চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদ্রাসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদ্রাসা
মাদ্রাসার একটি প্রতীকী পোস্টার
ধরনএমপিও ভুক্ত
স্থাপিত১৯২৪; ১০০ বছর আগে (1924)
প্রতিষ্ঠাতাসৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৬- ২০১৬)
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান)
অধ্যক্ষসৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি
মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্তিবাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
শিক্ষার্থীআনু. ১০০০
ঠিকানা
চরমোনাই
, , ,
শিক্ষাঙ্গনগ্রাম্য
EIIN সংখ্যা১০০৮৩৭
ক্রীড়াক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাটমিন্টন
এমপিও সংখ্যা৫১০৮১৭২৪০১
ওয়েবসাইটhttp://carkm.edu.bd/
http://100837.ebmeb.gov.bd/

চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদ্রাসা বরিশাল জেলার চরমোনাই গ্রামে অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য আলিয়া মাদ্রাসা[১] এটি সংক্ষেপে চরমোনাই আলিয়া মাদ্রাসা বা চরমোনাই কামিল মাদ্রাসা নামেও পরিচিত রয়েছে। ১৯২৪ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের আধ্যাত্মিক ব্যক্তি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির নামানুসারে মাদ্রাসা নামের সাথে রশীদিয়া শব্দটুকু যুক্ত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৬ সালে মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করে।[২] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে মাদ্রাসাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। মাদ্রাসাটি জেডিসি, দাখিল, আলিম পরীক্ষা বরিশাল বিভাগের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ফলাফল করে থাকে।[৩] এছাড়াও মাদ্রাসার ফাজিল ও কামিল শ্রেণীতে উল্লেখযোগ্য ভালো ফলাফল করে থাকে।[৪] মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষের নাম সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯২৪ সালে এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক একাধারে শিক্ষকতা ও পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করেন। এটি ১৯৪৭, ১৯৫৩, ১৯৫৬ ও ১৯৭০ সালে যথাক্রমে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল এর সরকারি মঞ্জুরী লাভ করে।[৫] প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক এ মাদ্রাসায় হাদিস, ফিকহ সহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ দান করেন। তার মৃত্যুবরণের পর তার পুত্র সৈয়দ ফজলুল করিম এ মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করেন। তবে ১৯৮২ সালে তিনি আলিয়ার পাশাপাশি কওমি শাখাও প্রতিষ্ঠা করেন।[৬] জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ প্রতিযোগিতায় এই মাদ্রাসার আলিয়া শাখা জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসার পক্ষে সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদ ও গোল্ড মেডেল গ্রহণ করেন।[৭]

২০০৬ সালে মাদ্রাসাটি দেশের ১,০৮৬টি ফাজিল ও ১৯৮টি কামিল মাদ্রাসার সঙ্গে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়।[৮] এরফলে ফাজিল ও কামিল পরীক্ষা উভয় মিলিয়ে সাধারণ শিক্ষার পূর্ণ স্নাতক ডিগ্রির সমমান লাভ করে। এরপরে ২০১৬ সালে মাদ্রাসাটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এফেলিয়েটেট হয়।[৯]

শিক্ষা কার্যক্রম[সম্পাদনা]

চরমোনাই মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম শ্রেণীতে বিজ্ঞান ও মানবিক উভয় শাখা চালু রয়েছে। এছাড়াও মাদ্রাসার দাখিল সেকশনে কারিগরী শিক্ষা ভোকেশনাল চালু রয়েছে। মাদ্রাসার ফাজিল শ্রেণীতে আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়াও মাদ্রাসার কামিল সেকশনে হাদিস, তাফসির ও ফিকহ বিভাগ বিভাগে পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

সৈয়দ ইসহাকের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ও ক্যাপ্টেন আবদুল লতিফসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত যাতায়াত করতেন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এই মাদ্রাসাটি মুক্তিযুদ্ধাদের ঘাঁটি ছিল। মাদ্রাসার পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য তিনটি কক্ষ ছেড়ে দেওয়া হয়।[১০] সৈয়দ ইসহাকের নির্দেশে তার জামাতা ইউসুফ আলী খান সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তিনি মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করতেন এবং অস্ত্র সংরক্ষণ করতেন।। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় বরিশাল থানার বহু বাঙালি কর্মকর্তা সপরিবারে মাদ্রাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি যোদ্ধারা মাদ্রাসা থেকেই তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বের হতেন।[১১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. গোলাম ছরোয়ার, মুহাম্মদ (নভেম্বর ২০১৩)। বাংলা ভাষায় ফিকহ চর্চা (১৯৪৭-২০০৬): স্বরূপ ও বৈশিষ্ঠ্য বিচার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৫১, ২৫৪। 
  2. "চরমোনাই কামিল মাদরাসার কামিল পরীক্ষায় গৌরবময় ফলাফল"DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৯ 
  3. বিজ্ঞপ্তি, -প্রেস। "চরমোনাই কামিল মাদরাসায় এবারও জেডিসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৯ 
  4. "দাখিলে চরমোনাই কামিল মাদরাসার গৌরবময় ফল"Odhikar। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৯ 
  5. "Charmonai Ahsanabad Rashidia Kamil Madrasha - Sohopathi | সহপাঠী" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৯ 
  6. সাইয়েদ, আহসান (২০০৬)। বাংলাদেশে হাদীছ চর্চা উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ। সেগুনবাগিচা, ঢাকা: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ৫১। আইএসবিএন 9842000184 
  7. "শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেল চরমোনাই কামিল মাদ্রাসা"ইনকিলাব। ২৯ মে ২০১৬। 
  8. "আলিয়া মাদরাসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ"lekhapora24.net। ২০২১-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭ 
  9. "মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যাশা"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১০ 
  10. আলম, মো. মোরশেদ (২০১৪)। হাদীস শাস্ত্র চর্চায় বাংলাদেশের মুহাদ্দিসগণের অবদান (১৯৭১-২০১২)বাংলাদেশ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৩৮। 
  11. খসরু, আতাউর রহমান (২৬ মার্চ ২০২১)। "মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী তিন মাদরাসা"কালের কণ্ঠ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]