নীল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নীল হক
১৯৬৪ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে নীল হক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামনীল জেমস নেপিয়ার হক
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম-ফাস্ট
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২০ জুন ১৯৬৮ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৭ ১৪৫
রানের সংখ্যা ৩৬৫ ৩৩৮৩
ব্যাটিং গড় ১৬.৫৯ ২৩.৯৯
১০০/৫০ ০/০ ১/১১
সর্বোচ্চ রান ৪৫* ১৪১*
বল করেছে ৬৯৭৪
উইকেট ৯১ ৪৫৮
বোলিং গড় ২৯.৪১ ২৬.৩৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ২৩
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/১০৫ ৮/৬১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৯/০ ৮৫/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবল তথ্য
ব্যক্তিগত তথ্যাবলী
মূল দল পোর্ট অ্যাডিলেড (এসএএনএফএল)
পূর্ব পার্থ (ডব্লিউএএফএল)
পশ্চিম টরেন্স (এসএএনএফএল)[১]
উচ্চতা ১৮৫ সেমি[২]
ওজন ৯১ কেজি[২]
অবস্থান ফুল ফরোয়ার্ড/সেন্টার হাফ ফরোয়ার্ড
উৎস: অস্ট্রেলিয়ানফুটবল.কম

নীল জেমস নেপিয়ার হক (ইংরেজি: Neil Hawke; জন্ম: ২৭ জুন, ১৯৩৯ - মৃত্যু: ২৫ ডিসেম্বর, ২০০০) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার চেল্টেনহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও শীর্ষস্থানীয় অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন নীল হক

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

সহজাত ক্রীড়াবিদ ছিলেন নীল হক। ক্রিকেট, ফুটবল ও গল্ফের ন্যায় ক্রীড়ায় সবিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। এছাড়াও, বড়দের অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলে আগস্ট, ১৯৫৭ সালে পোর্ট অ্যাডিলেড ক্লাবের পক্ষে সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ফুটবল লীগে অংশগ্রহণ করেছেন। নিজস্ব তৃতীয় খেলায় সাউথ অ্যাডিলেডের বিপক্ষে ১৫ গোল করে বিষ্ময়ের জন্ম দেন। তবে, দুই সপ্তাহ পরই বিষ্ময়করভাবে দল থেকে বাদ পড়েন।

ঘরোয়া ক্রিকেট[সম্পাদনা]

ফুটবল মাঠে সফলতম ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পর ক্রিকেট মাঠে মিডিয়াম-ফাস্ট সুইং বোলার হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। এছাড়াও নিচেরসারিতে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন ও দক্ষ ফিল্ডার হিসেবে খেলতে থাকেন। নভেম্বর, ১৯৫৯ সালে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে নীল হকের। ৮৯ রান তুললেও বল হাতে ৪৯ রান দিয়ে কোন উইকেট সংগ্রহ করতে পারেননি। এ সাফল্যের পর আর কোন সফলতা লাভ না করায় ১৯৫৯-৬০ মৌসুম শেষে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ড বিজয়ী দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ছয়জন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার তিনটি রাজ্যদলের (সাউথ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া) পক্ষে শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। তবে তিনি শেফিল্ড শিল্ডে ঐ তিন দলের পক্ষে খেলেননি। বাদ-বাকীরা হলেন - ওয়াল্টার ম্যাকডোনাল্ড (কুইন্সল্যান্ড, তাসমানিয়া, ভিক্টোরিয়া); পার্সি ম্যাকডোনেল (নিউ সাউথ ওয়েলস, কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া); কার্ল কুইস্ট (নিউ সাউথ ওয়েলস, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া); গ্রেগ রোয়েল (নিউ সাউথ ওয়েলস, কুইন্সল্যান্ড, তাসমানিয়া) ও ওয়াল ওয়ামেসলি (নিউ সাউথ ওয়েলস, কুইন্সল্যান্ড, তাসমানিয়া)।

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার। অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম টেস্টে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের তিনি ১৪ রান ও ২/৮৯ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। সেখানকার ব্রিটিশ অ্যামেচার গল্ফ চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার যোগ্যতা লাভ করেন। কিংবদন্তীতুল্য ইংরেজ ক্রিকেটার ফ্রেড ট্রুম্যানের ৩০০তম টেস্ট উইকেট শিকারে পরিণত হন তিনি।

১৯৬৪ সালে ভারত ও পাকিস্তান এবং ১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। তন্মধ্যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিজেকে মেলে ধরেন। টেস্ট সিরিজে ২১.৮৩ গড়ে ২৪ উইকেট পান। জর্জটাউনে বোর্দা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে খেলায় তিনি ১০/১১৫ লাভ করেন। এছাড়াও জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪৫ রানের ইনিংস খেলছেন।

১৯৬৫-৬৬ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে শীর্ষস্থানীয় উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। ২৬.১৮ গড়ে ১৬ উইকেট পান। সতীর্থ গার্থ ম্যাকেঞ্জি ১৬ উইকেট পান; তবে, ২৯.১৮ গড়ে রান দিয়েছিলেন ম্যাকেঞ্জি। সিডনিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড দল এক পর্যায়ে ৩০৮/২ সংগ্রহ করে। কলিন কাউড্রে, এম. জে. কে. স্মিথ, ডেভ ব্রাউনজিম পার্কস - প্রত্যেকেই ধারাবাহিকভাবে ওয়ালি গ্রাউটের হাতে কট বিহাইন্ড হন। টেস্টে ৭/১০৫ নিয়ে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করালেও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল।

