তাপস পাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাপস পাল
যৌবনে তাপস পাল
জন্ম(১৯৫৮-০৯-২৯)২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮
মৃত্যু১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০(2020-02-18) (বয়স ৬১)[১][২]
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাঅভিনেতা, রাজনীতিক
কর্মজীবন১৯৮০–২০২০
দাম্পত্য সঙ্গীনন্দিনী পাল
সন্তানসোহিনী পাল

তাপস পাল (২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০) একজন বাঙালি অভিনেতা ছিলেন। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। তার পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার ধলা গ্রামে। তিনি ২০০৯ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে টিকেট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে কৃষ্ণনগর থেকে এমপি হন।[৩][৪] এর আগে, তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন।

২০১৪ সালে, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনের কিছুদিন আগে একটি নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তাপস পাল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। উক্ত সভায় তিনি নিজেকে "চন্দননগরের মাল" বলে পরিচয় দেন এবং জানান যে তিনি পকেটে "মাল" নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এছাড়া তিনি ছেলে পাঠিয়ে বিরোধী পক্ষের সমর্থকদের ধর্ষণ করে দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। পরে এই নিয়ে বিতর্ক তৈরী হলে তিনি প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।

২০১৬ সালের শেষ ভাগে তাপস পাল আবার সংবাদ শিরোনামে আসেন। রোজ ভ্যালি নামে একটি চিট ফান্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এই সময়ে তাকে একটি পরচুলা পরতে দেখা যায়।

২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৫]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

তাপস পাল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হুগলী মহসিন কলেজ থেকে জীববিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করেন।[৩]

চলচ্চিত্র জীবন[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালে জীবনের প্রথম সিনেমা 'দাদার কীর্তি'-তে অভিনয় করেই বাঙালির মন জয় করে নেন। এই ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। কেদার চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি। ‘দাদার কীর্তি’র পর ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ নামের আরেকটি ছবিতে দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন তিনি।[৬]

পরের ছবিটিও সুপারহিট হয়। ১৯৮১ সালে ‘সাহেব’ ছবিতে ভাল অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তাপস পাল।

এরপর দীর্ঘ সময় বাংলা সিনেমায় রাজত্ব করেছেন এই অভিনেতা। 'সুরের ভুবনে', 'গুরু দক্ষিণা', 'মায়া মমতা', 'সমাপ্তি', 'চোখের আলো', 'অন্তরঙ্গ', 'সাহেব', 'পর্বতপ্রিয়', 'দিপার প্রেম', 'মেজ বউ', 'পথভোলা', 'আশীর্বাদ', 'পরশমণি', 'সুরের আকাশ', 'শুধু ভালোবাসা' সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সেই সময় তার বেশিরভাগ সিনেমার নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী রায়। শেষের দিকে দেবের কয়েকটি সিনেমাতেও দেখা যায় তাকে।

কলকাতা ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন বলিউডের সিনেমাতেও। মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম ছবিতে নায়ক ছিলেন তাপস। ১৯৮৪-তে মাধুরীর বিপরীতে 'অবোধ' ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ওই ছবিতে তাপস পাল মাধুরীর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটিতে মাধুরীর চরিত্রের নাম ছিল গৌরী আর তাপস পালের নাম ছিল শঙ্কর।

