বিষয়বস্তুতে চলুন

চার্লি বার্নেট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চার্লি বার্নেট
১৯৩৪ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে চার্লি বার্নেট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
চার্লি জন বার্নেট
জন্ম(১৯১০-০৭-০৩)৩ জুলাই ১৯১০
চেল্টেনহাম, গ্লুচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৮ মে ১৯৯৩(1993-05-28) (বয়স ৮২)
স্ট্রুড, গ্লুচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড
ডাকনামচার্লি, গাভনর
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান, কোচ
সম্পর্কসি. এস. বার্নেট (পিতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৬৯)
১২ আগস্ট ১৯৩৩ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১০ জুন ১৯৪৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২০ ৪৯৮
রানের সংখ্যা ১০৯৮ ২৫৩৮৮
ব্যাটিং গড় ৩৫.৪১ ৩২.৭১
১০০/৫০ ২/৫ ৪৮/১১৩
সর্বোচ্চ রান ১২৯ ২৫৯
বল করেছে ২৫৬ ২৮২৩৩
উইকেট ৩৯৪
বোলিং গড় ৩০.৯৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ১২
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/১৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৪/- ৩২০/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২২ মে ২০১৯

চার্লস জন বার্নেট (ইংরেজি: Charlie Barnett; জন্ম: ৩ জুলাই, ১৯১০ - মৃত্যু: ২৮ জুলাই, ১৯৯৩) গ্লুচেস্টারশায়ারের চেল্টেনহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৮ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[]

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন ‘চার্লি’ বা ‘গাভনর’ ডাকনামে পরিচিত চার্লি বার্নেট

শৈশবকাল

[সম্পাদনা]

গ্লুচেস্টারশায়ারের সুপরিচিত ক্রিকেট পরিবারে চার্লি বার্নেটের জন্ম। বাবা সি. এস. ও অপর দুই কাকা - সকলেই ঐ কাউন্টি দলের পক্ষে শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন। ওয়াইক্লিফ কলেজ স্টোরহাউসে পড়াশুনো করেছেন। সেখানেই শৌখিন পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। ১৯২৭ সালে ১৬ বছর বয়সে কেমব্রিজের বিপক্ষে শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে শুরু করেন। পরবর্তীতে অবশ্য ১৯২৯ সালে পেশাদারী ক্রিকেটের দিকে ধাবিত হন।

সমর্থকদের কাছে তিনি ‘চার্লি’ নামে পরিচিতি পান। তবে, তিনি সর্বদাই নিজেকে ‘চার্লস’ নামে পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট ছিলেন। বিশ্রাম কক্ষে ‘গাভনর’ নামে পরিচিত ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকে মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করে অনেক রান তুলেছেন। প্রায়শই ক্ষীপ্রবেগে রান সংগ্রহের দিকে ধাবমান ছিলেন।

কাউন্টি ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৯২৭ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান ছিল তার। ১৯৩০-এর দশকে অন্যতম ধ্রুপদী ক্রীড়াশৈলীর অধিকারী সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা লাভ করেছিলেন চার্লি বার্নেট। ডানহাতে মারকুটে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। গ্লুচেস্টারশায়ারের নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছিলেন ও খেলোয়াড়ী জীবন শুরুকালে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন তিনি। ১৯৩২ সালে খাঁটিমানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এ. ই. ডিপার অবসর গ্রহণ করলে তিনি ঐ স্থানে চলে যান ও নিজেকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। এভাবেই তিনি নিজেকে গড়ে তুলেন। পাশাপাশি শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যূহ ব্যবস্থা গড়ে তুলে ড্রাইভ ও কাট মারতেন। এছাড়াও ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তবে, অনেকক্ষেত্রে আত্মরক্ষামূলক প্রবৃত্তিরও অধিকারী ছিলেন তিনি।

মে, ১৯৩৩ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। আগস্টে সমারসেটের বিপক্ষে ১১১ ও ৯৩ রান তুলেন। ঐ মৌসুম শেষে ২,২৮০ রান তুলে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে, শুরুতেই আউট হবার বাতিক রয়েছে তার। একবার ক্রিজে টিকে গেলে তাকে আউট করা বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল। স্ট্রোক প্লেতে নিজের শক্তিমত্তার পরিচয় দেন। বামহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করেছেন।

