ব পাওয়ার পর মাত্র কয়েকজন আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী, চারজন শিক্ষক এবং মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার মৌলিক অস্তিত্ব রক্ষা করে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, যারা একই বছর মার্চ মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের যোগ দেন।<ref name="শৈলাচল-১৯" /> |
||
==== |
==== শেখ মুজিবুর রহমানের সফর ==== |
||
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের কোন একদিন [[শেখ মুজিবুর রহমান|বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান]] [[কুমিল্লা সেনানিবাস]] পরিদর্শনে আসলে এই প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রতিষ্ঠানের নতুনভাবে চালু করতে শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন।<ref name="শৈলাচল-১৯" /> |
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের কোন একদিন [[শেখ মুজিবুর রহমান|বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান]] [[কুমিল্লা সেনানিবাস]] পরিদর্শনে আসলে এই প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রতিষ্ঠানের নতুনভাবে চালু করতে শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন।<ref name="শৈলাচল-১৯" /> |
||
১২:৪৭, ২৭ মার্চ ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ, কুমিল্লা সেনানিবাস | |
---|---|
অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক | ২৩°২৮′৩৭″ উত্তর ৯১°০৭′০৯″ পূর্ব / ২৩.৪৭৬৮৪০১০৯৯২১১৯° উত্তর ৯১.১১৯২৪৮২৮২৮৫০১৭° পূর্ব |
তথ্য | |
অন্য নাম | আইপিএসসি |
প্রাক্তন নাম | ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল (১৯৬২–৬৫) ময়নামতি পাবলিক স্কুল (১৯৬৫–?) ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল (?–১৯৭৫) |
ধরন | সেনাবাহিনী পরিচালিত বেসরকারি |
নীতিবাক্য | শিক্ষা ব্রতে এসো, সেবার তরে যাও |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ |
নিয়ন্ত্রক | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
অধ্যক্ষ | লে. কর্নেল মুনতাসীর মামুন |
শ্রেণী | ১ম–১২শ |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | স্কুল: ২৯০০ (প্রায়) কলেজ: ১৫০০ (প্রায়) |
ভাষা | বাংলা ও ইংরেজি (শুধু কলেজ শাখায়) |
ক্যাম্পাস | কুমিল্লা সেনানিবাস |
শিক্ষায়তন | ৯.৩ একর (৩.৮ হেক্টর) |
রং | নীল লাল-হলুদ-সবুজ |
হাউজ | নজরুল, ফজলুল হক ও কুদরত-ই-খুদা হাউজ |
প্রকাশনা | বার্ষিক শৈলাচল |
ওয়েবসাইট |
|
ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ বা আইপিএসসি হচ্ছে বাংলাদেশের কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত পাবলিক কলেজ যা ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ৫ম স্থান[১] এবং একই বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ৩য় স্থান অধিকার করে।[২]
ইতিহাস
প্রারম্ভিক ইতিহাস
কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্রিগেডিয়ার গোলাম মোহাম্মদ কুমিল্লা সেনানিবাসের সেনা কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে সেনানিবাসে একটি নতুন 'পাবলিক' বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে একমত হন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বরে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৩]
প্রতিষ্ঠালগ্নে কুমিল্লা জিলা স্কুলের কয়েকটি কামরায় অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু পরের বছর ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের (তৎকালীন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুল) ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। তারপর ১ এপ্রিলে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক ব্যবস্থা চালু করা হলেও অল্প কিছুদিন পর থেকে শুধুমাত্র ছাত্রদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা চালু থাকে।
'ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল' নাম হওয়ার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পরিদপ্তরে 'বিভ্রান্তি'র সৃষ্টি হওয়ায় সরকারি অনুদান প্রাপ্তিতে সমস্যা হয়। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৫ সালের ২৮ জুনে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ময়নামতি পাবলিক স্কুল রাখা হয়।[৪]
প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি নির্দিষ্ট ভবন তৈরির ব্যাপারে শিল্পপতির ও দানবীর মির্জা আহমেদ ইস্পাহানির সাথে আলোচনা করা হলে তিনি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সার্বিক এর একটি আনুমানিক হিসাব দিতে বলেন। হিসাব পাওয়ার পর তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভবনটির নির্মাণ এর ব্যাপারে সম্মতি জানান।
