ডেভিড বেয়ারস্টো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডেভিড বেয়ারস্টো
১৯৮৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে ডেভিড বেয়ারস্টো
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামডেভিড লেসলি বেয়ারস্টো
জন্ম(১৯৫১-০৯-০১)১ সেপ্টেম্বর ১৯৫১
হর্টন, ব্রাডফোর্ড, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৫ জানুয়ারি ১৯৯৮(1998-01-05) (বয়স ৪৬)
মার্টন-কাম-গ্রাফটন, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
ডাকনামব্লুয়ি
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম, মাঝে-মধ্যে ব্যাটিং অল-রাউন্ডার
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক
সম্পর্কজনি বেয়ারস্টো (পুত্র), অ্যান্ড্রু বেয়ারস্টো (পুত্র), গেইল বেয়ারস্টো (১ম স্ত্রী)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪৮১)
৩০ আগস্ট ১৯৭৯ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট১৩ মার্চ ১৯৮১ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৪৯)
২৪ জানুয়ারি ১৯৭৯ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ ওডিআই৪ জুন ১৯৮৪ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ২১ ৪৫৯ ৪২৯
রানের সংখ্যা ১২৫ ২০৬ ১৩,৯৬১ ৫,৪৩৯
ব্যাটিং গড় ২০.৮৩ ১৪.৭১ ২৬.৪৪ ২০.৬৮
১০০/৫০ -/১ -/- ১০/৭৩ ১/১৯
সর্বোচ্চ রান ৫৯ ২৩* ১৪৫ ১০৩*
বল করেছে - - ৫৮২ ১৮
উইকেট - -
বোলিং গড় - - ৩৪.২২
ইনিংসে ৫ উইকেট - - -
ম্যাচে ১০ উইকেট - - - -
সেরা বোলিং - - ৩/২৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১২/১ ১৭/৪ ৯৬১/১৩৮ ৪১১/৩৬
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

ডেভিড লেসলি বেয়ারস্টো (ইংরেজি: David Bairstow; জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৫১ - মৃত্যু: ৫ জানুয়ারি, ১৯৮৮) ব্রাডফোর্ডের হর্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও ফুটবলার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন।[১] ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘ব্লুয়ি’ ডাকনামে পরিচিত ডেভিড বেয়ারস্টো

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

ব্রাডফোর্ডের হ্যানসন গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৮ বছর বয়সে ইংরেজি সাহিত্যে এ-লেভেল উত্তীর্ণ হন। খেলার স্বার্থে সকাল ৬টায় এ-লেভেলের পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭০ সালে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো কাউন্টি খেলায় অংশ নেন।[২] এরপর খেলার মাঠে চলে যান ও পরবর্তী তিনদিনে পাঁচজন গ্লুচেস্টারশায়ারীয় ব্যাটসম্যানকে গ্লাভসবন্দী করেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ডেভিড বেয়ারস্টো’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ইয়র্কশায়ারের নিত্য অনুষঙ্গ ছিলেন। ইয়র্কশায়ারের ব্রাডফোর্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ডেভিড বেয়ারস্টো বিদ্যালয় জীবনে অনেকগুলো খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ব্রাডফোর্ড সিটি দলের পক্ষে কয়েকটি ফুটবল খেলায়ও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে, ক্রিকেট খেলাকেই তিনি বেছে নেন। খেলোয়াড়ী জীবনের পুরোটা সময়ই ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ক্লাব দলটির অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[২] এ সময়ই তার সেরা সময় ছিল।[৩]

১৯৮১ সালে স্কারবোয়ায় ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ১১ ক্যাচ নিয়ে বিশ্বরেকর্ডের সমকক্ষ হন। একই সালে ডার্বিতে বেনসন এন্ড হেজেস কাপে ১১ নম্বরে নামা মার্ক জনসনের সাথে ইয়র্কশায়ারের ৮০ রান দূরে থাকা অবস্থায় জুটি গড়েন। বেয়ারস্টো নয় ছক্কায় ১০৩ ও জনসন ৪ রান তুলে দলকে জয় এনে দেন।

অধিনায়কত্ব লাভ[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালে জিওফ বয়কটের পরিবর্তে তাকে দলের দায়িত্বভার প্রদান করা হলে সমর্থকদের রোষানলে পড়েন ও ক্লাব ঘেরাও করা হয়। বেয়ারস্টো মনে করতেন যে, তিনি একটি সাধারণমানের ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বছরে দলটি চ্যাম্পিয়নশীপের নিচেরদিকে অবস্থান করলেও পরবর্তী বছরগুলোয় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হবার পর ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাকে কেবলমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরফলে স্টিভ রোডসকে ক্লাব ত্যাগ করে ওরচেস্টারশায়ারের দিকে ধাবিত হতে হয়েছিল।

মার্চ, ১৯৯০ সালে ইয়র্কশায়ার দল মৌসুম-পূর্ব সময়ে ক্যারিবীয় সফরে যান। আঘাতে আক্রান্ত ইংল্যান্ড দলকে সহায়তাকল্পে বার্বাডোসের বিপক্ষে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতে হয়। লালচে চুলের কারণে ‘ব্লুয়ি’ ডাকনামে অভিহিত হন। মাঠে তিনি আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় অগ্রসর হতেন। সীমিত ওভারের খেলায় শেষদিকে নেমে আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন ও সমর্থকদের কাছ থেকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়োতেন।