চলচ্চিত্রের তালিকা[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্র সহশিল্পী বছর পরিচালক
দাদার কীর্তি মহুয়া রায়চৌধুরী, দেবশ্রী রায়, সন্ধ্যা রায় ১৯৮০ তরুণ মজুমদার
বৈদুর্য রহস্য মুনমুন সেন ১৯৮৫ তপন সিনহা
সুরের ভুবনে ইন্দ্রাণী দত্ত, রূপা গাঙ্গুলি, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী ১৯৯২ প্রবীর মিত্র
মায়া মমতা চুমকি চৌধুরী ১৯৯৩ অঞ্জন চৌধুরী
আবিষ্কার শতাব্দী রায় ১৯৯০ সলিল দত্ত
অজান্তে মুনমুন সেন ১৯৮৪ অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়
নিশান্তে দেবশ্রী রায় ১৯৮৫ নারায়ণ চক্রবর্তী
সমাপ্তি দেবশ্রী রায় ১৯৮৩ বিজয় বোস
রাজ নর্তকী সুধা চন্দ্রন ১৯৯০ নারায়ণ চক্রবর্তী
তুমি যে আমার প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, শতাব্দী রায় ১৯৯৪ ইন্দ্র সেন
গরমিল দেবশ্রী রায়, ইন্দ্রানী দত্ত, রূপা গাঙ্গুলি ১৯৯০ দিলীপ রায়
অনুরাগ শতাব্দী রায় ১৯৯০ জওহর বিশ্বাস
চোখের আলো দেবশ্রী রায় ১৯৮৯ শচীন অধিকারী
বাহাদুর ১৯৯২ অভিজিৎ সেন
নিশান্তে দেবশ্রী রায় ১৯৮৫ নারায়ণ চক্রবর্তী
রাজার মেয়ে পারুল অঞ্জু ঘোষ ১৯৯৩ মিলন চৌধুরী
রুদ্রবিনা রঞ্জিত মল্লিক ১৯৮৭ পিনাকী মুখোপাধ্যায়
তুফান চিরঞ্জিত, অভিষেক চ্যাটার্জী ১৯৮৮ বীরেশ চ্যাটার্জী
তুমি কত সুন্দর মুনমুন সেন ১৯৮৯ মনোজ ঘোষ
অন্তরঙ্গ শতাব্দী রায় ১৯৮৮ দিনেন গুপ্ত
আন্তার্তামা ইন্দ্রাণী হালদার ১৯৯৫
সাহেব মহুয়া রায়চৌধুরী, মাধবী মুখার্জি, উৎপল দত্ত ১৯৮১ বিজয় বসু
অন্তরে ভালোবাসা মান্দাকিনী ১৯৯১ বিমল রায়
আশা চিরঞ্জিত, দেবশ্রী রায় ১৯৮৯ অনুপ সেনগুপ্ত
পারাবত প্রিয়া মহুয়া রায়চৌধুরী, দেবশ্রী রায় ১৯৮৪ দিপরঞ্জন বোস
দীপার প্রেম ১৯৮৪
আবোধ (হিন্দি) মাধুরী দীক্ষিত হিরেন নাগ
অনুরাগের ছোয়া মহুয়া রায়চৌধুরী ১৯৮৬ জোহর বিশ্বাস
পথভোলা ১৯৮৬ তরুণ মজুমদার
অনুরাগ শতাব্দী রায় ১৯৯০ জওহর বিশ্বাস
মন ময়ূরী মৌসুমী চ্যাটার্জী ১৯৯০ বীরেশ চ্যাটার্জী
ভালোবাসা ভালোবাসা দেবশ্রী রায় ১৯৮৬ তরুণ মজুমদার
আশির্বাদ মহুয়া রায়চৌধুরী ১৯৮৬ বীরেশ চট্টোপাধ্যায়
গুরু দক্ষিণা শতাব্দী রায় ১৯৮৭ অঞ্জন চৌধুরী
যা যে প্রিয়া অপর্ণা সেন ১৯৮৭ সলিল দত্ত
পাপ পুণ্য চিরঞ্জিত, ইন্দ্রাণী দত্ত ১৯৮৭ রজত দাস
আগমন সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী রায় ১৯৮৮ তরুণ মজুমদার
প্রতীক চিরঞ্জিত, সৌমিত্র চ্যাটার্জী, রাখি ১৯৮৮ প্রভাত রায়
মঙ্গল দীপ শতাব্দী রায়, রঞ্জিত মল্লিক ১৯৮৯ হরনাথ চক্রবর্তী
অঙ্গার শতাব্দী রায় ১৯৮৯ শ্রীনিবাস চক্রবর্তী
আপন আমার আপন শতাব্দী রায় ১৯৯০ তরুণ মজুমদার
বলিদান রাখি ১৯৯০ অনিল গাঙ্গুলি
পরশমণি শতাব্দী রায়, সন্ধ্যা রায় ১৯৮৮ তরুণ মজুমদার
সুরের আকাশে দেবশ্রী রায় ১৯৮৭ বীরেশ চ্যাটার্জী
মায়াবিনী দেবশ্রী রায় ১৯৯২ তুষার মজুমদার
দান প্রতিদান ইন্দ্রাণী হালদার, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৩ সুখেন দাস
অতীথি শিল্পী রিতু দাস ১৯৯৩ কালিদাস চক্রবর্তী
