বিষয়বস্তুতে চলুন

কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি
কড়ৈতলী জমিদার বাড়ির দরবার হল
সাধারণ তথ্যাবলী
ধরনবাসস্থান
ঠিকানাকড়ৈতলী বাজার, ৮নং পাইকপাড়া (দঃ) ইউনিয়ন
শহরফরিদগঞ্জ উপজেলা, চাঁদপুর জেলা
দেশবাংলাদেশ
সম্পূর্ণ১২ শতকের প্রথম ভাগ
বন্ধ১৯ শতকের মাঝামাঝি
স্বত্বাধিকারীহরিশ চন্দ্র বসু

কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত ফরিদগঞ্জ উপজেলার এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি

উৎপত্তি ও ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৭৫টি গ্রামের মধ্যে একটি গ্রামের নাম হলো কড়ৈতলী গ্রাম। আর এই গ্রামেই রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী এক জমিদার বাড়ি। কড়ৈতলী বাজারের দক্ষিণ কোণের পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। যা এখানে সাধারণ মানুষের কাছে বাবুর বাড়ি নামেই বেশ পরিচিত। প্রায় আটশতক আগে বরিশাল জেলার অধিবাসী বাংলা ১২২০ সালে হরিশ চন্দ্র বসু নামের একজন এই কড়ৈতলী জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন করেন। এই হরিশ চন্দ্র বসু দের আগের পদবী ভট্টাচার্য্য ছিল। পরবর্তী কালে তা হরিশ চন্দ্র বসু নিজে পরিবর্তন করে বসু পদবী ব্যবহার শুরু করেন। তিনি নিলামের মাধ্যমে এই জমিদারি ক্রয় করেন। তিনি প্রায় সত্তর বছর ধরে এই জমিদার বাড়ির জমিদারি করার পর মৃত্যুবরণ করেন। শত বছর বয়সে ১২৯০ বঙ্গাব্দে পরলোকগমণ করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘসময় ধরে তার উত্তরসূরীরা এখানকার জমিদারি করেন। এই জমিদাররা ছিলেন অনেক অত্যাচারী। এই জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে সাধারণ মানুষ জুতা পায়ে দিয়ে ও ছাতা মাথায় দিয়ে হাটতে পারতোনা।এই বংশের সবচেয়ে অত্যাচারী জমিদার ছিলেন উমেশ চন্দ্র বসু।উমেশ চন্দ্র বসু ব্রিটিশ সরকারের থেকে পাওয়া উপাধি বিশ্বাস নিজেদের নামের শেষে ব্যবহার করা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে উমেশ চন্দ্র বসু-র পুত্র যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস জমিদারি প্রথা এগিয়ে নিয়ে যান।তার দুই ছেলে হয়। বড়ো ছেলে বিনয়ভূষণ বিশ্বাস যিনি হরিপদ বিশ্বাস নামেও খ্যাত ছিলেন এবং ছোটো ছেলে ছিলেন গোবিন্দ বসু ,যিনি ব্রিটিশ দের দেওয়া উপাধি ব্যবহার করবেন না বলে নিজেদের পদবী বসু পদবী ব্যবহার করতেন। সেই সময়ে জমিদার বাড়ীর ওপরে শত্রু দের আক্রমণ ঘটলে বিনয়ভূষণ বিশ্বাস নিজের স্ত্রী ,পুত্র ও তার একমাত্র কন্যা কে নিয়ে প্রথমে ঢাকা জেলার অন্তর্গত কলাগাছিয়া গ্রামে কিছুকালের জন্য আত্মগোপন করে থাকেন। ভারতবর্ষ ভাগের পরপরে ইংরেজি ১৯৪৮ সালে তিনি নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায় বসবাস শুরু করেন। ভারতবর্ষ ভাগের পর ইংরেজি ১৯৫১ সালে শেষ জমিদার গোবিন্দ বসুর হাত ধরেই এই জমিদার বাড়ির পতন ঘটে। []

বাড়ির অবকাঠামো

[সম্পাদনা]

জমিদার বাড়িটি ৩টি ভবন, একটি দুর্গা মন্দির, বাবুর দীঘি নামে একটি বিশাল দীঘি, দীঘির মধ্যে একটি শান বাঁধানো ঘাট ও একটি দরবার হল নিয়ে গঠিত। এছাড়াও কড়ৈতলী বাজারের মধ্যস্থানে শ্মশানকালী মন্দির রয়েছে। মূল ভবনটি (১নং ভবন) ছিল জমিদারদের বসবাসের জন্য। আর ২নং ও ৩নং ভবন ব্যবহার করা হতো মালামাল ও প্রজাদের সাজা (কারাগার) দেওয়ার জন্য। মূল ভবনটি (১নং ভবন) ৩ তলা বিশিষ্ট। আর ২নং ও ৩নং ভবন ২ তলা বিশিষ্ট। এছাড়াও এই বাড়িটিতে একটি সুড়ঙ্গপথ রয়েছে জমিদারদের আত্মগোপন করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে এটি বালু দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লোকমুখে কথিত আছে এখানে একটি আঁধার মানিক (গুপ্তধন রাখার ঘর) রয়েছে।

বর্তমান অবস্থা

[সম্পাদনা]

কড়ৈতলী জমিদার বাড়িটি বর্তমানে পরিচর্জা ও অবহেলার কারণে লতা-পাতা, বন-জঙ্গলে জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। দুইতলা বিশিষ্ট প্রাসাদগুলোর বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে এবং অনেক অংশ ভেঙ্গে গিয়েছে। স্থানীয়রা ভবনগুলোর ভিতরের মাটি এবং দেয়ালের ইটগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছে।

যাওয়ার মাধ্যম

[সম্পাদনা]

এই জমিদার বাড়িটিতে ঢাকা থেকে নদীপথ এবং সড়কপথে আসতে পারেন। নদীপথে চাঁদপুর আসতে সাধারণ ১০০ টাকা, চেয়ারে ১৫০ টাকা এবং কেবিনে ৪০০ কিংবা ৮০০ টাকা খরচ হবে। আর সড়কপথে ২০০-৪০০ টাকা খরচ পড়বে। ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসার পর চাঁদপুর শহর থেকে সিএনজি যোগে ২০০-৩০০ টাকা খরচে ফরিদগঞ্জ উপজেলা হয়ে মাত্র ২০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে কড়ৈতলী গ্রামের কড়ৈতলী বাজারের উপর দিয়ে দক্ষিণ কোণের পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাড়িটিতে যেতে পারবেন। []

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন - চাঁদপুর জেলা তথ্য বাতায়ন"। ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. চাঁদপুরের কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি - জাগোনিউজ ২৪ ডটকম