বিদ্যালয় ভবন আবাসন ব্যবস্থা খেলার মাঠ ইত্যাদির জন্য তৎকালীন স্টেশন কমান্ডার এর প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে ৮.৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও পরবর্তীতে জমির পরিমাণ ৯.৩ একরে বর্ধিত করা হয়।
১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল ফজল মুকিম খান এবং মির্জা আহমেদ ইস্পাহানির পুত্র মির্জা মেহদি ইস্পাহানি।
১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসেই দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। ভবনের নিচতলা শ্রেণিকক্ষ এবং উপর তলার ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারিতে নতুন ভবনে শ্রেণী কার্যক্রমের সূচনা হয়। [৫]
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রভাব
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিদ্যালয়ের পরিবহন বাস শহরে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় শহর থেকে শিক্ষার্থী আসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানের আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৬ মার্চ আবাসিক শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন অবাঙালি অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ খান আমিল শিক্ষকদের বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও ২০ তারিখের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীর চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে যান।
অন্যদিকে মার্চ মাসে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কৌশলে সেনানিবাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। এর ফলে ২৯ মার্চ বাঙালি সেনারা পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ১৪ এসএসআর ইউনিটের সিও শাহপুর খানের নেতৃত্বে সেদিনই কুমিল্লা সেনানিবাসে শুরু হয় বাঙালি নিধনযজ্ঞ।
ফলে বেশিরভাগ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা নিহত হলেও কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হন। এদিনই পাকিস্তানিরা ১৭ ও ১৮ নম্বর ব্যারাকে বসবাসরত বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক এবং তাদের আত্মীয় সহ সর্বমোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শুধুমাত্র জনাব আব্রু মিয়া কৌশলে বেঁচে যান।[৩]
বন্দী শিক্ষক এবং সেনানিবাসের অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের মোট ২০০ জনকে মাত্র ৫০জন ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট স্কোয়াশরুম রেখে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। গুলিবিদ্ধ একজন অবাঙালি শিক্ষক জ্ঞান ফিরে আসার পর নিজের পরিচয় দিলে সিএমএইচে চিকিৎসা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রেরণ করা হয়। বন্দী শিক্ষকদের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের অবাঙালি অধ্যক্ষ লে. কর্নেল আমিলকে অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়ে প্রতিষ্ঠানটি পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেনানিবাসের বাঙালি সেনা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের স্ত্রী-আত্মীয়সন্তান মিলিয়ে প্রায় ৮০০-৯০০ মহিলাকে বিদ্যালয় ভবনে বন্দি রাখা হয়। ১৯৭১ এর জুনে দখলদার বাহিনী পুনরায় বিদ্যালয় চালু করার চেষ্টা করলেও তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।[৩]
স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস
স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। স্বাধীনতার কয়েকদিন পর এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয় ফিরে এসে এই প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪ কোর-এর অধিনায়ক মেজর জেনারেল সিংয়ের সাথে দেখা করেন। তার অনুমতি পাওয়ার পর শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কক্ষ এবং সেনানিবাসের বিভিন্ন অফিস ঘুরে দেখেন। যুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন লুট হওয়ার সম্পদের বেশিরভাগ সেনানিবাসের বিভিন্ন অফিস থেকে ফিরিয়ে আনেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী সাথে যোগাযোগ করলে ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারির মধ্যেই তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠান থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নেয়া হয়।[৩]
