হিতেশ্বর শইকীয়া
অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকীয়া অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী | |
---|---|
মুখ্যমন্ত্রী[১] | |
কাজের মেয়াদ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ – ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৫[১] | |
নেতা | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
পূর্বসূরী | কেশব চন্দ্র গগৈ |
উত্তরসূরী | প্রফুল্ল কুমার মহন্ত[১] |
মুখ্যমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ জুন, ১৯৯১ – ২২ এপ্রিল, ১৯৯৬ | |
পূর্বসূরী | প্রফুল্ল কুমার মহন্ত |
উত্তরসূরী | ভূমিধর বর্মন |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ৩ অক্টোবর, ১৯৩৪ সাপেখাতি, শিৱসাগর জেলা |
মৃত্যু | ২২ এপ্রিল, ১৯৯৬ চন দিল্লী |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
দাম্পত্য সঙ্গী | ড° হেমপ্রভা শইকীয়া |
সন্তান | দেবব্রত (পুত্র) অশোক (পুত্র) গৌতম (পুত্র) |
ধর্ম | হিন্দু |
হিতেশ্বর শইকীয়া (ইংরেজি: Hiteswar Saikia; অসমীয়া: হিতেশ্বর শইকীয়া) হলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।[১] তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দুইবার কার্যনির্বাহ করেছেন। তিনি মিজোরামের রাজ্যপাল হিসেবেও কার্যনির্বাহ করেছেন। সৈয়দা আনোয়ারা টাইমুর ও কেশব চন্দ্র গগৈর মন্ত্রীসভায় তিনি শিক্ষামন্ত্রীর পদে নিযুক্ত ছিলেন। [২]
জন্ম এবং বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]
১৯৩৪ সনের ৩ অক্টোবরে শিবসাগর জেলার সাপেখাতির কাছাকাছি বগাবগ চা বাগানে হিতেশ্বর শইকিয়ার জন্ম হয়।[২] তার পিতার নাম হলধর শইকিয়া এবং মাতার নাম খরগেশ্বরী শইকিয়া। তাদের ছয়টি সন্তান ছিল।[২] তারা আহোম সম্প্রোদায়ের লোক ছিলেন। হলধর শইকিয়া বগাবগ চা বাগানের প্রধান কার্যালয়ে সহায়ক রূপে চাকরি করতেন।
শিক্ষা[সম্পাদনা]
১৯৪৫ সনে হিতেশ্বর শইকিয়া দশ বছর বয়শে প্রাইমারি পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তার পর নাজিরা উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ে নাম ভর্তি করেন। [২] ১৯৫৩ সনে তিনি নাজিরা হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরিক্ষায় উর্ত্তিণ্ণ হন। ১৯৫৫ সনে তিনি কটন কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আ.ই. পরিক্ষায় উর্ত্তিণ্ণ হন। তারপর তিনি শ্বিলং-এর সেন্ট এডমান্ডস কলেজে নাম ভর্তি করেন। ১৯৫৭ সনে তিনি সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর ১৯৬০ সনে তিনি লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়তে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।[২]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করার পর, ১৯৬০ সনের ৯ অক্টোবরে হিতেশ্বর শইকিয়া নাজিরা উচ্চতর মাধ্যমিক এবং বহুমুখী বিদ্যালয়ের শিক্ষক রূপে যোগদান করেন। নাজিরা এসোসিয়েটেড ক্লাব এবং নাজিরা নাট্য সমিতির সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি বরতলা উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ের সম্পাদক পদেও ছিলেন। নাজিরাতে একটি মহাবিদ্যালয়ের স্হাপনের জন্যও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি কিছুদিনের জন্য গড়গাঁও মহাবিদ্যালয়ের উপাধক্যরূপেও নিযুক্ত ছিলেন।[২]
রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]
