লক্ষ্মীপেঁচা
লক্ষ্মীপেঁচা Tyto alba | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
উপশ্রেণী: | Neornithes |
অধঃশ্রেণী: | Neognathae |
মহাবর্গ: | Neoaves |
বর্গ: | স্ট্রিজিফর্মিস |
পরিবার: | Tytonidae |
উপপরিবার: | Tytoninae |
গণ: | Tyto |
প্রজাতি: | T. alba |
দ্বিপদী নাম | |
Tyto alba (স্কোপোলি, ১৭৬৯) | |
সবুজ রঙে লক্ষ্মীপেঁচার বৈশ্বিক সীমারেখা | |
প্রতিশব্দ | |
Strix alba স্কোপোলি, ১৭৬৯ |
লক্ষ্মীপ্যাঁচা বা লক্ষ্মীপেঁচা (ইংরেজি: Barn Owl; বৈজ্ঞানিক নাম: Tyto alba) এক ধরনের পেঁচা প্রজাতির পক্ষীবিশেষ। মাঝারি থেকে বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে এ পাখিটি। শরীরের তুলনায় মুখমণ্ডল অনেকাংশেই বড় হয়ে থাকে। লম্বা পাখনা, ফ্যাকাশে ও হৃদয় আকৃতি মুখের গড়ন এবং বর্গাকৃতির লেজ প্রধান এর বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য শিকারী পাখি - ঈগল, বাজের ন্যায় এর লম্বা, শক্তিশালী পায়ের থাবার সাথে সুতীক্ষ্ণ নখর রয়েছে।
মূলতঃ গ্রাম এলাকার বিভিন্ন খামার এবং বনভূমিতে এদেরকে দেখা যায়। বাংলাদেশে টাইটেনিডে পরিবারভূক্ত লক্ষ্মীপেঁচার ৩টি প্রজাতি রয়েছে। সেগুলো হলো - অস্ট্রেলেশিয়ান গ্রাস-আউল (Tyto longimembris), লক্ষ্মীপেঁচা (Tyto alba) এবং অরিয়েন্টাল বে-আউল (Phodilus badius)।
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]সারা বিশ্বে লক্ষ্মীপ্যাঁচার মোট ২৮টি উপপ্রজাতি এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[১] উপপ্রজাতিগুলো হল:
- T. a. alba (Scopoli, 1769) - পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর তুরস্ক; উত্তর আফ্রিকা।
- T. a. guttata (C. L. Brehm, 1831) - মধ্য ইউরোপের লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, ইউক্রেন এবং আলবেনিয়া, মেসিডোনিয়া, রুমানিয়া ও গ্রিস।
- T. a. ernesti (Kleinschmidt, 1901) - সার্দিনিয়া ও কর্সিকা।
erlangeri W. L. (Sclater, 1921) - ক্রিট দ্বীপ ও অন্যান্য গ্রিক দ্বীপসমূহ, সাইপ্রাস থেকে সিরিয়া হয়ে ইরান, মিশর (সিনাই উপদ্বীপ) ও দক্ষিণ আরব উপদ্বীপ।
- T. a. schmitzi (Hartert, 1900) - ম্যাদেইরা ও পোর্তো সান্তো।
- T. a. gracilirostris (Hartert, 1905) - পূর্ব ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ।
- T. a. detorta (Hartert, 1913) - কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ।
- T. a. affinis (Blyth, 1862) - সাহারার দক্ষিণাংশ থেকে পুরো আফ্রিকার দক্ষিণাংশ, মাদাগাস্কার ও কোমোরস দ্বীপপুঞ্জ।
- T. a. poensis (Fraser, 1842) - বিওকো দ্বীপ।
- T. a. thomensis (Hartlaub, 1852) - সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি।
- T. a. stertens (Hartert, 1929) - দক্ষিণ ভারত, বাংলাদেশ, উত্তর শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ চীন, ভিয়েতনাম, মায়ানমার ও দক্ষিণ থাইল্যান্ড।
- T. a. deroepstorffi (Hume, 1875) - দক্ষিণ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ।