কিন্তু তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এই শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের দখলে নিয়ে সেনানিবাসে অবস্থিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি ১৩ তারিখ প্রতিষ্ঠান দায়িত্বভার নিজের হাতে প্রতিষ্ঠান চালু করার উদ্দেশ্যে ১৪ মিলাদ মাহফিল করে। এই মাহফিলে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব করলেও মেজর আইনুদ্দিন সহ উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দের তীব্র বিরোধীতায় তা বাতিল হয়। কিন্তু পরদিন ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারিতে তিনি এই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানটিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের (তৎকালীন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুল) একটি শাখা হিসেবে পুনরায় চালু করেন।
প্রতিষ্ঠানের মৌলিক অস্তিত্বের প্রতি এই হুমকি প্রতিরোধ করতে মেজর আইনুদ্দিনের পরামর্শে প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর সাথে কথা বলতে ঢাকায় যান। ঢাকায় আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক শিক্ষকের পরামর্শে তারা সেনানিবাসে অবস্থিত বিদ্যালয় সমূহের দায়িত্বে থাকা কর্নেল রেজার সাথে মৌলিক অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ব্যাপারে পরামর্শ করেন। তিনি সব কথা শুনে সবচেয়ে বয়োঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষক জনাব আব্রু মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার নির্দেশ দেন।[৩]
তারা ঢাকায় ফিরে কুমিল্লা সেনানিবাসের তৎকালীন ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল জিয়াউর রহমানের (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) কাছে কর্নেল রেজার দেওয়া একটি পত্র তুলে দেন। পত্রপাঠ করা মাত্রই তিনি ঘোষণা করেন
“ | Yes, I shall restart the school.[৩] | ” |
এবং সাথে সাথেই টেলিফোনে তিনি ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার কে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল থেকে ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি জনাব আব্রু মিয়া ও মেজর অলি আহমদকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চালু এবং শিক্ষার্থী সংগ্রহের নির্দেশ দেন। সকলের ঐক্যমতে কর্নেল জিয়াউর রহমানকে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হয়। এমনকি কর্নেল জিয়া ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল কে একটি গাড়ি উপহার দেন।[৩]
স্বাধীনতা-উত্তর ঘটনাবলী
স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত দায়িত্ব পাওয়ার পর মাত্র কয়েকজন আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী, চারজন শিক্ষক এবং মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার মৌলিক অস্তিত্ব রক্ষা করে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, যারা একই বছর মার্চ মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের যোগ দেন।[৩]
শেখ মুজিবুর রহমানের সফর
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের কোন একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লা সেনানিবাস পরিদর্শনে আসলে এই প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রতিষ্ঠানের নতুনভাবে চালু করতে শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন।[৩]
কলেজ চালু
কুমিল্লা সেনানিবাসের তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এর উদ্যোগে ১৯৭৫ শাহরিক ক্যান্টনমেন্ট মার্কেটে একটি শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। এই প্রদর্শনী থেকে আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা আয় হয়। তৎকালীন ব্রিগেড কমান্ডারের পরামর্শে তিনি এই টাকা দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ নামে একটি স্বতন্ত্র কলেজ চালু করেন।[৩]
কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা ফলে কলেজটির চালানো সম্ভব না হওয়ায় তিনি কলেজটিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুলের সাথে একত্রীকরণ করার ব্যাপারে বোর্ড ডিরেক্টরের সাথে আলোচনা করলে তিনি তা অসম্ভব বলে জানিয়ে দেন। ফলে আর কোনো উপায় না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুলের সাথে সংযুক্ত করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সদস্যদের সাথে আলোচনার পর ১৯৭৫ সালের ২৮ অক্টোবরে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ-কে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুলের সাথে সংযুক্ত করে বিদ্যালয়ের নাম ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজ রাখা হয়।[৩]
ক্যাম্পাসের বর্ণনা
