মোহাম্মদ শাহ আলম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোহাম্মদ শাহ আলম
জন্ম(১৯৪৮-১১-১৩)১৩ নভেম্বর ১৯৪৮
মৃত্যু৭ মে ১৯৮৫(1985-05-07) (বয়স ৩৬)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

ডাঃ মোঃ শাহ আলম (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ - ৭ মে ১৯৮৫) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মো. শাহ আলমের পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার করমুল্লাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আলী আহম্মদ চৌধুরী এবং মায়ের নাম জমিলা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম নাছিরা আক্তার। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম সাবরিনা আলম। এস,এস,সিঃ ১৯৬৭ইং (কর্ণফুলী পেপারমিলস হাইস্কুল)। এইচ,এস,সিঃ ১৯৬৯ইং (রাঙ্গুনিয়া কলেজ)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হনঃ ১৯৬৯-১৯৭০ইং সেশনে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ কালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে এম,বি,বি,এস ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন মো. শাহ আলম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পরে ভারতে গিয়ে নৌ-কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দেন।[২] ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৫৭। ১৫-১০-১৯৭৬ইং তিনি চন্দ্রঘোনা থানা হেলথ কমপ্লেক্স এ মেডিকেল অফিসার হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি এসিষ্ট্যান্ট সার্জন হিসাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সার্জারী ইউনিট-১ এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে একই ইউনিটের এসিষ্ট্যান্ট রেজিষ্টার (১১-০৪-১৯৭৮) এবং রেজিষ্টার (০৪-১২-১৯৮২) পদে উন্নীত হন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের মধ্য আগস্টে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা নির্ধারিত তারিখে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ মাইনের সাহায্যে ডুবিয়ে দেবেন এমন পরিকল্পনা করেন। এ জন্য অপারেশনের আগে দিনের বেলায় বন্দর ও আশপাশের এলাকা সরেজমিন রেকি (পর্যবেক্ষণ) করা প্রয়োজন। রেকিতে ভুল হলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। নৌ-কমান্ডোদের একটি দলের দলনেতা মো. শাহ আলম সিদ্ধান্ত নিলেন, এ দায়িত্ব তিনি নিজেই পালন করবেন। দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করে তিনি গোটা অপারেশন সফল করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অন্য দিকে সারা বিশ্বে এ ঘটনা তোলপাড় তুলল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ঐতিহাসিক এক ঘটনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো অভিযান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা এবং বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে। এর আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরে অভিযানের জন্য তিনটি দলের সমন্বয়ে কমান্ডো দল গঠন করা হয়। একটি দলের দলনেতার দায়িত্ব পান মো. শাহ আলম। এ অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য তারা ভারতের পলাশি প্রশিক্ষণঘাঁটি থেকে ২ আগস্ট চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। কথা ছিল, ১৩ ও ১৪ আগস্ট আকাশবাণী বেতারকেন্দ্র থেকে গানের মাধ্যমে দুটি ঘোষণা দেওয়া হবে। ঘোষণা দুটি শোনার পরই কমান্ডোরা অপারেশন করবেন। ঘোষণা দুটির প্রথমটি হলো পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া একটি গান, ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান।’ এ গান শোনার সঙ্গে কমান্ডোরা অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে থাকবেন। দ্বিতীয় ঘোষণা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গান, ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি।’ এ গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে কমান্ডোরা প্রস্তুতি শেষ করে ওই দিন মধ্যরাতে পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক অপারেশন করবেন। এ সংকেত শুধু সমন্বয়ক ও দলনেতাই জানতেন, বাকিরা জানতেন না।নৌ-কমান্ডোরা আগরতলা হয়ে ৮ আগস্ট ১ নম্বর সেক্টরের হরিণা ক্যাম্পে পৌঁছান। সেদিন রাতেই তারা বাংলাদেশে ঢোকেন। নৌকা যোগে ও হেঁটে ১৩ আগস্ট তারা চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছান। পরে শহরের ভেতরে বিভিন্ন নিরাপদ বাড়িতে আশ্রয় নেন। হরিণা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার পথ ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। চট্টগ্রাম শহরের সবুজবাগ হোটেলটি ছিল নৌ-কমান্ডোদের সম্মিলনকেন্দ্র। অপারেশনের আগে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান, তাদের গতিবিধি, বন্দরে কয়টি জাহাজ থাকবে, বয়রাগুলোর অবস্থান ইত্যাদি জানা এবং কর্ণফুলীর টাইটাল চার্ট সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ কাজ করা ছিল তখন অত্যন্ত দুরূহ। কাজটি মো. শাহ আলমই দক্ষতার সঙ্গে করেন। ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে নৌ-কমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে অপারেশন করেন। এতে ১০টি টার্গেট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা নিমজ্জিত হয়। এগুলো ছিল জাহাজ, গানবোট, বার্জ ও পল্টুন। চট্টগ্রাম বন্দরের ভয়াবহ অপারেশনের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে।[৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-০১-২০১২"। ২০২০-০৮-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-১০ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৬। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৫। আইএসবিএন 9789849025375