- T. a. javanica (J. F. Gmelin, 1788) - মালয় উপদ্বীপ ও পূর্ব ইন্দোনেশিয়া।
- T. a. sumbaensis (Hartert, 1897) - সুম্বা দ্বীপ।
- T. a. meeki (Rothschild & Hartert, 1907) - পূর্ব নিউগিনি এবং সহযোগী দ্বীপসমূহ।
- T. a. delicatula (Gould, 1837) - পূর্ব তিমুর থেকে অস্ট্রেলিয়া হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহ।
- T. a. crassirostris (Mayr, 1935) - টাঙ্গা দ্বীপপুঞ্জ (পূর্ব বিসমার্ক উপদ্বীপ)।
- T. a. interposita (Mayr, 1935) - সান্তা ক্রুজ দ্বীপপুঞ্জ, ব্যাংকস দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর ভানুয়াতু।
- T. a. pratincola (Bonaparte, 1838) - দক্ষিণ কানাডা থেকে মেক্সিকো; এছাড়াও হন্ডুরাস, বাহামাস ও হাইতি।
- T. a. guatemalae (Ridgway, 1874) - গুয়েতেমালা এবং সম্ভবত দক্ষিণ মেক্সিকো থেকে পানামা এবং কলম্বিয়া।
- T. a. bondi (Parkes & Phillips, 1978) - বে দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর হন্ডুরাস।
- T. a. furcata (Temminck, 1827) - কিউবা, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও জ্যামাইকা।
- T. a. niveicauda Parkes & Phillips, 1978) - আইল্যান্ড অব পাইনস।
- T. a. bargei (Hartert, 1892) - কুরাকাও এবং সম্ভবত বোনাইরে।
- T. a. punctatissima (G. R. Gray, 1838) - গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ।
- T. a. contempta (Hartert, 1898) - পশ্চিম ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া (সম্ভবত পশ্চিমে নেই), ইকুয়েডর ও পেরু।
- T. a. hellmayri (Griscom & Greenway, 1937) - পূর্ব ভেনিজুয়েলা (মার্গারিতা দ্বীপসহ) থেকে গায়ানা হয় উত্তর ব্রাজিল (আমাজন নদীর ঊত্তর); ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতেও দেখা যায়।
- T. a. tuidara (J. E. Gray, 1829) - ব্রাজিল (আমাজন নদীর দক্ষিণ) থেকে তিয়ের্রা দেল ফুয়েগো এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ।
বিবরণ
[সম্পাদনা]সাধারণতঃ মাঝারি প্রকৃতির পেঁচা হিসেবে লক্ষ্মীপেঁচার পাখার দৈর্ঘ্য ৭৫-১১০ সেন্টিমিটার। শারীরিক গঠন ২৫-৫০ সেন্টিমিটারবিশিষ্ট।[২][৩] প্রজাতিভেদে ওজন ১৮৭ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার লক্ষ্মীপেঁচা তুলনামূলকভাবে কম ওজনের হয়।[৪] বসন্ত ঋতুতে এদের প্রজনন মৌসুম। উঁচু গাছের গর্তে এরা বাসা বাঁধে। ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ইঁদুর, সরীসৃপ, ব্যাঙ, মাছ, পোকামাকড়সহ ছোট পাখি শিকার করে ও মাংস খেয়ে জীবনধারণ করে।
অধিকাংশ প্রজাতির লক্ষ্মীপেঁচার মাথা এবং শরীরের ঊর্ধ্বাংশ সচরাচর হাল্কা বাদামী ও হাল্কা রঙের হয়ে থাকে। পালকগুলো বিশেষ করে কপাল ও পিছনের দিকে ঘন ধূসর বর্ণের হয়। হৃদয় আকৃতির মুখাংশটি প্রায়শঃই উজ্জ্বল সাদাটে হলেও কিছু প্রজাতির বাদামী রঙের হয়ে থাকে।
