ওলিউর রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ওলিউর রহমান
জন্ম১৯১৬
বাটইআইল, কানাইঘাট উপজেলা, সিলেট
মৃত্যু২০ জানুয়ারি , ২০০৬
কানাইঘাট উপজেলা, সিলেট
জাতিভুক্তবাংলাদেশ
মাজহাবহানাফি
শাখাসুন্নি
মূল আগ্রহহাদীস, তাফসীর রাজনীতি, নারীশিক্ষা
উল্লেখযোগ্য ধারণাইসলাহুন নেসওয়ান, তাহারাতুন নেসওয়ান, তালীমুন নেসওয়ান, মুসলিম মহিলা শিক্ষা
লক্ষণীয় কাজওয়াজ নসিহত, সমাজ সংস্কার, নারীশিক্ষা ও লেখালেখি
সুফি তরিকাচিশতিয়া তরিকা
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন
  • বর্তমান উলামায়ে কেরাম, আকাবিরে কানাইঘাট

ওলিউর রহমান একজন সমাজ সংস্কারক, লেখকমুসলিম নারীশিক্ষা আন্দোলনের অগ্রদূত। নারীশিক্ষা আন্দোলনে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

মাওলানা ওলিউর রহমান ১৯১৬ সালে মোতাবেক ১৩৩৬ হিজরী সনে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার বাটইআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরমি কবি ও সূফিসাধক ইবরাহীম আলী তশনার দ্বিতীয় পুত্র। মায়ের নাম আছিয়া খাতুন।[১]। ওলিউর রহমানের পূর্বপুরুষ শাহ তাকী উদ্দীন ছিলেন শাহজালালের সফরসঙ্গী[২] [৩][৪]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

মাওলানা ওলিউর রহমান শৈশবে উমরগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে উমরগঞ্জ ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসায় ষষম শ্রেণী সমাপ্ত করেন।[২] ১৯৩৭ সালে গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসায় থেকে ফাযিল পাস করেন। ১৯৩৮ সালে মাওলানা ওলিউর রহমান উত্তর প্রদেশ-এর রামপুর আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে কামিল (টাইটেল) পাস করে হাদীসের সনদ লাভ করেন। তাঁর হাদীসের ওস্তাদ ছিলেন হযরত মাওলানা আব্দুল খলীল। তাফসীর শাস্ত্রে তার ওস্তাদ ছিলেন মাওলানা আহমদ আলি লাহোরি[৫]

বাইয়াত ও আধ্যত্মিকতা[সম্পাদনা]

ওলিউর রহমান ইলমে মারিফতের প্রথম পাঠ গ্রহণ করেন শায়েখ নিছার আলীর কাছ থেকে। তাঁর মৃত্যুবরণের পর মাওলানা আতহার আলীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে আতহার আলীর মৃত্যুবরণ হলে মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন।[৬]

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

১৯৫৬ সাল থেকে ওলিউর রহমান শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন এবং উমরগঞ্জ ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসায় সুদীর্ঘ ৫০ বছর মুহতামিমের পদ অলঙ্কৃত করেন।[২]

মক্তব শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা[সম্পাদনা]

ওলিউর রহমান মক্তব শিক্ষার ভিত্তিকে দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৮ সালে সিলেট জেলায় প্রথমবারের মতো নাদিয়াতুল কুরআন বোর্ড-এর ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করে এর কার্যক্রম পরিচালনা করেন।[৫][৬]

নারী শিক্ষা আন্দোলন[সম্পাদনা]

ওলিউর রহমান ১৯৮১ সালে সিলেট জেলায় প্রথমবারের মতো “মাদ্রাসাতুল বানাত” বা বালিকা মাদরাসা চালু করেন।[২][৭] । এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন মহিলা মাদরাসা। [৮]। মাদরাসার বিষয়সূচী ছিল: ১। তাজবীদের সহিত কুরআন শিক্ষা। ২। উর্দুতে দ্বীনিয়াত শিক্ষা। ৩। বাংলা সাহিত্য, গণিত, শ্রুতলিপি ও হস্তলিপি (বাধ্যতামূলক)। ৪। সৎ উপদেশ। ৫। কুটির শিল্প (হাতের কাজ, সেলাই ও পাকপ্রণালী ইত্যাদি)।[৯] ১৯৬৮ সালে সর্বস্তরের মহিলাদের শিক্ষার লক্ষ্যে সাপ্তাহিক মহিলা ইজতেমা চালু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশে প্রথম মহিলা জলসা চালু করেন।[৬]

রচনাবলী[সম্পাদনা]

মাওলানা ওলিউর রহমান একজন সংস্কারবাদী লেখক। তিনি নারী শিক্ষা ও সচেতনতার লক্ষ্যে লেখেন একাধিক বই। তার রচিত বইগুলো নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে রচিত। নাদিয়াতুল কুরআন বোর্ড থেকে তার লেখা একাধিক বই এখনও প্রকাশ হয়।[৬] মাওলানা ওলিউর রহমানের লেখা বইয়ের নাম: ইসলাহুন নেসওয়ান, তাহারাতুন নেসওয়ান বা পাক শিক্ষা, তালীমুন নেসওয়ান বা নারী শিক্ষা, হক প্রচার, ইসলাহ ও হেদায়াত, চল্লিশ মাসআলাহ ও মুসলিম মহিলা শিক্ষা।[২]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী। পাকিস্তান শাসনামলে মাওলানা আতহার আলীর আহ্বানে নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দেন। ওলিউর রহমান ১৯৭৯ সালে আঞ্জুমানে ইছলাহুল মুসলিমীন ও ইত্তেহাদুল উলামা নামে দুটো সংস্থা গঠন করেন।[২][৭]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ওলিউর রহমান ১৯ জিলহজ্ব, ১৪২৬ হিজরী মোতাবেক ৭মাঘ, ১৪১২ বাংলা ; ২০ জানুয়ারি , ২০০৬ ঈসায়ী শুক্রবার রাত ১০:৩০ মিনিটের সময় মৃত্যুবরণ করেন।[৬][১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মুসলিম জাহান, ৪ ফেব্রুয়ারি-২০০৯
  2. দৈনিক সিলেটের ডাক, ১৬ জানুয়ারী, ২০০৯, পৃ. ৮
  3. উর্দু ভাষা ও সাহিত্য উৎস ও ক্রমবিকাশ, সৈয়দ মবনু, পৃ: ১২৬, চৈতন্য, প্রকাশকাল: জুলাই ২০১৭
  4. ধর্ম ও র্জীবন, ১৬ জানুয়ারি ২০০৯, দৈনিক সিলেটের ডাক
  5. মরমি কবি ইবরাহিম আলী তশনা ও অগ্নিকুণ্ড গানের সংকলন, সরওয়ার ফারুকী, মদিনা পাবলিকেশান্স, একুশে বইমেলা ২০০৯
  6. মুসলিম জাহান, ৪ ফেব্রুয়ারি-২০০৯
  7. ওম্যান ফর মুসলিম এডুকেশন গাইড, সিলেট, তা.বি.
  8. বাংলাদেশে মহিলা মাদ্রাসা আন্দোলন, বেগম নুরজাহান আকবর, পৃ:৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮
  9. হিফজুল কুরআন পরিক্রমা, সরওয়ার ফারুকী, প্রকাশক: দোআশ, ২০২১, পৃ:৩৫
  10. কানাইঘাটের উলামায়ে কেরাম, প্রথম খণ্ড, মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, প্রকাশকাল: মার্চ ২০১৮