দেব রাজবংশ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত |
অ বিষয়শ্রেণী:মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস সরিয়ে মূল বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী:মধ্যযুগীয় ভারত স্থাপন ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত PAWS [1.2] |
||
৮৭ নং লাইন: | ৮৭ নং লাইন: | ||
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ইতিহাস]] |
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ইতিহাস]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার ইতিহাস]] |
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার ইতিহাস]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:মধ্যযুগীয় |
[[বিষয়শ্রেণী:মধ্যযুগীয় ভারত]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজবংশ]] |
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজবংশ]] |
০৯:৪৩, ৯ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
দেব রাজবংশ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী–খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী | |||||||||
রাজধানী | বিক্রমপুর | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | সংস্কৃত বাংলা | ||||||||
ধর্ম | হিন্দুধর্ম | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
মহারাজা | |||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগীয় ভারত | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী | ||||||||
• বিলুপ্ত | খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী | ||||||||
|
বাংলার ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
দেব রাজবংশ (খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতাব্দী) ছিল মধ্যযুগীয় বঙ্গের একটি হিন্দু রাজবংশ। সেন রাজবংশের পরে পূর্ববঙ্গে এই রাজবংশ রাজত্ব করেছিল। দেব রাজবংশের রাজধানী ছিল অধুনা বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। এই রাজবংশের সমাপ্তির সঠিক সময়কাল এবং কারণ জানা যায় না।
ইতিহাসে দুটি দেব রাজবংশের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটি খ্রিস্টীয় ৮ম-৯ম শতাব্দীতে সমতট অঞ্চলে রাজত্বকারী রাজবংশ। যার রাজধানী ছিল দেবপর্বত। আর বিক্রমপুরের এই রাজবংশটি ছিল হিন্দু বৈষ্ণব রাজবংশ। শিলালিপি থেকে এই রাজবংশের চারজন রাজার নাম পাওয়া যায়: শান্তিদেব, বীরদেব, আনন্দদেব ও ভবদেব। দেব শাসন প্রকৃতপক্ষে শান্তি , সমৃদ্ধি , এবং সৃজনশীল শ্রেষ্ঠত্ব একটি নির্দিষ্ট সময়ের ছিল , এবং এই রাজ্যকালকে প্রাচীন বাংলার ' স্বর্ণযুগ ' মনোনীত করা যেতে পারে।[১]
রাজা
১১৫৬, ১১৫৮ ও ১১৬৫ শতাব্দে রাজা দামোদরদেব যে তিনটি তাম্রলিপি খোদাই করিয়েছিলেন (তার রাজত্বের ৪র্থ, ৬ষ্ঠ ও ১৩শ বছরে) তা থেকেই এই রাজবংশের ইতিহাস জানা যায়। ১১৬৫ শতাব্দের দামোদরদেবের চট্টগ্রাম তাম্রলিপি থেকে এই রাজবংশের প্রথম তিন রাজার কথা জানা যায়।যদিও এই রাজবংশ সম্পর্কে অনেক কাল্পনিক কাহিনী আছে , তবে তার কোন শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন পুরুষোত্তমদেব। তিনি ছিলেন গ্রাম-প্রধান বা "গ্রামণী"। তার পুত্র মধুমথন বা মধুসূদনদেব ছিলেন এই রাজবংশের প্রথম সার্বভৌম রাজা। তিনি "নৃপতি" উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তার পুত্র ছিলেন ছিলেন বাসুদেব। বাসুদেবের পুত্র ছিলেন দামোদরদেব (শাসনকাল ১২৩১-৪৩ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি ছিলেন এই রাজবংশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা। তিনি "অরিরাজ-চানূর-মাধব-সকল-ভূপতি-চক্রবর্তী" উপাধি গ্রহণ করেছিলে। কুমিল্লা তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, তার রাজ্য আধুনিক বাংলাদেশের কুমিল্লা-নোয়াখালি-চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রসারিত ছিল। পরবর্তীকালে "অরিরাজ-দনুজ-মাধব" দশরথদেব নামে এক রাজা এই রাজ্যকে বিক্রমপুর পর্যন্ত প্রসারিত করে সেখানেই রাজধানী স্থাপন করেন।