অ্যাডিলেডের চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নীল হক ৫/৫৪ পান। ইংল্যান্ডের ৩২/৩ সংগ্রহকে ২৬৬ রানে অল-আউটে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। খেলায় অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ব্যবধানে জয় পেয়ে সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হয়েছিল।

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৬৬ সালে ডান কাঁধে হাঁড় বিচ্যুত হলে ফুটবল খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। কাঁধে স্ক্রু লাগাতে হয়। এরফলে তার বোলিংয়েও বেশ প্রভাববিস্তার করে। তাস্বত্ত্বেও নিজ দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও ভারত এবং ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। তন্মধ্যে লর্ডসে সর্বশেষ টেস্ট খেলায় অংশ নেন নীল হক।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৭ টেস্টে অংশ নিয়ে ১৬.৫৯ গড়ে ৩৬৫ রান তুলেন। এছাড়াও, ২৯.৪১ গড়ে ৯১ উইকেট লাভ করেন। তার প্রসঙ্গে সাবেক টেস্ট অধিনায়ক রিচি বেনো মন্তব্য করেছিলেন যে, তার দেখা অন্যতম সেরা মিডিয়াম পেস বোলার ছিলেন নীল হক।

ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে প্রথমে নেলসন ও পরবর্তীতে পূর্ব ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলেন। এরপর লঞ্চেস্টনে স্থানান্তরিত হন। তাসমানিয়ায় নর্দার্ন তাসমানিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণ করেছিলেন নীল হক। ১৯৭৪ সালে অ্যাডিলেডে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকতা ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করেন।

জুলাই, ১৯৮০ সালে কিছু চিনাবাদাম খান যা তার গলায় আটকে যায়। ফলশ্রুতিতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। এ সময়ে জীবাণুর আক্রমণ ঘটে ও দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দুই বছরে বারোবার হৃদযন্ত্রে বিকল হওয়াসহ গ্যাংগ্রিন হয়। ক্রমবর্ধমান চিকিৎসার খরচ নির্বাহের জন্য ইংল্যান্ডে তার কিছু ক্রিকেট স্মারক উপহার বিক্রয়ের চেষ্টা চালান। দূর্ভাগ্যবশতঃ সতীর্থ ক্রিকেট লেখক এগুলো বিক্রয় করে আত্মসাৎ করেন ও জানান যে, পরিবহনকালে এগুলো বিনষ্ট হয়ে গেছে।[৩]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

জীবনের শেষদিকে তিনি পুনরায় খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত হন ও গীর্জায় যোগ দেন। ২৫ ডিসেম্বর, ২০০০ তারিখে ৬১ বছর বয়সে বড়দিনে অ্যাডিলেডে তার দেহাবসান ঘটে। এ সময়ে তৃতীয় স্ত্রী বেভার্লি ও প্রথম সংসারের এক কন্যা জ্যানেটকে রেখে যান। ২০০০ সালের বক্সিং ডে টেস্টে তার সম্মানার্থে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা কালো পতাকা হাতে বাঁধে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া সরকার তরুণ ক্রীড়াবিদদের সাহায্যার্থে নীল হক বৃত্তির প্রচলন ঘটায় ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সেরা অল-রাউন্ডার ক্রীড়াবিদ হিসেবে তাকে চিত্রিত করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Australian Football Neil Hawke Profile"australianfootball.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৬ 
  2. "Sydney Morning Herald Feb 8, 1963"Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৬ 
  3. * Blake, M. (1994) "The Sorry Saga Of The Stricken Test Bowler's 'vanishing' Memorabilia", p.8, The Age, 8 January 1994.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

  • Campbell, L. (2000) "Truly rare talent", p. 71, Adelaide Advertiser, 29 December 2000.
  • Casellas, K. (2000) "Big Likeable Larrikin Scored Fine Double", p. 79, The West Australian, 30 December 2000.
  • Colliver, L. (2000) "Neil James Napier Hawke (1939–2000)" CricInfo, 27 December 2000. Accessed 16 June 2006.
  • Coward, M. (1990) "Hawkeye: A Sporting Hero of Life", p. 44, Sydney Morning Herald, 21 September 1990.
  • Coward, M. (2001) "End of a brave innings – Time & Tide", p. 9, Australian, 2 January 2001.
  • Shiell, A. (2000) "Hawke: Sportsman For All Seasons", p. 30, Sydney Morning Herald, 27 December 2000.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
সাঈদ আহমেদ
পেশাদার
নেলসন ক্রিকেট ক্লাব

১৯৬৭
উত্তরসূরী
সাদিক মোহাম্মদ
পূর্বসূরী
সাদিক মোহাম্মদ
পেশাদার
নেলসন ক্রিকেট ক্লাব

১৯৬৯–১৯৭০
উত্তরসূরী
গুলাম আবেদ