১৯৬৪ সনের ১৫ আগস্টে হিতেশ্বর শইকীয়া কংগ্রেজ দলে যোগদান করেন। প্রথমত, তিনি শিবসাগর জেলার যুব কংগ্রেজের সভাপতি এবং তারপর তিনি অসম প্রদেশ কংগ্রেজ কমিটির কার্যালয়ে সম্পাদকের দ্বায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭২ সনে হিতেশ্বর শইকীয়া প্রথমবার অসম বিধানসভায় নাজিরা বিধানসভা সমষ্টির থেকে নির্বাচিত হন। শরং চন্দ্র সিংহের নেতৃতাধীনে অসম মন্ত্রীসভায় তিনি গৃহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনসংযোগ বিভাগের রাজ্যিক পর্যায়ের মন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। তারপর তিনি গৃহ দপ্তরের পূর্ণ পর্যায়ের মন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭৬ সনের শেষের দিকে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়ীত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তদোপরি সৈয়দা আনোয়ারা টাইমুর এবং কেশব চন্দ্র গগৈর মন্ত্রীসভাতেও তিনি শিক্ষামন্ত্রীর পদে নিযুক্ত ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী পদ[সম্পাদনা]
প্রথম কার্য্যকাল[সম্পাদনা]
১৯৮৩ সনে অনুষ্ঠিত হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেজ বিজয়ী হয়। কংগ্রেজ দলের সর্বসন্মতিক্রমে হিতেশ্বর শইকীয়াকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮৩ সনের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণ করেন। তার সাথে সাথেই অসমে রাষ্ট্রপতি শাসনের অন্ত পরে। মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেই তিনি অসম আন্দোলনের সময় আশ্রয় শিবিরে থাকা সকলকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত তথা অসমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ঘুরিয়ে আনবে বলে বেতার বার্তাযোগে প্রচার করে আশ্বাস দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকে তিনি অসমে বৃদ্ধ পেন্শন, বেকার সমস্যা, শিক্ষিত বেকারদের আত্ম প্রতিষ্ঠার জন্য বেংকের ঋণ, চন্দ্রপুরে স্থায়ী রাজধানীর আধারশিলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কাজে হাত দিয়েছিলেন। তার সময়ে কোকরাঝার, ধুবড়ী, করিমগঞ্জ, বরপেটা, শোণিতপুর এবং যোরহাট- এই ছয়টি জেলা এবং বিশ্বনাথ চারিআলি, গোঁসাইগাঁও, রঙিয়া, মানকাছার, দক্ষিণ শোলমারা, ওদালগুরি, চরাইদেউ, হোজাই- এই আঠটি মহকুমা গঠন করা হয়। তদুপরি তার সময় ব্রহ্মপুত্রের ওপর দ্বিতীয়তম দলং নরনারায়ণ সেতুর আধারশিলা স্থাপন করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় কার্য্যকাল[সম্পাদনা]
১৯৯১ সনের ৩০ জুনে হিতেশ্বর শইকীয়া দ্বিতীয় বারের জন্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন। এই সময়কালে তার নির্মিত সরকারে কোনো উন্নয়নমূলক এবং জনহিতকর কাজ কর্ম করেননি বলে জনসাধারণ অভিযোগ তুলেছিল।
রাজ্যপালের পদ[সম্পাদনা]
১৯৮৫ সনে হিতেশ্বর শইকীয়া মিজোরামের রাজ্যপাল হিসাবে কার্যনির্বাহ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]
হিতেশ্বর শইকীয়ার পত্নীর নাম ডঃ হেনপ্রভা শইকীয়া। তাদের তিনটি সন্তান: দেবব্রত, অশোক এবং গৌতম।
সম্মান এবং পুরস্কার[সম্পাদনা]
১৯৮৩ সনে দিল্লীর রাষ্ট্রীয় সংহতি পরিষদে হিতেশ্বর শইকীয়াকে রাষ্ট্র মানব উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।
আক্রমণ[সম্পাদনা]
হিতেশ্বর শইকীয়াকে দুই বার প্রাণ নাশ করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৮১ সনের ১৯ এপ্রিল এবং দ্বিতীয়বার ১৯৮৩ সনের ১৯ নভেন্বরে।
মৃত্যু[সম্পাদনা]
১৯৯৬ সনের ২২ এপ্রিল হিতেশ্বর শইকীয়ার দিল্লীর অল ইণ্ডিয়া ইনষ্টিটিউট অফ মেডিকেল কলেজে পরলোকপ্রাপ্তি হয়।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ১৯৩৪-এ জন্ম
- ভারতীয় রাজনীতিবিদ
- ১৯৯৬-এ মৃত্যু
- ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ
- ১৯৩৬-এ জন্ম
- কটন কলেজ, গুয়াহাটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- আসামের মুখ্যমন্ত্রী
- ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী
- শিবসাগর জেলার ব্যক্তি
- মিজোরামের রাজ্যপাল
- আসাম বিধানসভার সদস্য ১৯৬৭-১৯৭২
- আসাম বিধানসভার সদস্য ১৯৭২-১৯৭৮
- আসাম বিধানসভার সদস্য ১৯৭৮-১৯৮৩
- আসাম বিধানসভার সদস্য ১৯৮৩-১৯৮৫