আমার কাহিনী রিতু দাস ১৯৯৩ ইন্দ্রনীল গোস্বামী
নীলিমায় নীল ইন্দ্রাণী হালদার ১৯৯১ বীরেশ চ্যাটার্জী
মান মর্যাদা শতাব্দী রায় ১৯৯১ সুখেন দাস
বর দেবার ইন্দ্রাণী হালদার ১৯৯১ অমল রায় ঘটক
দুরন্ত প্রেম রচনা ব্যানার্জি ১৯৯৩ প্রভাত রায়
বৌমনি সৌমিত্র চ্যাটার্জী, মাধবী মুখোপাধ্যায় ১৯৯৪ পার্থ প্রতিম চৌধুরী
সংঘর্ষ প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, রঞ্জিত মল্লিক, চুমকি চৌধুরী ১৯৯৫ হরনাথ চক্রবর্তী
লেডি ডাক্তার লাবনি সরকার, অভিষেক চ্যাটার্জী ১৯৯৫ বিমল দে
প্রতিধ্বনি মুনমুন সেন, অভিষেক চ্যাটার্জী, শতাব্দী রায় ১৯৯৫ অনুপ সেনগুপ্ত
পাতি পরম গুরু ইন্দ্রাণী দত্ত ১৯৯১ বীরেশ চ্যাটার্জী
আন্তরতম ইন্দ্রাণী হালদার, রঞ্জিত মল্লিক ১৯৯৫ দিনবন্ধু ঘোষ
মেজো বউ রঞ্জিত মল্লিক, চুমকি চৌধুরী ১৯৯৫ বাবলু সমাদ্দার
জামাইবাবু শতাব্দী রায়, সুভেন্দু চ্যাটার্জী ১৯৯৬ দুলাল ভৌমিক
উত্তরা ২০০০ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
সুন্দর বউ দেবশ্রী রায় ১৯৯৯ সুজিত গুহ
ঋণ মুক্তি জিশু সেনগুপ্ত, মৌসুমী চ্যাটার্জী ২০০০ দিনেন গুপ্তজ
মন্ডো মায়ার উপাখ্যান সমতা দাশ ২০০২ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
মায়ের আঁচল প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, রঞ্জিত মল্লিক ২০০৩ অনুপ সেনগুপ্ত
শুধু ভালোবাসা জিশু সেনগুপ্ত, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমতা দাস ২০০৫ রাজ মুখোপাধ্যায়
ঘটক জিত, কোয়েল মল্লিক, রজতাব দত্ত ২০০৬
নায়ক জিত, কোয়েল মল্লিক ২০০৬ স্বপন সাহা
শিকার কোয়েল মল্লিক, অমিতাভ ভট্টাচার্জী, রাজেশ শর্মা ২০০৬ শরণ দত্ত
আমি তোমাকে ভালবাসি দেব এবং পায়েল সরকার ২০০৭ রবি কিনাগী
মন মানে না দেব এবং কোয়েল মল্লিক ২০০৮ সুজিত গুহ
৮:০৮ এর বনগাঁ লোকাল স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সোনালী চৌধুরী, অনামিকা সাহা ২০১২ দেবাদিত্য
চ্যালেঞ্জ ২ দেব, পূজা বোস ২০১২ রাজা চন্দ
উল্লাস (চলচ্চিত্র) বিপ্লব চ্যাটার্জী, সৌমিত্র চ্যাটার্জী ২০১২ ঈশ্বর চক্রবর্তী
স্বভূমি ২০১৩
খিলাড়ি অঙ্কুশ হাজরা, নুসরাত জাহান ২০১৩ অশোক পতি

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মুম্বইয়ে প্রয়াত অভিনেতা তাপস পাল"। এবিপি আনন্দ। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০২০ 
  2. "প্রয়াত অভিনেতা তাপস পাল"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  3. Detailed Profile: Shri Tapas Paul india.gov.in. Retrieved 16 October 2012
  4. Tapas Paul ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে netapedia.in. Retrieved 16 October 2012
  5. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "বিতর্কের রেশ ছুঁয়ে তাপসের অকালপ্রয়াণ"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২২ 
  6. "ক্ষুধিত পাষাণ পাল"Epaper Sangbad Pratidin। ২০২০-০৩-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২০