জমিয়তুল উলামা দক্ষিণ আফ্রিকা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জমিয়তুল উলামা দক্ষিণ আফ্রিকা
গঠিত১৯২৩; ১০১ বছর আগে (1923)
আইনি অবস্থাধর্মীয় সংগঠন
উদ্দেশ্যপ্রাসঙ্গিক নেতৃত্ব, ঐক্যবদ্ধ, উন্নয়ন, পরিচালনা এবং মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব
অবস্থান
  • ১ম তলা, বায়তুল হামদ, ৩২ ডলি রাথেবে রোড, ফোর্ডসবার্গ, জোহানেসবার্গ
যে অঞ্চলে কাজ করে
দক্ষিণ আফ্রিকা
দাপ্তরিক ভাষা
ইংরেজি
মহাসচিব
ইব্রাহিম ইসমাইল বেহম
সভাপতি
আব্বাস আলী জেন্না
ওয়েবসাইটjamiatsa.org

জমিয়তুল উলামা দক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পুরানো ইসলামি সংগঠন। ১৯২৩ সালে মুসলমানদের ধর্মীয় চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে জমিয়তুল উলামা ট্রান্সভাল নামে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম দেওবন্দি সংগঠন।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯২৩ সালে জমিয়তুল উলামা ট্রান্সভাল নামে সংগঠনটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মুহাম্মদ মিয়া, ইব্রাহিম সানজালভি, মুহাম্মদ আখলওয়ায়া, আব্দুল কাদের মালিকপুরী, মূসা নানা, সালেহ মাঙ্গেরা, সুলাইমান আননন্দবী, ইসমাঈল ইউসুফ গার্দী, ইসমাঈল কাছভী সহ প্রমুখ আলেম সংগঠনটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। ইব্রাহিম সানজালভি আমৃত্যু ৪০ বছর সংগঠনটির মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের সামগ্রিক ইসলামি চাহিদা, প্রাথমিকভাবে শিক্ষার উপর জোর দিয়েছিল। ১৯৫১ সালের প্রথম দিকে সংগঠনটি প্রাক্তন ট্রান্সভাল অঞ্চলের জন্য একটি সিলেবাস তৈরি করেছিল। ১৯৬১ সালে সংগঠনটি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম কারী মুহাম্মদ তৈয়বের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সেমিনারের আয়োজন করে যেখানে সমস্ত মক্তবের জন্য একীভূত পাঠ্যক্রম গ্রহণের জন্য একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটির সদস্যরা মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।[২]

১৯২৭ সালের গোড়ার দিকে সংগঠনটি দক্ষিণ আফ্রিকার শাফিঈ ছাত্র এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তাদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে প্রথম বই প্রকাশ করে। ১৯৩৮ সালে এটি নাসবুর রায়াহ এবং ফয়জুল বারী প্রকাশ করেছিল। এই বইগুলো একাডেমিকভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৫০ এর শেষ দিকে সংগঠনটি পাঠ্যবই হিসেবে কেফায়াতুল্লাহ দেহলভির তালিমুল ইসলামের অনুবাদ করে। তখন থেকে এটি মুসলিমদের জন্য ধারাবাহিক প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে।[২]

১৯৫০-এর দশকে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী সরকারের সাথে লড়াই করে মসজিদ ও মক্তব রক্ষা করতে সফল হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে এটি মুসলিমদের ব্যক্তিগত আইন, চাঁদ দেখা কমিটি, ঈদ-রমজান সহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছিল। ১৯৭০-এর দশকে এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলাম বিদ্বেষী চলচ্চিত্র দ্য মেসেজ বন্ধ করতে সক্ষম হয়। পরে সংগঠনটির তৎপরতায় জিম্বাবুয়েতেও চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সংগঠনটি সাড়া দিয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সাথে কাদিয়ানী সংক্রান্ত মামলায় সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।[২]

১৯৮০-এর শেষ দিকে সংগঠনটির কার্যপরিধি বিস্তৃত হওয়ায় এর কয়েকটি শাখা অস্তিত্ব লাভ করে। বর্তমানে এর সাতটি সম্পূর্ণ কার্যকরী শাখা এবং ছয়টি জোনাল প্রতিনিধি রয়েছে। ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রৈমাসিক আর রশিদ চালু হয়েছিল।[৩] ১৯৯২ সালে এটি ইসলামি কেয়ারলাইন নামে কাউন্সেলিং পরিষেবা চালু করে। ১৯৯৪ সালে সংগঠনটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংযুক্ত উলামা কাউন্সিল গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে বিভিন্ন মুসলিম স্বার্থ বিষয়ে মতবিনিময় করে। সংগঠনটি দক্ষিণ আফ্রিকাল সরকারের কাছে যে বহু গবেষণামূলক স্মারকলিপি পেশ করেছে তার মধ্যে পর্নোগ্রাফি, গর্ভপাত, রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার প্রবর্তন, মৃত্যুদণ্ড এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিগত দুই দশকে সংগঠনটি দাওয়াহ কাজের প্রসারের জন্য রেডিও ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল চালু করে। রেডিওটি অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রোতা আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬ সালের ২০ অক্টোবর হালাল-হারাম পরিষেবা প্রদানের জন্য চালু হওয়া সানহা প্রতিষ্ঠায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[২]

নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে তখন থেকে ট্রান্সভাল সংগঠনের প্রাতিষ্ঠানিক নাম থেকে বাদ দেওয়া হয়, নতুন নাম জমিয়তুল উলামা দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০১ সালে ফোর্ডসবার্গের বায়তুল হামদ, ৩২ ডলি রাথেবে রোড-এ সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় স্থানান্তরিত হয়। ২০০৫ সালে এটি জামিয়ুল উলুম আল ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করে।[২]

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে:[২]

  • আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের প্রকৃত আকীদা লালন এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা।
  • মুহাম্মদ স.–এর সুন্নাহ রক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রচার করা।
  • মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতা এবং ধর্মীয় কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করা।
  • শরিয়াহ (ইসলামি আইন) ব্যাখ্যা করা।
  • মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রচার করা।
  • ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, দাতব্য পরিষেবা এবং মানবজাতির সাধারণ উন্নতির প্রচার, বিকাশ এবং বজায় রাখা।
  • মুসলমানদের সম্মান ও স্বার্থ রক্ষা করা।
  • মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখা।
  • মুসলমানদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অধিকার রক্ষা করা।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. Deobandis Abroad: Sufism, Ethics and Polemics in a Global Islamic Movement। পৃষ্ঠা ১০৮। ডিওআই:10.17615/vp8r-8f57 
  2. "আমাদের সম্পর্কে"জমিয়তুল উলামা দক্ষিণ আফ্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২ 
  3. হারুন, মুহাম্মদ (৩ ডিসেম্বর ২০২০)। "Reaching Out, Making Public:The Jamiat ul-Ulama South Africa and its Online Newsletter"বোলেসওয়া জার্নাল অফ থিওলজি, রিলিজিয়ন অ্যান্ড ফিলোসফি 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • কাসেমি, মুহাম্মদুল্লাহ খলিলি (২০১৬)। "Influence of Deoband School of Thought In South Africa" [দক্ষিণ আফ্রিকায় দেওবন্দি চিন্তাধারার প্রভাব]। কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়