নিম্নাংশের পালকগুলো সাদা থেকে লালচে হয়ে থাকে। এছাড়াও কিঞ্চিৎ কালো-বাদামী বর্ণের সংমিশ্রণও লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের লক্ষ্মীপেঁচা ইউরোপীয় মহাদেশে লক্ষণীয়। স্ত্রীজাতীয় প্যাঁচাগুলোর পালকের রঙের ভিন্নতা সুষ্পষ্ট এবং শারীরিক কাঠামোও গড়পড়তা শক্তিশালী। অক্ষিগোলক কালচে বাদামী বর্ণের। ঠোঁটের ন্যায় পায়ের নখরগুলো গোলাপী থেকে গাঢ় বাদামী-গোলাপী হয় এবং থাবা এলাকা কালো হয়ে থাকে।[৫]
স্বভাব
[সম্পাদনা]নিশাচর ও শিকারী পাখি হিসেবে লক্ষ্মীপেঁচার আচরণ অন্যান্য পেঁচার ন্যায়। কিন্তু গোধূলীলগ্নে এটি সক্রিয় হয়ে উঠে। মাঝে মাঝে দিনের বেলায়ও কিঞ্চিৎ দেখা মেলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উপরে কিংবা ৩০০০ মিটার নিচে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার খামার ও ঘাসপূর্ণ এলাকা, বনভূমিতে এদেরকে দেখা যায়। শিকার নিয়ে কোন কাঠ বা খুঁটির উপরিভাগে বসতে পছন্দ করে। খুবই নিঃশব্দে এদের পদচারণা ঘটে অর্থাৎ আওয়াজবিহীন অবস্থায় এরা উড়তে সক্ষমতা প্রদর্শন করে। এদের শ্রবণশক্তি খুবই তীক্ষ্ণ।এ ধরনের বৈশিষ্ট্য সমগোত্রীয় প্রজাতি হিসেবে টি. এ. গুট্টাটা এবং টি. এ. এল্বা পেঁচায় দেখা যায় যারা ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাংশ এবং আইবেরিয়ান উপত্যকা ও দক্ষিণ ফ্রান্সে বসবাস করে।[৬]
অনেকসময় গ্রামবাংলার মানুষ অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারবশবর্তী হয়ে লক্ষ্মীপেঁচার মাথায় সিঁদুর লেপে দেয় যা তাদের মৃত্যুকে ত্বরাণ্বিত করে।
গ্যালারী চিত্র
[সম্পাদনা]-
Adult T. a. alba in flight, Pyrenees (France)
-
Detail of talon
-
A brood soon before fledging, moulting out of their nestling down
-
Light adult, representative of T. a. alba
-
Adult T. a. furcata in Cuba
-
Adult T. a. tuidara in Chile
-
Adult of T. a. guttata in flight, Sandesneben (Germany)
-
T. a. delicatula in flight
-
Adult T. a. pratincola in flight
-
Adult T. (a.) punctatissima on Santa Cruz Island (Galápagos)
-
T. a. stertens in India
-
A (male) Tyto alba alba-type (left) and a (female) T. a. guttata-type Barn Owl in the Netherlands, where these subspecies intergrade
-
A Barn Owl skull, showing the rodent-killer beak
-
An Eulenloch ("owl-hole") in northern Germany lets Barn Owls access the attic for nesting
-
Barn owl on Lithuanian silver coin of 5 litas (2002)
-
Tyto alba guttata
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Common Barn-owl (Tyto alba)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১২।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ CRC Handbook of Avian Body Masses by John B. Dunning Jr. (Editor). CRC Press (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৪৯৩-৪২৫৮-৫.
- ↑ Bruce (1999), Mátics & Hoffmann (2002)
- ↑ Ehrlich et al. (1994): pp.250-254, Mátics & Hoffmann (2002), Cisneros-Heredia (2006)