দেবীসূক্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দেবীসূক্ত (সংস্কৃত: देवीसूक्त, আইএএসটি: Devīsūkta) বা অম্ভ্রনিসূক্ত ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাকের ১২৫তম সূক্ত।[১] এতে মোট আটটি শ্লোক আছে। প্রথম এবং তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্লোক ত্রিষ্টুপ ছন্দে রচিত। কেবল দ্বিতীয় সূক্তটি জগতী ছন্দে রচিত।

অনেকের ধারণা এই সূক্ত থেকেই শক্তির আরাধনা শুরু হয়। এটি ঋষি অম্ভৃণের কন্যা বাক দ্বারা সৃষ্ট। সাধারণ অর্থে সূক্তটি দ্বারা দেবীর শক্তি, মহিমা, ব্যাপকতা ও কর্মের প্রকাশ পায়।

পাঠ্য ও অর্থ[সম্পাদনা]

Devisukta prathama shloka.png

অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।
বঙ্গানুবাদঃ (১) আমিই রুদ্র, বসু, আদিত্য এবং বিশ্বদেবতারূপে বিচরণ করি।মিত্র ও বরুণের আমিই ধাত্রী। ইন্দ্র, অগ্নি এবং অশ্বিনীকুমার দু’জনকে আমিই ধারণ করে থাকি।'[২]

Devisukta corrected dwitiya shloka.png

অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্।
অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে।
বঙ্গানুবাদঃ (২) আমিই দেবগণের শত্রুনাশক সোম, ত্বষ্টা, পূষা এবং ভগকে ধারণ করে থাকি। যে যজমান যজ্ঞতে দেবতাগণের জন্য হবি প্রদান করেন, তাদের জন্য সুখদায়ী ফল আমি প্রদান করি।'[৩]

Devisukta tritiya shloka.png

অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাম চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্।
বঙ্গানুবাদঃ (৩) আমি জগতের ঈশ্বরী, ধনপ্রদায়িনী। ব্রহ্মকে জ্ঞাতা আমার আমিই যাঁদের জন্য যজ্ঞ করা হয় তাদের মধ্যে প্রথমা। বহুরূপে সর্বভূতে প্রবিষ্টা সেই আমাকে বহুস্থানে বা সর্বদেশে আরাধনা করা হয়।[৪]

Devisukta chaturtha shloka.png

ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্।
অমন্তবো মান্ত উপক্ষীয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবন্তে বদামি।
বঙ্গানুবাদঃ (৪) সবার ভোজন, দর্শন, শ্রবণ ও জীবন যাপন আমার শক্তিতেই সম্ভব হয়। আমাকে যে জানে না, সে দীন,হীন ও ক্ষীণ হয়ে যায়। প্রিয় সখা, আমার কথা শোনো, শ্রদ্ধা ও সাধনের দ্বারা যে পরম বস্তু লাভ হয়, আমি তার কথাই তোমাকে বলছি।[৫]

Devisukta panchama shloka.png

অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ।
যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমুষিং তং সুমেধাম্।
বঙ্গানুবাদঃ (৫) ব্রহ্মদ্বেষীকে বধ করার জন্য সংহারকারী রূদ্রের ধনুকে আমিই জ্যা পরিয়ে দিই।সৎ ব্যক্তিগণের বিরোধী শত্রুগণের সাথে সংগ্রাম করে আমিই তাদের পরাজিত করি। দ্যুলোক ও পৃথিবীতে আমি অন্তর্যামিনী রূপে পরিচিতা।[৬]

Devisukta shashtha shloka.png

অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ।
অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ।
বঙ্গানুবাদঃ (৬) আমি সেই পরম তত্ত্বের উপদেশ দিচ্ছি, দেবতা ও মানুষ যাঁর সেবা করেন। আমি স্বয়ং ব্রহ্মা। আমি যাঁকে রক্ষা করি সে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা বানিয়ে দিই, যাঁকে ইচ্ছা করি তাকে বৃহস্পতির মত মেধাবান বানিয়ে দিই। আমি স্বয়ং ব্রহ্মাভিন্ন আত্মা, যে আমারই স্বরূপ, তার গান করি।[৭]

Devisukta sapthama shloka.png

অহং সুবে পিতারমস্য মূর্ধ্বন্মম যোনি রপ্‌স্বন্তঃ সমুদ্রে।
ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানি বিশ্বোতামূন্দ্যাং বর্ষ্মণোপস্পৃশামি।
বঙ্গানুবাদঃ (৭) এই বিশ্বের উপরিভাগের দ্যুলোককে আমিই প্রসব করে থাকি। দিব্য কারণ বারি রূপ সমুদ্রে, যেখানে সমস্ত প্রাণীর উদয় ও বিলোপ হয়, সেই ব্রহ্মচৈতন্য আমার নিবাসস্থল। সর্বভূতে আমি প্রবিষ্ট এবং বিশ্বকে আমি নিজের মায়া দ্বারা স্পর্শ করে আছি।[৮]

Devisukta ashtama shloka.png

অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা।
পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিমা সম্বভূব।
বঙ্গানুবাদঃ (৮) বায়ু যেমন নিজে থেকেই প্রবাহিত হয়, আমিই সেইরূপ স্বাধীনভাবে পঞ্চভূতের সমস্ত কার্য করে থাকি। নির্লিপ্তভাবে আমি বিশ্বের সকল বিকারের উপরে অবস্থান করি[৯]

সাধারণভাবে চণ্ডীপাঠের পূর্বে ঋগ্বেদের রাত্রিসূক্ত এবং পাঠান্তে দেবীসূক্ত পাঠ করা হয়। উল্লেখ্য, এটি বৈদিক দেবীসূক্ত। শ্রী শ্রী চণ্ডীর পঞ্চম খণ্ডের অপরাজিতা স্তবকে অনেকে তান্ত্রিক দেবীসূক্ত বলেন।ব্রহ্মা কে পরিচয় প্রদানে দেবী মহামায়া এই বাক্য বলেন এর পর ব্রহ্মা দেবী মহামায়া কে শিব কে স্বামী রূপে গ্রহণ করতে বলেন।

অডিও[সম্পাদনা]

দেবীসূক্ত অডিও:

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rao, P. Venkata (1955): Ṛgveda Saṃhitā with Sāyaṇa's bhāṣya, Vol. 30. Śṛī Śāradā Press, Mysore, Karnataka, India, (Published by The Mahāṛāja of Mysore, for free public perusal). p. 689
  2. Ibid., p. 692
  3. Ibid., p. 693
  4. Ibid., p. 694 - 695
  5. Ibid., p. 696
  6. Ibid., p. 697
  7. Ibid., p. 698
  8. Ibid., p. 700
  9. Ibid., p. 703

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]