[২] তিনি এখানে একটি লেখ স্থাপন করেছিলেন। ইয়াহিয়া বিন আহমেদ তার তারিখ-ই-মুবারক শাহি গ্রন্থে উল্লেখ করেন, তিনি (ইয়াহিয়া তাকে সোনারগাঁওয়ের দনুজ রায় বলে উল্লেখ করেন) ১২৮১ সালে গিয়াসুদ্দিন বলবনের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে তার ভাই বিক্রমাদিত্য দেব রাজ্যসীমার পূব অংশে স্থানান্তর করেন। নথিভুক্ত তথ্য থেকে এই পযন্ত জানা যায়। [৩]
মুদ্রা এবং সিল
ময়নামতীতে দেব শাসনামলের স্তর থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচশরও অধিক স্বর্ণ, রৌপ্য এবং সামান্য কিছু তাম্র মুদ্রা দেব বংশের অর্থনীতির সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত বাণিজ্যিক অবস্থার চমৎকার ধারণা দিলেও তাদের নিজেদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য প্রদান করে না। এ সংগ্রহে ‘হরিকেল’ লেখা সম্বলিত আরাকানি রীতির পাতলা রৌপ্য মুদ্রার বিপুল আবিষ্কার হারিয়ে যাওয়া হরিকেল রাজ্যের অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ময়নামতীতে খননের ফলে অগণিত পোড়ামাটির ফলক এবং মাটি ও পোড়ামাটির সিলিং পাওয়া গিয়েছে, যার অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মসূত্র সম্পর্কিত। এগুলির কোনো কোনোটির শুধু প্রাচীন লিপিতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে। তিন ছত্র বিশিষ্ট কয়েকটি পোড়ামাটির ফলকের ব্যাপারে কিন্তু একথা প্রযোজ্য নয়। এগুলিতে শালবন বিহারের আদিনাম এবং এর প্রতিষ্ঠাতার নাম খোদিত রয়েছে। এতে লেখা রয়েছে শ্রী-ভবদেব মহাবিহার আর্য-ভিক্ষুসংঘস্য ।
স্থাপত্য
দেবস্থাপত্য উদ্ভাসিত হয়েছে শালবন বিহার, আনন্দ বিহার ও ভোজ বিহারএর তিনটি বিশাল বৌদ্ধ স্থাপনা, কুটিলা মুড়ার বৃহৎ স্তূপ এবং ইটাখোলামুড়া ও রূপবান মুড়ার অসাধারাণ মন্দিরের মধ্যে। দেব বংশের রাজাগণ বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনটি বিশাল বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য (শালবন, আনন্দ ও ভোজ বিহার)। লক্ষণীয়ভাবে সম আকার, আকৃতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ সবকটি বিহারই বিশাল প্রতিরক্ষা প্রাচীর ও একটিমাত্র সুরক্ষিত প্রবেশদ্বারসহ নগরদুর্গের মতো চতুর্ভুজাকৃতির। এর মাঝে লক্ষণীয়ভাবে স্থাপিত ক্রুশাকার কেন্দ্রীয় মন্দির।
স্থাপত্য শিল্পে তর্কাতীতভাবেই দেব রাজাদের সর্বোচ্চ অর্জন হচ্ছে এ স্থাপনাগুলির কেন্দ্রে স্থাপিত ‘ক্রুশাকার বৌদ্ধ মন্দির’। স্পষ্টত এটি ইটাখোলা মুড়া ও রূপবান মুড়ার অর্ধ ক্রুশাকার মঠস্থাপত্য থেকে উৎসারিত। এধরনের বৌদ্ধস্থাপত্য ভারতে আর দেখা যায় না। শালবন বিহারে এ ধ্রুপদী স্থাপত্যের সম্পূর্ণ বিকাশ দেখা যায়। বর্তমানে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, এটি শুধু পাহাড়পুর ও বিক্রমশীলা মহাবিহার এর পাল স্থাপত্যকেই প্রভাবিত করে নি, বরং প্রাচীন ব্রহ্মদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও এটি তার প্রভাব রেখেছিল।
ভাস্কর্য
প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর মধ্যে মৃতপাত্র ব্যতীত সর্বাধিক প্রাপ্ত দ্রব্য হলো ভাস্কর্য। ইটাখোলামুড়ার ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাপ্ত একটি মস্তকহীন মূর্তি ছাড়া ময়নামতী থেকে স্টাকো করা আর কোনো ভাস্কর্য পাওয়া যায় নি। প্রস্তর ভাস্কর্যও বেশ বিরল। স্লেটের ন্যায় কোমল ধূসর স্থানীয় মাটি ও নিম্নমানের বেলে পাথরের সীমিত সংখ্যক নমুনা পাওয়া গিয়েছে। তবে উন্নত শৈলী, কারিগরি দক্ষতা, দেহসৌষ্ঠবে ঐকতানিক মিশেল এবং সেই সাথে পারলৌকিক ও সহজ অভিব্যক্তির সমন্বয়ে পরিমার্জিত ভাব এটিকে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এ ধারার নমুনার মধ্যে রূপবান মুড়ায় প্রাপ্ত বেলে পাথরের অতিকায় বুদ্ধমূর্তিটির কথা উল্লেখ করতেই হয়। পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলে প্রাপ্ত অক্ষত বুদ্ধমূর্তির মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ ও সর্বোৎকৃষ্ট।