বালুকাময় ব্রিস্টলের উইকেটেও ড্রাইভের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে দলীয় সঙ্গীদেরকে বিস্ময়াচ্ছন্ন করেন। খেলায় ধারাবাহিকতা না থাকলেও ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে সর্বমোট ৪৮টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। ৩৬-এর অধিক গড়ে রান সংগ্রহ করেন। চারবার দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। কেবলমাত্র দুই মৌসুমে দেড় হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছুতে পারেননি চার্লস বার্নেট। তবে, তার খেলোয়াড়ী জীবনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল যে, গ্লুচেস্টারশায়ার কিংবা ইংল্যান্ড দলে নিয়মিতভাবে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারেননি।

কাউন্টি ক্রিকেটে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন চার্লি বার্নেট।

পরিপক্ব বছরগুলোয় কাউন্টি ক্রিকেটে প্রায়শই উঁচু হাতে বিরাট রান সংগ্রহের দিকে ধাবিত হতেন। ১৯৩৪ সালে সমারসেটের বিপক্ষে এগারো ছক্কা সহযোগে ১৯৪ রান তুলেছেন। ঐ বছরগুলোয় তিনি কার্যকরী সংরক্ষিত বোলার হিসেবে মিডিয়াম পেসের চেয়ে কম মানের লেগ কাটার সহযোগে বোলিং করতেন। ১৯৪৭ সালে বোলিং গড়ে নবম স্থান দখল করেন। ৫০ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ৩০.৯৮ গড়ে ৩৯৪ উইকেট এবং ৩২.৭১ গড়ে ২৫,৩৮৯ রান তুলেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]
আনুমানিক ১৯৪০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে চার্লি বার্নেট

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২০ টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন চার্লি বার্নেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর প্রেক্ষিতে ১৯৩৩ সালে ওভালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্য ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে মনোরম ৫২ রানের ইনিংস খেলেন। ১২ আগস্ট, ১৯৩৩ তারিখে ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়েছিল তার। যুদ্ধের আগে-পিছে ২০ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

দুইবার বিদেশ গমনের প্রথমটি ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ভারতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করেন। ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ওয়ার্থিংটন, ফাগ ও ভেরিটির সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন। ১৯৩৮ সালে হবসসাটক্লিফের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে বার্নেট ও হাটনকে দেখা গিয়েছিল। তবে, ওভাল টেস্টের পূর্বেই দলের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করা থেকে বঞ্চিত হন। এরপর পরবর্তী নয় বছর কোন টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি।

চার্লি বার্নেট টেস্টে দুইবার শতরানের ইনিংসে খেলেছেন। ১৯৩৮ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লেন হাটনের সাথে প্রথমে উইকেট জুটিতে ২১৯ রান তুলেছিলেন। এরফলে ইংল্যান্ড দল ৬৫৮/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম টেস্টে মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বেই প্রথম সকালে শতরানের কাছাকাছি ৯৮ রানে পৌঁছেন। অদ্যাবধি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে সেঞ্চুরি করার একমাত্র ঘটনার হিসেবে টিকে রয়েছে।[] প্রথম বলেই এক্সট্রা কভার অঞ্চল দিয়ে চার মারেন। চাবিরতিতে সাইরেনচেস্টারে অবস্থানকারী মায়ের কাছ থেকে অভিনন্দনসূচক টেলিগ্রাম বার্তা পান। এটি তার দ্বিতীয় ও সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল। ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে অ্যাডিলেডে প্রথম সেঞ্চুরি করলেও তা পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছিল।

অন্যান্য অনেকের ন্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তারও খেলোয়াড়ী জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধের পর পুনরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। তবে কম সফল হয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চার টেস্টে অংশ নিলেও তেমন রান তুলতে পারেননি। তবে, ঐ সময়ে কাউন্টি ক্রিকেটে ঠিকই বড় ধরনের রানের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন।

১৯৪৮ সালে প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি খেলা থেকে অবসর অবসর গ্রহণ করেন। এরপর লীগ ক্রিকেটে রোচডেলের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর তিনি নিজস্ব মাংস ও মুরগির খামার ব্যবসা পরিচালনায় অগ্রসর হন। অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন চার্লি বার্নেট। মে, ১৯৯৩ সালে ৮২ বছর বয়সে স্ট্রুড গ্লোস নার্সিংহোমে দেহাবসান ঘটে তার।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 17আইএসবিএন 1-869833-21-X 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]