৪৫৯টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৬.৪৪ গড়ে ১৩,৯৬১ রান সংগ্রহ করেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেন ১৪৫ রান। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৯৬১টি ক্যাচ নেন। এরফলে, ইতিহাসের ছয়জন উইকেট-রক্ষকের পর তার নাম চলে আসে। তবে, তিনি মাত্র ১৩৮টি স্ট্যাম্পিং করে কেবলমাত্র ইয়র্কশায়ারীয় জিমি বিঙ্কসের পিছনে অবস্থান করেন। ৪২৯টি একদিনের খেলায় অংশ নিয়ে এক সেঞ্চুরি সহযোগে ২০.৬৮ গড়ে ৫,৪৩৯ রান তুলেন। ২১ মৌসুম খেলেন। তন্মধ্যে, তিন মৌসুমে দলের নেতৃত্বে ছিলেন।[২] তাসত্ত্বেও, সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ডিসমিসালের দিক দিয়ে ১৪শ অবস্থানে থাকেন।

১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের পক্ষে খেলেছেন। এ পর্যায়ে বিস্ময়করভাবে নিজেকে সিম বোলার হিসেবে উপস্থাপন করেন ও ট্রান্সভাল বি দলের বিপক্ষে ৩/৮২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।[৪]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ইংল্যান্ডের পক্ষে চারটিমাত্র টেস্ট ও একুশটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন ডেভিড বেয়ারস্টো।[২] ৩০ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে ওভালে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৩ মার্চ, ১৯৮১ তারিখে ব্রিজটাউনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

সচরাচর দল নির্বাচকমণ্ডলী বব টেলর ও পরবর্তীতে পল ডাউনটনের পিছনে তাকে রাখতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কারণে টেস্টের তুলনায় একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের অধিক সুযোগ পান। দশটি প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু, নিজেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেলে ধরতে পারেননি। অংশগ্রহণকৃত ২০টি ওডিআই ইনিংসে ২৩-এর বেশি রান তুলতে দেখা যায়নি।

অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৯ রান করেন। ফলশ্রুতিতে, প্যাকার পরবর্তী যুগে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যান। বব টেলর টেস্টে খেললেও বেয়ারস্টো একদিনের খেলাগুলোয় নিয়মিতভাবে অংশ নেন। কম রানের ইনিংস খেললেও দলের সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসসিজিতে শেষ ছয় ওভারে ৩৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা গ্রাহাম স্টিভেনসনকে নিয়ে পূরণ করেন। পরবর্তী গ্রীষ্মে আরও দুই টেস্ট খেলেন তিনি। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। তবে, তাকে আর দলে রাখা হয়নি।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন ডেভিড বেয়ারস্টো। এরপর বেতারে ভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পাশাপাশি, ইয়র্কশায়ারের পরিচালনা পরিষদে যুক্ত থাকেন। এছাড়াও, মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন তিনি। ৫ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ইয়র্কশায়ারের মার্টন-কাম-গ্রাফটন এলাকায় ডেভিড বেয়ারস্টো’র জীবনাবসান ঘটে। ১৯৯৭ সালের শেষদিকে মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করেন। এ যাত্রায় রক্ষা পেলেও কয়েক সপ্তাহ পর ইয়র্কশায়ারের মার্টন-কাম-গ্রাফটন এলাকায় নিজ গৃহে ফাসিতে আত্মহত্যা করেন।[৫]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রীও অসুস্থ ছিলেন। গভীর আর্থিক সঙ্কটে ভুগতে থাকেন। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে জরিমানার সম্মুখীন হন ও আঘাতের কারণে ব্যথায় ভুগতেছিলেন। মৃত্যুকালীন স্ত্রী জেনেট এবং অ্যান্ডি (২২), জোনাথন (৮) ও বেকি নামীয় সন্তান ছিল। এ পরিবারটি পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর মার্টন-কাম-গ্রাফটন এলাকা ছেড়ে ডানিংটনে চলে যায়। দ্বিতীয় সংসারে ইয়র্কশায়ার এবং ইংল্যান্ডের উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো’র জন্ম। পিতার জন্মের বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে জনি বেয়ারস্টো ৫১ নম্বর পোশাক পরিধান করেন। প্রথম সংসারের অ্যান্ড্রু বেয়ারস্টো ডার্বিশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন।

দলীয় সঙ্গী ফিল কারিক মন্তব্য করেন যে, তিনি সেরা উইকেট-রক্ষক ছিলেন না ও সেরা ব্যাটসম্যানও ছিলেন না। তবে, সেরা ক্রিকেটার ছিলেন। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ফুটবল খেলায়ও দক্ষ ছিলেন তিনি। নিজ শহরের ব্রাডফোর্ড সিটি ক্লাবের পক্ষে ফুটবল খেলেন।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "David Bairstow, England"ESPN cricinfo। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৪, ২০১৬ 
  2. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 16আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  3. A History of Yorkshire CCC, Tony Woodhouse
  4. report of match viewed on 6 August 2006.
  5. Jon Culley (৭ জানুয়ারি ১৯৯৮)। "Cricket: Sporting world mourns the death of David Bairstow"The Independent 
  6. Hodgson, Derek (৭ জানুয়ারি ১৯৯৮)। "Obituary: David Bairstow"The Independent। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]