প্রতিষ্ঠানটির আঙিনা প্রায় ৯.৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানের মূল ভবনটি তিন তলা। তবে উত্তর দিকের সর্বশেষ কলেজ ভবনটি চারতলা। প্রতিষ্ঠানটির উত্তর দিকের দুটি ভবন কলেজের জন্য এবং বাকি ভবনগুলো স্কুলের জন্য বরাদ্দ। প্রতিষ্ঠান ভবনের অভ্যন্তরে অভ্যন্তরে রয়েছে গ্রন্থাগার, মসজিদ, সুবিশাল মিলনায়তন, শিক্ষকদের সমাবেশ কক্ষ, বিএনসিসি কক্ষ, অধ্যক্ষের অফিস, উপাধ্যক্ষের অফিস, একাউন্ট অফিস, বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা গবেষণাগার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণী কক্ষ। কলেজের সামনে এবং পিছনে আছে বিশাল দুটি খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের সামনের উত্তর দিকে একটি গ্যারেজ এবং একটি শহীদ মিনার রয়েছে। প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসের মধ্যেই (পশ্চিম দিকে) আছে শিক্ষকদের আবাসিক বাসস্থান।
ভর্তি
এই বিদ্যালয়ে সাধারণত জানুয়ারিতে প্রথম শ্রেনীতে বাংলা মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়ে থাকে এবং ষষ্ঠ শ্রেনিতে ইংরেজি মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়ে থাকে। একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তির্ন হওয়ার মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেনীতে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করার পর ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়ে থাকে।
যাতায়াত সুবিধা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে দেওয়া একটি বাস এবং কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয়কৃত একটি বাস বর্তমানে ছাত্রদের আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।বর্তমানে আরো ৮টি বাস রয়েছে।
তাছাড়া সেনানিবাসের অভ্যন্তরে এবং এর আশেপাশে অবস্থানরত সেনা সন্তানদের পরিবহনের জন্য সেনাবাহিনীর নিজস্ব বাস ব্যবহার করা হয়।
গ্রন্থাগার
কলেজের মূল ভবনের দোতালায় গ্রন্থাগার অবস্থিত। ছাত্ররা গ্রন্থাগার থেকে বই বাসায় নিয়ে যেতে পারে। গ্রন্থাগারের কক্ষে বসে ছাত্ররা পড়াশোনা করতে পারে। একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক ছাত্রদের প্রয়োজনীয় বই খুঁজে দিতে সাহায্য করে থাকেন।
প্রকাশনা
প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরেই শৈলাচল নামের একটি স্কুল ম্যাগাজিন প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক উপাধ্যক্ষ জনাব মাখন চন্দ্র বড়াল উক্ত নামকরণ করেন।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
প্রধান পৃষ্ঠপোষক
- মেজর জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক — সাবেক সেনাপ্রধান।
- মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ — বর্তমান সেনাপ্রধান।
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি
- কর্নেল জিয়াউর রহমান — সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান।
- লে. কর্নেল আবু তাহের — বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত ১১নং সেক্টর কমান্ডার ও সিপাহী ও জনতার বিপ্লবের নায়ক।
শিক্ষার্থী
- নাফিস বিন জাফর -- প্রথম বাংলাদেশী ব্যক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে অস্কার জেতেন। হলিউডের পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: অ্যাট ওয়ার্ল্ড’স এন্ড চলচ্চিত্রে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে ডিজিটাল ডোমেইন নামে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভেলপার কোম্পানির হয়ে দুই সহকর্মী ডাগ রোবেল ও রিয়ো সাকাগুচি সাথে নাফিস এ পুরস্কার জেতেন।[৬]
আরও দেখুন
- কুমিল্লা সেনানিবাস
- ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালক উচ্চ বিদ্যালয়
- ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়
তথ্যসূত্র
- ↑ কুমিল্লা বোর্ডের সেরা ২০ স্কুল ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মে ২০১২ তারিখে, আমাদের দেশ দৈনিক পত্রিকা, প্রকাশিত হয়েছেঃ ৮ই মে, ২০১২।
- ↑ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এইচএসসিতে পাসের হার ৭৪.৬০[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],homnanews24.com, প্রকাশিত হয়েছেঃ ১৮ই জুলাই, ২০১২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট উপাধ্যক্ষ, শ্যামল কুমার শাহা (অক্টোবর ২০১৯)। "কলেজ প্রতিবেদন"। শৈলাচল, বার্ষিকি ২০১৯। ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ, কুমিল্লা সেনানিবাস: ৫৫।
- ↑ ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে, প্রকাশিত হয়েছেঃ ২০শে অক্টোবর, ২০১২।
- ↑ কুমিল্লা সেনানিবাসের ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৫০ বছর পুর্তিতে সুবর্ন জয়ন্তী পালিত[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],onnews24.com, প্রকাশিত হয়েছেঃ ৫ই নভেম্বর, ২০১২।
- ↑ "আমাদের অস্কারজয়ী"। www.prothomalo.com। প্রথম আলো। ২১ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২০।
বহিঃসংযোগ
- আফিসিয়াল ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে