আজিজ আহমেদ (জেনারেল)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আজিজ আহমেদ
১৬তম সেনাবাহিনী প্রধান
কাজের মেয়াদ
২৫ জুন ২০১৮ – ২৪ জুন ২০২১
রাষ্ট্রপতিআব্দুল হামিদ
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
পূর্বসূরীজেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক
উত্তরসূরীজেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1961-01-01) ১ জানুয়ারি ১৯৬১ (বয়স ৬৩)
নারায়ণগঞ্জ, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীনটর ডেম কলেজ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৮৩ - ২০২১
পদ জেনারেল
ইউনিটগোলন্দাজ রেজিমেন্ট
কমান্ড
  • কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল
  • জেনারেল অধিনায়ক - আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড
  • মহাপরিচালক - বিজিবি
  • জেনারেল অধিনায়ক - ৩৩ পদাতিক ডিভিশন
  • অধিনায়ক - ৩৩ গোলন্দাজ ব্রিগেড
  • অধিনায়ক - ৬ষ্ঠ স্বতন্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা গোলন্দাজ ব্রিগেড
  • বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ঢাকা সেক্টরের অধিনায়ক
যুদ্ধ

আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান ছিলেন। ২০১৮ সালের ১৮ জুন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগপত্র লাভ করেন, যা ২৫ জুন ২০১৮ থেকে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য কার্যকর হয়।[১] তার আগে জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক সেনাপ্রধান ছিলেন। জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ২৪শে জুন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তার স্থলাভিষিক্ত হন।[২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

১৯৬১ সালে জন্ম নেয়া আজিজ আহমেদের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকী গ্রামে। তার মা রেনুজা বেগম।[৩] তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। আজিজ আহমেদের ভাইদের নাম আনিস আহমেদ, হারিছ আহমেদ, টিপু আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। আজিজ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন। ১৯৮০ সালে কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজি (বর্তমান বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে টেক্সটাইল টেকনোলজি বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করেন এবং ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

এইচএসসি পাশ করে আজিজ সেনাবাহিনীতে নির্বাচিত হয়ে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি চট্টগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন।

১৯৮৩ সালে তিনি মিলিটারি একাডেমি চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ফিল্ড গোলন্দাজ রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন সহ গোলন্দাজ রেজিমেন্টের বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আজিজ কর্নেল পদবীতে ২০০৯ সালে বিজিবিতে ঢাকা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়োগ পান, ৩৩তম গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে তিনি বিজিবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। এরপর তিনি আর্টডক (আর্মি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড) এর অধিনায়ক হয়েছিলেন।

সেনাপ্রধান হবার আগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহ[সম্পাদনা]

তিনি সেনাপ্রধান হওয়ার আগে সেনাবাহিনী সদর-দপ্তরে কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে কাজ করেছেন[৪], তার আগে তিনি ময়মনসিংহে আর্মি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জেনারেল অধিনায়ক) ছিলেন।[৫] তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক ছিলেন ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত। তিনি কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন (বিজিবির মহাপরিচালক হওয়ার আগে)। তিনি সীমান্ত ব্যাংক-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর একটি যৌথ উদ্যোগ।

অবদান[সম্পাদনা]

বিপিন রাওয়াতের সাথে জেনারেল আজিজ (আগস্ট ১, ২০১৮)।

আহমেদকে সেনাপ্রধান নিয়োগের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সাক্ষী হয়।[৬] তার আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে।[৭] তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশী সৈন্য মোতায়েনসহ সামরিক সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য সৌদি আরবের সাথে একটি বন্ধনহীন চুক্তি স্বাক্ষরের সুযোগ তৈরি করেন।[৮][৯][১০]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

দণ্ডপ্রাপ্ত তোফায়েল জোসেফ সহ আহমেদরা মোট পাঁচ ভাই ছিল।[১১] ২০১৭ সালে মিডিয়া জানিয়েছিল যে কোনও স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়াই এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত অবস্থায় জোসেফ ২০ মাস হাসপাতালে কাটিয়েছেন।[১২] বিষয়টি উত্থাপিত হলে তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।[১৩] ভারতে চিকিৎসা করার জন্য ৩০ মে ২০১৮ এ তাকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা দেওয়া হয়েছিল। অন্য ভাই হারিস এবং আনিস আহমেদকেও[১৪] মোস্তফা হত্যার সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তারা পলাতক থাকায় তারা গ্রেফতার হয়নি। কিন্তু আল জাজিরার ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক নামে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায় হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদ জেনারেল আজিজ আহমেদের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে আনিস আহমেদ থাকেন কুয়ালা লামপুরে আর হারিস আহমেদ আছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।[১৪] ১৯৯০-এর দশকে হামলাকারীরা তাদের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপুকে গুলি করে হত্যা করেছিল।[১২][১৩]

বিতর্ক[সম্পাদনা]

আল জাজিরার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, আজিজ আহমেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে হারিস আহমেদ বিভিন্ন দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং ঘুষের বিনিময়ে বিভিন্ন চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে সে সক্ষম।[১৪] বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনকে মিথ্যা, মানহানিকর বলে প্রত্যাখান করে।[১৫]

প্রথম আলোর আরেকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে দেখা যায়, আজিজ আহমেদের দুই সহোদর হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের সাজা সরকার ২০১৯ সালে মওকুফ করেছে; যা দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও আলজাজিরার প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রথম আলো নিজস্ব তদন্তে বের করে।[৩][১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "নতুন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ"দৈনিক প্রথম আলো। ১৮ জুন ২০১৮। ২০ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৮ 
  2. "নতুন সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১০ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "হারিছ, আনিসের সাজা মওকুফের বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন তথ্যমন্ত্রীও"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "লে. জেনারেল আজিজ কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল হলেন"samakal.com। ৯ জানুয়ারি ২০১৮। ৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৮ 
  5. "নতুন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ"যুগান্তর। ১৮ জুন ২০১৮। ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৮ 
  6. Chowdhury, Imran (২০১৯-০৫-০৭)। "New Era of Bangladesh Army under a Dynamic Skipper"Daily Sun। Dhaka। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৭ 
  7. Aziz, Ahmed (২০১৯-০৫-২৩)। "Increased interoperability of land forces with allies and partners: A Bangladesh perspective"The Daily Star। Dhaka। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৭ 
  8. Bhuiyan, Humayun (২০১৯-০২-১৫)। "Dhaka Tribune"Dhaka Tribune। Dhaka। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৭ 
  9. "Military Cooperation: Dhaka, Riyadh sign MoU"The Daily Star। ২০১৯-০২-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৭ 
  10. "Military Cooperation: Dhaka, Riyadh sign MoU"The Daily Star। Dhaka। ২০১৯-০২-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৭ 
  11. "General Aziz Ahmed named new Army Chief of Bangladesh"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২০ 
  12. "Top criminal Joseph freed from jail on presidential mercy"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২০ 
  13. "President pardons top terror Joseph"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-৩১। ২০১৮-০৮-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২০ 
  14. "আল জাজিরার প্রতিবেদনে কী আছে, কী বলছে বাংলাদেশ?"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  15. ডটকম, নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "আল জাজিরার প্রতিবেদন 'অপপ্রচার': পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়"bangla.bdnews24.com। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  16. "হারিছ, আনিসের সাজাও মাফ করেছে সরকার"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
সামরিক দপ্তর
পূর্বসূরী
আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান
২৫ জুন ২০১৮ – ২৪ জুন ২০২১
উত্তরসূরী
এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