ময়নামতীতে সংগৃহীত ব্রোঞ্জদ্রব্যাদি বেশ সমৃদ্ধ ও যেকোনো মানেই অসাধারণ। এগুলির একটি বড় অংশই দেব শাসনামলের। দেড়’শ-এর অধিক অক্ষত অসাধারণ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলিতে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে আরাধনার দৃশ্য। তবে প্রমাণ আকারের বিশাল চিত্রও লক্ষ্য করা যায়। ময়নামতীর ব্রোঞ্জ সামগ্রী মূলত ধর্মীয় শিল্পচর্চাকেই উপস্থাপন করে। এখন পর্যন্ত ধর্ম বহির্ভূত সাধারণ কোনো ভাস্কর্য লক্ষ করা যায় নি। বৈচিত্র্যপূর্ণ, মূল্যবান ও অসাধারণ সমৃদ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে এসব মূর্তিতত্ত্বে। এগুলি ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধধর্মের ক্রমবিকাশের এক নির্ভরযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য প্রদান করছে। এগুলি সে যুগের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্রই তুলে ধরেছে যা অন্য কোনো কিছু থেকেই পাওয়া যায় না। এক দিকে প্রচলিত মহাযান ধর্ম থেকে তান্ত্রিক ধর্মে এর ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং উপমহাদেশেই এর ক্রম অবক্ষয়, অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পুনরায় এর বিস্ময়কর বিকাশ- সবকিছুই এসব ভাস্কর্যে প্রতিফলিত হয়েছে
পোড়ামাটির শিল্প
ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্রুশাকার মঠের ভিত্তিপ্রাচীরে বর্তমান পোড়ামাটির শিল্প ময়নামতীতে প্রায় এককভাবেই ভাস্কর্য ফলক দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে। এটি এখন তর্কাতীতভাবেই প্রতিষ্ঠিত যে, এ ভাস্কর্য শিল্প শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক যুগেরই এবং তা হলো দেব যুগের। এগুলি দেশিয় শৈলীরই প্রতিনিধিত্ব করছে যা বাংলার লোকশিল্পের ভিত্তি। স্পষ্টত এটি এযুগেরই এবং এখানেই উদ্ভূত ও বিকশিত হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা দেশ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। অপরিপক্ক, প্রতিফলনহীন ও হালকা মেজাজের শিল্পকর্ম বলা হলেও এগুলি অসাধারণ অভিব্যক্তিসম্পন্ন হিসেবে চিহ্নিত। এগুলির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো এর উৎকর্ষ ও বৈচিত্র্য, এর প্রাণবন্ত রূপ ও গতিময়তা। ভাস্কর্যগুলিতে বিষয়গত দিক প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলার সমাজজীবনের পাশাপাশি কল্পনাপ্রসূত অনেক কিছুই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পোড়ামাটির ফলক ও এর প্যানেলে সজ্জিত খোদাইকৃত ও অলংকৃত ইট দেবযুগে এক অপ্রচলিত আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র শিল্পশৈলী সমৃদ্ধ করেছে। আর এ ভাস্কর্যগুলিতেই প্রাচীন বঙ্গ-সমতট তার পরিপূর্ণ ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রকাশ ঘটিয়েছে।
পূর্বসূরী সেন রাজবংশ |
বাংলার রাজবংশ | উত্তরসূরী মামলুক রাজবংশ |
আরও দেখুন
References
- ↑ "Banglapedia article on Deva dynasty"। ১৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- ↑ Roy, Niharranjan (1993). Bangalir Itihas: Adiparba Calcutta: Dey's Publishing, আইএসবিএন ৮১-৭০৭৯-২৭০-৩, pp.408-9
- ↑ Majumdar, R.C. (ed.) (2006). The Delhi Sultanate, Mumbai: Bharatiya Vidya Bhavan, p.622